Sunday, July 23, 2017

রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের কী কারণ?


Image may contain: tree, outdoor and nature

তারিখঃ ২৯ জুন, ২০১৭
মানসিক ও চিন্তাগত এবং কিছুটা কাজের চাপে আছি। তাই এ বিষয়ে সংক্ষেপে লিখছি।
সার্বিকভাবে সাধারণ মূল্যায়ন করে পাহাড়ধসের কারণ হিসেবে অনেকে নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন। তবে বিশেষভাবে কোন এলাকায় কেন বা কী কী কারণে পাহাড়ধস ঘটেছে তা সম্ভবত এখনো চিহ্নিত করা হয়নি। গত ২৭ জুন আমরা দুইজন ঝটিকা এক সফরে পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখে এসেছি। সময় কম থাকায় এলাকাগুলো ভালকরে পরখ করে ধ্বসের কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে যেসকল কারণে পাহাড়ধস হয়েছে তা সংক্ষেপে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।

১। শহরাঞ্চলের যুবউন্নয়ন এলাকা, মোনোঘর এলাকায় মূলত, ড্রেইনেজ সিস্টেম বলতে কিছু না থাকার কারণে বৃষ্টির সময় পানির প্রবাহ উপচে গিয়ে মাটির ব্যাপক ক্ষয় হয়। এতে পাহাড় কেটে যারা পাহাড়গুলোতে ঘিঞ্জি ঘর তুলেছিল তাদের ঘরে মাটির আস্তর ধ্বসে পড়ে। এবং মানূষজন মারা যায়।
২। ভেদভেদি এলাকায় পাহাড়গুলো ন্যাড়া ও একভাবে লম্বালম্বিভাবে খারা এবং তারউপর পাহাড় আরো খারাভাবে কেটে উপরে নিচে টিনের ঘর বানানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রবল বৃষ্টির পরে মাটির আস্তরে ধ্বস নামতে তেমন বেগ পেতে হয়নি।
৩। মানিকছড়িতে পথের পাশে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পের খারা পাহাড়ের মাটি আগে থেকেই ছিল ন্যাড়া। এখানেও দেখা গেছে পথের পাশে পানি প্রবাহের জন্য কোনো ড্রেইন তৈরি করা হয়নি।
৪। মানিকছড়ির সাপছড়িতে কয়েকটি জায়গায় রাঙামাটি-খাগড়াছড়ির পাকা পথের পূর্বদিকে পানি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। অর্থাৎ, পূর্বদিকের পাহাড় থেকে যে পানি পশ্চিমদিকে নিচে নেমে যাবার কথা তা পাকা পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়। পানি পশ্চিমূখী হয়ে নিচে নেমে যেতে পাকা পথের মাঝ বরাবর ড্রেইন বা কালভারট পর্যাপ্তভাবে বানানো হয়নি। এছাড়া পাহাড়ে লাগানো হয়েছে পরিবেশ অনুপযোগী সেগুন গাছ।
৫। খামারপাড়া এলাকা থেকে মোনতলা কিজিং পর্যন্ত এক কিলোমিটার মতন সড়কপথে প্রকৃতি যেন তার রূদ্ররোষ দেখিয়ে দিয়ে বলতে চেয়েছে, প্রকৃতির উপর জবরদস্তি সহ্য করা হবে না! সাপছড়িতে নিচু জায়গা ভরাট করে বানানো হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ভরাট করার জন্য মাটি কাটা হচ্ছে খামারপাড়ার পূর্বদিকের একটি পাহাড় থেকে। পাহাড় এমনভাবে কাটা হচ্ছে যেন পাহাড় কাটা অবৈধ নয়!
৬। খামারপাড়া এলাকায় যেখানে পাকা সড়ক চিড়ে ভেঙে পথকে উত্তর ও দক্ষিণ দু'দিকে পৃথক করে দিয়েছে সেখানে একটি স্বাভাবিক ছড়া বা নালার সৃষ্টি হয়েছে। ছড়া বা নালাটির অস্তিত্ব অনেক আগে ছিল। কিন্তু পাকা পথ বানানোর সময় নালাটিতে খুব কম পানি প্রবাহের উপযোগী করে ছোট করে বানানো হয়েছে। তাই ১২-১৩ জুন যখন প্রবল বৃষ্টি হয় তখন প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবেই নিজের ন্যায্যতা আদায় করে ছেড়েছে।
৭। মোনতলা কিজিং-এর ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। কিজিং শব্দটি থেকে বোঝা যায় এই জায়গাটিতে দুই পাহাড়ের মাঝে চলে যাওয়া খাদ বা হাঁটা পথ ছিল। পরে পাকা সড়ক বানানোর সময় সেই কিজিং ভরাট করে তার চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। ১২-১৩ জুন সুযোগ পেয়ে প্রকৃতি আবার তার জন্য নতুন কিজিং তৈরি করে নিয়েছে। এখানেও পাকা সড়ক উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৫০ ফুট বা তার অধিক চিড়ে পৃথক হয়ে গেছে।
৮। রাঙামাটি খাগড়াছড়ি সড়কের পূর্বপাশের অনেক খারা পাহাড়ের মাটি ধ্বসে পড়েছে। এগুলো আগামীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরকম স্থানের সংখ্যা ৫০/৬০ এর কম হবে না। কেন এগুলো ধ্বসে পড়েছে ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে? একে একে বলা যায়- পাহাড়ের মাটি ঝরঝরে; পথ নির্মাণকালে অবাধে পাহাড়কে খারাভাবে কাটা হয়েছে; বৃষ্টির সময় পথের পানি বেয়ে যাবার জন্য কোনো ড্রেইন করা হয়নি; মাটির যাতে ক্ষয় না ঘটে সেরকম কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
৯। ঘিলাছড়ি ও তার আশেপাশের এলাকায় পাকা সড়ক ঢালু হয়ে ফেটে গেছে বা কিছু অংশ ধ্বসে গিয়ে কয়েকশত ফুট নিচু খারা ঢালু? তৈরি হয়েছে। এগুলো এতোটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, কোনো গাড়ি বা ব্যক্তি নিচে পরে গেলে নিশ্চিত জীবন বিপন্ন হয়ে উঠবে।
কেন এই ধ্বস? সেই একই কারণ, ড্রেইন নেই এবং মাটির ক্ষয় রোধ করার ব্যবস্থা নেই।
সে যাই হোক, ধ্বসের পরে কারণ নির্ধারণ করা সহজ।
তবে এই কাজটি করা প্রয়োজন ছিলো।
এছাড়া কেন প্রকৃতি প্রবলভাবে 'বৃষ্টির ধারা' সৃষ্টি করেছিল তার আবহাওয়া বা জলবায়ুগত বিশ্লেষণ করা দরকার।
পার্বত্য মন্ত্রণালয় পাহাড়ধসের কারণ হিসেবে বজ্রপাতকে দায়ী করেছে। তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকলে ঠিক আছে। তবে 'ফাল্টুমি' ও 'ছ্যাবলামি' করার জন্য বা দায়সারাগোছের অনুসন্ধান করে দায়সারা এই 'কারণ' চিহ্নিত করে থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্তকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
দায়িত্বজ্ঞানহীন অনুসন্ধান...।

No comments:

Post a Comment

সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...