ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল বা ডিজিটাল মাধ্যম যেভাবেই এই বর্তমান আধুনিক তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিকে অভিহিত করে থাকি, এটা বলা সংগত ও বাস্তবসম্মত যে, এই ইনফরমেশন টেকনোলজি আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জাতীয় সত্ত্বার অন্তর্ভুক্ত একটি বিশাল সংখ্যাবহুল অংশকে নানাভাবে ওতপ্রোতভাবে প্রভাবিত করেছে। এই মাধ্যমটির কল্যাণেই আজ আমরা আমাদের ক্ষীণমাত্রার চেঁচামেচি বা চিৎকার বা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইকে বেশ বৃহৎ এক পরিসরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। বিশেষভাবে বৃহত্তর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আমাদের সেই সুযোগটি হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও বিষাদগ্রস্ততার সাথে বলতে হয় বা হচ্ছে যে, আমরা বিশাল অন্তর্জালিক এই বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ মাধ্যমে যেন অসামাজিক আচরণ তথা সামাজিকতা বিশৃঙ্খলার মূর্ত প্রতীক চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করতে বদ্ধপরিকর! আমরা যেন নিজেদের অসামাজিক আচরণকে প্রস্ফুটিত করতেই বেশি সোচ্চার! আমরা যেন নিজেদের দায়বোধহীন অসামাজিক সত্ত্বা হিসেবে পরিচিতির তকমা দিতে সচেষ্ট! আমরা যেন নিজেদর ক্রমশ ‘অসামাজিক’ই করে তুলছি!
বিশেষ করে বলতে হয়, রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান, এ বিষয়ে আলোচনার দিক থেকে আমরা যেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হিসেবে জাহির করতে ব্যতিব্যস্ত থাকি!
আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হয়, আমরা ফেসবুকের মতো বৃহৎ বিশ্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে যাদের জাহির করতে দেখি, বা নিজেদের প্রচার করতে দেখি বা যাদের সক্রিয় থাকতে দেখি, তারা যেন ক্রমাগত মাত্রায় নিজেদের ‘নিজস্ব পরিচয়’কে তুলে ধরতে যারপরনাই ধনুর্ভঙ্গ পণ তথা শপথ পাঠ করেছেন এবং সে অনুযায়ী কর্মবীরের পরিচয়ে আবির্ভূত হয়েছেন।
কিন্তু খুব দুঃখ ও অনুযোগের সাথে বলতে হচ্ছে, সামাজিকতার অন্যতম প্রথম শর্ত হলো, নিজের পরিচয় আগে প্রদান করা! আমরা কোথাও বেড়াতে গিয়ে যেমন অন্য অপরিচিতের সাথে দেখা হলে পরষ্পরের পরিচয় দিয়ে বা পরিচয় নিয়ে তারপর খোশগল্প করি বা অন্যান্য সামাজিকতার চর্চা করে থাকি, ঠিক তেমনি ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রথমেই নিজেদের পরিচয় আমাদের দেয়া সামাজিক আচরণ বিধানসম্মত হিসেবেই আমরা মনে করতে পারি। কিন্তু ফেসবুকে যেন এখন পরিচিতির দেখা্ মেলে না!
বরং, ভিন্ন নাম গ্রহণ করে, ছদ্মনাম ব্যবহার করে, ভুয়া নাম পরিচয়ের পিরিচিতি দিয়ে আমরা কথা বলতে,লিখতে, গবাগবি করতে, নিন্দা-মন্দ-গাল-চিৎকার-চেঁচামেচি করতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি!
এবং, আরো ভয়ানক হচ্ছে, এই সকল ছদ্মবাদী-ভিন্ন নামীয়-ভূয়া পরিচয়ধারীগণ স্পর্শকাতর বিষয়ে নিজেরা প্রতিনিধি সেজে ক্রমাগত কথা লিখে যাচ্ছেন। এবং এই কথা লেখালেখির মাধ্যমে যে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বিষিয়ে তুলছেন তার কথা তারা মনে রাখছেন না।
একে দায়িত্বশীলতা বলা যায় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন করা অপ্রাসঙ্গিক না হয়ে যায় না।
একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি দায় নিয়েই কথা বলে থাকেন। কিন্তু এই সকল ভিন্ন নামধারী-ছদ্মবেশী -ভুয়া পরিচয়ধারীগণ যা কথা বলেন তা তারা দায় নিয়ে যেমন বলেন না, তেমনি তারা নিজেরাই ‘অস্পষ্ট-ছায়া-আবছায়া’ হওয়ার কারণে তাদের ‘শক্তিশালী’ ‘প্রভাব বিস্তারকারী’ বা ‘গৃহদাহ বিস্তারকারী’ কথাবার্তা লেখালেখির কারণে বৃহত্তর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভয়ানক-চিন্তাবিনাশী-সমাজ চেতন-অচেতনতা সৃষ্টিকারী ছায়াপাত ঘটাচ্ছে তা যেন তারা জেনেও না জানার ভান করে থাকেন এবং নিজের বা নিজেদের পরিচয় চিহ্নিত না করার কারণে তারা ‘প্রভাব’এর দায় থেকে ‘দায়মুক্তি’ পেয়ে যান সহজেই!
আর, এতে তিন সংগঠনকে যে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় তার চর্চাও করা হয়ে ওঠে না। জবাবদিহিতা যেন লা-জবাব বেওয়ারিশ হয়ে যায়!!
এক অর্থে কড়াভাবে বললে বলা যেতে পারে, এভাবে তিন সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের অদায়িত্বশীল, জবাবদিহিবিহীন থাকার প্রবণতা যেন প্রকাশিত হয়।
কী নির্মম অবিচারের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা পার্বত্য জুম্ম জনতা!
এখানে বলে রাখা ভালো যে, ছদ্ম নামে বা ভিন্ন নামে বা ফেক বা ভুয়া আইডি ব্যবহার করে আলোচনা বা কথা বলা বা লেখালেখি করার ক্ষেত্রে আমি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা বা তা করা যাবে না এমন কথা এখানে বলছি না।
শুধু তিন সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে যে তা করা হচ্ছে তার কথাই বলছি। এবং তা যে ক্ষতি বৈ কিছই ফল উৎপাদন করছে না তার কথাই বলছি।
এছাড়া বলা দরকার যে, এতে যেমন তিন সংগঠনের সত্যিকারের পরিচিতি চাপা পড়ে যায়, তেমনি ভিন্ন নাম ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে সাবোটাজ করার সুযোগও বিস্তৃত করে দেয়া হয়ে যায়। এটা বরং আত্মবিনাশী বা বুমেরাং হয়ে ওঠে আমাদের জুম্ম লড়াইয়ের জন্য।
এ বিষয়ে তিন সংগঠনের কর্তাব্যক্তিগণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভোক্তাগণ , আমাদের চেতনাবোধ সম্পন্ন জনগণ আরো সিরিয়াস হয়ে চিন্তাভাবনা করবেন এই প্রত্যাশা করা ছাড়া আমাদের কি ই বা করার আছে?!!!
তারিখ: ১১ জুলাই, ২০১৫