Showing posts with label মতামত. Show all posts
Showing posts with label মতামত. Show all posts

Wednesday, August 2, 2017

তাজউদ্দীন আহমদঃ নতুন আলোকে

সাদাসিধে তাজউদ্দীন আহমদ

তারিখঃ ২২ জুলাই, ২০১৭
তাঁর যখন ৪৫ বা ৪৬ বছর বয়স তখন তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ নেতা। তাঁর কন্যা শারমিন আহমদ যেমনটি বলেছিলেন, তাজউদ্দীন ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক, দূরদর্শী চিন্তার অধিকারী একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, একজন পরিশুদ্ধ চিন্তাসম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি নিজ দায়িত্ব ও কাজে ছিলেন কর্তব্যনিষ্ঠ। তিনি সততাকেই নিজের পুঁজি হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন। এগুলো কথার কথা নয়, তাঁর সারাজীবনের কাজে তিনি এই প্রমাণই রেখে গেছেন।
শারমিন আহমদ লিখেছেন, 'সত্যি শক্তি। সত্য তার আপন বলে বলীয়ান।' এই নীতির একনিষ্ঠ অনুসারী আব্বু লড়েছেন একাকী।' তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ এক লড়াকু, যিনি নিজের জন্য কিছু প্রত্যাশা করেননি। যতদিন এই লড়াকুকে শেখ মুজিব কাছে রাখতে পেরেছেন ততদিন শেখ মুজিব ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অপরাজেয়! কিন্তু দেশ স্বাধীন হবারর পরে যেইদিন তিনি তাজউদ্দীন আহমদকে দূরে সরিয়ে দিলেন, সেইদিন থেকেই যেন তাঁর 'পারমী' বা 'খোদার করুণা' কৃশ আবছা ঝাপসা হতে শুরু করে!
তবে তাজউদ্দীন আহমদ এমন ধাতে গড়া এক মানুষ, যিনি এত সকল কিছুর পরেও, নিজের 'নেতা'র কাছ থেকে এতো অবহেলা, বঞ্চনার শিকার হবার পরেও কোনোকালেই, কোনোসময়েই 'নেতা'র বিপরীতে কোনো অমংগল কাজ করা দূরে থাক, মনেমনেও সেই কামনা করেননি।
এই এক লৌহদৃহ মানবিক মননের অধিকারী ব্যক্তি আজ থেকে ৯২ বছর আগে ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুরের কাপাসিয়া দরদরিয়ায় জন্মেছিলেন। ধন্য এমন মানব জনম, সার্থক এমন জীবন যাপন!
এই ব্যক্তি, যিনি মনেপ্রাণে ছিলেন এই দেশেরই বৃহত জাতির একজন, বাঙালি। আবেগে চিন্তায় তিনি ছিলেন খাঁটি আদর্শবান অনুসরনীয় একজন 'বাঙালি'ই, তবে একইসাথে মানবতাবাদীও। কিন্তু, অত্যন্ত বেদনার যে,
আজ বৃহত 'বাঙালি' জাতিগোষ্ঠির মধ্যে এই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ভাবার মতো নেই কেউ, তাঁর আদর্শকে তুলে ধরে অনুসরনীয় হবার মতোও নেই এমন কোনো অনুসরনীয় কোনো ব্যক্তিত্ব!
তিনি বলেছিলেন, ‘শুধু ভালো বক্তৃতা করে দেশের মানুষের মঙ্গল করতে পারবেন না। বক্তৃতা সত্যি হতে হবে। মানুষের সত্যিকার অবস্থা আগে তুলে ধরে তারপর প্রকৃত নির্দেশ দিতে হবে। এর নাম নেতৃত্ব। এটা খুবই কষ্টকর। কিন্তু সত্যিকার খায়েশ যদি হয়ে থাকে তা হলে তা করতে হবে। কিন্তু এছাড়া শুধু বক্তৃতা করে বেশি দিন নেতৃত্ব করা যাবে না।’(সূত্রঃ শুভ কিবরিয়া, বাংলা ট্রিবিউন)
আজকাল কথা বলার লোক বা ভুরি ভুরি ভালো ভালো কথা লেখার লোক তো কম পাওয়া যায় না! বরং ভালো ভালো কথা বেশিই যেন বলা হয়ে থাকে, লেখা হতে থাকে! টিভি টকশো'তে চোখ কান দিলেই তা গোচরীভূত হতে থাকে!
আজ ২৩ জুলাই ২০১৭ পর্যন্ত যদি তাজউদ্দীন বেঁচে থাকতেন তবে তাঁর বয়স হতো ৯২। এই বয়সেও অনেকেই বেঁচে থাকেন। শুনেছি মালয়েশিয়ার মাহাথির মুহাম্মদ এই বয়সে আবার রাজনীতিতে নাকি আসতে চাইছেন।
কিন্তু, তাজুদ্দীন ৫০ পেরোতে পারেননি। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের ২২ তারিখ তাঁকে আটক করা হয়। একই বছরের ৩ নভেম্বর আরো তিন নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামানসহ তাজউদ্দীনকে কারাগারে খুন করা হলো নির্মমভাবে।
শেখ মুজিব খুন হবার পরে তিনি নিজের প্রাণ রক্ষার জন্য পালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু 'অপবাদ' মাথায় নিয়ে তিনি পালিয়ে যেতে চাননি। তবে তিনি যদি পালিয়ে যেতেন, রক্ষা করতেন নিজেকে, তিনি যদি আবার হাল ধরতেন দেশ গঠনের কাজে, তবে দেশের ইতিহাস কি অন্যভাবে লিখতে হতো?
যা হয়নি, তা হবার নয়। তাই ও কথা তোলা থাক অগোছালো!
এই সত্যটিই আজ প্রকটিত হয়ে আমাদের শিক্ষা দিক যে, 'নেতা যখন অসৎ, অযোগ্য, দুর্নীতিপরায়ণ ও সুবিধাবাদীদের কাছে টেনে নেন এবং তাদের প্রশ্রয় দেন তখন ভয়াবহ পরিণাম শুধু তার ভাগ্যেই ঘটে না, পুরো জাতিকেই তার মাশুল দিতে হয়। জাতি পিছিয়ে যায় শত বছর।'(তাজউদ্দীন আহমদ, নেতা ও পিতা; পৃঃ ১৭৫; শারমিন আহমদ)
তবে নেতা বা নেতৃত্ব যখন জাতীয় উত্তুঙ্গ উত্তাল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে সঠিক দিশা হাজির করে নেতৃত্ব দিতে অপারগ হন বা সঠিক ভুমিকা রাখতে সমর্থ না হন, তবে তখনও একটি জাতিকে, একটি জাতিগোষ্ঠি ও একটি অঞ্চলের জাতিসমষ্টিকে মাশুল গুণতে হয়, পিছিয়ে যেতে হয় আরো বহু বছর।

Sunday, July 30, 2017

ফ্যশন অর এসটাইল ইন দ্য লাড়েই!-এগ্গান তেম্বাঙ



তারিকঃ ২৭ জুলাই, ২০১৭

এ লেঘাগান লিঘিবার কারণ অহলদে গুরো ভেই ফেসবুক বন্ধু সুদর্শী চাকমা মিশিলঅত সানগ্লাস চোঘোত দে’না লোইনেই এগ্গান লিককে। সিওত ত্যা সানগ্লাস ন দিবার কধা কুইয়্যে।সাদাচোঘে বিষয়আন লোইনেই আজলে কধা কবার তেমন নেই মনে অহবঅ। হালিক,আমি আমা সমাজ পরিবর্তনঅর ক্ষেত্রে বা আমার লাড়েইআন আক্কোই নেজেবার ক্ষেত্রে সাদাবাওচ্চে তুত্রিনিংতাত্রাং এত চিগোন চাগোন বিষয় বা সমস্যা লোইনেই এতঅ সময় কাদেই দিই যে, দেঘা জাইদে আমি আজলে শেজেনদি আমা লাড়েইওর মূল উদ্দেশ্যআন’ওই পুড়িই ফেলেইওই!
ম’র এই আলোচনা বা তেম্বাঙআনঅত মুই আলোচনাগুরিনেই সেই বিষয়আন তুলি ধুজ্জোং। আমি জুনি আজল কাম তুত্রিং নাত্রিং কাম ভাগ ন গুরি তোইলে শান্দিবাইনীউনে তারা জিঙানী লাড়েইওত নিজঅর জিঙানির বেকভাগ দিইনেই বয়চকালে জ্যাএন উভোককাককাক উইওন, বজর বিদি জাদে জাদে কমলে কমলে আমা উগুরেও সে দঝাআনি ব দঝা ভেদা দ্যাএ সিআন থাআরও গুরি ন পারিবং!
লেঘাগান মন দিইনেই কেউ পুড়িনেই কিজুকাজু সজাগ চোকমুফুত্যা অহলেও মনআন হুজি অহবঅ!

লেঘাগানঅর শুরু...

বাংলাদেঝ'অত ওবোচ্চো 'বিপ্লবী মিশিল' দেঘা ন জাই। আর 'সান গ্লাশ' বা 'চোকশমা'আন বেধক্যা সা'আন দেঘেলে'য়ো 'সাংনগ্লাশ' দ সমচ্যা নয়! সমচ্যা অহলদে 'লাড়েই'আন বা সংগ্রাম বা 'বিপ্লব' বা সংগ্রাম'আন। মাও বা চে বা কাস্ত্রো সিগেরেট হ্যানেই দ তারা বিপ্লবী!তারারে দ কনঅজনে ‘;অবিপ্লবী’ ন কলাক!

ভাব দেঘানা, ভাব ল'না, ভাব মারানা বা এসটাইল দেঘানা সমারে জাদে বা জেকজেক গুরিনেই লাড়েই গরানা, লাড়েইওত থানা, লাড়েই'আন'অরে নিজর গুরি ল'না ভিদিরে পার্থক্য দ আঘে! আর লাড়েইওর কারণে এসটাইল গরানা, সানগ্লাশ দি পানাহ, তুক্যা দেনা সি'আন দ লাড়েইওর কারণে। হালিক অহয়'আন'অত নয়'আনত এসতাইল মারানা সি'আন দ 'বিপ্লবী' 'সংগ্রামী' কাম নয়! সি'আনি কধা বাদ, এই 'হাচ্চত' স্বাভাবিক সংস্কৃতি বা মূল্যবোধ'ওর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য'ও নউয়।

এ উপমহাদেশ'অত যারা সংগ্রাম গরন তারার কিজু 'ডগমা' আঘে। এই দেঝত যারা 'বিপ্লবী' হলান তারা সমাজ জাত দেঝ লোইনেই নিরাল নিবিড় গুরিনেই কাম ন গুরিনেই 'মদ হানা' 'শুগর এহরাহ ' হানা বা সমাজ'অত জি'আন 'ট্যাবু' সি'আন ভাঙানা'আনঃঅরে 'বিপ্লবী কাম' মনে গরন। আমা সিদু বিপ্লব বা সংগ্রাম যারা গরন তারা 'মদ ন হানা' ই'আন'অরে 'সংগ্রামী কাম' মনে গত্তাক বা এবঅসং মনে গরন। সেনোত্তেই সমাজ'অর স্তর ন বুজিনেই সমাজ'অত যারা মদ হান তারারে মদ'অ ভাদি বোগেই দোন। হালিক এত বিধিনিষেধ দিবার পরেও, এতঅ শাস্তি দিবার পরেও,এতঅ চেরেস্তারপরেও মদ হানা মদতি অহনা বন্ধ ন অহয়। অন্য কিত্তে চীন দেঝত, কিউবা সিদু তারা মদ হেইনেই বিপ্লব গুজ্জোন। আজলে পোল্লেম সমাজ লোনেই স্টাডি ন গুরিলে সমাজ বোদোলেবার মতন যুগোপযোগী কর্মসূচি ন ললে দ সমাজ বোদোলেবার আঝা বা বোদোলেবার কামআনঅত আমি ফেইল মারিবঙ! মদতদ নঅ হেইনেই সন্যাসব্রত ধারণ বা সাধু ‘সাজানাহ’ বা সেনজান কাম গরানা মানে দ রাজনৈতিক ভাষায় 'ভাববাদী' অহনা। অর্থাৎ বস্তুবাদী বা দ্বন্দ্বমূলক ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দৃষ্টিভংগী বা সঠিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগী অরজন ন গরানা। যারা আগেদি সমাজ বোদোলেবার বাগকাম আহদঅত লুইওন তারা দ বানাহ এই ভাব ন মারঅন!

আজলে আমি অহত্তে অহত্তে সমাজ'অ ভিদিরে থেইনেই নানা চিন্তাগত সংস্কার বা দৃষ্টিভংগী লালন গুরি। সে দৃষ্টিভংগী অবশ্যই আমার সংস্কৃতি বা সংস্কার। সি'আনর কারনে কোনো এগগান জিনিচ বা বিষয়'অরে গম বা ভান্যা বা সা'চ্যা বা বেসাচ্যা(সাজ'অন, বেসাজ'অন) কোই। হালিক সি'আন'অ সমারে সমাজ পরিবর্তন'অর সম্পর্ক আপতিক মাত্র। সি'আনঃঅর স্ট্যাটিক 'গম ভান্যা' কিজু নেই। গম আর ভান্যা স্ট্যান্ড'অ উগুরে বা অবস্থানগ্রহণঅ উগুরে নির্ভর গরে। আর 'বিপ্লবী' বা 'সংগ্রামী' রাজনীতি বা এই ধরনঃঅর রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগী উন্নততর মতাদর্শ ধারণ গরে। উন্নত বা উচ্চতর মতাদর্শ মানেই সংস্কারমুক্ত নৈর্ব্যক্তিক চিন্তাচেতনার মাধ্যমে সমাজ বিশ্লেষণ এবং সমাজ পরিবর্তন'অর কাম গরানা সেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভংগীর ভিত্তিতে। তবে কধা আঘে, সমাজ পরিবর্তন গুরিলে সমাজ'অত উপযোগী কর্মসূচিই লো পুরিব'অ।

সমাজ পরিবর্তন গুরিবার চ্যালে সমাজ'অর উপযোগী কাম গরা পুরিব'অ। মদ'অ ভাদি বোগেই দে'না জ্যান সঠিক কর্মসূচি নয়, সেনজান মদ হেবার ঢালাও সুবিধে দেনাও সঠিক কর্মসূচি নয়। কুবোত দাড়ি বজা পড়ে, কোন জাগাত কমা, কোন জাগাত হাইপেন, সেমিক্লোন, প্রশ্নবোধক চিহ্ন দি'ইয়া পরে সি'আন যারা লেঘানাত এক্সপার্ট তারাত্তেই নিশ্চয় হবর পা'আ পড়ে। আর যারা্ দেচজাদঅর কাম গুরিবাক তারাততুনো সমাজচোরে স্টাডি গুরিনেই কন কামআন আগে গরা পুরিবঅ, সমাজঅর কন সমস্যাআন মৌলিক,কুবান সেকন্ডারি বা গৌণ সিআন তলবিচ গুরিনেই বাজি ল’বার বাস্তবিক রাজনৈতিক জ্ঞান থাআ পুরিবঅ।
আমি জুনি সমাজ লোইনেই গভীর অনুসন্ধান ন গুরিনেই কুড়ো আঙত্যেদে ধক সমাজ লোইনেই কাম গুরি তোইলে দ আমি জাদঅর ভালেদ গুরি ন পারিবং। বরং আমার সে কামআনির কারণে আমা জাদঅর হারাপ কিজু অহবারই সম্ভাবনা বেচ আগে। আর সে কারণেই জাদঅর ভালেদ গুরিবার মত এতঅ কাম আপাতভাবে অহবার পরেও আমা জাদঅর এতঅ দুর্বল অবস্থা আমি লাআক পেইর। কারণ যারা বিপ্লব গুরিবার বা সমাজ বোদোলেবার কধা তারা তিলে তিলে কুড়ো(মুরগী) আঙুত্যে পারাআ সমাজ লোইনেই আঙুদা আঙুদি গুজ্জোনদে বানাহ। চেুদোমেএ উদোনআন আধং গুজ্জোন পারাআ উইয়্যে।


আমা জাদঅর যারা বিপ্লবী হোলান বা যারা সমাজ লোইনেই কাম গরঅন তারার আরেগ্গান সমস্যা দেঘা দেএ।
গভীর সঠিক রাজনৈতিক চেতনা আর দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন ন গুরিবার কারণে এ বালখিল্যতা বা চিগোনগুরো ধক মানসিকতা দেঘা দেএ। আমি দেঘি যারা লাড়েই গরঅন বা লাড়েইও থান তারা লাড়েই গত্তে গত্তে নিজঅরে পোললেম জমঅর বিপ্লবী বানেই রাঘান। হালিক হানক্কন পরে সে সলংবোদোলেইনেই শুন্য ডিগ্রিততুন তিনশষাইট ডিগ্রি বুদুলিনেই বিরাট প্রতিবিপ্লবী বা প্র্রতিক্রিয়াশীল ওই জানদোই। বিশেষগুরি সমাজ বোদোলেবার কর্মসূচি লোইনেইও তারা শুন্য ডিগ্রিততুন তিনশষাইট ডিগ্রি বুদুলি জাআদে দেঘাজাই।ধরা জোক,মিলে ষ্বাধীনতার কধা। মুই ম আলোচনাআনঅত বোঝেবার চেলুংগে, সমাজঅর স্তরভেদে সমাজ পরিবর্তনঅর কাম গরাপরে। হালিক ইআন ক’বার পরে নারী স্বাধীনতা লোইনেই ,মুই কী আমা সমাজঅত মিলেউনোরে পশ্চিমা ধাঁচে স্বাধীনতা দিবার চাআং কিনা কোআ অহলঅ। সে জবাবে জবাবে মুই লিক্কোঙ- নারী স্বাধীনতা মানে নারীর মর্যাদা, নারীর স্বকীয়তা স্বাতন্ত্র্যরে স্বীকার গরানা, নারীর সামাজিক দায়িত্ব কর্তব্য বিষয়ে সচেতন অহনা। আর দায়িত্ব করতব্যবোধ অহলদে পারস্পরিক। নারীরে সম্মান দি'আ পুরিব'অ, নারী সমাজ'অর সম্মান বজায় রাঘেব'অ।ইক্কো সানগ্লাস দেনা ন দেনা লোইনেইও বা অন্য বিভিন্ন ধুক্কেন সমস্যা লোইনেইও সে কধাআন কোআ জাই।
মুই নিজে জ্যাক্কেনে হাগারাছুরি পাআটি(পার্টি) কাম গুজ্জোঙ,স্যাক্কেনে দিক্কোঙ, আমি হবংপুজ্জে আদামঅত স্কুলঅ পো-গাবুজ্জেউনো ভিদিরে শৃংখলা আনিবার জেইনেই কিজু কিজু সমাজঅর অতি উৎসাহী মানজে স্কুল পো আর গাবুজ্জেউনোরেেএককধায় ‘জেলহানা’ত রাঘাই পারাআ রাঘেবার পরামর্শ দিলাক! হালিক, কিজুদিন বাদে দেঘা জেলঅদে এ চরম ‘বিপ্লবী’ চিদে গুরিইএ মানুচ্চুনোর ‘বিপ্লব’ মাধা্-আগা দেঘাইও নেই! শেজেনদি আজল কামআন বুদি রাঘিইওন! ইআনঅরেই কঅবার চিওঙ শুন্য ডিগ্রিততুন তিনশষাইট ডিগ্রি উল্লানা। আমা সমাজ বা জাদঅর এ হাচ্চত সমাজঅ ভিদিরে, রাজনৈতিক দলঅ নেতাউনো ভিদিরে, মানজো ভিদিরে আহরে আহরে কেজেএ কেজেএ আঘে!

আমি সমাজ'অর সেকন্ডারি সমস্যালোই মশগুল থ্যানেই দ 'বিপ্লব' 'সংগ্রাম' আক্কোই নেজেই ন পারিবং!

সমাজ'অর নানা তুতত্রিং নাতত্রিং সমস্যা আঘে। এধকভিলোন দেঘা জিইয়ে, আমি কোন সমস্যাগান মুখ্য আর কোন সমস্যাগান গৌন সি'আন তলবিচ ন গুরিনেই বানা তেম্বাং সুলুক গুরি গুরি থেই। সেনোত্তেই আমি তলা লা'আপ ন পেবার অক্ত অহয়! আমি দ ব্যাগে সমাজ'অ ডাক্তর নয়। ধরা জোক এগগো রুগি ডাক্তর'অ সিদু মাধাপিড়েত্তেই জেল'অ। ডাক্তজ্যে দ বানা মাধা পিড়ে কিনে দারু ন দিব'অ! ত্যা চেব'অ কী কারণে মাধা পিড়ে অহর। সি'আন চোঘোর কারনে অহলে চোঘও দারু দিব'অ। প্রেশার'অর কারনে অহলে আরেকধুক্কেন দারু বা অন্য কারণে অহলে আরেকধুক্কেন দারু দিব'অ। সেনজান গুরি সমাজ'অর যারা বা জ্যা ডাক্তর ত্যা বা তারা সে অনুযায়ী দারু জোগওলেবাক, বা জোগোলে পেবাক। জোগোলে ন পারিলে দ অসুক বা পিড়ে গম ন অহব'অ, বরং আরো জটিল অহব'অ!
আপাত মুই ইআন লোইনেই ম আলোচনা ইওত থুম গুরিলুঙ।

শিল্প-সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা

তারিখঃ ২৪ জন, ২০১৭
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে হলো। অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো আলোচ্য বিষয় খুবই সহজ মনে হতে পারে! কিন্তু এই আলোচনার একটি জটিল 'অমীমাংসিত' প্রপঞ্চ রয়েছে। অনেকটা 'ডিম আগে নাকি মুরগী আগে' প্রশ্নটির মতো একটি উত্তর প্রাপ্তির বিষয় জড়িয়ে রয়েছে! 
শিল্প-সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা থাকা বা না থাকা বা এই ধারার প্রাধান্য থাকা না থাকার সাথে সাথে নিচের প্রশ্নটি নিয়ে আমরা ভাবতে পারি!
'সংগ্রামী ধারার সাহিত্য আগে সৃষ্টি হবে নাকি সংগ্রাম জারি থাকা বা সংগ্রামী ধারা জোরদার' হওয়া আগে সৃষ্টি হতে হবে?
সংগ্রাম যদি জারি না থাকে বা যদি সংগ্রাম বা 'বিপ্লব' জোরদার না হয় তবে সংগ্রামী ধারার শিল্প ও সাহিত্য চলমান সমাজ জীবনে কী প্রাধান্য পাবে? অথবা প্রথমে সমাজের শিল্প ও সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা সৃষ্টি হবে, তারপরে পরবর্তী প্রেক্ষাপট হিসেবে আসবে জোরদার সংগ্রাম?
কখন একটি চেতনামূলক গান মানুষকে জাগাতে পারে? 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে' গানটির আবেদন কি '৭১ সালের আগে ছিল? নাকি '৭১ এর ৯ মাসের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে এই গানটি 'আবেদনময়ী' হয়ে মানুষকে জাগিয়েছিল?
শিল্প ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনার সময় এই বিতর্কটির মীমাংসা তবে কি আবশ্যকীয়ভাবে সামনে আনতে হয়/হবে?
বিষয়টি নিয়ে কথাবলতে হোল, কারণ এ নিয়ে বিভ্রান্তির কারণে আমরা একে অন্যকে দোষারোপ করে থাকি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে যে সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব চলছে তাতে আমরা এই বিষয়টি নিয়েও নানা ধোঁয়াশামূলক চিন্তাভাবনা করি। অথচ, সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে বা সমাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে নেতৃত্ব দিতে গেলে বা এ নিয়ে ভুমিকা রাখতে হলে আমাদের এই বিষয়টিকে সিরিয়াস আলোচনা করে মীমাংসায় যেতে হবে। 
আপাতত এটুকু মাত্র যোগ করলাম। 

Sunday, July 23, 2017

লুঙুদু পালাহ- এক, দুই, তিন ও চার

[ফেসবুকে লংগদু পালাহ-১, ২, ৩, ৪ আকারে এই লেখাগুলো লিখেছিলাম। আরো কিছু বিষয়ে লেখার কথা থাকলেও আরো নতুন সমস্যা এসে যোগ হবার কারণে এবং কিছু ক্ষেত্রে তথ্যের মিসিং লিংকেজ থাকার কারণে আর এ বিষয়ে লিখিনি। তবে এই চারটি লেখা একত্র করে ব্লগে প্রকাশ করলাম। ধন্যবাদ]

লংগদু পালাহ-১
তারিখঃ ২৬ জুন, ২০১৭
চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ হলো চাকমাদের চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার কাহিনী। চাকমাদের একটি বিশ্বাস হলো, চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ বা চাদিগাঙ পালিয়ে যাওয়ার গীতিকাহিনী যেখানে সেখানে গাওয়া যায় না। যদি এই গীতিকাহিনী কোনো গ্রামে গাওয়া হয়, তবে সেই গ্রাম থেকে সবাইকে পালিয়ে চলে যেতে হয় বা সেই গ্রাম চাকমাদের হারাতে হয়। চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ’র মতো চাকমাদের এখনো নিজেদের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হতে হয়। বিগত ৪০/৪৫ বছরের মধ্যে চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ’র মতো চাকমাদের কতো গ্রাম যে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তার সঠিক হিসাব আসলে কোথাও নেই। কিন্তু যেই গ্রাম বা এলাকা তাদের ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, সেই গ্রাম বা এলাকায় কেউ চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ না শুনেও তাদেরকে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। অর্থাৎ, চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ বা গীতকাহিনী শুনলেও যে চাকমাদের নিজেদের গ্রাম ছেড়ে যেতে হবে তা হয়তো সঠিক নাও হতে পারে।
চাকমাদের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য জাতিসত্তারও নিশ্চয়ই এই ধরণের গীতিকাহিনী থাকতে পারে। অথবা নাও থাকতে পারে। তবে কেউ যদি লংগদু এলাকার জনগণের দুঃখের কাহিনী গীতিকাহিনী হিসেবে চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ’র মতো করে রচনা করতো, তবে তা শুনতে কেমন হতো জানা নেই। চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ এমন করুণভাবে গাওয়া হতো যে, যারা এই কাহিনী শুনতো তাদেরকে কাঁদতে হতো। কেউ কি লংগুদুবাসীর দুঃখের কথা করুণ সুরে লংগুদু পালাহ হিসেবে রচনা করতে এগিয়ে আসবেন?
সে যাই হোক, আমি এখানে লংগুদুবাসীদের দুঃখের কাহিনী বর্ণনা করার সাহ দেখাবো না। তবে সেখানে গতকাল গিয়ে যা দেখে এসেছি এবং শুনে এসেছি তার কিছুটা বর্ণনা করার চেষ্টা এখানে করবো।
জীবনের শেষভাগে এসে অশ্বিনীকুমার কার্বারীর উপলব্ধি
অশ্বিনী কুমার চাকমা। তিনি তিনটিলা গ্রামের কার্বারী। বয়স প্রায় ষাট বা সত্তরের কাছাকাছি। বেঁটেখাটো মানুষ। সবসময় হাসিখুশিই থাকেন। তার ঘরও এবার পুড়ে গেছে। ১৯৮৯ সালের ৪ মে প্রথমবার তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে গিয়েছিল। সাথে তাদের গ্রামও পুড়ে গিয়েছিল। আমরা একসাথে তিনটিলার পোড়া ঘরগুলো দেখতে গিয়েছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে তিনি বললেন, সবকিছু ধ্বংস হবার পরে, সবকিছু পুড়ে যাবার পরে এখন তিনি আর নতুনভাবে সবকিছু গড়ে তোলার আশা করেন না। একজীবনে আর কতোই বা সম্ভব? কত কষ্ট করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, দীর্ঘ বছর তিলতিল পরিশ্রম করে একএকটি পরিবার নিজেদের সম্পদ-সম্পত্তি বাড়িয়ে তুলেছিল এবং ঘরবাড়ি তুলেছিলো। একটু শান্তির আশায় তারা এই ঘরবাড়ি তুলেছিল। জীবনের বাকি সময়টা সুখে শান্তিতে তারা কাটাতে চেয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সালের পরে আবার তাদের শেষ বয়সে এই দশায় পড়তে হলো। তিনি কোনো প্রকার বিরক্তি ও দুঃখ না দেখিয়ে হেসে হেসেই বললেন, ’এই জিঙানিত আর নুও কিজু গুরিবার আঝা ন গরঙআর। গুরিলে পো শা’উনে গুরিবার চেরেস্তা গুরি পারঅন। আমি দ আর পারিদঙ নয়। বয়চ দ ওই জিএগোই, কদক আর পারে আর?’
জুম্ম জনগণের এই এক আপদ! দুঃখের কথাও তারা এমন হেসেখেলেতাদের জীবনের দুঃখ বেদনার কথা বলে যে, মনেহয় এই দুঃখ-কষ্ট কিছুই নয়! আসলে প্রতিনিয়ত দুঃখের মাঝে থাকতে থাকতে দুঃখ ও সুখ এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করতেও যেন আমরা ভুলে গেছি!
অশ্বিনী কুমার চাকমা যে কথা অক্লেশে বললেন, তা যে কত ক্লেশকর, কত বেদনাময় ও খেদযুক্ত তা সাদাকথায় বোঝানো চাট্টিখানি কথা নয়। একজন মানুষ তার জীবনের প্রারম্ভিক পর্বে একবার নিজের বাড়িঘর ধ্বংস হতে দেখার পরে, নিজের আত্মীয়স্বজনকে মারা যেতে দেখার পরে, নিজের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হবার পরে, পালিয়ে পালিয়ে জীবন কাটানোর পরে আবার নতুন করে যখন সে স্বপ্ন দেখা শুরু করলো। এবং তারপরে জীবনের শেষভাগে এসে সে যদি দেখে যে, সে সারাজীবনে যা সঞ্চয় করেছিল, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তিলেতিলে গড়ে তুলেছিল, তা কারো প্রতিহিংসার আগুনে লেলিহান শিখা হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে, সে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। তখন তার জীবন নিয়ে আর তখন কীইবা ভাবার আছে বা কীইবা ভাবার থাকতে পারে?
তাই অশ্বিনী কুমারেরও আর কিছুই ভাবার নেই! বাকি যা ভাবার আছে তা হলো, মরণ যেন ভালভাবেই হয়!


লুঙুদুত ধজা-পড়া-লড়া-পুড়া হেই পানা পালাহ-২
তারিখঃ ২৬ জুন, ২০১৭
লুঙুদুত জিওংগে আদিক্ক্যেগুরি। এককধায় যেবার কধা ন থ্যালেইও জানা। জেবার আগে তারাত্তেই কী নেজেই দিম চিদে গুজ্জোং। একজন'অর আর কদক তেঙা থাই! শেজেনদি ১০ কেজি আম কিনিলুং। সিউন যারে পারঅং হাবেবার চিদে থেব'অ গুরি নেজেইলুং। লুঙুদুত ম সমারে একজন গুরো ভেই আর মটরসাইকেল চালিয়েবো এল'অ। 
আমি লুঙুসুত জেইনেই পুড়া জিইয়ে আদাম'অত সুমিলং। এগগান আ' পুড়িই জিইয়ে ঘরত পানি হেবাত্তেই উদিলং। সি'ওত কধা অহল'অ ঘর আদ্যান্যা পুড়িই জিইয়ে মানজো সমারে। পরিচয় অহল' একজনদোই, য্যা ভেইয়ে ভেইয়ে মরামরিত তা নেককোরে আহরেইয়ে। তুমি সুবীর ওস্তাদ'অ নাং শুনি থেবা।
আমি আমা হিল চাদিগাং-অর বিজগ'অর এমন এগগান সময় পা'আর গুরির, জিওত ভেইয়ে ভেইয়ে মরামরি দেঘির। আহরেইয়েই আমা পরিচিত অপরিচিত ইত্তোকুদুম। আহরেইয়েই আমা জাদ'অর বাজা বাজা গম মানুচ্চুনোরে। ইওত তারা নাং আর ন তুলিম আর। তবে পোল্লেম পোল্লেম জ্যাক্কেনে জেএসএস এম এন লারমা পন্থীলোই ইউপিডিএফ'অর আইপা'আপি অহর স্যাক্কেনে মুই দীঘিনালা ভৈরফা সিন্দি তারার একজনদোই বেড়েইওং। সে মানুচচোরে লইনেই কধা রু'উত্তেদে, ত্যা আমা মানুচ জেদাবাদে আগুনওত পুড়িই মারেই ফেলেইয়ে। পোল্লেম পোল্লেম আই'পা'আপি লক্কেনে মুই তাল্লোই এক সমারে দিন্নোবো আর রেত্তোবো কাদেইওং। আমি একসমারে চাগালা থিগে বেড়েইয়েই, আমা আদাম্যাউনোরে জাগাজুমি বাজেবাত্তেই সাহজ দেই। তবে পরে ভালকদিন পরে শুনংগে তারে আর'অ কনজনে মারেই ফেলেইওন। তা মোক পো ঝি উনোর কধা মুই এব'অ মনত তুলোং। তারা কেনজান আঘন মুই হবর ন পাং। তবে সে সহযোদ্ধা বড়ভেইবো মুরিবার পরে মুই মনত দুক পিওং। তার নানা ভুলচুক থ্যালেও তার মরানাই মুই নিজ'অ সহযোদ্ধা ধুক্কেন মনত কস্ত পিওং।
লুঙুদুত থাগত্তে সিদু হানক্কন মুই সুবীর ওস্তাদ'অ মোককোলোই কধা কুইওং। তারার সুক-দুঘ'ও কধা বুজিবার চেস্তা গুজ্জোং।
ইঙিরি আদামে আদামে জাগায় জাগায় আমা জুম্ম মানেইওর কত'অ মিলে মা-বোন তার/তারার পো-ভেই-নেক-বাপ আহরেইওন! সুবীর ওস্তাদ'অ মোক্কো কধা চিদে গুরিই মত্তুন মনত উত্তে তারা বেগ'অর কধা।
মত্তুন মনত উত্তে ম বাপপো কধা। মনত উত্তে আর'অ বাপ-জিদু-আজু-দা-হাক্কা ইত্তোকুদুমবলা বা ইত্তোকুদুম ন উইয়ে আর'অ শত শত আমা শহীদ মানেইওর কধা।

লুঙুদু পালাহ-৩
তারিখঃ ২৭ জুন, ২০১৭
১৯৮৯ সালের ৪ মে। লুঙুদুতে যে হামলা হয়েছিল তাতে নিহত হয়েছিল ৩২ জন বা তারও অধিক। ঘরবাড়ি পুড়ে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিল ১ হাজারেরও অধিক। হামলা-হত্যার শিকার হয়ে পাহাড়ি জনগণ জায়গাজমি হারিয়েছিল শত হাজার একর।
লুঙুদুতে ১৯৮৯ সালে সংঘটিত হামলা নিয়ে ব্রিগ্রেডিয়ার সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম লিখেছেন,'.. বাঙালীরা উত্তেজিত হয়ে কতিপয় ভিডিপি সদস্যদের সহযোগীতায় ঘটনার দিন এবং তার পরদিন আগ্নেয়াস্ত্র, দা, বল্লম, কুঠার ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে করল্যাছড়ি, উল্টাছড়ি, শীলছড়ি, বগাপাড়া, আদ্রকছড়া এবং হরকুমার কার্বারী পাড়ায় উপজাতিদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, লুটপাট চালায় এবং লোকজনকে আক্রমণ করে।(পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিপ্রক্রিয়া ও পরিবেশ পরিস্থিতির মূল্যায়ণ; ফেব্রুয়ারি, ২০০১; পৃষ্ঠা-১৩৪)। এই উদ্ধৃতিতে যে সকল গ্রাম বা এলাকার নাম দেয়া হয়েছে তার অনেক এলাকায় এখন পাহাড়ি জনগণ বসতি বজায় রাখতে পেরেছে কীনা তা আমার জানা নেই। তবে সাধারণভাবে পার্বত্য প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায় যে, এই এলাকার শত হাজার একর জায়গা থেকে পাহাড়িরা সেটলারদের কাছ থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছে এটাই বাস্তবতা। (যারা এ বিষয়ে জানেন তারা প্রকৃত তথ্য যোগ করতে পারেন)
সে সময় জুম্ম জনগণের উপর যে অত্যাচার অন্যায় অবিচার করা হয়েছিল তার প্রতিবাদ করারও সুযোগ তখন পার্বত্যবাসীকে দেয়া হয়নি। রাজা দেবাশীষ রায় তাঁর এক ফেসবুক নোটে এমনেস্টির উদ্ধৃতি দিয়ে এই তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাঙামাটির জনগণকে বা প্রতিবাদ করার জন্য ঢাকায় পর্যন্ত যেতে বাধা দেয়া হয়েছিল।
সুতরাং, তখন এই অন্যায়ের প্রতিবিধান করার জন্য থানায় গিয়ে মামলা করার চিন্তাও কেউ করার সাহস করেনি। অথবা, মামলা যে করা যায় তা কারো মাথায়ও ছিলো না! অথবা দেশে বিদেশে এ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল সভা সমাবেশ করারও তেমন অনেক কেউ ছিলো না। তাছাড়া তখন দেশে ছিলো সামরিক শাসনের সময়। যে সকল পত্রিকা প্রকাশিত হতো তা ছিল সামরিক সরকারেরই নিয়ন্ত্রণে। এমন পাহাড়ি কোনো সাংবাদিক ছিলেন না বা সাহসী কোনো সাংবাদিক তখন সাহস নিয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে পোড়া ঘরের ছবি তুলতেও আসেননি। বরং ঘটনাকে ভিন্নভাবেই হয়তো তখন দেশবাসীর কাছে তথ্যমাধ্যমের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এবং এতে জায়েজ বা বৈধ হয়ে গিয়েছিল একটি গণহত্যা সংঘটনের। পাহাড়িদের তাদের বাপদাদার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদকেও এভাবেই হয়তো/নিশ্চিতভাবেই বৈধতা দিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
কিন্তু এই আজকের ২০১৭ সালে এসে তার মাত্রা ও প্রকৃতির কিছুটা হেরফের হলেও নীতিগত দিক থেকে অধিপতি শ্রেনীর অবস্থান 'যা লাউ, তা কদু'ই রয়ে গেছে কীনা এই প্রশ্নটি জুম্ম ও সচেতন মহলের কাছ থেকে বারবার প্রকটিতই হচ্ছে।( ড্রাকোনিয়ান ৫৭ ধারা এখন আর সাদাসিধে সোজাসাপ্টা দুর্মুখ কথা বলতে উতসাহিত করে না বটে!)
তথ্য হলো ঘটনাত পরে প্রশাসন বাদী হয়ে সেটলার বাঙালিদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। মামলার ধরণ কী আমরা জানি না। মামলায় ব্যাপক মানুষের নাম উল্লেখ করে প্রকৃত পরিকল্পনাকারী ও হামলা বাস্তবায়নকারীদের আড়াল করা হচ্ছে কীনা তাও স্পষ্ট নয়। এছাড়া পাহাড়িদের দেয়া মামলায় এখনো বৃদ্ধা গুনমালা চাকমা হত্যার বিষয়টি যোগ করা হয়নি। অর্থাৎ যোগ করা হয়নি ৩০৭ ধারা। অন্যদিকে গত ২৫ জুন লুঙুদুতে গিয়ে জানা গেলো, ঘটনার মূলে যারা রয়েছে বলে সন্দেহের তালিকায় রয়েছে, তাদের মধ্য থেকে ৩৪ জন এরইমধ্যে উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছে। এর মানে হলো যারা হামলায় জড়িত তারা এখন মুক্তভাবেই ঘুরছে, তারা ক্ষতির শিকার পাহাড়িদের সামনেই ঘোরাফেরা করছে।
উপরন্তু যোগ হয়েছে পাহাড়িদের ৪০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা। মামলাটির সত্যতা শুন্যের চেয়েও নিম্নাংকে হলেও তার প্রায়োগিক দৃশ্যমান 'হুমকি ও ধামকি'দেয়ার যে 'বারতা বা বার্তা' রয়েছে, তা আমাদের সবাইকে শুধু ভাবাবে না বলে দুর্ভাবনা ও দুশ্চিন্তারও যে কারণ হবে তা-ই সত্য।
তদুপরি পার্বত্য সমস্যা 'আইনশৃংখলা জনিত' কোনো সমস্যা নয়। মামলা ও পালটা মামলা দিয়ে এই সমস্যার তিল পরিমাণ সুরাহার আশা করা দুরূহ বটে।
রাজনৈতিক দিকটি ও জুম্ম জনগণের অধিকারের দিকটি প্রাধান্যে না আসলে পার্বত্য সমস্যাটির অবস্থা 'সব সমস্যা Problem করে' দেয়ার মতো অবস্থা হবে এই আরকি!?!?

লুঙুদু পালাহ-৪
তারিখঃ ২৮ জুন, ২০১৭
লুঙুদু বাজার। সপ্তাহের শনিবার সেখানে সাপ্তাহিক বাজার বসে। ছিটেফোটা কয়েকটি বাদে বাকি সব দোকান বাঙালিদের মালিকানাধীন।
পাহাড়ে সচরাচর যা হয়, দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের প্রায় সবাই অপাহাড়ি সেটলার অথবা সাধারণ বাঙালি। পাহাড়িদের জন্য ব্যবসা নিষিদ্ধ তা নয়! তবে ব্যবসা বা দোকানদারী করে টিকে থাকাটা হলো 'কল্পনাবিলাসীতা'রই মতো। কেউ আড়ম্বর করে দোকান দিলো বা ব্যবসার পত্তন ঘটালো। যে কোনো কৌশল বা উপায়ে হোক সেই দোকান বা ব্যবসা বা পুঁজির উপর থাকবে 'শকুনী মামা'র চোখ। শেষে কোনো উপায়ে ঠেকাতে না পারলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ধ্বংসসাধন বা সর্বনাশ করার কৌশল তো আছেই। এক কথায় অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে রাখার কৌশল বলা যায়। তবে এতোসব বিপত্তি বাধার মধ্যেও মানুষ তো আশার মুখ না দেখে বেঁচে থাকতে পারে না।
লুঙুদু বাজারে এখনো পাহাড়িরা খুব কমই যায়। বলতে গেলে এখন বাজার মেলেনা। পাহাড়ি জনগণ এখনো বাজারে যেতে ভয় পায়।
লুঙুদুতে পাহাড়ি ও অপাহাড়ির অনুপাত অনেক আগে থেকেই ব্যালেন্সের মধ্যে নেই। সেটলার ও সাধারণ বাঙালি যেখানে ৫০ হাজার, সেখানে পাহড়ির সংখ্যা মাত্র ১৫ অথবা ১৬ হাজার।
পোড়া ঘরের ভিটেমাটিতে ফেরারও যেন কোনো তাড়া নেই পাহাড়ি জনগণের! ঘটনা ঘটেছে জুন মাসের ২ তারিখ। ২৫ জুন পর্যন্ত ধরলে ২৩ দিন হলো পাহাড়িদের পুড়ে যাওয়া ঘর এখনো আগের মতোই যেভাবে পুড়ে ধ্বংস হয়ে ছিলো সেভাবেই আছে।
ক্ষতির শিকার গ্রামবাসীরা এখনো রাত কাটাচ্ছে দূরে প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে দিন হলেই তারা চলে আসছে তিনটিলা বনবিহারে। সারাদিন তারা সেখানে কাটিয়ে আবার চলে যায় নিরাপদ দূরত্বে।
ক্ষতির শিকার মানুষগুলোর অনেকটা এমন হয়েছে যে, কী আর হবে আবার নতুন করে ঘরবাড়িতে এসে!? নতুন করে ঘরবাড়ি তুলেও আর কী হবে? অনেকটা তিনটিলা গ্রামের কার্বারী অশ্বিনীকুমার চাকমা'র মতো হয়েছে সবার অবস্থা। এই জীবনে যা তিলে তিলে সঞ্চিত ধন, তার আকষ্মিক ধ্বংসসাধনে বিমূঢ় নির্বাক সকলে।
তাদের আগামী যেন থেমে গেছে!
সে যাহোক, আগামীকে রূদ্ধ করার সাধ্য কারোর নেই। তাই স্বাভাবিকের মতো আবার লুঙুদু ঘরপোড়া জনগণ তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে আসুক এই আশা আমরা করতে পারি। লুঙুদুবাসী বা পার্বত্যবাসী বরাবরের মতো দাবি জানাতে পারে জীবন ও ভুমি বা বাপদাদার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের শিকার যেন হতে না হয়, যেন ক্ষতির শিকার হতে না হয় সেই নিশ্চয়তা পাওয়ার। অথবা সেই গ্যারান্টি যদি নিশ্চিত না হয়, স্বাভাবিকের মতো নিজেদের রক্ষার জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা যে নিতে হবে তা-ই যে বাস্তব সত্য, এটাই যে বাস্তবতা, তা কেউ বেবুঝ হলেও নিশ্চয়ই বুঝে থাকবে।




রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের কী কারণ?


Image may contain: tree, outdoor and nature

তারিখঃ ২৯ জুন, ২০১৭
মানসিক ও চিন্তাগত এবং কিছুটা কাজের চাপে আছি। তাই এ বিষয়ে সংক্ষেপে লিখছি।
সার্বিকভাবে সাধারণ মূল্যায়ন করে পাহাড়ধসের কারণ হিসেবে অনেকে নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন। তবে বিশেষভাবে কোন এলাকায় কেন বা কী কী কারণে পাহাড়ধস ঘটেছে তা সম্ভবত এখনো চিহ্নিত করা হয়নি। গত ২৭ জুন আমরা দুইজন ঝটিকা এক সফরে পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখে এসেছি। সময় কম থাকায় এলাকাগুলো ভালকরে পরখ করে ধ্বসের কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে যেসকল কারণে পাহাড়ধস হয়েছে তা সংক্ষেপে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।

১। শহরাঞ্চলের যুবউন্নয়ন এলাকা, মোনোঘর এলাকায় মূলত, ড্রেইনেজ সিস্টেম বলতে কিছু না থাকার কারণে বৃষ্টির সময় পানির প্রবাহ উপচে গিয়ে মাটির ব্যাপক ক্ষয় হয়। এতে পাহাড় কেটে যারা পাহাড়গুলোতে ঘিঞ্জি ঘর তুলেছিল তাদের ঘরে মাটির আস্তর ধ্বসে পড়ে। এবং মানূষজন মারা যায়।
২। ভেদভেদি এলাকায় পাহাড়গুলো ন্যাড়া ও একভাবে লম্বালম্বিভাবে খারা এবং তারউপর পাহাড় আরো খারাভাবে কেটে উপরে নিচে টিনের ঘর বানানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রবল বৃষ্টির পরে মাটির আস্তরে ধ্বস নামতে তেমন বেগ পেতে হয়নি।
৩। মানিকছড়িতে পথের পাশে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পের খারা পাহাড়ের মাটি আগে থেকেই ছিল ন্যাড়া। এখানেও দেখা গেছে পথের পাশে পানি প্রবাহের জন্য কোনো ড্রেইন তৈরি করা হয়নি।
৪। মানিকছড়ির সাপছড়িতে কয়েকটি জায়গায় রাঙামাটি-খাগড়াছড়ির পাকা পথের পূর্বদিকে পানি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। অর্থাৎ, পূর্বদিকের পাহাড় থেকে যে পানি পশ্চিমদিকে নিচে নেমে যাবার কথা তা পাকা পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়। পানি পশ্চিমূখী হয়ে নিচে নেমে যেতে পাকা পথের মাঝ বরাবর ড্রেইন বা কালভারট পর্যাপ্তভাবে বানানো হয়নি। এছাড়া পাহাড়ে লাগানো হয়েছে পরিবেশ অনুপযোগী সেগুন গাছ।
৫। খামারপাড়া এলাকা থেকে মোনতলা কিজিং পর্যন্ত এক কিলোমিটার মতন সড়কপথে প্রকৃতি যেন তার রূদ্ররোষ দেখিয়ে দিয়ে বলতে চেয়েছে, প্রকৃতির উপর জবরদস্তি সহ্য করা হবে না! সাপছড়িতে নিচু জায়গা ভরাট করে বানানো হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ভরাট করার জন্য মাটি কাটা হচ্ছে খামারপাড়ার পূর্বদিকের একটি পাহাড় থেকে। পাহাড় এমনভাবে কাটা হচ্ছে যেন পাহাড় কাটা অবৈধ নয়!
৬। খামারপাড়া এলাকায় যেখানে পাকা সড়ক চিড়ে ভেঙে পথকে উত্তর ও দক্ষিণ দু'দিকে পৃথক করে দিয়েছে সেখানে একটি স্বাভাবিক ছড়া বা নালার সৃষ্টি হয়েছে। ছড়া বা নালাটির অস্তিত্ব অনেক আগে ছিল। কিন্তু পাকা পথ বানানোর সময় নালাটিতে খুব কম পানি প্রবাহের উপযোগী করে ছোট করে বানানো হয়েছে। তাই ১২-১৩ জুন যখন প্রবল বৃষ্টি হয় তখন প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবেই নিজের ন্যায্যতা আদায় করে ছেড়েছে।
৭। মোনতলা কিজিং-এর ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। কিজিং শব্দটি থেকে বোঝা যায় এই জায়গাটিতে দুই পাহাড়ের মাঝে চলে যাওয়া খাদ বা হাঁটা পথ ছিল। পরে পাকা সড়ক বানানোর সময় সেই কিজিং ভরাট করে তার চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। ১২-১৩ জুন সুযোগ পেয়ে প্রকৃতি আবার তার জন্য নতুন কিজিং তৈরি করে নিয়েছে। এখানেও পাকা সড়ক উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৫০ ফুট বা তার অধিক চিড়ে পৃথক হয়ে গেছে।
৮। রাঙামাটি খাগড়াছড়ি সড়কের পূর্বপাশের অনেক খারা পাহাড়ের মাটি ধ্বসে পড়েছে। এগুলো আগামীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরকম স্থানের সংখ্যা ৫০/৬০ এর কম হবে না। কেন এগুলো ধ্বসে পড়েছে ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে? একে একে বলা যায়- পাহাড়ের মাটি ঝরঝরে; পথ নির্মাণকালে অবাধে পাহাড়কে খারাভাবে কাটা হয়েছে; বৃষ্টির সময় পথের পানি বেয়ে যাবার জন্য কোনো ড্রেইন করা হয়নি; মাটির যাতে ক্ষয় না ঘটে সেরকম কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
৯। ঘিলাছড়ি ও তার আশেপাশের এলাকায় পাকা সড়ক ঢালু হয়ে ফেটে গেছে বা কিছু অংশ ধ্বসে গিয়ে কয়েকশত ফুট নিচু খারা ঢালু? তৈরি হয়েছে। এগুলো এতোটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, কোনো গাড়ি বা ব্যক্তি নিচে পরে গেলে নিশ্চিত জীবন বিপন্ন হয়ে উঠবে।
কেন এই ধ্বস? সেই একই কারণ, ড্রেইন নেই এবং মাটির ক্ষয় রোধ করার ব্যবস্থা নেই।
সে যাই হোক, ধ্বসের পরে কারণ নির্ধারণ করা সহজ।
তবে এই কাজটি করা প্রয়োজন ছিলো।
এছাড়া কেন প্রকৃতি প্রবলভাবে 'বৃষ্টির ধারা' সৃষ্টি করেছিল তার আবহাওয়া বা জলবায়ুগত বিশ্লেষণ করা দরকার।
পার্বত্য মন্ত্রণালয় পাহাড়ধসের কারণ হিসেবে বজ্রপাতকে দায়ী করেছে। তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকলে ঠিক আছে। তবে 'ফাল্টুমি' ও 'ছ্যাবলামি' করার জন্য বা দায়সারাগোছের অনুসন্ধান করে দায়সারা এই 'কারণ' চিহ্নিত করে থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্তকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
দায়িত্বজ্ঞানহীন অনুসন্ধান...।

লুঙুদু হামলা বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাধারণ মূল্যায়ন

তারিখঃ ০৪ জুন, ২০১৭
[ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে এই মূল্যায়ন নিশ্চয়ই আমাদের ভাবতে শেখাবে এই প্রত্যাশা রেখে লেখাটি ফেসবুকে শেয়ার করলাম]
মোট ১১ টি বাংলা পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণের ০৩ জুন, ২০১৭ প্রকাশিত সংখ্যায় লুঙুদু সাম্প্রায়িক হামলা বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাধারণ পর্যালোচনামূলক সংক্ষিপ্ত আলোচনা এখানে করা হয়েছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, পত্রিকার প্রতিবেদক বা রিপোর্টারগণ কেউই লুঙুদুর মূল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে তথ্য সংগ্রহ করেননি। তাই দেখা গেছে, আসলে কী ঘটনা ঘটেছে তা সংগ্রহ করতে অনেকেই সোর্স হিসেবে ফেসবুককেই ব্যবহার করেছেন। এতে প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে মারাত্মক ত্রুটি দেখা গেছে।
বিশেষ করে গাজীপুরে ব্রয়লার বিস্ফোরণের একটি ছবি লুঙুদু’র ঘটনা হিসেবে ফেসবুকে কে বা কারা শেয়ার করার পরে সেই ছবি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকায় মূল হেডিঙ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি পত্রিকা সেই ছবিটি ব্যবহার করেছে। এতে প্রশ্ন থেকে যায়, রাঙামাটি জেলার লুঙুদুতে কোনো পত্রিকারই কি কোনো প্রতিনিধি নেই? তারা কি এই গুরুতর ত্রুটি ধরিয়ে দিতে পারেননি? অথবা নাকি অসাবধানতাবশতঃ না হয়ে এই ত্রুটিকে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে? খেয়াল করা গেছে গাজীপুরের ব্রয়লার বিস্ফোরণের এই ছবিটি প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় লীড কলাম আকারে ছাপা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে দৈনিক আমাদের সময়ের শেষ পৃষ্ঠায়। ব্যবহার করা হয়েছে যায়যায়দিন পত্রিকার শেষ পাতায়। দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায়ও এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সমকাল পত্রিকায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে বলে জেনেছি। প্রতিষ্ঠিত এই সকল পত্রিকার রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি যারা রয়েছেন তাদের নিশ্চয়ই লুঙুদু উপজেলারও প্রতিনিধি বা পরিচিত কেউ থাকার কথা। যখন এই ছবিটি পত্রিকায় ব্যবহার করা হচ্ছে তখন তারা এই ছবিটি ভ্যারিফাই কেন করেননি তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে থাকলো। অথবা জেনেশুনেই এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তাও এখন প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে যাবে বলেই আশংকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। হয়তোবা ঘটনার মাত্রা নিয়ে বা ঘটনা নিয়ে যাতে প্রশ্ন করা যায় সে দিকটি মাথায় রেখে এই ’কাঁচা ভুল’ যে জেনেশুনে করা হয়নি তা-ই বা কে বলতে পারে?!
পত্রিকার প্রতিবেদনের দিকে খেয়াল রাখলে বোঝা যায় ১১ টি প্রতিবেদন আলাদা আলাদা মনে হলেও মূলত, দুএকটি বাদে বাকি সকল প্রতিবেদনের মূল সূত্র বা মূল লেখক বা মূল তথ্যদাতা বা মূল তথ্য সংগ্রহকারী সম্ভবত দুইজন বা তিনজন হতে পারেন। তাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করার পরে প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং পরে তার দুএকটি বাক্য বা বাক্যাংশ বা প্যাটার্ন বদল করে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনসমূহ পড়ে ভাষাগত ও বানানগত নানা ভুল সহজেই চোখে পড়ে। বিশেষ করে দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রথম অংশেই এই ভুলচুক বেশি উৎকটভাবে দৃশ্যমান।
প্রতিবেদনসমূহ পড়ে আমি তিনটি ক্যাটাগরিতে প্রতিবেদনসমূহ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। তাতে দেখা গেছে, ক্ষয়ক্ষতির বিবরণে প্রশাসনের সূত্র থেকে ১০/১২টির বেশি বলা হয়নি। তবে একটি বেসরকারী সূত্র থেকে ৮৬টির মতো ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পাহাড়িদের পক্ষ থেকে ২০০ বা আড়াইশ বা তারও অধিক বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে। এবং এতে প্রায় সকল পত্রিকায় জনসংহতি সমিতি লুঙুদু উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিশংকর চাকমার উদ্ধৃতি দিয়ে বাড়িঘর পুড়ে যাবার সংখ্যাটি বলা হয়েছে।
প্রশাসনের বক্তব্য সাধারণভাবে গতানুগতিক হয়ে থাকে। এতে সাধারণত, পুড়ে যাবার ঘটনা স্বীকার করা হলেও কম পুড়ে যাবার কথা স্বীকার করা হয়। তাছাড়া ঘটনার জন্য আদতেই দোষী কোন অংশ তা জানার পরেও জটিলতা এড়ানোর জন্য দোষী কোন অংশ তা স্পষ্ট করে বলা হয় না। এখানেও আমরা সেই প্রবণতা দেখতে পাই। অন্যতম জাতীয় একটি দৈনিকে বলা হচ্ছে ’পাহাড়ি বাঙালি সমস্যার কারণে’ ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
তবে দুএকটি পত্রিকায় উদ্ধৃতিসমূহ পাঠ করে সহজেই বোঝা যায় ঘটনার মূল অংশ কে বা কারা ছিল। এক্ষেত্রে আমরা দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মমিনুল ইসলামের বিবরণ উদ্ধৃত করতে পারি। তাকে উদ্ধৃত কওে বলা হচ্ছে- তিনি ’.. ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নয়নের লাশ নিয়ে র‌্যালি করে আসার পথে কিছু লোক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। এ সময় পুলিশসহ যৌথবাহিনী ও প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ায় পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’। এতে দেখা যায় মিছিল করার সময়ই কিছু লোক ’অপ্রীতিকর’ভাবে হামলা করেছে ও পাহাড়িদের বাড়িঘরে নির্বিচারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় বলা হয়েছে- ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তাঁরাও নিরুপায় হয়ে পড়েন। অর্থাৎ, ঘটনা ঘটার সময়ে আইন শৃংখলা বাহিনী উপস্থিত ছিল। তবে তাদের ভুমিকা রাখার মতো পরিস্থিতি সেখানে ছিল না। কিন্তু পাহাড়ি জনগণের পক্ষ থেকে বিভিন্নজনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবরে আমরা দেখতে পাই, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ভুমিকা নিরপেক্ষ না থেকে সাপেক্ষে যেন তারা একটি পক্ষের দিকে বেশি ঝুঁকে গেছেন!
পত্রিকাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি একপেশে ও পাহাড়ি বিদ্বেষী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা। লংগদুতে অনুষ্ঠিত সমাবেশের খবরে বক্তাদের উদ্ধৃত করে উক্ত পত্রিকায় বলা হয়েছে- ’সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করার জন্যে পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়- এনিয়ে গত কয়েকমাসের ব্যবধানে পাহাড়ে তিনজন মোটর সাইকেল চালককে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। প্রতিবেদনে পাহাড়ি জনগণের কোনো বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে সেটলার বাঙালি সংগঠনের খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে ১৪৪ ধারা জারি করার কথা একটু করে বলা হলেও প্রশাসনের আর কোনো ধরণের উদ্ধৃতি বা বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি।

Saturday, May 27, 2017

এক নজরে পিসিপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনঃ ২০০০ থেকে ২০১৩

আপোষহীনতার নাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। গর্বের একটি নাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনতার আশা আকাংখার প্রতীক পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র যুব সমাজের ঐক্যবদ্ধ চেতনার নাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। সর্বোপরি দেশের প্রেক্ষিতে অগ্রগামী একটি সংগঠনের নাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। সংগঠনের পুরো নাম বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। সবার কাছে সংগঠনের পরিচয় পিসিপি এই সংক্ষিপ্ত নামে।
আজ ২০১৭ এর ২০ মে আমাদের প্রাণপ্রিয় এই সংগঠনের ২৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ এই সংগঠন তার শক্তি ও সামর্থ্য নানাদিক থেকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। নানা ধরণের বাধা বিপত্তি আপোষকামীতা দোদুল্যমানতার বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রম করতে করতে এগিয়ে গেছে এই সংগঠন।
আজ আমরা ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন কিভাবে হয়েছে তার সাধারণ সংকিপ্ত বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করবো।। আগামীতে এই লেখা আরো পূর্ণাঙ্গ করার প্রত্যাশা নিশ্চয়ই রাখি।
২০০০ সালে পালিত হয় এই সংগঠনের ১১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। একইসাথে অনুষ্ঠিত হয় ১০ম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল। খাগড়াছড়িতে এই কর্মসূচি পালিত হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশ ও র‌্যালী খাগড়াছড়ির খেুজুর বাগান মাঠে(বর্তমানে উপজেলা মাঠ হিসেবে পরিচিত) হবার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসন শেষ পর্যন্ত সমাবেশ ও র‌্যালি করতে অনুমতি না দেয়ায় সমাবেশ স্বনির্ভর মাঠে করতে হয়। তখন এই স্বনির্ভর মাঠে আজকের মতো বাজার গড়ে উঠেনি। আজকে যেখানে বাজার গড়ে উঠেছে সেখানেই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রশাসন সমাবেশ ভন্ডুল করতে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকাসহ বিভিন্নস্থানে ১৪৪ ধারা জারি করে। প্রশাসনের মারমুখী অবস্থানের কারণে পূর্বনির্ধারিত র‌্যালি আয়োজন করা যায়নি।
উক্ত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের তৎকালীন সভাপতি ক্যহ্লাচিং মারমা(তিনি এখন বান্দরবানের থানছি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান)। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্ণেল কাজী নুর উজ্জামান, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের সমন্বয়ক বদরুদ্দীন উমর, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যূরোর সদস্য হায়দার আকবর খান রনো, ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সঞ্চয় চাকমা, জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক মানস চৌধুরী, সাইফ ফেরদৌস, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী কবিতা চাকমা, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জোনায়েদ সাকী, বাসদ ছাত্রলীগ সভাপতি ইমাম গাজ্জ্বালী, নারী আন্দোলনের নেত্রী সাইদিয়া গুলরুখ ও পিসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক চম্পানন চাকমা। এছাড়া উক্ত সমাবেশে সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রূপক চাকমা বক্তব্য রাখেন।
পরে ২১ ও ২২ মে দুইদিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কাউন্সিলে রূপক চাকমাকে সভাপতি ও চম্পানন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও ডমিনিক ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
২০০১ সালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ১ যুগ পূর্তি বা ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয় ঢাকায়। ঢাকার অপরাজেয় বাংলা পাদদেশে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল ছাত্র সমাবেশ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কর্মসূচিতে বেলুন উড়িয়ে সমাবেশ উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিত খান। উদ্বোধনের পরে র‌্যালির আয়োজন করা হয়। র‌্যালি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে শেষ হয়। পরে বিকালে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সভার থীম শ্লোগান ছিল- লাম্পট্য, নষ্টামি ও সুবিধাবাদিতার বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের ভুমিকা ও আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামে করণীয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রূপক চাকমা। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের সমন্বয়ক বদরুদ্দীন উমর, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ)এর আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান, ইউপিডিএফ নেতা অনিল চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী কবিতা চাকমা।
পিসিপির একযুগ পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত লিফলেটের শেষাংশে লেখা ছিল- লড়াই সংগ্রামের পথ কোন দেশে কোন কালে এত সহজ ছিলো না। আমাদের বেলায়ও এ কথা সত্য। আলোর বিপরীতে যেমন অন্ধকার থাকে, দেশপ্রেমিক সংগ্রামীর বিপরীতে তেমনি থাকে বেঈমান বিশ্বাসঘাতক।
এছাড়া এতে লেখা ছিল- যে কারো গণতাান্ত্রিক অধিকারের প্রতি পিসিপি শ্রদ্ধাশীল। একমাত্র গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতার ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।
এরপর ২১ ও ২২ মে দুইদিনব্যাপী ১১ তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসা। পরে মিল্টন চাকমাকে সভাপতি ও প্রমেশ^র চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।

০০২ সালে পিসিপির ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয় খাগড়াছড়িতে। অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদন মংশে মারমার পিতা কংজরি মারমা। মংশে মারমা ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য। তিিিন ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর শহীদ হন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ-মাহবুব) এর আহ্বায়ক আ. ফ. ম. মাহবুবুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের নেতা ও লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুর রহমান, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিমা আখতার হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী করিম আবদুল্লাহ, ইউপিডিএফ নেতা অনিমেষ চাকমা। এছাড়া সংহতি বক্তব্য লিখে পাঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন শেষে তারপরদিন ২১ মে নারাঙহিয়া পাইওনিয়ার ক্লাবে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। উক্ত কাউন্সিলে প্রমেশ্বর চাকমাকে সভাপতি. মিঠুন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও স্বর্ণজ্যোতি চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষনা করা হয়।
এই কমিটির নেতৃত্বে পরে শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয় এবং ভাষা সংস্কৃতি ও ইতিহাস চেতনার সংগ্রামে শরিক হোন এই আহ্বান জানিয়ে পিসিপির শিক্ষাসংক্রান্ত আন্দোলন শুরু হয়।

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ২০০৩ সালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী ও বাংলাদেশ লেখক শিবির ঢাকা নগর সভাপতি কমরেড প্রাণেশ সমাদ্দার। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ন্যায়সংগত আন্দোলনের প্রতি মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে সমর্থনব্যক্ত করেন। সকালে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবার পরে বিকালে মুসলিম হলে এক আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চেতনার আন্দোলনে বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক দলের করণীয়।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব অধ্যাপক সুনীতিভূষণ কানুনগো, চবি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনিরুজ্জামান, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। ইউপিডিএফএর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন রবি শংকর চাকমা।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি জেলাস চাকমা। এখানে প্রসংগত বলা প্রয়োজন যে, সংগঠনের কাজে সক্রিয় ভুমিকা না রাখার কারণে ১২ তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের নির্বাচিত সভাপতি প্রমেশ্বর চাকমাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে জেলাস চাকমাকে অন্তবর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
পরে ২১ হতে ২৩ মে তিনদিনব্যপী কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনে মিঠুন চাকমাকে সভাপতি, অলকেশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও দীপংকর ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত কেের ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রচারিত লিফলেটে বলা হয়- এই ১৪টি বছরে শতশত মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ, হারিয়েছি অনেক সম্ভাবনাময়ী তরুণপ্রাণ সহযোদ্ধাদের। সংগঠনের অগ্রযাত্রার পরতে পরতে মিশে আছে কান্না-হাসি-ক্ষোভ-বেদনা, উদ্দীপ্ত উচ্চারিত শ্লোগান আর গৌরবদীপ্ত ছাত্র যুব জনতার প্রতিরোধ। আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যারিকেড ভেঙেছি-উদ্দীপ্ত হয়েছি। সামনের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। অধিকার আদায়ের যে শপথ নিয়ে আমাদের রাজপথের সংগ্রাম আমরা সেই অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না। আমরা জন্মেছি বাধার প্রাচীর ছিন্ন করার জন্যই।
সংগঠনের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ২০০৪ সালের ২০ মে পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শওকত আলী’র লিখিত বক্তব্য পাঠ করে পড়ে শোনানো হয়। তিনি অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে সমর্থ হননি। তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্য পাঠ করিয়ে শোনানোর পরে মিঠুন চাকমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী প্রাণেশ সমাদ্দার, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশ ছাত্র কেন্দ্র’র সভাপতি রহমান মিজান, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মৃদুল কান্তি দাস, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী সোনালী চাকমা, পাহাড়ি যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর চাকমা বক্তব্য রাখেন।
১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল শ্লোগান ছিল, ’জাতীয় কলংক মোচন করে অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবাদী ছাত্র সমাজ পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকাতলে সমবেত হোন’।

আলোচনা সভা শেষে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলা ভবনের মাতৃভাষা চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন সন্তোষ চাকমা, দীপংকর ত্রিপুরা ও অলকেশ চাকমা।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ তার ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০০৫ সালে পালন করে শাসকগোষ্ঠীর ভাগ করে শাসন করার কূটকৌশল মোকবেলা করে বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে। খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কাসেম ফজলুল হক। পিসিপির সভাপতি রুপন চাকমা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মৃদুল কান্তি দাস, বাংলাদেশ ছাত্র কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জনি, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি সোনালী চাকমা, ইউপিডিএফ নেতা অনিমেষ চাকমা। সভা পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপংর ত্রিপুরা।
এখানে বলা প্রয়োজন ২০০৪ সালের ২৪ থেকে ২৬ নভেম্বর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ১৪তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল অধিবেশন চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। এতে রুপন চাকমাকে সভাপতি, দীপংকর ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক ও রিকো চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করেে ১৯ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষনা করা হয়েছিল। উক্ত কাউন্সিল থেকে নতুন দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। সমাপনী অধিবেশনে ইউপিডিএফএর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক প্রসিত বিকাশ খীসা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পিসিপিকে অবশ্যই আদর্র্শিকভাবে সশস্ত্র হতে হবে। সকল ধরণের প্রলোভন, আত্মপ্রতিষ্ঠা ও ব্যক্তিস্বার্থপরতার উর্দ্ধে উঠে ছাত্রসমাজকে জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আগুয়ান সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।

২০০৬ সালে পিসিপির ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেন্দ্রীয়ভাবে পালন করা হয়নি। তবে নান্যাচর, কাউখালী ও কুদুকছড়ি শাখার উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
২০০৬ সালের শেষ থেকে ২০০৮ সালের শেষের দিক পর্যন্ত দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এ পরিস্থিতিতে দেশে মিছিল মিটিঙ সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় পিসিপি ২০০৭ ও ২০০৮ ও ২০০৯ সাল এই তিনবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সমর্থ হয়নি। এরই মাঝে ২০০৭ সালের ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ঘরোয়া সভার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। উক্ত ১৭তম কেন্দ্রীয় কমিটি হিসেবে বিবেচিত করে দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর ত্রিপুরা। সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুনির্মল চাকমা। সকলের উপস্থিতি ও সম্মতিতে রিকো চাকমাকে সভাপতি, অংগ্য মারমাকে সাধারণ সম্পাদক ও ক্যহ্লাচিং মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। সভা থেকে সারাদেশ থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া পাহাড়িদের ভূমি বেদখল ও বিভিন্নভাবে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ২০০৮ সালে সংগঠনের ১৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা থেকে একটি লিফলেট প্রকাশ করে। এই লিফলেটের শিরোনাম ছিল- অব্যাহত ভূমি বেদখল-হামলা-জাতিসত্তা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, শাসক চক্রের আন্দোলন ঠেকানোর গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হবে না, পিসিপির পতাকাতলে সমবেত হোন, আসুন! পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই বেগবান করি।
লিফলেটে বলা হয় জরুরি অবস্থার সুযোগ নিয়ে ’প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখলের মহোৎসব চলছে। পাহাড়িদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করে বহিরাগত বাঙালিদের বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া গ্রেফতার, নিপীড়ন-নির্যাতন, ধর্মীয় পরিহানির মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে।
২০১০ সালের ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি ঢাকাস্থ পুরানা পল্টনের তাজুল অডিটোরিয়ামে সংগঠনের ১৮তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলন থেকে অংগ্য মারমাকে সভাপতি ও সুমেন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলা থেকে ২৪০ জন প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বিদায়ী কমিটির সভাপতি রিকো চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের আহবায়ক মাসুদ খান, সংস্কৃতির নয়া সেতু'র লিমন, প্রগতির পরিব্রাজক দলের মাহাবুব মোস্তফা রাসেল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের পারভেজ লেনিন, বিপ্লবী ছাত্র সংঘের আশিষ, জাতীয় ছাত্রদলের আজিজুল ইসলাম, ল্যাম্পপোস্টের প্রিন্স মাহমুদ প্রমুখ। সম্মেলন উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন। উদ্বোধনী আলোচনা সভা শেষে টিএসসি সড়কদ্বীপ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালী বের করা হয়।
২০১০ সালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেন্দ্রীয়ভাবে পালন না করে বিভিন্ন উপজেলায় একযোগে পালন করা হয়। মাটিরাঙ্গা, পানছড়ি, দিঘীনালা, মহালছড়ি, কাউখালীকে অনুষ্ঠিত উক্ত সভাসমূহ থেকে সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি নগ্ন হস্তক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করা হয়। সভা থেকে বক্তাগণ সভা সমাবেশের উপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি জানান।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ১৯তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় খাগড়াছড়িতে ১১-১৩ জানুয়ারি, ২০১২ সালে। কাউন্সিলে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটিতে সুমেন চাকমাকে সভাপতি, থুইক্যচিং মারমাকে সাধারণ সম্পাদক, আপ্রুসি মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। কাউন্সিলের বিভিন্ন অধিবেশনে তৎকালীন বিদায়ী সভাপতি অংগ্য মারমা ও তৎকালীন বিদায়ী সহসভাপতি ক্যহ্লাচিং মারমা সভাপতিত্ব করেন।
কাউন্সিলের শ্লোগান ছিল- সমাজ ও জাতীয় আন্দোলনে বিভেদ সৃষ্টিকারী এজেন্টদের প্রতিহত করুন! আসুন, অধিকার আদায়ের আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের গৌরবোজ্জ্বল পতাকা উর্দ্ধে তুলে ধরি!
কাউন্সিল অধিবেশন থেকে বক্তারা বলেন, সরকার শুধু নিপীড়ন নির্যাতন করে ক্ষান্ত নয়। ছাত্র-যুব সমাজকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে মদ-গাঁজা-হেরোইন ইত্যাদি মাদক যুবসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বক্তারা নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে পাহাড়ে সমতলে সমানতালে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
পিসিপির ২২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর(২০১১) শ্লোগান ছিল-গোলামী-লেজুড়বৃত্তি ও আত্মপ্রতিষ্ঠায় জাতির মুক্তি নেই, জাতীয় মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ছাত্র সমাজ জেগে ওঠো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের ৭নং সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামানের সহধর্মিনী ও মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর এমরিটাস ড. সুলতানা সারওয়াতারা জামান। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেনইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সহযোগী অধ্যাপক হাসিবুর রহমান, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নিরূপা চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শান্তিদেব চাকমা।অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিমল লংডকিরি, বিপ্লবী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আশীষ শর্মা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের জোট ভূক্ত সংস্কৃতির নয়া সেতুর কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার সম্পাদক আধ্যাপক জাহিদ হাসান ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক সামিউল আলম। এছাড়া সান্তাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, প্রগতির পরিব্রাজক দল (প্রপদ) ও ল্যাম্পপোষ্ট অনুষ্ঠানে সংহতি জানান।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুমেন চাকমা।
সমাবেশের উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. সুলতানা সারওয়াতারা জামান বলেন, ’অনেক জায়গায় আন্দোলন হয়েছে এবং আন্দোলনে সফলতা এসেছে,আপনাদের আন্দোলন একদিন না একদিন নিশ্চয় সফল হবে। ’
২০১২ সালে সংগঠনের ২৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী খাগড়াছড়িতে পালন করা হয়। ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমেন চাকমা। উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রীনা দেওয়ান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আপ্রুসি মারমা। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা। সভায় সচিব চাকমা বলেন, শেখ হাসিনা খালেদা জিয়া আমাদের অধিকার দেবে না। আমাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। তিনি ভূমি কমিশনের বিতর্কিত কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানান।
২৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রচারিত লিফলেটের শিরোনামায় লেখা ছিল- আপোষহীন সংগ্রামের ২৩ বছর। সংখ্যালঘু জাতির উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করুন।
লিফলেটের এক অংশে লেখা ছিল- পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ ঐতিহ্যগতভাবে কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করে না। তাদের আত্মমর্যাদাবোধ ছিল প্রবল, কখনো কারো কাছ থেকে হাত পেতে কোন কিছু চেয়ে নিত না। এ উন্নত মূল্যবোধে পচন ধরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে চলছে সুগভীর ষড়যন্ত্র।

২০১৩ সালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সংগঠনের দুইযুগ পূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে। উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা। খাগড়াছড়ি নারাঙহিয়ায় খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি সালমান রহমান। সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা।
সমাবেশে ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা বলেন, তরুণ প্রজন্মকে কামান, বেয়নেট উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, পিসিপির নাম ভাঙিয়ে কেউ যেন ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য ছাত্রসমাজকে সজাগ থাকতে হবে।
দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে সংগঠন একটি লিফলেট প্রকাশ করে। লিফলেটের শিরোনামায় লেখা ছিল- পিসিপি প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পূর্তিতে আহ্বান, জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে আসুন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হই! লিফলেটের শেষে লেখা ছিল- যে শিশু একবার জেগে ওঠে, তাকে ঘুম পাড়াি গানে ঘুমানো যায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্রসমাজ জেগেছে, তাদের আর হুমকিতে কিংবা প্রলোভনে বশীভূত করা যাবে না। দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের দৌরাত্ম্যে আমরা ক্ষান্ত হব না। অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে।
পরে খাগড়াছড়ির সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে ২২-২৩ মে দুইদিনব্যাপী ২০তম কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে থুইক্যচিং মারমাকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিলাস চাকমা এবং সিমন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৯ সদস্য বিশিস্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিদায়ী কমিটির সভাপতি সুমেন চাকমা নতুন কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
দ্রষ্টব্যঃ লেখাটি এখনো অসম্পূর্ণ। পরে আরো তথ্য সংগ্রহ করে বিশদ ও পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করা হবে।

Thursday, February 9, 2017

’যখন বঙ্গভবনে ছিলাম’- আলোকিত হবার একটি বই


বইটি তেমন বড় নয়, মাত্র একশ’ দুই পৃষ্ঠার। আর ঘটনা যে তেমন আছে তাও নয়। মাত্র কয়েকটি ঘটনার সমাহার। তবে এইসব ঘটনা জাতীয় জীবনের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত। দেশের ইতিহাসের অংশ এইসব ঘটনা। এই সকল ঘটনাবলী যা ছিল অপ্রকাশিত সাধারণের মাঝে সেগুলো আজ লেখকের লেখায় প্রকাশিত হয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।
ব্রিগেডিয়ার শামসুদ্দীন আহমেদ, একজন সেনা কর্মকর্তা। তিনি একসময় বেশ কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ভবন বঙ্গভবন-এ চাকরিসূত্রে অবস্থান করেছিলেন। সেখানে তিনি যা দেখেছেন, যেভাবে ঘটনাবলীকে বিশ্লেষণ করেছেন তা-ই আমরা তাঁর লেখায় দেখতে পাই। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন প্রখ্যাত লেখক ও শিক্ষক কবীর চৌধুরী। মুখবন্ধের প্রথম অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন- প্রাসঙ্গিকভাবে লেখক নানা বিষয়ের অবতারণা করেছেন যা বিভিন্ন রুচির পাঠককে বিভিন্নভাবে আকৃষ্ট করবে। লেখক-পরিবেশিত বঙ্গভবন নির্মাণের ইতিহাস, স্থাপত্যকৌশল, বিভিন্ন কক্ষের বর্ণনা, সাজ-সরঞ্জাম, বঙ্গভবনের অতিথি-আপ্যায়ন এবং সেখানে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সরকারী ও আধাসরকারী অনুষ্ঠানাদির কথা ও আরো অনেক বিষয় কৌতূহলী পাঠককে তৃপ্ত করবে।
তিনি মুখবন্ধে লেখকের বিভিন্ন ঘটনার আরো অনেক বিষয় তিনি আলতো স্পর্শ করেছেন। তার মধ্যে জেনারেল এরশাদ ও তার স্ত্রী রওশন এরশাদের ‘পুত্রসন্তান লাভ, বঙ্গভবনের করিডোরের দেয়ালে নানাজনের ছবি থাকলেও শেখ মুজিবর রহমানের ছবি নেই, ‘হীন অনুকরণপ্রিয়তা’র কথা ইত্যাদি তিনি তুলে ধরেছেন।
এছাড়া এই বই পড়ে জানতে পারবেন একজন রাষ্ট্রপতি কিভাবে সামরিক আইন প্রশাসকের তল্পিবাহক হয়ে যান, জানতে পারবেন মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাসে ইফতার আমন্ত্রণ নিয়ে জনগণের টাকায় বিলাসিতার কথা, অনেক নাম না জানা ব্যক্তির ক্ষমতার প্রতি মোহ, অর্থের প্রতি লোভ ইত্যাদির কথা। এবং একই সাথে নিশ্চয়ই অবিচল চারিত্রবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের কথাও এতে পাবেন।
তবে আমার কাছে সেগুলো সাধারণ তথ্য হিসেবে মনে হয়েছে। লেখক অভিজ্ঞতা বর্ণনাসূত্রে সেসকল তুলে ধরেছেন। কিন্তু তার বই ঘটনার বর্ণনার চেয়ে বেশি। এখানে ঘটনার বর্ণনা গৌণ হয়ে যায় যখন তাঁর উদ্দেশ্য আমরা জানতে পারি। লেখক বইয়ের ভূমিকা অংশে যা লিখেছেন তা তুলে ধরছি-
আমার বক্তব্য উপস্থাপনার ত্রুটি থাকতে পারে। আমার ভাব প্রকাশভঙ্গি সঠিক নাও হতে পারে সব জায়গায়। কিন্তু আমি যা বলেছি এবং যা বলতে চেষ্টা করেছি তার মধ্যে কোন ক্রুত্রিমতা নেই। সব আমার মনের কথা। আমার হৃদয়ের কথা। জীবনে ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় সম্বন্ধে আমার ব্যক্তিগত ধ্যান ধারণা ও চিন্তাভাবনা আছে যা আমি খুব সযত্নে লালন করি।
সেই ধ্যান-ধারণা থেকেই তিনি তার কর্মজীবনে অন্যায় দেখেছেন, দেখেছেন লোভ লালসা, ক্ষমতার মোহ, চাটুকারিতা। তবে তিনি তারপরেও নিজের নীতি নৈতিকতাবোধে অবিচল থেকেছেন। ব্যক্তির স্বার্থ না ভেবে ভাবতে চেযেছেন দেশের কথা, নীতির কথা, এথিকসের কথা, দায়িত্ববোধের কথা।
তিনি বলছেন-
আমরা অনেকেই ব্যক্তিগত স্বার্থ ও ক্ষমতার লোভে দলনায়ক বা দলনেত্রীর কাছে, রাষ্ট্রনায়ক বা সরকার প্রধানের কাছে এক একজন ফুলসাইজ ‘জি হুজুর’, ‘গোলাম হোসেন’ এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দ্বিধাবোধ করি না। ‘স্যার’ ও ‘ম্যাডাম’ কখনও ভুল করতে পারেন না এবং তাদের আদেশ অবশ্যই পালন করতে হবে, দেশ ও জনগণ জাহান্নামে যাক- এ ধরনের একটা মন মানসিকতা আমাদের মধ্যে প্রবলভাবে কাজ করছে।
তিনি ব্যক্তিগতভাবে তার চাকুরি জীবনে এই ধরনের ‘মন মানসিকতা’কে লালন করেননি বলে দাবি করেছেন।
তিনি তাঁর লেখায় তাঁর দৃষ্টিতে ন্যায়-অন্যায় ও ভাল-মন্দ ইত্যাদির বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর বইয়ে লেখার শেষে যা মন্তব্য করেছেন সে দৃষ্টিভঙ্গি এবং একটি মহৎ আদর্শের কথা তিনি বলতে চেয়েছেন। তাঁর বইয়ের শেষ বাক্যটি হল-
আত্মমর্যাদাবোধ ছাড়া অন্য জাতির লেজুড় হয়ে কোন জাতি বড় হতে পারে না।
ভূমিকা অংশে তিনি লিখেছেন-
অনেকে বলেন, জনগণ ভাল হলে তাদের নেতা বা নেত্রীও ভাল হবেন। এটা ভুল ধারণা। জনগণকে ভাল করার জন্যই ভাল, সৎ, চরিত্রবান মেধাবী ও দেশপ্রেমিক নেতা-নেত্রীর প্রয়োজন।
তিনি তাঁর বইয়ে যে ঘটনাবলীর বর্ণনা করেছেন তা তাঁর এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই করেছেন। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে যা দেখেছেন তার মূল্যায়ন করতে চেয়েছেন। আগামী দিনে যারা দেশের সত্যিকার ভাল মহৎ কিছু করার স্বপ্ন দেখেন ও তার বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবেন তারা যেন এই অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে সে চেষ্টাই তিনি করেছেন। ১৯৯২ সালে লেখা এবং ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত তার এই বই হয়তো নানা কারণে আরো অনেকের কাছে পৌঁছায়নি। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত, এই বই হল তাদের জন্য যারা দেশের ভাল কিছু করার জন্য আপ্রাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই বই পড়ে দেশের শাসনকামীরা উদ্বুদ্ধ হতে পারবেন মহৎ কিছু করতে। এই বই আরো অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করুক এই প্রত্যাশা রইল।

সত্যিকারের ভাল মনের মানুষ এবং একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লেখক বা মানুষের লেখা পড়লে আমরা সবাই উপকৃত হবো এই প্রত্যাশা। বইটির নাম ‘যখন বঙ্গভবনে ছিলাম’। প্রকাশক- আগামী প্রকাশনী। প্রথম প্রকাশ- ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩। বইটির পৃষ্ঠাসংখ্যা- ১০২।

Tuesday, December 27, 2016

মিঠুন চাকমার বিরুদ্ধে কেন চাঁদাবাজি মামলা?

২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং আমার বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার ধারা হল ৩৪২/৩৮৫/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড। অভিযোগ হল চাাঁদাবাজির। এমনিতেই রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ধারাসহ মোট ১৩টি মামলা। এই মামলাগুলোর জন্য কোর্ট হাজিরা দিতে হচ্ছে মাসে ১০ থেকে ১২ দিন। অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার এই দুই ছুটির দিন বাদে প্রায় প্রত্যেকদিন আমাকে কোর্র বারান্দায় থাকতে হয়! ডিসেম্বর মাসে কোর্টে ছিলাম ৪, ৬, ৭, ৮, ১৩, ১৪, ১৯ ও ২১ ডিসেম্বর। মাসটি এখনো শেষ হয়নি। আরো কয়েকদিন কোর্ট হাজিরার ডেট রয়েছে। কিন্তু কী এক ‘শনির দশা’ বা ‘বদ নসিব’ পেয়ে বসেছে যে, আরো মামলায় জেরবার হতে হচ্ছে?? কারাগার বা জেলখানা যেন ডাকছে!!
কেন এই মামলা?
শেষ কোর্ট হাজিরা ছিল ২১ তারিখ। তার আগের দিন খাগড়াছড়িতে সাংবাদিকরা একটি মানববন্ধন করেছে। প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক নীরব চৌধূরীকে মারধর করার প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। এলাকার একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে এই ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছিল। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে মাঝে মাঝে একটি ব্যক্তিভিত্তিক নিউজ ওয়েবসাইটে লেখালেখির কারণে আমাকে কেউ কেউ ‘সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিতি দিতেও সহায়তা করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেকে ফ্রিল্যান্স সংবাদ প্রচারক হিসেবে পরিচয় দিতে রাজি থাকলেও থাকতে পারি!
সে যাই হোক, আন্তরিকতার দাবি রেখে এই প্রোগ্রামে প্রথমে দূর থেকে অংশ নিয়েছিলাম। পরে কিছুক্ষণের জন্য মানববন্ধনে দাঁড়িয়েও ছিলাম। দাঁড়িয়ে যা দেখেছি সে বিষয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে যা বলেছিলাম তা নিচে তুলে ধরছি-
আজ ২০ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির সাংবাদিকদের উদ্যোগে ফটো সাংবাদিক নীরব চৌধুরীর উপর হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা যে কর্মসূচি তাতে ছিলাম। এ বিষয়ে আমার এক বন্ধু বললো, দোস্ত, তোমাকেও সেই প্রোগ্রামে দেখলাম, ব্যাপার কী? আমি বললাম, ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে তাতে জোরজবরদস্তি ও অন্যায় রয়েছে, তাই সেখানে ছিলাম। সাংবাদিক নীরব চৌধুরী অন্যায্য কিছু করলে সে বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নেয়া যেত নিশ্চয়ই। এছাড়া বললাম, পৌর মেয়র রফিক সাহেব যদি সাংবাদিক মেরে থাকেন তবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যা করেছেন তা তিনি সঠিক কাজ করেছেন বলে মনে হয় না। এভাবে যত্রতত্র অনাবশ্যক হ্স্তক্ষেপে তার ক্যারিয়েরই বরং ক্ষতি হবে। তিনি পৌর মেয়রের চেয়ে বড় কিছু হতে পারবেন না। তবে প্রোগ্রামে সরাসরি থেকে যা অবাক করেছে তা হল, সাংবাদিকদদের বিপরীতে পাল্টা প্রোগ্রাম ডেকেছিল পৌর মেয়রের সমর্থকরা। বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করার মত হলেও *রাজনৈতিক* রূপ দিয়ে মিছিল পাল্টা মিছিল একটু বেখাপ্পাই লাগে!!! মাথায় *রাজনীতি* ঢুকলে যা হয় আরকি!! সে যা হোক অনেকদিন পরে খাগড়াছড়ির *মাঠ* গরম দেখে এই শীত উপলভ্য বোধ হয়েছে!!!!


সাংবাদিকদের মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের একজন হিসেবে 


তারপরের দিন আরো মন্তব্য করেছিলাম -
যা বলা দরকার সাংবাদিক নীরব চৌধুরীর উপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল ২০ ডিসেম্বর সাংবাদিকরা মানববন্ধ করেছে। উক্ত কর্মসূচিতে কেন আমি উপস্থিত ছিলাম তার কথা গতকালকে ফেবু স্ট্যাটাসে বলেছি। গতকালকের কর্মসূচি নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদন দেখার পরে আরো কিছু বলা দরকার মনে করছি। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘দিদার কসাই’এর নেতৃত্বে মেয়র রফিক গ্রুপের ৪০/৫০ জন মিছিল করেছে। উক্ত মিছিলে শ্লোগান দেয়া হয়েছে- ‘একটি-দুটি সাংবাদিক ধর, ধরে ধরে জবাই কর; সাংবাদিকদের আস্তানা-জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’। তবে আমি বলতে চাই যে, প্রোগ্রামে সরাসরি থেকে আমি এই শ্লোগানগুলো শুনিনি। তারা যে শ্লোগানগুলো দিয়েছে তার মধ্যে আমি যেগেুলো শুনেছি সেগুলো হল- চাঁদাবাজদের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে। চাঁদাবাজদের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও উন্নয়নে বাধা দিলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।
(এক সাংবাদিকের নাম ধরে শ্লোগান দেয়া হয়েছে) ... চোরের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে এছাড়া তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল কিনা তাও খেয়াল করিনি। তবে ’কসাই’ দিদারের নেতৃত্বে যে মিছিল হয়েছে, তাদের যে অঙ্গভঙ্গি তা অবশ্যেই ‘উস্কানিমূলক’ ‘আক্রমণাত্মক’ ছিল তা বলা যেতে পারে।
প্রথম আলোর মতো একটি স্বনামধন্য/বস্তুনিষ্ঠতার দাবিদার পত্রিকায় যখন কোনকিছু লেখা হয়, তখন তা গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে নিশ্চয়ই। তাই প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনে বস্তুনিষ্ঠতা দেখাবে তার আশা, প্রথম আলোকে কেউ পছন্দ না করলেও, সকল পাঠক অন্তত কিছুটা করে থাকে। প্রথম আলোর ভুমিকা যেন ‘অতিরঞ্জনাত্মক’ না হয় সে আশা রইল
তারপর ২৫ ডিসেম্বর আরেকটি স্ট্যাটাসে বলি-
আমার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে শোনার পর এক শুভাকাঙ্ক্ষী বললেন, মেয়র রফিকের *হাত* কতো লম্বা তুমি জানো না। আমি শুনে স্তম্ভিত! আমার নামে মামলা হবার সাথে মেয়র রফিকের *হাত* কত লম্বা-এর সম্পর্ক কি তা বুঝলাম না!?? তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে এই *প্রেডিকশন* *মিথ্যা* হবে এমন নাও হতে পারে!! এই কদিন খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকের সাংবাদিক *পিটানো* নিয়ে *সরব* থাকার কারনে *মামলা* যে দেয়া হয়নি তাও বা কী করে বলি!?? অথবা জেল থেকে মুক্তি পাবার পরে এখন খাগড়াছড়ি সদরে *মুক্ত মানুষের মত* ঘোরাফেরা করতে পারায় *কেউ না কেউ* *শংকিত* এই ধারণা মিথ্যা নাও হতে পারে!! সে যাহোক,....!


২২ ডিসেম্বর যেদিনের ঘটনার জন্য চাঁদাবাজি মামলা দেয়া হয়েছে সেদিন পিসিপি খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার কাউন্সিলে আমন্ত্রিত একজন অতিথি হিসেবে আমি মিঠুন চাকমা বক্তব্য দিচ্ছি


খাগড়াছড়িতে সাংবাদিককে মারধর করার ঘটনা নিয়ে সোচ্চার থাকার জন্যই সম্ভবত আমার নামে মামলা দেয়া হয়েছে! মামলা যে দেয়া হয়েছে তা জানতে পারি ২৫ ডিসেম্বর। শুভাকাঙ্খীরা আমাকে বললো কিছুদিন বাইরে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা না করতে। কিন্তু খুব মনেকষ্টের সাথে বলতে হচ্ছে আমার এই প্রাণপ্রিয় খাগড়াছড়িতে কিছুক্ষণ আলো হাওয়া বাতাস গায়ে লাগিয়ে না আসলে কেমন যেন মন আনচান করে!
আসলে পাহাড়ের সাধারণ জীবনযাপন এবং রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক চিন্তা এতবেশি সংকীর্ণভাবে সবার মনে ‘বিরাজ করে’ যে এখানে একজন ইউপিডিএফ সদস্য যখন মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করে তখন কারো কারো যেন মাথ্যাব্যথা সৃষ্টির কারণ হয়ে থাকে!
ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে সেই বৃত্ত থেকে মুক্ত মনে করলেও যেন তা-ই আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে!!!
ইচ্ছে ছিল খাগড়াছড়ি শহরে সবার সাথে মিশে একটা নতুন কিছু করার উদ্যোগ নেব যেন এই ....
এই ফেসুবক নেটা একিটু খাপছাড়ভাবেই লিখছি!
যে মামলা দেয়া হয়েছে আইনজীবির সাথে পরামর্শ করে তা আইনীভাবেই মোকাবেলা করব। আদালত জেলে পাঠায় তাতেও রাজি!
যারা মামলা দিয়েছে তাদের তো অন্তত ‘সুখবোধ’ সৃষ্টি হবে!
আর নিশ্চয়ই নিজেকে ‘নিরপরাধ’ প্রমাণ করে আবার অনলাইন ফেসবুকে আসেতে পারব এই প্রত্যাশাই থাকল!
লেখালেখির জন্য ৫৭ ধারায় মামলা হবার পর ‘সন্তুষ্টি’ ‘আত্মতৃপ্তি’ ছিল, যাই হোক, অন্তত লেখালেখির জন্য তো মামলায় অভিযু্ক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলাম!
কিন্তু এখন ‘চাঁদাবাজি’ মামলার আসামী হিসেবে নিজেকে দেখতে পেয়ে নিজেকে বেমানানই লাগছে!
তবে তারপরেও এটা তো জানা যে, রাজনীতিতে ‘মামলায়’ জেরবার হওয়া স্বাভাবিক একটি প্রবণতা মাত্র!

সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...