Thursday, September 11, 2014

মাও সেতুঙের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সাজেকে আলোচনা সভা

সমাজতান্ত্রিক চীন গড়ার লড়াইয়ের সফল বিপ্লবী মাও সেতুঙের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ১০ সেপ্টেম্বর সকালে ইউপিডিএফ সাজেক ইউনিটের উদ্যোগে সাজেক ভূমিরক্ষা কমিটি কার্যালয়ে এক  আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় মাও সেতুঙের জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে মূল আলোচনা করেন ইউপিডিএফ সাজেক ইউনিট সমন্বয়ক মিঠুন চাকমা। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন ইউপিডিএফ সদস্য ক্যহলাচিঙ মারমা, গণতান্ত্রিক যুবফোরাম সাজেক শাখার সহ সভাপতি জেনেল চাকমা।
মিঠুন চাকমা মাও সেতুঙ নিয়ে আলোচনার সময় বলেন, মাও সেতুঙ সঠিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আদর্শকে আত্মস্থ করে চীনের লড়াই সংগ্রামকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি নিজের স্বার্থকে তুচ্ছ করে চীনের নিপীড়িত নির্যাতিত জনগণের মুক্তিকেই তার আসল লক্ষ্য র্নিধারণ করেছিলেন। প্রথম জীবনে তার লেখায় তিনি বলেছিলেন, বিপ্লবে সফল হতে হলে একজন ব্যক্তি শারীরিক পরিশ্রম করার সক্ষমতাও প্রয়োজন। তিনি ১৯২১ সালের কম্যুনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করার পর থেকে বিপ্লবী ধারার মার্ক্সবাদী লাইন গ্রহণ করেন। চীনের মতো বিশাল দেশকে মুক্ত করতে হলে শ্রমিক শ্রেনীকে সংগঠিত করার সাথে সাথে লক্ষ কোটি কৃষক শ্রেনীকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রাম করার উপর গুরুত্ব দেন। তিনি জনগণের কল্যাণ ও তাদের মুক্তিকেই সংগ্রামের আসল লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। জনগণের মুক্তির নাম দিয়ে জনগনের উপর অত্যাচার নিপীড়ন খবরদারী করার নীতি তিনি ও চীনা কম্যুনিস্ট পার্টি গ্রহণ করেনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই সংগ্রামের বর্তমান অধ্যায়ে যে রাজনৈতিক দিশাহীন আত্মঘাতি ভ্রাতৃঘাতি হানাহানি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা থেকে মুক্ত হবার জন্য সঠিক পথ খুজে পেতে মাও সেতুঙ ও তার সংগ্রামকে অধ্যয়ন করা প্রত্যেক বিপ্লবীর অবশ্য করণীয় কর্তব্য বলে তিনি আলোচনা সভায় উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, মা সেতুঙ বলেছেন, রাজনৈতিক সংগ্রামে বিজয়ী হওয়া বা পরাজিত হওয়ার ক্ষেত্রে ’আদর্শগত এবং রাজনৈতিক লাইনের সঠিকতা বা বেঠিকতাই সবকিছু নির্ধারণ করে।’ তাই মতাদর্শগত লড়াই এগিয়ে নেয়া আন্দোলনকারীদের প্রধান কর্তব্য হওয়া প্রয়োজন। তিনি সঠিক রাজনৈতিক লাইন ও দর্শনকে আত্মস্থ করা সম্ভব হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের সংগ্রাম সঠিক দিশা পাবে বলে।
তিনি বলেন, মাও সেতুঙ যখন সংগ্রাম করেছিলেন তখন তিনি শুধুমাত্র ’শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ করেননি। এছাড়া তিনি জনগণের উৎপাদন, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনের জন্য পার্টির সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ফলে তিনি ব্যাপক চীন জনগণের সমর্থন লাভ করেন এবং সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই সংগ্রামের ক্ষেত্রেও পার্টির সদস্যদের জনগণের সকল সমস্যার দিকে খেয়াল রেখে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে।
উল্লেখ্য চীন বিপ্লবের নেতা মাও সেতুঙ ১৮৯৩ সালে হুনানের শাওশানে এক দরিদ্র কৃষক পরিবাে জন্মগ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে চীন গণপ্রজাতনন্ত্র গঠিত হয়। বিপ্লবের পরে তিনি চীনকে স্বনির্ভর করতে গ্রেট লিফ ফরোয়ার্ড আন্দোলনের মাধ্যমে চীনকে শিল্প ও কৃষিতে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেন। শেষ বয়সে তিনি মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ডাক দেন।
১৯৭৬ সালের ০৯ সেপ্টেম্বর তিনি বেইজিঙে মৃত্যুবরণ করেন।

No comments:

Post a Comment

সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...