Showing posts with label পার্বত্য চট্টগ্রাম. Show all posts
Showing posts with label পার্বত্য চট্টগ্রাম. Show all posts

Sunday, July 30, 2017

শিল্প-সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা

তারিখঃ ২৪ জন, ২০১৭
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে হলো। অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো আলোচ্য বিষয় খুবই সহজ মনে হতে পারে! কিন্তু এই আলোচনার একটি জটিল 'অমীমাংসিত' প্রপঞ্চ রয়েছে। অনেকটা 'ডিম আগে নাকি মুরগী আগে' প্রশ্নটির মতো একটি উত্তর প্রাপ্তির বিষয় জড়িয়ে রয়েছে! 
শিল্প-সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা থাকা বা না থাকা বা এই ধারার প্রাধান্য থাকা না থাকার সাথে সাথে নিচের প্রশ্নটি নিয়ে আমরা ভাবতে পারি!
'সংগ্রামী ধারার সাহিত্য আগে সৃষ্টি হবে নাকি সংগ্রাম জারি থাকা বা সংগ্রামী ধারা জোরদার' হওয়া আগে সৃষ্টি হতে হবে?
সংগ্রাম যদি জারি না থাকে বা যদি সংগ্রাম বা 'বিপ্লব' জোরদার না হয় তবে সংগ্রামী ধারার শিল্প ও সাহিত্য চলমান সমাজ জীবনে কী প্রাধান্য পাবে? অথবা প্রথমে সমাজের শিল্প ও সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা সৃষ্টি হবে, তারপরে পরবর্তী প্রেক্ষাপট হিসেবে আসবে জোরদার সংগ্রাম?
কখন একটি চেতনামূলক গান মানুষকে জাগাতে পারে? 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে' গানটির আবেদন কি '৭১ সালের আগে ছিল? নাকি '৭১ এর ৯ মাসের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে এই গানটি 'আবেদনময়ী' হয়ে মানুষকে জাগিয়েছিল?
শিল্প ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনার সময় এই বিতর্কটির মীমাংসা তবে কি আবশ্যকীয়ভাবে সামনে আনতে হয়/হবে?
বিষয়টি নিয়ে কথাবলতে হোল, কারণ এ নিয়ে বিভ্রান্তির কারণে আমরা একে অন্যকে দোষারোপ করে থাকি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে যে সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব চলছে তাতে আমরা এই বিষয়টি নিয়েও নানা ধোঁয়াশামূলক চিন্তাভাবনা করি। অথচ, সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে বা সমাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে নেতৃত্ব দিতে গেলে বা এ নিয়ে ভুমিকা রাখতে হলে আমাদের এই বিষয়টিকে সিরিয়াস আলোচনা করে মীমাংসায় যেতে হবে। 
আপাতত এটুকু মাত্র যোগ করলাম। 

Sunday, July 23, 2017

লুঙুদু পালাহ- এক, দুই, তিন ও চার

[ফেসবুকে লংগদু পালাহ-১, ২, ৩, ৪ আকারে এই লেখাগুলো লিখেছিলাম। আরো কিছু বিষয়ে লেখার কথা থাকলেও আরো নতুন সমস্যা এসে যোগ হবার কারণে এবং কিছু ক্ষেত্রে তথ্যের মিসিং লিংকেজ থাকার কারণে আর এ বিষয়ে লিখিনি। তবে এই চারটি লেখা একত্র করে ব্লগে প্রকাশ করলাম। ধন্যবাদ]

লংগদু পালাহ-১
তারিখঃ ২৬ জুন, ২০১৭
চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ হলো চাকমাদের চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার কাহিনী। চাকমাদের একটি বিশ্বাস হলো, চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ বা চাদিগাঙ পালিয়ে যাওয়ার গীতিকাহিনী যেখানে সেখানে গাওয়া যায় না। যদি এই গীতিকাহিনী কোনো গ্রামে গাওয়া হয়, তবে সেই গ্রাম থেকে সবাইকে পালিয়ে চলে যেতে হয় বা সেই গ্রাম চাকমাদের হারাতে হয়। চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ’র মতো চাকমাদের এখনো নিজেদের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হতে হয়। বিগত ৪০/৪৫ বছরের মধ্যে চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ’র মতো চাকমাদের কতো গ্রাম যে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তার সঠিক হিসাব আসলে কোথাও নেই। কিন্তু যেই গ্রাম বা এলাকা তাদের ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, সেই গ্রাম বা এলাকায় কেউ চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ না শুনেও তাদেরকে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। অর্থাৎ, চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ বা গীতকাহিনী শুনলেও যে চাকমাদের নিজেদের গ্রাম ছেড়ে যেতে হবে তা হয়তো সঠিক নাও হতে পারে।
চাকমাদের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য জাতিসত্তারও নিশ্চয়ই এই ধরণের গীতিকাহিনী থাকতে পারে। অথবা নাও থাকতে পারে। তবে কেউ যদি লংগদু এলাকার জনগণের দুঃখের কাহিনী গীতিকাহিনী হিসেবে চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ’র মতো করে রচনা করতো, তবে তা শুনতে কেমন হতো জানা নেই। চাদিগাঙ ছাড়া পালাহ এমন করুণভাবে গাওয়া হতো যে, যারা এই কাহিনী শুনতো তাদেরকে কাঁদতে হতো। কেউ কি লংগুদুবাসীর দুঃখের কথা করুণ সুরে লংগুদু পালাহ হিসেবে রচনা করতে এগিয়ে আসবেন?
সে যাই হোক, আমি এখানে লংগুদুবাসীদের দুঃখের কাহিনী বর্ণনা করার সাহ দেখাবো না। তবে সেখানে গতকাল গিয়ে যা দেখে এসেছি এবং শুনে এসেছি তার কিছুটা বর্ণনা করার চেষ্টা এখানে করবো।
জীবনের শেষভাগে এসে অশ্বিনীকুমার কার্বারীর উপলব্ধি
অশ্বিনী কুমার চাকমা। তিনি তিনটিলা গ্রামের কার্বারী। বয়স প্রায় ষাট বা সত্তরের কাছাকাছি। বেঁটেখাটো মানুষ। সবসময় হাসিখুশিই থাকেন। তার ঘরও এবার পুড়ে গেছে। ১৯৮৯ সালের ৪ মে প্রথমবার তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে গিয়েছিল। সাথে তাদের গ্রামও পুড়ে গিয়েছিল। আমরা একসাথে তিনটিলার পোড়া ঘরগুলো দেখতে গিয়েছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে তিনি বললেন, সবকিছু ধ্বংস হবার পরে, সবকিছু পুড়ে যাবার পরে এখন তিনি আর নতুনভাবে সবকিছু গড়ে তোলার আশা করেন না। একজীবনে আর কতোই বা সম্ভব? কত কষ্ট করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, দীর্ঘ বছর তিলতিল পরিশ্রম করে একএকটি পরিবার নিজেদের সম্পদ-সম্পত্তি বাড়িয়ে তুলেছিল এবং ঘরবাড়ি তুলেছিলো। একটু শান্তির আশায় তারা এই ঘরবাড়ি তুলেছিল। জীবনের বাকি সময়টা সুখে শান্তিতে তারা কাটাতে চেয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সালের পরে আবার তাদের শেষ বয়সে এই দশায় পড়তে হলো। তিনি কোনো প্রকার বিরক্তি ও দুঃখ না দেখিয়ে হেসে হেসেই বললেন, ’এই জিঙানিত আর নুও কিজু গুরিবার আঝা ন গরঙআর। গুরিলে পো শা’উনে গুরিবার চেরেস্তা গুরি পারঅন। আমি দ আর পারিদঙ নয়। বয়চ দ ওই জিএগোই, কদক আর পারে আর?’
জুম্ম জনগণের এই এক আপদ! দুঃখের কথাও তারা এমন হেসেখেলেতাদের জীবনের দুঃখ বেদনার কথা বলে যে, মনেহয় এই দুঃখ-কষ্ট কিছুই নয়! আসলে প্রতিনিয়ত দুঃখের মাঝে থাকতে থাকতে দুঃখ ও সুখ এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করতেও যেন আমরা ভুলে গেছি!
অশ্বিনী কুমার চাকমা যে কথা অক্লেশে বললেন, তা যে কত ক্লেশকর, কত বেদনাময় ও খেদযুক্ত তা সাদাকথায় বোঝানো চাট্টিখানি কথা নয়। একজন মানুষ তার জীবনের প্রারম্ভিক পর্বে একবার নিজের বাড়িঘর ধ্বংস হতে দেখার পরে, নিজের আত্মীয়স্বজনকে মারা যেতে দেখার পরে, নিজের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হবার পরে, পালিয়ে পালিয়ে জীবন কাটানোর পরে আবার নতুন করে যখন সে স্বপ্ন দেখা শুরু করলো। এবং তারপরে জীবনের শেষভাগে এসে সে যদি দেখে যে, সে সারাজীবনে যা সঞ্চয় করেছিল, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তিলেতিলে গড়ে তুলেছিল, তা কারো প্রতিহিংসার আগুনে লেলিহান শিখা হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে, সে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। তখন তার জীবন নিয়ে আর তখন কীইবা ভাবার আছে বা কীইবা ভাবার থাকতে পারে?
তাই অশ্বিনী কুমারেরও আর কিছুই ভাবার নেই! বাকি যা ভাবার আছে তা হলো, মরণ যেন ভালভাবেই হয়!


লুঙুদুত ধজা-পড়া-লড়া-পুড়া হেই পানা পালাহ-২
তারিখঃ ২৬ জুন, ২০১৭
লুঙুদুত জিওংগে আদিক্ক্যেগুরি। এককধায় যেবার কধা ন থ্যালেইও জানা। জেবার আগে তারাত্তেই কী নেজেই দিম চিদে গুজ্জোং। একজন'অর আর কদক তেঙা থাই! শেজেনদি ১০ কেজি আম কিনিলুং। সিউন যারে পারঅং হাবেবার চিদে থেব'অ গুরি নেজেইলুং। লুঙুদুত ম সমারে একজন গুরো ভেই আর মটরসাইকেল চালিয়েবো এল'অ। 
আমি লুঙুসুত জেইনেই পুড়া জিইয়ে আদাম'অত সুমিলং। এগগান আ' পুড়িই জিইয়ে ঘরত পানি হেবাত্তেই উদিলং। সি'ওত কধা অহল'অ ঘর আদ্যান্যা পুড়িই জিইয়ে মানজো সমারে। পরিচয় অহল' একজনদোই, য্যা ভেইয়ে ভেইয়ে মরামরিত তা নেককোরে আহরেইয়ে। তুমি সুবীর ওস্তাদ'অ নাং শুনি থেবা।
আমি আমা হিল চাদিগাং-অর বিজগ'অর এমন এগগান সময় পা'আর গুরির, জিওত ভেইয়ে ভেইয়ে মরামরি দেঘির। আহরেইয়েই আমা পরিচিত অপরিচিত ইত্তোকুদুম। আহরেইয়েই আমা জাদ'অর বাজা বাজা গম মানুচ্চুনোরে। ইওত তারা নাং আর ন তুলিম আর। তবে পোল্লেম পোল্লেম জ্যাক্কেনে জেএসএস এম এন লারমা পন্থীলোই ইউপিডিএফ'অর আইপা'আপি অহর স্যাক্কেনে মুই দীঘিনালা ভৈরফা সিন্দি তারার একজনদোই বেড়েইওং। সে মানুচচোরে লইনেই কধা রু'উত্তেদে, ত্যা আমা মানুচ জেদাবাদে আগুনওত পুড়িই মারেই ফেলেইয়ে। পোল্লেম পোল্লেম আই'পা'আপি লক্কেনে মুই তাল্লোই এক সমারে দিন্নোবো আর রেত্তোবো কাদেইওং। আমি একসমারে চাগালা থিগে বেড়েইয়েই, আমা আদাম্যাউনোরে জাগাজুমি বাজেবাত্তেই সাহজ দেই। তবে পরে ভালকদিন পরে শুনংগে তারে আর'অ কনজনে মারেই ফেলেইওন। তা মোক পো ঝি উনোর কধা মুই এব'অ মনত তুলোং। তারা কেনজান আঘন মুই হবর ন পাং। তবে সে সহযোদ্ধা বড়ভেইবো মুরিবার পরে মুই মনত দুক পিওং। তার নানা ভুলচুক থ্যালেও তার মরানাই মুই নিজ'অ সহযোদ্ধা ধুক্কেন মনত কস্ত পিওং।
লুঙুদুত থাগত্তে সিদু হানক্কন মুই সুবীর ওস্তাদ'অ মোককোলোই কধা কুইওং। তারার সুক-দুঘ'ও কধা বুজিবার চেস্তা গুজ্জোং।
ইঙিরি আদামে আদামে জাগায় জাগায় আমা জুম্ম মানেইওর কত'অ মিলে মা-বোন তার/তারার পো-ভেই-নেক-বাপ আহরেইওন! সুবীর ওস্তাদ'অ মোক্কো কধা চিদে গুরিই মত্তুন মনত উত্তে তারা বেগ'অর কধা।
মত্তুন মনত উত্তে ম বাপপো কধা। মনত উত্তে আর'অ বাপ-জিদু-আজু-দা-হাক্কা ইত্তোকুদুমবলা বা ইত্তোকুদুম ন উইয়ে আর'অ শত শত আমা শহীদ মানেইওর কধা।

লুঙুদু পালাহ-৩
তারিখঃ ২৭ জুন, ২০১৭
১৯৮৯ সালের ৪ মে। লুঙুদুতে যে হামলা হয়েছিল তাতে নিহত হয়েছিল ৩২ জন বা তারও অধিক। ঘরবাড়ি পুড়ে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিল ১ হাজারেরও অধিক। হামলা-হত্যার শিকার হয়ে পাহাড়ি জনগণ জায়গাজমি হারিয়েছিল শত হাজার একর।
লুঙুদুতে ১৯৮৯ সালে সংঘটিত হামলা নিয়ে ব্রিগ্রেডিয়ার সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম লিখেছেন,'.. বাঙালীরা উত্তেজিত হয়ে কতিপয় ভিডিপি সদস্যদের সহযোগীতায় ঘটনার দিন এবং তার পরদিন আগ্নেয়াস্ত্র, দা, বল্লম, কুঠার ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে করল্যাছড়ি, উল্টাছড়ি, শীলছড়ি, বগাপাড়া, আদ্রকছড়া এবং হরকুমার কার্বারী পাড়ায় উপজাতিদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, লুটপাট চালায় এবং লোকজনকে আক্রমণ করে।(পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিপ্রক্রিয়া ও পরিবেশ পরিস্থিতির মূল্যায়ণ; ফেব্রুয়ারি, ২০০১; পৃষ্ঠা-১৩৪)। এই উদ্ধৃতিতে যে সকল গ্রাম বা এলাকার নাম দেয়া হয়েছে তার অনেক এলাকায় এখন পাহাড়ি জনগণ বসতি বজায় রাখতে পেরেছে কীনা তা আমার জানা নেই। তবে সাধারণভাবে পার্বত্য প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায় যে, এই এলাকার শত হাজার একর জায়গা থেকে পাহাড়িরা সেটলারদের কাছ থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছে এটাই বাস্তবতা। (যারা এ বিষয়ে জানেন তারা প্রকৃত তথ্য যোগ করতে পারেন)
সে সময় জুম্ম জনগণের উপর যে অত্যাচার অন্যায় অবিচার করা হয়েছিল তার প্রতিবাদ করারও সুযোগ তখন পার্বত্যবাসীকে দেয়া হয়নি। রাজা দেবাশীষ রায় তাঁর এক ফেসবুক নোটে এমনেস্টির উদ্ধৃতি দিয়ে এই তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাঙামাটির জনগণকে বা প্রতিবাদ করার জন্য ঢাকায় পর্যন্ত যেতে বাধা দেয়া হয়েছিল।
সুতরাং, তখন এই অন্যায়ের প্রতিবিধান করার জন্য থানায় গিয়ে মামলা করার চিন্তাও কেউ করার সাহস করেনি। অথবা, মামলা যে করা যায় তা কারো মাথায়ও ছিলো না! অথবা দেশে বিদেশে এ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল সভা সমাবেশ করারও তেমন অনেক কেউ ছিলো না। তাছাড়া তখন দেশে ছিলো সামরিক শাসনের সময়। যে সকল পত্রিকা প্রকাশিত হতো তা ছিল সামরিক সরকারেরই নিয়ন্ত্রণে। এমন পাহাড়ি কোনো সাংবাদিক ছিলেন না বা সাহসী কোনো সাংবাদিক তখন সাহস নিয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে পোড়া ঘরের ছবি তুলতেও আসেননি। বরং ঘটনাকে ভিন্নভাবেই হয়তো তখন দেশবাসীর কাছে তথ্যমাধ্যমের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এবং এতে জায়েজ বা বৈধ হয়ে গিয়েছিল একটি গণহত্যা সংঘটনের। পাহাড়িদের তাদের বাপদাদার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদকেও এভাবেই হয়তো/নিশ্চিতভাবেই বৈধতা দিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
কিন্তু এই আজকের ২০১৭ সালে এসে তার মাত্রা ও প্রকৃতির কিছুটা হেরফের হলেও নীতিগত দিক থেকে অধিপতি শ্রেনীর অবস্থান 'যা লাউ, তা কদু'ই রয়ে গেছে কীনা এই প্রশ্নটি জুম্ম ও সচেতন মহলের কাছ থেকে বারবার প্রকটিতই হচ্ছে।( ড্রাকোনিয়ান ৫৭ ধারা এখন আর সাদাসিধে সোজাসাপ্টা দুর্মুখ কথা বলতে উতসাহিত করে না বটে!)
তথ্য হলো ঘটনাত পরে প্রশাসন বাদী হয়ে সেটলার বাঙালিদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। মামলার ধরণ কী আমরা জানি না। মামলায় ব্যাপক মানুষের নাম উল্লেখ করে প্রকৃত পরিকল্পনাকারী ও হামলা বাস্তবায়নকারীদের আড়াল করা হচ্ছে কীনা তাও স্পষ্ট নয়। এছাড়া পাহাড়িদের দেয়া মামলায় এখনো বৃদ্ধা গুনমালা চাকমা হত্যার বিষয়টি যোগ করা হয়নি। অর্থাৎ যোগ করা হয়নি ৩০৭ ধারা। অন্যদিকে গত ২৫ জুন লুঙুদুতে গিয়ে জানা গেলো, ঘটনার মূলে যারা রয়েছে বলে সন্দেহের তালিকায় রয়েছে, তাদের মধ্য থেকে ৩৪ জন এরইমধ্যে উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছে। এর মানে হলো যারা হামলায় জড়িত তারা এখন মুক্তভাবেই ঘুরছে, তারা ক্ষতির শিকার পাহাড়িদের সামনেই ঘোরাফেরা করছে।
উপরন্তু যোগ হয়েছে পাহাড়িদের ৪০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা। মামলাটির সত্যতা শুন্যের চেয়েও নিম্নাংকে হলেও তার প্রায়োগিক দৃশ্যমান 'হুমকি ও ধামকি'দেয়ার যে 'বারতা বা বার্তা' রয়েছে, তা আমাদের সবাইকে শুধু ভাবাবে না বলে দুর্ভাবনা ও দুশ্চিন্তারও যে কারণ হবে তা-ই সত্য।
তদুপরি পার্বত্য সমস্যা 'আইনশৃংখলা জনিত' কোনো সমস্যা নয়। মামলা ও পালটা মামলা দিয়ে এই সমস্যার তিল পরিমাণ সুরাহার আশা করা দুরূহ বটে।
রাজনৈতিক দিকটি ও জুম্ম জনগণের অধিকারের দিকটি প্রাধান্যে না আসলে পার্বত্য সমস্যাটির অবস্থা 'সব সমস্যা Problem করে' দেয়ার মতো অবস্থা হবে এই আরকি!?!?

লুঙুদু পালাহ-৪
তারিখঃ ২৮ জুন, ২০১৭
লুঙুদু বাজার। সপ্তাহের শনিবার সেখানে সাপ্তাহিক বাজার বসে। ছিটেফোটা কয়েকটি বাদে বাকি সব দোকান বাঙালিদের মালিকানাধীন।
পাহাড়ে সচরাচর যা হয়, দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের প্রায় সবাই অপাহাড়ি সেটলার অথবা সাধারণ বাঙালি। পাহাড়িদের জন্য ব্যবসা নিষিদ্ধ তা নয়! তবে ব্যবসা বা দোকানদারী করে টিকে থাকাটা হলো 'কল্পনাবিলাসীতা'রই মতো। কেউ আড়ম্বর করে দোকান দিলো বা ব্যবসার পত্তন ঘটালো। যে কোনো কৌশল বা উপায়ে হোক সেই দোকান বা ব্যবসা বা পুঁজির উপর থাকবে 'শকুনী মামা'র চোখ। শেষে কোনো উপায়ে ঠেকাতে না পারলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ধ্বংসসাধন বা সর্বনাশ করার কৌশল তো আছেই। এক কথায় অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে রাখার কৌশল বলা যায়। তবে এতোসব বিপত্তি বাধার মধ্যেও মানুষ তো আশার মুখ না দেখে বেঁচে থাকতে পারে না।
লুঙুদু বাজারে এখনো পাহাড়িরা খুব কমই যায়। বলতে গেলে এখন বাজার মেলেনা। পাহাড়ি জনগণ এখনো বাজারে যেতে ভয় পায়।
লুঙুদুতে পাহাড়ি ও অপাহাড়ির অনুপাত অনেক আগে থেকেই ব্যালেন্সের মধ্যে নেই। সেটলার ও সাধারণ বাঙালি যেখানে ৫০ হাজার, সেখানে পাহড়ির সংখ্যা মাত্র ১৫ অথবা ১৬ হাজার।
পোড়া ঘরের ভিটেমাটিতে ফেরারও যেন কোনো তাড়া নেই পাহাড়ি জনগণের! ঘটনা ঘটেছে জুন মাসের ২ তারিখ। ২৫ জুন পর্যন্ত ধরলে ২৩ দিন হলো পাহাড়িদের পুড়ে যাওয়া ঘর এখনো আগের মতোই যেভাবে পুড়ে ধ্বংস হয়ে ছিলো সেভাবেই আছে।
ক্ষতির শিকার গ্রামবাসীরা এখনো রাত কাটাচ্ছে দূরে প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে দিন হলেই তারা চলে আসছে তিনটিলা বনবিহারে। সারাদিন তারা সেখানে কাটিয়ে আবার চলে যায় নিরাপদ দূরত্বে।
ক্ষতির শিকার মানুষগুলোর অনেকটা এমন হয়েছে যে, কী আর হবে আবার নতুন করে ঘরবাড়িতে এসে!? নতুন করে ঘরবাড়ি তুলেও আর কী হবে? অনেকটা তিনটিলা গ্রামের কার্বারী অশ্বিনীকুমার চাকমা'র মতো হয়েছে সবার অবস্থা। এই জীবনে যা তিলে তিলে সঞ্চিত ধন, তার আকষ্মিক ধ্বংসসাধনে বিমূঢ় নির্বাক সকলে।
তাদের আগামী যেন থেমে গেছে!
সে যাহোক, আগামীকে রূদ্ধ করার সাধ্য কারোর নেই। তাই স্বাভাবিকের মতো আবার লুঙুদু ঘরপোড়া জনগণ তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে আসুক এই আশা আমরা করতে পারি। লুঙুদুবাসী বা পার্বত্যবাসী বরাবরের মতো দাবি জানাতে পারে জীবন ও ভুমি বা বাপদাদার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের শিকার যেন হতে না হয়, যেন ক্ষতির শিকার হতে না হয় সেই নিশ্চয়তা পাওয়ার। অথবা সেই গ্যারান্টি যদি নিশ্চিত না হয়, স্বাভাবিকের মতো নিজেদের রক্ষার জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা যে নিতে হবে তা-ই যে বাস্তব সত্য, এটাই যে বাস্তবতা, তা কেউ বেবুঝ হলেও নিশ্চয়ই বুঝে থাকবে।




রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের কী কারণ?


Image may contain: tree, outdoor and nature

তারিখঃ ২৯ জুন, ২০১৭
মানসিক ও চিন্তাগত এবং কিছুটা কাজের চাপে আছি। তাই এ বিষয়ে সংক্ষেপে লিখছি।
সার্বিকভাবে সাধারণ মূল্যায়ন করে পাহাড়ধসের কারণ হিসেবে অনেকে নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন। তবে বিশেষভাবে কোন এলাকায় কেন বা কী কী কারণে পাহাড়ধস ঘটেছে তা সম্ভবত এখনো চিহ্নিত করা হয়নি। গত ২৭ জুন আমরা দুইজন ঝটিকা এক সফরে পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখে এসেছি। সময় কম থাকায় এলাকাগুলো ভালকরে পরখ করে ধ্বসের কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে যেসকল কারণে পাহাড়ধস হয়েছে তা সংক্ষেপে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।

১। শহরাঞ্চলের যুবউন্নয়ন এলাকা, মোনোঘর এলাকায় মূলত, ড্রেইনেজ সিস্টেম বলতে কিছু না থাকার কারণে বৃষ্টির সময় পানির প্রবাহ উপচে গিয়ে মাটির ব্যাপক ক্ষয় হয়। এতে পাহাড় কেটে যারা পাহাড়গুলোতে ঘিঞ্জি ঘর তুলেছিল তাদের ঘরে মাটির আস্তর ধ্বসে পড়ে। এবং মানূষজন মারা যায়।
২। ভেদভেদি এলাকায় পাহাড়গুলো ন্যাড়া ও একভাবে লম্বালম্বিভাবে খারা এবং তারউপর পাহাড় আরো খারাভাবে কেটে উপরে নিচে টিনের ঘর বানানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রবল বৃষ্টির পরে মাটির আস্তরে ধ্বস নামতে তেমন বেগ পেতে হয়নি।
৩। মানিকছড়িতে পথের পাশে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পের খারা পাহাড়ের মাটি আগে থেকেই ছিল ন্যাড়া। এখানেও দেখা গেছে পথের পাশে পানি প্রবাহের জন্য কোনো ড্রেইন তৈরি করা হয়নি।
৪। মানিকছড়ির সাপছড়িতে কয়েকটি জায়গায় রাঙামাটি-খাগড়াছড়ির পাকা পথের পূর্বদিকে পানি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। অর্থাৎ, পূর্বদিকের পাহাড় থেকে যে পানি পশ্চিমদিকে নিচে নেমে যাবার কথা তা পাকা পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়। পানি পশ্চিমূখী হয়ে নিচে নেমে যেতে পাকা পথের মাঝ বরাবর ড্রেইন বা কালভারট পর্যাপ্তভাবে বানানো হয়নি। এছাড়া পাহাড়ে লাগানো হয়েছে পরিবেশ অনুপযোগী সেগুন গাছ।
৫। খামারপাড়া এলাকা থেকে মোনতলা কিজিং পর্যন্ত এক কিলোমিটার মতন সড়কপথে প্রকৃতি যেন তার রূদ্ররোষ দেখিয়ে দিয়ে বলতে চেয়েছে, প্রকৃতির উপর জবরদস্তি সহ্য করা হবে না! সাপছড়িতে নিচু জায়গা ভরাট করে বানানো হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ভরাট করার জন্য মাটি কাটা হচ্ছে খামারপাড়ার পূর্বদিকের একটি পাহাড় থেকে। পাহাড় এমনভাবে কাটা হচ্ছে যেন পাহাড় কাটা অবৈধ নয়!
৬। খামারপাড়া এলাকায় যেখানে পাকা সড়ক চিড়ে ভেঙে পথকে উত্তর ও দক্ষিণ দু'দিকে পৃথক করে দিয়েছে সেখানে একটি স্বাভাবিক ছড়া বা নালার সৃষ্টি হয়েছে। ছড়া বা নালাটির অস্তিত্ব অনেক আগে ছিল। কিন্তু পাকা পথ বানানোর সময় নালাটিতে খুব কম পানি প্রবাহের উপযোগী করে ছোট করে বানানো হয়েছে। তাই ১২-১৩ জুন যখন প্রবল বৃষ্টি হয় তখন প্রকৃতি স্বাভাবিকভাবেই নিজের ন্যায্যতা আদায় করে ছেড়েছে।
৭। মোনতলা কিজিং-এর ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। কিজিং শব্দটি থেকে বোঝা যায় এই জায়গাটিতে দুই পাহাড়ের মাঝে চলে যাওয়া খাদ বা হাঁটা পথ ছিল। পরে পাকা সড়ক বানানোর সময় সেই কিজিং ভরাট করে তার চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। ১২-১৩ জুন সুযোগ পেয়ে প্রকৃতি আবার তার জন্য নতুন কিজিং তৈরি করে নিয়েছে। এখানেও পাকা সড়ক উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৫০ ফুট বা তার অধিক চিড়ে পৃথক হয়ে গেছে।
৮। রাঙামাটি খাগড়াছড়ি সড়কের পূর্বপাশের অনেক খারা পাহাড়ের মাটি ধ্বসে পড়েছে। এগুলো আগামীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরকম স্থানের সংখ্যা ৫০/৬০ এর কম হবে না। কেন এগুলো ধ্বসে পড়েছে ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে? একে একে বলা যায়- পাহাড়ের মাটি ঝরঝরে; পথ নির্মাণকালে অবাধে পাহাড়কে খারাভাবে কাটা হয়েছে; বৃষ্টির সময় পথের পানি বেয়ে যাবার জন্য কোনো ড্রেইন করা হয়নি; মাটির যাতে ক্ষয় না ঘটে সেরকম কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
৯। ঘিলাছড়ি ও তার আশেপাশের এলাকায় পাকা সড়ক ঢালু হয়ে ফেটে গেছে বা কিছু অংশ ধ্বসে গিয়ে কয়েকশত ফুট নিচু খারা ঢালু? তৈরি হয়েছে। এগুলো এতোটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, কোনো গাড়ি বা ব্যক্তি নিচে পরে গেলে নিশ্চিত জীবন বিপন্ন হয়ে উঠবে।
কেন এই ধ্বস? সেই একই কারণ, ড্রেইন নেই এবং মাটির ক্ষয় রোধ করার ব্যবস্থা নেই।
সে যাই হোক, ধ্বসের পরে কারণ নির্ধারণ করা সহজ।
তবে এই কাজটি করা প্রয়োজন ছিলো।
এছাড়া কেন প্রকৃতি প্রবলভাবে 'বৃষ্টির ধারা' সৃষ্টি করেছিল তার আবহাওয়া বা জলবায়ুগত বিশ্লেষণ করা দরকার।
পার্বত্য মন্ত্রণালয় পাহাড়ধসের কারণ হিসেবে বজ্রপাতকে দায়ী করেছে। তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকলে ঠিক আছে। তবে 'ফাল্টুমি' ও 'ছ্যাবলামি' করার জন্য বা দায়সারাগোছের অনুসন্ধান করে দায়সারা এই 'কারণ' চিহ্নিত করে থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্তকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
দায়িত্বজ্ঞানহীন অনুসন্ধান...।

লুঙুদুতে প্রাণ আমারঃ তুক্কোপুদি’র দুঃখের কথা শোনাই তবে!

তারিখঃ ০৪ জুন, ২০১৭
শোনো বলি এ কথা,
আমি গল্প লিখতে বসিনি,
লিখতে বসেছি হিল চাদিগাঙের
ছড়া ঝিড়ি নদী নালা বন বাদাড়ের
গেনখুলী ধুধুক হেংগরং বাজি শিঙার কথা!
লুঙুদু যেন সারা পার্বত্য চট্টগ্রামের দুঃখী মানুষের প্রতীক হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সেই ১৯৮৯ সালের ৪ মে তারা একবার আক্রমণের শিকার হয়েছিল। ঘরবাড়ি সহায়সম্পত্তি আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছিল তাদের। তারপর আরো চলে গেছে যুগ ধেয়ে আরো অনেক বছর। ৮৯ সালের সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি তারা হয়তো ভুলতে বসেছিল। তাই হয়তো তারা আশায় বুক বেঁধে পাকা ঘর দালান বানাতে শুরু করেছিল।
তারা ভুলে গিয়েছিল, এমন এক সময় ছিল পার্বত্যবাসীরা সুন্দর করে ঘর তুলতে, ভালোমতো ঘর তুলতে চিন্তা করতে পারতো না। তারা ভুলে গিয়েছিল পাকা দালান কেন সাধারণ বাঁশের বেড়া দেয়া ঘর তারা একসময় বানানোর চিন্তা করতো না পাছে সেটলার হামলায় সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে তাদের সহায় সম্পদ আবার পুড়ে যায় এই দুর্ভাবনায়। তাই তারা তুলতে শুরু করেছিল পাকা দালান!
তারপর এলো ০২জুন, ২০১৭ শুক্রবারের এক সকাল! এবং তারপর পুড়ে গেল তাদের বাড়িঘর, সহায় সম্পত্তি। সাধের স্বপ্ন তাদের ধ্বংস হয়ে গেল। তাই মনের দুঃখ নিয়ে বুকের কোণ থেকে একবুক আবেগের দলা উগরে দিয়ে বুদ্ধ কুমার চাকমা চিৎকার না করেই সিধে ও সাদা ভাষায় বলে ওঠেন, আমাদের ত্রাণ লাগবে না, মেলে ফেলেন। কী এক শুন্যতা পেয়ে বসলে ভদ্র এক গেরস্থের কাছ থেকে এই কথা উঠে আসে তা কি কেউ জানবে বা কেউ কি বুঝবে?
বাহাস বাদ রেখে আজ বলবো উত্তর মানিকজুর ছড়া গ্রামের তুক্কোপুদি নামে এক নারীর কথা। তিনি তার গ্রামে বসবাস করছেন সেই ছোটোকাল থেকে। বিয়ের বয়স হবার পরে কয়েকজন সন্তান হবার পরে তিনি হারান তার স্বামীকে। তারপর সংসারের ভার কাঁধে নেন। ছেলে মেয়েদের মানুষ করার চেষ্টা করেন। এখন বয়স হবার পরে নাতি নাতনিদের আদর ভালবাসা দিয়ে পুত্র কন্যাদের ঘরে ঘরে ঘুরেফিরে আদর আপ্যায়ন যা পাবার তা পেয়ে বাকি দিন কাটানোর কথা। কিন্তু ভাগ্যে যখন লেখা থাকে দুর্ভাগ্যের লিখন, তখন কে তারে সুখে রাখে! কর্মের বাঁধন যে যায় না খন্ডন! দুঃখ যেন লিপির লিখন তার কপালে!
সকালে ঘুম থেকে উঠে তুক্কোপুদি ভাত রান্না করার পরে আয়েশ করে তার নাতিনদের সাথে মশকরা খুনসুটি করে সময় কাটাচ্ছিলেন। সময় বেশ কাটছিল বটে! কিন্তু মানিকজুর ছড়া বিলের ওপারে তিনি দেখতে পেলেন ধোঁয়া উড়ছে, আগুন লেগেছে, চলছে চিৎকার। মানুষজনের পালিয়ে আসার স্রোত তিনি দেখতে পেলেন। দূর থেকে তা দেখেই তিনি নিজের ঘরের উঠানে বসে আপন মনে জীবনের কথা হয়তো ভাবছিলেন। এবং চিন্তা করছিলেন, আপন জাতভাইবোনদের ঘরবাড়ি পুড়ে গেল। বাঁচাতে পারলো না কিছুই। পরিচিত আত্মীয় কেউ মারা গেল কি না তা নিয়ে হয়তো তিনি দুশ্চিন্তা করছিলেন। তিনি ভাবতে পারেননি, বিরাট একটি ধান ক্ষেতের মাঠ পেরিয়ে সেটলাররা মানে দুর্বৃত্তরা তাদের গ্রামেও আসবে! হয়তো তিনি তার জন্য এক কাপড়েই প্রাণ নিয়ে ঘর থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন আরো কিছুক্ষণ পর!
তারপর তিনি দেখলেন ৫শত বা ৬শত বা তারও অধিক সেটলার ধেয়ে আসছে তাদের গ্রামের দিকে। গ্রামের সমর্থ জোয়ান মরদ পুরুষরা রণসজ্জ্বা নিয়ে কান্তা বাদল দা কুড়াল বিয়োঙ খন্তা বা হাতে যা পেল তা-ই নিয়ে গ্রাম বাঁচাতে রুখে দাড়ানোর উদযোগ করলো। শুরু হলো চিৎকার চেঁচামেচি। পুরুষ ও নারীরা একযোগে চিৎকার দিলো, উজোও উজোও, বাঙালুনে আদাম ঘিরদন, উজোও উজোও! গ্রামের নারীরা বুদ্ধ ভগবানের নাম নেয়া শুরু করলো। কিন্তু তারপরও তারা তাদের ভবিতব্যকে ছেড়ে দিলো কপালের হাতে! এবং এভাবে গ্রামের শক্ত সমর্থ নারী ও পুরুষরা রুখে দাঁড়ালো আধ থেকে পৌনে একঘন্টার জন্য। তারা কান্তা বাদল দিয়ে ’দুর্বৃত্তদের’বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলো। রুখে দাঁড়াবো না কেন, জুলি ন উধিম কিত্তেই, কবিতা চাকমার এই কবিতাটি তো তারা পড়েনি!
কিন্তু এ কি! দুর্বৃত্তদের সামনে ’চিদিরে ভদরা’ ওরা যেন কারা? দুর্বৃত্তদের হয়তো প্রতিরোধ করা যায়! কিন্তু যাদের হাতে থাকে আইন ও শক্তির লম্বা হাত, তাদের সাথে এই নিরীহ গ্রামবাসীর কীইবা করবে? এযাবৎ বছরের পর বছর তো তারা এই শক্তির পুজো করে এসেছে ঘরে, গ্রামে, ঝাড়ে, হাটে বাজারে বা পথেঘাটে! তারা আইনী হোক বা অপ্রকাশ্য যে কোনো শক্তিই হোক!
তাই তারা, মানে গ্রামের জনগণ মানে জুম্মা খাপ্পোআ সহজ সরল পাহাড়িরা এবার ’রণে ভঙ্গ’ দিয়ে পিছাতে শুরু করলো। ’য পলায়তি স’ জীবতি’ এই মন্ত্রকে ধারণ করে তারা জীবন বাঁচানো ’ফরজ’ দর্শনকে বাস্তবে রূপ দিল। তারা একান্তভাবেই নিজের প্রাণই তাই হাতে নিয়ে যেতে পারল! নিতে পারলো না সহায় ও সম্পত্তি, এমনকি ’উড়ন পিনন’ মানে পরিধানের কাপড় তা-ও তারা সঙ্গে করে নিতে পারলো না। তারা পালাতে লাগলো। শয়ে শয়ে তারা বাঁশঝাড়, ঝোপঝাড়, আসামলুদি বন, গাছবাঁশ বাগান, ঘেরা দেয়া বেড়া ডিঙিয়ে যেতে লাগল দূর পাহাড়ে! এবং তারা পিছনে দেখার সময়ও খুব কম পেল। কিন্তু যে-ই পিছনে তাকিয়ে দেখল, সে-ই দেখল, দূরে,ওই দূরে, যেখানে তাদের চিরচেনা গ্রাম রয়েছে সেখানে উড়ছে লেলিহান শিখা, বাজছে দামামা! ফুটছে বাঁশ। একইসাথে তাদের ’চিদঅ বদু’ মানে বুকের একান্ত ভেতরটা টনটন করতে লাগল। তবু তারা খুশী যে প্রাণটা তো বাঁচলো!
এভাবেই তুক্কোপুদি নিজের গ্রামে থেকে ০২ জুন সকালে পালিয়ে গিয়েছিল। তারপর এক কাপড়ে তার আশ্রয় হলো ভুইওছড়া নামে এক গ্রামের জুনিয়র স্কুলের একটি বারান্দায়। সেখানে সে আজ ৪ জুন অবধি রইল বসে জেগে ঘুমিয়ে বা চিন্তা দুশ্চিন্তা করে। এদিকে তার নাতিনরাও এসেছে তার সাথে। তাদেরকে নিয়ে কাটতে লাগল যাকে বলে উদ্বাস্তু জীবন! কেউ কি বুঝবে তুক্কোপুদির দুঃখের কথা? তার বুকের ভেতরের হুুহু চোখের পানি ছাড়া কান্না ও একরাশ শুন্যতার কথা। চোখের পানি কি সহজে আসেেএই পোড়ার জুম্মমিলা বুড়োমিলার চোখে! কিন্তু তার মন কি তবে কাঁদে না। কেঁদে ওঠেনা কি তার আবেগ! মনে কোণে কি অশ্রু ঝড়ে না তার?!
তুক্কেুপুদি শুধু একা নেই এই স্কুলে। সাথে রয়েছে তিন গ্রামের উদ্বাস্তু আরো অনেকেই।
হামলার দিন০২ জুন রাতটি তারা কাটালো। ০৩ জুন তারা ভয়ে ভয়ে কেউ যেতে চাইল তাদের গ্রামে। কী অবস্থা হয়েছে তাদের বাড়ির তা জানতে তারা সেখানে যেতে চাইল। কিন্তু ’বেলে সেন্টার’ বা ’গুজবীয় ব্রডকাস্টিং করপোরেশন’ থেকে তারা জানতে পারলো, পুলিশ নাকি জানিয়ে দিয়েছে, গ্রামে তিনজনের বেশি ঘোরাফেরা করলে এরেস্ট করা হবে। আচ্ছা জ্বালা বটে! কিন্তু, আইনী শক্তির কথা তো ফেলনা নয়! তাই তারা গ্রামে গেলে তিনজন একসাথে যায়। ভুলেও তারা ৪ জন একত্র হয়ে গ্রামের দিকে পা বাড়ায় না।
তুক্কোপুদির পরিবারে সাকুল্যে রয়েছে ৫ জন। তিনি রয়েছেন, রয়েছে তার এইচএসসি ফাইনাল দেয়া একটি পুত্রধন, সাথে তার কন্যা ও কন্যার জামাই। আর রয়েছে একটি নাতিন। তার পুত্রধন এইচএসসি পরীক্ষা দেবার পরে গ্রামে এসেছে। এসেই পরে গেল অঘটনে। কন্যার জামাই একবার তাদের গ্রামের বাড়ি দেখতে গেলেন। দেখলেন পুড়ে গেছে তাদের ঘর।কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুড়ে গেছে ঘরের যাবতীয় সরঞ্জাম। হাড়িপাতিল তো পুড়ে গেছেই! পুড়ে গেছে বালিশ, পাটি, বুরগি, পিনন, খাদি, লুঙ্গি বা গামছা। পুড়ে গেছে খাট পালংক, খাটিয়া আলনা, ছিল ছিল একটি আয়না। তাও নেই! কিছুদিন আগে মাত্র তাদের পরিবার জমি থেকে ধান কেটে কিছু বস্তায় কিছু খোলা জায়গায় রেখে দিয়েছিল। এই ঝুমঝুম বৃষ্টির মাঝেও তুক্কোপুদির কন্যার জামাই দেখতে পেেেলন, ধানগুলো পুড়ে গেছে। কিছু আছে বটে তবে ঝেড়ে মুছে খেলে তিতাই লাগবে। তাদের জমি থেকে তারা এবার দুইশ আড়ি মানে প্রায় ১ হাজার বা তারও বেশি কেজি ধান পেয়েছিল। সব শেষ হয়ে গেছে।
কী আর করা! তিনি ফিরে এলেন ভুইওছড়া জুনিয়র স্কুলের রুমে। সেখানে তিনি খোলা জায়গায় এলিয়ে দিলেন গা। তারপর চিন্তা করা ছেড়ে দিলেন।
এবার বলি তুক্কোপুদি চাকমার আরেক মেয়ের কথা! মেয়ের নাম শিমলিতা চাকমা। তাদের গ্রামেই শিমলিতা মানে তুক্কোপুদি চাকমার কন্যার ঘর। তাদের বাড়িতে রয়েছে ৫ জন। শিমলিতা নিজে, তার তিনটি কন্যা, আর তার শিমলিতার স্বামী। তিনটি কন্যার মধ্যে একটি পড়ে ৮ম শ্রেনীতে। আরো দুইজন আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাদের সবার বইপত্র খাতা কাগজ কলম পুড়ে গেছে সাম্প্রদায়িকতার লেলিহান শিখায়।
তারাও তাদের মা তুক্কোপুদিদের সাথে ভুইওছড়া গ্রামের জুনিয়র স্কুলের রুমে এখন আশ্রয় নিয়েছে।
আরো দূরে আদরকছড়া গ্রামে বাস করে তুক্কোপুদি চাকমার আরেক কন্যা। সে জানিয়েছে আগামী বুধবার বামে আদরকছড়া বাজারে হাটবাজার বসবে। সেখান থেকে তিনি তার মা, তার বোন ও বোন জামাই এবং তার বোন ঝি, ভাইয়ের জন্য কাপড় চোপড় কিনে এনে দেবেন। এরই মাঝে তাদের কাটাতে হবে এক কাপড়ে। কী আর করা! ভাগ্যে যা আছে তা-ই হবে! ভগবান বুদ্ধ, বনবান্তে সহায়। তিনি যদি সহায় না হন তবে তাদের অনেককেই কেন তিনটিলা বনবিহারে আশ্রয় নিতে হলো!
তাদের কষ্টের কথা কি সরেজমিনে তোমরা দেখতে যেতে চাও? তবে যাও লুঙুদু উপজেলায়। সেখানে গেলে তোমরা দেখবে। বিস্তীর্ণ এলাকা পুড়ে গেছে। সব শুনশান। পোড়াবাড়ি ও ভিটা তোমরা দেখবে। তারপর দেখবে হাঁস মুরগি গরু ছাগল চড়ছে মাঠে উঠানে। দেখার কেউই নেই!

লুঙুদু হামলা বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাধারণ মূল্যায়ন

তারিখঃ ০৪ জুন, ২০১৭
[ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে এই মূল্যায়ন নিশ্চয়ই আমাদের ভাবতে শেখাবে এই প্রত্যাশা রেখে লেখাটি ফেসবুকে শেয়ার করলাম]
মোট ১১ টি বাংলা পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণের ০৩ জুন, ২০১৭ প্রকাশিত সংখ্যায় লুঙুদু সাম্প্রায়িক হামলা বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাধারণ পর্যালোচনামূলক সংক্ষিপ্ত আলোচনা এখানে করা হয়েছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, পত্রিকার প্রতিবেদক বা রিপোর্টারগণ কেউই লুঙুদুর মূল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে তথ্য সংগ্রহ করেননি। তাই দেখা গেছে, আসলে কী ঘটনা ঘটেছে তা সংগ্রহ করতে অনেকেই সোর্স হিসেবে ফেসবুককেই ব্যবহার করেছেন। এতে প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে মারাত্মক ত্রুটি দেখা গেছে।
বিশেষ করে গাজীপুরে ব্রয়লার বিস্ফোরণের একটি ছবি লুঙুদু’র ঘটনা হিসেবে ফেসবুকে কে বা কারা শেয়ার করার পরে সেই ছবি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকায় মূল হেডিঙ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি পত্রিকা সেই ছবিটি ব্যবহার করেছে। এতে প্রশ্ন থেকে যায়, রাঙামাটি জেলার লুঙুদুতে কোনো পত্রিকারই কি কোনো প্রতিনিধি নেই? তারা কি এই গুরুতর ত্রুটি ধরিয়ে দিতে পারেননি? অথবা নাকি অসাবধানতাবশতঃ না হয়ে এই ত্রুটিকে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে? খেয়াল করা গেছে গাজীপুরের ব্রয়লার বিস্ফোরণের এই ছবিটি প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় লীড কলাম আকারে ছাপা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে দৈনিক আমাদের সময়ের শেষ পৃষ্ঠায়। ব্যবহার করা হয়েছে যায়যায়দিন পত্রিকার শেষ পাতায়। দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায়ও এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সমকাল পত্রিকায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে বলে জেনেছি। প্রতিষ্ঠিত এই সকল পত্রিকার রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি যারা রয়েছেন তাদের নিশ্চয়ই লুঙুদু উপজেলারও প্রতিনিধি বা পরিচিত কেউ থাকার কথা। যখন এই ছবিটি পত্রিকায় ব্যবহার করা হচ্ছে তখন তারা এই ছবিটি ভ্যারিফাই কেন করেননি তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে থাকলো। অথবা জেনেশুনেই এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তাও এখন প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে যাবে বলেই আশংকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। হয়তোবা ঘটনার মাত্রা নিয়ে বা ঘটনা নিয়ে যাতে প্রশ্ন করা যায় সে দিকটি মাথায় রেখে এই ’কাঁচা ভুল’ যে জেনেশুনে করা হয়নি তা-ই বা কে বলতে পারে?!
পত্রিকার প্রতিবেদনের দিকে খেয়াল রাখলে বোঝা যায় ১১ টি প্রতিবেদন আলাদা আলাদা মনে হলেও মূলত, দুএকটি বাদে বাকি সকল প্রতিবেদনের মূল সূত্র বা মূল লেখক বা মূল তথ্যদাতা বা মূল তথ্য সংগ্রহকারী সম্ভবত দুইজন বা তিনজন হতে পারেন। তাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করার পরে প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং পরে তার দুএকটি বাক্য বা বাক্যাংশ বা প্যাটার্ন বদল করে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনসমূহ পড়ে ভাষাগত ও বানানগত নানা ভুল সহজেই চোখে পড়ে। বিশেষ করে দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রথম অংশেই এই ভুলচুক বেশি উৎকটভাবে দৃশ্যমান।
প্রতিবেদনসমূহ পড়ে আমি তিনটি ক্যাটাগরিতে প্রতিবেদনসমূহ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। তাতে দেখা গেছে, ক্ষয়ক্ষতির বিবরণে প্রশাসনের সূত্র থেকে ১০/১২টির বেশি বলা হয়নি। তবে একটি বেসরকারী সূত্র থেকে ৮৬টির মতো ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পাহাড়িদের পক্ষ থেকে ২০০ বা আড়াইশ বা তারও অধিক বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে। এবং এতে প্রায় সকল পত্রিকায় জনসংহতি সমিতি লুঙুদু উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিশংকর চাকমার উদ্ধৃতি দিয়ে বাড়িঘর পুড়ে যাবার সংখ্যাটি বলা হয়েছে।
প্রশাসনের বক্তব্য সাধারণভাবে গতানুগতিক হয়ে থাকে। এতে সাধারণত, পুড়ে যাবার ঘটনা স্বীকার করা হলেও কম পুড়ে যাবার কথা স্বীকার করা হয়। তাছাড়া ঘটনার জন্য আদতেই দোষী কোন অংশ তা জানার পরেও জটিলতা এড়ানোর জন্য দোষী কোন অংশ তা স্পষ্ট করে বলা হয় না। এখানেও আমরা সেই প্রবণতা দেখতে পাই। অন্যতম জাতীয় একটি দৈনিকে বলা হচ্ছে ’পাহাড়ি বাঙালি সমস্যার কারণে’ ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
তবে দুএকটি পত্রিকায় উদ্ধৃতিসমূহ পাঠ করে সহজেই বোঝা যায় ঘটনার মূল অংশ কে বা কারা ছিল। এক্ষেত্রে আমরা দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মমিনুল ইসলামের বিবরণ উদ্ধৃত করতে পারি। তাকে উদ্ধৃত কওে বলা হচ্ছে- তিনি ’.. ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নয়নের লাশ নিয়ে র‌্যালি করে আসার পথে কিছু লোক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। এ সময় পুলিশসহ যৌথবাহিনী ও প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ায় পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’। এতে দেখা যায় মিছিল করার সময়ই কিছু লোক ’অপ্রীতিকর’ভাবে হামলা করেছে ও পাহাড়িদের বাড়িঘরে নির্বিচারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় বলা হয়েছে- ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তাঁরাও নিরুপায় হয়ে পড়েন। অর্থাৎ, ঘটনা ঘটার সময়ে আইন শৃংখলা বাহিনী উপস্থিত ছিল। তবে তাদের ভুমিকা রাখার মতো পরিস্থিতি সেখানে ছিল না। কিন্তু পাহাড়ি জনগণের পক্ষ থেকে বিভিন্নজনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবরে আমরা দেখতে পাই, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ভুমিকা নিরপেক্ষ না থেকে সাপেক্ষে যেন তারা একটি পক্ষের দিকে বেশি ঝুঁকে গেছেন!
পত্রিকাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি একপেশে ও পাহাড়ি বিদ্বেষী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা। লংগদুতে অনুষ্ঠিত সমাবেশের খবরে বক্তাদের উদ্ধৃত করে উক্ত পত্রিকায় বলা হয়েছে- ’সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করার জন্যে পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়- এনিয়ে গত কয়েকমাসের ব্যবধানে পাহাড়ে তিনজন মোটর সাইকেল চালককে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। প্রতিবেদনে পাহাড়ি জনগণের কোনো বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে সেটলার বাঙালি সংগঠনের খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে ১৪৪ ধারা জারি করার কথা একটু করে বলা হলেও প্রশাসনের আর কোনো ধরণের উদ্ধৃতি বা বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি।

Saturday, May 27, 2017

এক নজরে পিসিপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনঃ ২০০০ থেকে ২০১৩

আপোষহীনতার নাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। গর্বের একটি নাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনতার আশা আকাংখার প্রতীক পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র যুব সমাজের ঐক্যবদ্ধ চেতনার নাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। সর্বোপরি দেশের প্রেক্ষিতে অগ্রগামী একটি সংগঠনের নাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। সংগঠনের পুরো নাম বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। সবার কাছে সংগঠনের পরিচয় পিসিপি এই সংক্ষিপ্ত নামে।
আজ ২০১৭ এর ২০ মে আমাদের প্রাণপ্রিয় এই সংগঠনের ২৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ এই সংগঠন তার শক্তি ও সামর্থ্য নানাদিক থেকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। নানা ধরণের বাধা বিপত্তি আপোষকামীতা দোদুল্যমানতার বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রম করতে করতে এগিয়ে গেছে এই সংগঠন।
আজ আমরা ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন কিভাবে হয়েছে তার সাধারণ সংকিপ্ত বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করবো।। আগামীতে এই লেখা আরো পূর্ণাঙ্গ করার প্রত্যাশা নিশ্চয়ই রাখি।
২০০০ সালে পালিত হয় এই সংগঠনের ১১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। একইসাথে অনুষ্ঠিত হয় ১০ম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল। খাগড়াছড়িতে এই কর্মসূচি পালিত হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশ ও র‌্যালী খাগড়াছড়ির খেুজুর বাগান মাঠে(বর্তমানে উপজেলা মাঠ হিসেবে পরিচিত) হবার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসন শেষ পর্যন্ত সমাবেশ ও র‌্যালি করতে অনুমতি না দেয়ায় সমাবেশ স্বনির্ভর মাঠে করতে হয়। তখন এই স্বনির্ভর মাঠে আজকের মতো বাজার গড়ে উঠেনি। আজকে যেখানে বাজার গড়ে উঠেছে সেখানেই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রশাসন সমাবেশ ভন্ডুল করতে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকাসহ বিভিন্নস্থানে ১৪৪ ধারা জারি করে। প্রশাসনের মারমুখী অবস্থানের কারণে পূর্বনির্ধারিত র‌্যালি আয়োজন করা যায়নি।
উক্ত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের তৎকালীন সভাপতি ক্যহ্লাচিং মারমা(তিনি এখন বান্দরবানের থানছি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান)। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্ণেল কাজী নুর উজ্জামান, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের সমন্বয়ক বদরুদ্দীন উমর, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যূরোর সদস্য হায়দার আকবর খান রনো, ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সঞ্চয় চাকমা, জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক মানস চৌধুরী, সাইফ ফেরদৌস, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী কবিতা চাকমা, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জোনায়েদ সাকী, বাসদ ছাত্রলীগ সভাপতি ইমাম গাজ্জ্বালী, নারী আন্দোলনের নেত্রী সাইদিয়া গুলরুখ ও পিসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক চম্পানন চাকমা। এছাড়া উক্ত সমাবেশে সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রূপক চাকমা বক্তব্য রাখেন।
পরে ২১ ও ২২ মে দুইদিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কাউন্সিলে রূপক চাকমাকে সভাপতি ও চম্পানন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও ডমিনিক ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
২০০১ সালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ১ যুগ পূর্তি বা ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয় ঢাকায়। ঢাকার অপরাজেয় বাংলা পাদদেশে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল ছাত্র সমাবেশ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কর্মসূচিতে বেলুন উড়িয়ে সমাবেশ উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিত খান। উদ্বোধনের পরে র‌্যালির আয়োজন করা হয়। র‌্যালি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে শেষ হয়। পরে বিকালে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সভার থীম শ্লোগান ছিল- লাম্পট্য, নষ্টামি ও সুবিধাবাদিতার বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের ভুমিকা ও আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামে করণীয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রূপক চাকমা। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের সমন্বয়ক বদরুদ্দীন উমর, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ)এর আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান, ইউপিডিএফ নেতা অনিল চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী কবিতা চাকমা।
পিসিপির একযুগ পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত লিফলেটের শেষাংশে লেখা ছিল- লড়াই সংগ্রামের পথ কোন দেশে কোন কালে এত সহজ ছিলো না। আমাদের বেলায়ও এ কথা সত্য। আলোর বিপরীতে যেমন অন্ধকার থাকে, দেশপ্রেমিক সংগ্রামীর বিপরীতে তেমনি থাকে বেঈমান বিশ্বাসঘাতক।
এছাড়া এতে লেখা ছিল- যে কারো গণতাান্ত্রিক অধিকারের প্রতি পিসিপি শ্রদ্ধাশীল। একমাত্র গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতার ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।
এরপর ২১ ও ২২ মে দুইদিনব্যাপী ১১ তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসা। পরে মিল্টন চাকমাকে সভাপতি ও প্রমেশ^র চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।

০০২ সালে পিসিপির ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয় খাগড়াছড়িতে। অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদন মংশে মারমার পিতা কংজরি মারমা। মংশে মারমা ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য। তিিিন ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর শহীদ হন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ-মাহবুব) এর আহ্বায়ক আ. ফ. ম. মাহবুবুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের নেতা ও লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুর রহমান, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিমা আখতার হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী করিম আবদুল্লাহ, ইউপিডিএফ নেতা অনিমেষ চাকমা। এছাড়া সংহতি বক্তব্য লিখে পাঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন শেষে তারপরদিন ২১ মে নারাঙহিয়া পাইওনিয়ার ক্লাবে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। উক্ত কাউন্সিলে প্রমেশ্বর চাকমাকে সভাপতি. মিঠুন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও স্বর্ণজ্যোতি চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষনা করা হয়।
এই কমিটির নেতৃত্বে পরে শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয় এবং ভাষা সংস্কৃতি ও ইতিহাস চেতনার সংগ্রামে শরিক হোন এই আহ্বান জানিয়ে পিসিপির শিক্ষাসংক্রান্ত আন্দোলন শুরু হয়।

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ২০০৩ সালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী ও বাংলাদেশ লেখক শিবির ঢাকা নগর সভাপতি কমরেড প্রাণেশ সমাদ্দার। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ন্যায়সংগত আন্দোলনের প্রতি মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে সমর্থনব্যক্ত করেন। সকালে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবার পরে বিকালে মুসলিম হলে এক আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চেতনার আন্দোলনে বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক দলের করণীয়।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব অধ্যাপক সুনীতিভূষণ কানুনগো, চবি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনিরুজ্জামান, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। ইউপিডিএফএর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন রবি শংকর চাকমা।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি জেলাস চাকমা। এখানে প্রসংগত বলা প্রয়োজন যে, সংগঠনের কাজে সক্রিয় ভুমিকা না রাখার কারণে ১২ তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের নির্বাচিত সভাপতি প্রমেশ্বর চাকমাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে জেলাস চাকমাকে অন্তবর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
পরে ২১ হতে ২৩ মে তিনদিনব্যপী কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনে মিঠুন চাকমাকে সভাপতি, অলকেশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও দীপংকর ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত কেের ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রচারিত লিফলেটে বলা হয়- এই ১৪টি বছরে শতশত মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ, হারিয়েছি অনেক সম্ভাবনাময়ী তরুণপ্রাণ সহযোদ্ধাদের। সংগঠনের অগ্রযাত্রার পরতে পরতে মিশে আছে কান্না-হাসি-ক্ষোভ-বেদনা, উদ্দীপ্ত উচ্চারিত শ্লোগান আর গৌরবদীপ্ত ছাত্র যুব জনতার প্রতিরোধ। আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যারিকেড ভেঙেছি-উদ্দীপ্ত হয়েছি। সামনের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। অধিকার আদায়ের যে শপথ নিয়ে আমাদের রাজপথের সংগ্রাম আমরা সেই অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না। আমরা জন্মেছি বাধার প্রাচীর ছিন্ন করার জন্যই।
সংগঠনের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ২০০৪ সালের ২০ মে পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শওকত আলী’র লিখিত বক্তব্য পাঠ করে পড়ে শোনানো হয়। তিনি অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে সমর্থ হননি। তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্য পাঠ করিয়ে শোনানোর পরে মিঠুন চাকমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী প্রাণেশ সমাদ্দার, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশ ছাত্র কেন্দ্র’র সভাপতি রহমান মিজান, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মৃদুল কান্তি দাস, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী সোনালী চাকমা, পাহাড়ি যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর চাকমা বক্তব্য রাখেন।
১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল শ্লোগান ছিল, ’জাতীয় কলংক মোচন করে অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবাদী ছাত্র সমাজ পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকাতলে সমবেত হোন’।

আলোচনা সভা শেষে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলা ভবনের মাতৃভাষা চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন সন্তোষ চাকমা, দীপংকর ত্রিপুরা ও অলকেশ চাকমা।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ তার ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০০৫ সালে পালন করে শাসকগোষ্ঠীর ভাগ করে শাসন করার কূটকৌশল মোকবেলা করে বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে। খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কাসেম ফজলুল হক। পিসিপির সভাপতি রুপন চাকমা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মৃদুল কান্তি দাস, বাংলাদেশ ছাত্র কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জনি, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি সোনালী চাকমা, ইউপিডিএফ নেতা অনিমেষ চাকমা। সভা পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপংর ত্রিপুরা।
এখানে বলা প্রয়োজন ২০০৪ সালের ২৪ থেকে ২৬ নভেম্বর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ১৪তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল অধিবেশন চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। এতে রুপন চাকমাকে সভাপতি, দীপংকর ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক ও রিকো চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করেে ১৯ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষনা করা হয়েছিল। উক্ত কাউন্সিল থেকে নতুন দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। সমাপনী অধিবেশনে ইউপিডিএফএর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক প্রসিত বিকাশ খীসা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পিসিপিকে অবশ্যই আদর্র্শিকভাবে সশস্ত্র হতে হবে। সকল ধরণের প্রলোভন, আত্মপ্রতিষ্ঠা ও ব্যক্তিস্বার্থপরতার উর্দ্ধে উঠে ছাত্রসমাজকে জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আগুয়ান সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।

২০০৬ সালে পিসিপির ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেন্দ্রীয়ভাবে পালন করা হয়নি। তবে নান্যাচর, কাউখালী ও কুদুকছড়ি শাখার উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
২০০৬ সালের শেষ থেকে ২০০৮ সালের শেষের দিক পর্যন্ত দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এ পরিস্থিতিতে দেশে মিছিল মিটিঙ সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় পিসিপি ২০০৭ ও ২০০৮ ও ২০০৯ সাল এই তিনবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সমর্থ হয়নি। এরই মাঝে ২০০৭ সালের ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ঘরোয়া সভার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। উক্ত ১৭তম কেন্দ্রীয় কমিটি হিসেবে বিবেচিত করে দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর ত্রিপুরা। সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুনির্মল চাকমা। সকলের উপস্থিতি ও সম্মতিতে রিকো চাকমাকে সভাপতি, অংগ্য মারমাকে সাধারণ সম্পাদক ও ক্যহ্লাচিং মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। সভা থেকে সারাদেশ থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া পাহাড়িদের ভূমি বেদখল ও বিভিন্নভাবে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ২০০৮ সালে সংগঠনের ১৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা থেকে একটি লিফলেট প্রকাশ করে। এই লিফলেটের শিরোনাম ছিল- অব্যাহত ভূমি বেদখল-হামলা-জাতিসত্তা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, শাসক চক্রের আন্দোলন ঠেকানোর গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হবে না, পিসিপির পতাকাতলে সমবেত হোন, আসুন! পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই বেগবান করি।
লিফলেটে বলা হয় জরুরি অবস্থার সুযোগ নিয়ে ’প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখলের মহোৎসব চলছে। পাহাড়িদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করে বহিরাগত বাঙালিদের বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া গ্রেফতার, নিপীড়ন-নির্যাতন, ধর্মীয় পরিহানির মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে।
২০১০ সালের ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি ঢাকাস্থ পুরানা পল্টনের তাজুল অডিটোরিয়ামে সংগঠনের ১৮তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলন থেকে অংগ্য মারমাকে সভাপতি ও সুমেন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলা থেকে ২৪০ জন প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বিদায়ী কমিটির সভাপতি রিকো চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের আহবায়ক মাসুদ খান, সংস্কৃতির নয়া সেতু'র লিমন, প্রগতির পরিব্রাজক দলের মাহাবুব মোস্তফা রাসেল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের পারভেজ লেনিন, বিপ্লবী ছাত্র সংঘের আশিষ, জাতীয় ছাত্রদলের আজিজুল ইসলাম, ল্যাম্পপোস্টের প্রিন্স মাহমুদ প্রমুখ। সম্মেলন উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন। উদ্বোধনী আলোচনা সভা শেষে টিএসসি সড়কদ্বীপ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালী বের করা হয়।
২০১০ সালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেন্দ্রীয়ভাবে পালন না করে বিভিন্ন উপজেলায় একযোগে পালন করা হয়। মাটিরাঙ্গা, পানছড়ি, দিঘীনালা, মহালছড়ি, কাউখালীকে অনুষ্ঠিত উক্ত সভাসমূহ থেকে সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি নগ্ন হস্তক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করা হয়। সভা থেকে বক্তাগণ সভা সমাবেশের উপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি জানান।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ১৯তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় খাগড়াছড়িতে ১১-১৩ জানুয়ারি, ২০১২ সালে। কাউন্সিলে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটিতে সুমেন চাকমাকে সভাপতি, থুইক্যচিং মারমাকে সাধারণ সম্পাদক, আপ্রুসি মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। কাউন্সিলের বিভিন্ন অধিবেশনে তৎকালীন বিদায়ী সভাপতি অংগ্য মারমা ও তৎকালীন বিদায়ী সহসভাপতি ক্যহ্লাচিং মারমা সভাপতিত্ব করেন।
কাউন্সিলের শ্লোগান ছিল- সমাজ ও জাতীয় আন্দোলনে বিভেদ সৃষ্টিকারী এজেন্টদের প্রতিহত করুন! আসুন, অধিকার আদায়ের আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের গৌরবোজ্জ্বল পতাকা উর্দ্ধে তুলে ধরি!
কাউন্সিল অধিবেশন থেকে বক্তারা বলেন, সরকার শুধু নিপীড়ন নির্যাতন করে ক্ষান্ত নয়। ছাত্র-যুব সমাজকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে মদ-গাঁজা-হেরোইন ইত্যাদি মাদক যুবসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বক্তারা নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে পাহাড়ে সমতলে সমানতালে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
পিসিপির ২২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর(২০১১) শ্লোগান ছিল-গোলামী-লেজুড়বৃত্তি ও আত্মপ্রতিষ্ঠায় জাতির মুক্তি নেই, জাতীয় মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ছাত্র সমাজ জেগে ওঠো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের ৭নং সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামানের সহধর্মিনী ও মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর এমরিটাস ড. সুলতানা সারওয়াতারা জামান। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেনইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সহযোগী অধ্যাপক হাসিবুর রহমান, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নিরূপা চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শান্তিদেব চাকমা।অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিমল লংডকিরি, বিপ্লবী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আশীষ শর্মা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের জোট ভূক্ত সংস্কৃতির নয়া সেতুর কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার সম্পাদক আধ্যাপক জাহিদ হাসান ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক সামিউল আলম। এছাড়া সান্তাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, প্রগতির পরিব্রাজক দল (প্রপদ) ও ল্যাম্পপোষ্ট অনুষ্ঠানে সংহতি জানান।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুমেন চাকমা।
সমাবেশের উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. সুলতানা সারওয়াতারা জামান বলেন, ’অনেক জায়গায় আন্দোলন হয়েছে এবং আন্দোলনে সফলতা এসেছে,আপনাদের আন্দোলন একদিন না একদিন নিশ্চয় সফল হবে। ’
২০১২ সালে সংগঠনের ২৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী খাগড়াছড়িতে পালন করা হয়। ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমেন চাকমা। উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রীনা দেওয়ান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আপ্রুসি মারমা। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা। সভায় সচিব চাকমা বলেন, শেখ হাসিনা খালেদা জিয়া আমাদের অধিকার দেবে না। আমাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। তিনি ভূমি কমিশনের বিতর্কিত কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানান।
২৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রচারিত লিফলেটের শিরোনামায় লেখা ছিল- আপোষহীন সংগ্রামের ২৩ বছর। সংখ্যালঘু জাতির উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করুন।
লিফলেটের এক অংশে লেখা ছিল- পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ ঐতিহ্যগতভাবে কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করে না। তাদের আত্মমর্যাদাবোধ ছিল প্রবল, কখনো কারো কাছ থেকে হাত পেতে কোন কিছু চেয়ে নিত না। এ উন্নত মূল্যবোধে পচন ধরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে চলছে সুগভীর ষড়যন্ত্র।

২০১৩ সালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সংগঠনের দুইযুগ পূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে। উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা। খাগড়াছড়ি নারাঙহিয়ায় খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি সালমান রহমান। সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা।
সমাবেশে ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা বলেন, তরুণ প্রজন্মকে কামান, বেয়নেট উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, পিসিপির নাম ভাঙিয়ে কেউ যেন ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য ছাত্রসমাজকে সজাগ থাকতে হবে।
দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে সংগঠন একটি লিফলেট প্রকাশ করে। লিফলেটের শিরোনামায় লেখা ছিল- পিসিপি প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পূর্তিতে আহ্বান, জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে আসুন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হই! লিফলেটের শেষে লেখা ছিল- যে শিশু একবার জেগে ওঠে, তাকে ঘুম পাড়াি গানে ঘুমানো যায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্রসমাজ জেগেছে, তাদের আর হুমকিতে কিংবা প্রলোভনে বশীভূত করা যাবে না। দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের দৌরাত্ম্যে আমরা ক্ষান্ত হব না। অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে।
পরে খাগড়াছড়ির সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে ২২-২৩ মে দুইদিনব্যাপী ২০তম কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে থুইক্যচিং মারমাকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিলাস চাকমা এবং সিমন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৯ সদস্য বিশিস্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিদায়ী কমিটির সভাপতি সুমেন চাকমা নতুন কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
দ্রষ্টব্যঃ লেখাটি এখনো অসম্পূর্ণ। পরে আরো তথ্য সংগ্রহ করে বিশদ ও পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করা হবে।

Sunday, January 15, 2017

ইচ্ছা বা চাওয়া

তারিখ: ০৬ জানুয়ারি, ২০১৭
চেয়েছি আকাশ অনন্ত যাতে চোখ জুড়োবে
যা দেখে মহান মহতের সাধনার পরশ পাওয়া যাবে।
ছুঁতে চেয়েছি পাহাড় বা সুউচ্চ শিখরকে
যার গা ছুঁয়ে চলে গেছে অনাবিল বিশুদ্ধ বাতাস
যে ছিল অনড় অটল।
স্পর্শে স্পর্শে নিজেকে স্নিগ্ধ, সৌম্য বা শান্ত সমাহিত করতে চেয়েছি, অবারিত আকাংখায়।
পেতে চেয়েছি গভীর এক নদী সাগর অতলকে
যেখানে সূর্য তার তাপ ও আলো বিদ্ধ করতে গিয়ে রিক্ত হয়েছে বা হয়েছিল।
আমি এক অজানা অজ্ঞাত বা দুর্জ্ঞেয়র উপর ঝান্ডা উড়াতে চেয়েছিলাম, সত্যিই তো আমি তা-ই চেয়েছিলাম!
সময়ের সীমিতি বা তার সীমাকে আমি চেয়েছিলাম তুচ্ছ বা তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যবচ্ছেদে বিবর্ণ করতে।
আমি চেয়েছিলাম তোমাকে, তুমি নিজেকে চেয়েছিলে!
তারপর অমোঘ নিয়মে
নিজেকে সিক্ত করতে থাকি এই *আমি*!
এক সময় আমার বোঝাপরা হয়
আমি দুলতে থাকি
নিজেকে চিনতে থাকি, বুঝতে থাকি জানার আর কী আছে বাকি।
এবং তারপর
যা হবার তা-ই হল, যা ছিল স্বাভাবিক, বাস্তবিক
তারপরও আমি থেকে গেছি নি:সীমতায়!
কে আমি তবে, তবে তুমিই বা কে?
বুঝে নিও অক্লেশে হতে গিয়ে ক্লিশে!!!

ন ডোরানদে মানজো সিদু ভুদতুনউনে দেঘা দি ন পারন

চীন দেজঅত চিঙ নাঙে এক রাজা আমলঅত ই চিনু নাঙে এগগো লেঘ্যিয়্যে এলঅ। ত্যা এ ভুদঅ পজ্জননো তা বাপ ইআও এনঅত্তুন শুন্যে। ইআও শুন্যে তা আজু বাপপো জুন শেঙঅত্তুন।  জুন শেঙে আরঅ কাআত্তুন শুন্যে সিআন হবর পাআ ন জাই। তবে এ পজ্জননো কধা জেক জেক কধা, ইওত কোনো মিঝে কধা নেই।
ঙি চেঙ নাঙে এগ্গান শঅরঅত চিআঙ স্যান মাঙ নাঙে একজনে এলঅ। ত্যা এলঅ হুব সাহজী, বলীবন্দ। হালিক ত্যা এলঅ অমহদঅ একবুচ্যা, আর মাধাবোত ঘিলু এলঅদে কম। সে বাদেও ত্যা এলঅ হুব নাদা, থাউইয়্যে ন এলঅ ত্যা। একবার ত্যা কোনো একজনঅত্তুন শুনিলঅ, তারাা শঅরঅ কুরে শুঙ তিঙ পো নাঙে একজনে ভুদঅ বেআর হুরি থাউইয়্যে উইয়্যে।
এ কধাআন শুনিনেই তাআত্তুন ভুদঅ বেআর গুরি থাউইয়্যে অহবার পরানে কঅলঅ।  ত্যা মনে মনে কঅলঅ, মুই দ সাহজবলা আঘঙ, আর বলঅ আঘে মঅর অমহদঅ। সুঙ মানুজচো ‍জুনি ভুদঅ ধুরিনেই বেআর গুরি থাউইয়্যে ওই পারে, সালেন মুিই কিত্তেই ন পারিম? ত্যা কলঅ, ভুদতুনউনোরে মুই পত্তি রেদোত ধুরিম, তারপর তারা কিএত স্যাপ(থুথু) ফেলেই দিম। সে পরে তারা ছাগল অহবাক। আর তারা ভুদ ওই ন পারিবাক। পরে তারারে বাজারঅত নেজেনেই বিজি দিলে মুই থাউইয়্যে ওই পারিম। মুই থাউইয়্যে অহলে থাআজা মদ হেই পারিম আর হাজি হেই পারিম।
ইআন চিদে গুরি ত্যা কুদু ভুদ আঘন সে হবর ধরা শুরু গললঅ। ত্যা হবর পেলঅ চিঙচেঙ নাঙে এগগান শঅরঅত ভুদ আঘঅন। সিদু ভিলি মরা মানজোরে যে জাগাত রাঘানে সে কুরেকারে ভুদঅ জালাই কনঅজনে সাচসাচ অহবার পরে থ্যাঙঅ ন দোন।  এ কধা শুনি ত্যা সিদু জেইনেই ভুদ ধুরিবঅ চিদে ‍গুরিলঅ।
চিআঙে স্যান মাঙ গাচাচোই এগগো লুধিক বানেলঅ। আর সমারে লঅলঅ এগ্গান লাম্বা দুড়ি। তারপরে ত্যা চিঙচেঙ শঅরঅত জেলঅ। সিদু জেইনেই রেদোত ত্যা মরা মানুজ রাঘান্দে সিদু রেদোত আহদি আহদি গেলঅ। ত্যা লুগেই লুগেই ভুদতুনউনেও হবর ন পাআন পারাআ মরা মানুজ রাঘান্দে জাগাত জেইনেই চেরোকিত্তে বেড়ানা শুরু গললঅ।  হালিকক একবার দিবার তিনবার চেরবার ত্যা চেরোকিত্তে ঘুরি বেড়েনেইও ভুদঅ পাদা বা হবর নন পেলঅ। ভুদতুনউনে তা মুজুঙে নয়ও এলাক।
সে পরে ত্যা সে শঅরঅত এগগো জমিদারঅর পুরোন এগ্গান ঘরঅত গেলঅ। সিদু ভালক বজর আগে জমিদারজে ভালকজনঅরে মারেই ফেলেইএ।  সিওত ভুদঅ ডরে কনঅজনে ন জেদাক। সিদু চিআঙে রেত্তোবো গাই গাই রেদ কাদেলঅ। হালিক দিবে তিননো পেজা আর কয়েগগো উন্দুর ধাবা দেনার রঅ বাদে ত্যা কোনো কিজুই ন  শুনিলঅ, ন দিঘিলঅ। ভুদতুনউনে তা মুজুঙে দেঘাও ন দিলাক। ত্যা ভজমান মনত দুগ পেলঅ। আর পেরেশান অহলঅ।
তারপরেও ত্যা আহল ন সারিলঅ। ত্যা আরেকদিন রেদোত ভজমান ডাঙর এগ্গান তারুম ঝারঅত গেলঅ। সিআন ভজমান তারুম ঝার এলঅ। মানজে কদাক, সিদু শদে শদে ভুদ থাআন। চিআঙে সিদু ঘনদা কে ঘনদা বুজি থেলঅ, হাপ দি থেলঅ। হালিক ত্যা বানা ঝারঅ পজুপেকক বাদে কিচচু ন দিঘিলঅ। একবার বানা ভালুদ্দুরঅত পঅর ‍গুরিবার এগগো চেরাগ জলেত্তে কিজু এগ্গান দিঘিনেই ত্যা সিদু ঝাদিমাদি জেইনেই চাইওইদে সিআন কিচচু নয়।
ত্যা গোদ রেততো সিদু কাদেনেই বিন্নে পঅর ওইনেই আঝা সারি দিনেই ঘরঅ মুক্কে আহদা ধললঅ। ইঙিরি ত্যা আরঅ নানা জাগাত মাহজমুলো ঘুরি বেড়েলঅ। হালিক ভুদঅ মাজারাও ত্যা লাআপ ন পেলঅ। বানা পেরেশানি হেলঅ।
আঝা সারিনেই ত্যা তা শঅরঅত ফিরি এলঅ। তা এ অবস্তা দিঘিনিই শঅরঅর গেআনি ‍বুদ্ধিবলা মানজে তারে কলাক, ‘চিআঙ, গোদা জিঙানিআন ঘুরি বেড়েলেও তুই ভুদঅ মাজারা লাআপ ন  প্যাবেএ। ভুদতুনউন ত ধুক্কেন সাহজবলা মানজো মুজুঙে ন এবাক। তারা জ্যাক্কেনে হবর পিওন তুই ভুদতুনউনোরে ধুরিনেই তারারে স্যাপ সিদি দিইনেই তারারে ছাগল বানেনেই বাজারঅত বিজি দিবে তারা ইক্কো মুজজো গ্যালেও ত মুজুঙে ন এবাক আর। তুই আঝা সারি দ্যা।
তবে চিআঙে এনজান রমচক্র গুরি ভুদ তোগা লামিবার পরে চিঙচেঙ শঅর আর তা কুরেকারে জাগাআনিত ভুদঅ জালা আর ন এলঅ আর। তা ডরে ভুদতুনউনে বেএক দুরঅত ধেই জিওন্দোই। সেনোত্তেই তা শঅর আর কুরেকারে মানুজচুন তারে হুব বাইনী গুজ্জোন।
এ গলপবো বা পজ্জননো শুনিনেই আমি হবর পেলঅঙ ন ডোরাইদে মানজে ভুদ ন দেঘঅন। সাহজবলা মানজে ভুদ ন দেঘঅন। ভুদ দেঘঅন্দে পাদারাআ মানজে।

Saturday, January 14, 2017

লাজ পিইয়্যে ভুদঅ গপ


ইবে এগগো ভুদঅ গল্পঅ বা পজ্জন।  চীনঅ ভুদঅ পজ্জন। পজ্জননোত লেঘা আগে, তাই তুঙ উয়ান নাঙে একজনে তা আজুত্তুন এ পজ্জননো ‍শূনন্যে।  তা আজু শুনন্যে আরঅ তা আজুত্তুন।  ইঙিরি সে আজুবো আরঅ শুনন্যে তা আজুত্তুন। কোই পারা জাই, পজ্জননো ভালক বজর আগঅর। একুনে চের পাচশত বজর আগঅর অহবঅ এই পজ্জননো।  সিওত লেঘা আগে ভালক বজর আগে তাই তুঙ ইয়ানঅর গেআদি(জ্ঞাতি) এগজনে একবার শঅরঅত বেড়েবাত্তেই জিইয়ে। সিদু ত্যা মানজে ন থানদে এগ্গান ঘরঅত রেত কাদেই পিইয়্যে। যে ঘরঅর ত্যা এলঅ  সিআন এলঅ সারা ঘর। সিওত কনঅজনে নন থেদাক। মানজে কধাক সিওত এগগো ভুদ ভালক বজর ধুরি থেদঅ। মানজে সিওতত থ্যালে ভুদতো তারারে ডর লাগেদঅ। মানজে ডরে সিওত ন থেদাককোই। হালিক তাই তুঙ ইয়ানঅর এ গেআদি মানুজচো ভুদপেরেত কিচ্চুই ন ডোরেদঅ। 
ত্যা সে ঘরআনঅত বিল্লে বিল্লে পরঙ উইয়্যেগোই। তারপরে ত্যা সিওত  বিচ্চোন বেজেনেই ঘুম জেবার বেবস্থা গুজ্জে।  রেদ অহদে অহদে ভালককন পর জ্যাক্কেনে তার ঘুম এজঙ এজঙ অহর স্যাক্কেনে ত্যা দিঘিলঅ ভুদতো ঘরঅ ভিদিরে ইচ্চে। ভুদতো এইআই তা কিয়্যেআন ফুলােনা শুরু ‍ গুজ্জে। হানককন পরে ত্যা দিঘিলঅ ভুদতো ঘরঅ চালঅ দেগেনঅ সঙ লাম্বা ওই জিএগোই। তাই তুঙ ইয়ানঅর গেআদিবো ভুদতোরে ন ডোরেনেই ত্যা চেরাগগো জালেনেই ভুদতোরে চাআনা শুরু গললঅ। ত্যা  দিঘিলঅ, ভুদতো ভুজুমো ওইনেই তারে ডর লাগেবার চাআর। আর ভুদতো তারে অমহদঅ রাগ ডেগেনেই কলঅ, তুই ভিলে মরে ন ডরাচ, তুই ভিলে ভুদ ন ডোরাচ?
তাই ‍তুঙঅ গেআদিবো ভুদঅ কিত্তে রিনি চেইনেই কঅলঅ, না দ ন ডোরাঙ দঅ। 
ভুদতো সিআন শুনি আরঅ রমসমঅ রাগ ডেগেনেই নাগঅনদি বনবন নিজেচ সারিলঅ। মুওততুন আগুন বাইর গুরিনেই তারে ডর ডেগেনেই কঅলঅ, ইক্কে মরে চাআ।  এবঅ মরে তর ডর গরেদে ধুক্কেন ন লাগে?? 
তাই তুঙঅ গেআদিবো কঅলঅ, আ কোই, তরে দ মুই এক্কেনাও ন ডোরাঙঅর! তরে দ মত্তুন ডর গরে পারা ন লাগের। 
সিআন শুনিনেই ভুদতো আমক অহবার অবস্তা অহলঅ। এধক বজর সঙ ত্যা দিঘি ইচ্চে মানুচ্চনে তারে দিঘিলে মাত্তর ডরে কী গুরিবাক কী ন গুরিবাক অহন, তারা ডরে মুজজো জেবার অক্ত অহয়। আ এ মরনঅ মানুচচোরে এধক ডর দেঘেবার চেরেস্তা গুরিনেইও তারে ত্যা ডর দেঘেই ন পাললঅ। 
ত্যা এক্কা এক্কা লাজানা শুরু গললঅ। তাই তুঙ অর গেআদিবোরে ত্যা পিঠ পোচচো দোঙ দোঙ গুরি কঅলঅ, আ তুই দ ইচ্চে মরে লাজঅত ফেলেলে।  মুই দ লাজে কুদু মুক লুগেই রাগেম কোই ন পারঙঅর। 
ভেই, তুই মরে এক্কেনা এ লাজঅত্তুন বাজাআ। মরে ন ডোরেলেইও এক্কেনা ডোরাঙ ডোরাঙ ভাব গরনা! ইধিক্কেন গুরি তরে ডর ভোরেই দি ন পারিলে দ মঅর মান সম্মান ন থেবার অকতঅ অহবঅ!
তাই তুঙ অর গেআদিবো সিআন শুনিনেই কলঅ, মুই তরে ন ডোরেলে তরে ডোরাঙ ডোরাঙ মুও গুরি ন পারিম। 
ভুদতো তা দি আহত জুড় গুরি তাই তুঙঅর গেআদিরে সেলাম গুরি আরকবার কুজুলি গুরিলঅ, ত্যা জ্যাআন তারে ডরাই পারা গরে। হালিক তাই তুঙঅ গেআদিবো ভুদতোরে পাত্তাই ন দিলঅ। 
এ অবস্তা লাআপ পেইনেই ভুদতো ভজমান অগমান পেলঅ। ত্যা নিজঅ মনে মনে কঅলঅ, এনজান আগাত্যা রকবেঙা তাইপঅর মানুচ মুই েআর নহ দেঘঙআর। ন আরিবো আর! ইদু থেই ন আরিবোআর! মত্তুন এ ঘরঅত্তুন ধেই জা পুরিবগোই। এনজান শতান মানুচ্চোই থেই ন পারিবো। ইআন কোইনেই ভুদতো ব’নিজেচ ফেলেইনেই বুইয়্যেরঅত মিঝি গেলঅ। সিত্তুন ধুরি সে সারা ঘরআনঅত আর ভুদতুদ কিজু দেঘা নহ জাই আর। 





Monday, February 15, 2016

সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার ইউপিডিএফনামা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা

অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন দীর্ঘ সাত বছর পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেছেন এবং তিনি ভ্রমণের পরে যা দেখেছেন বা পার্বত্য সমস্যা নিয়ে তিনি যা মনে করেন তা নিয়ে তিনি স্বনামধন্য দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি ছোটো আকারের প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রবন্ধটি প্রথম আলো পত্রিকার ০৯ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় মতামত বিভাগ বা উপসম্পাদকীয় কলামে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রবন্ধটিতে তিনি তার ভ্রমণ বৃত্তান্ত বর্ণনা করেননি। তবে বলা যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা নিয়েই তিনি আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন এবং নিজস্ব একটি সিদ্ধান্ত বা সমস্যা সমাধানমূলক সারসংক্ষেপ টানতে চেষ্টা করেছেন। তিনি মূলত ১৯৯৭ সালের ০২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপটের সাথে বর্তমান প্রেক্ষাপটের কিছুটা তুলনা করে তার মতামত প্রদান করেছেন। তার লেখা থেকেই আমি কিছু উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
খাগড়াছড়ি জেলা থেকে রাঙামাটি হয়ে কাপ্তাই উপজেলার বাঙালহালিয়া ভেদ করে যে রাস্তা রাঙামাটিতে গিয়েছে তার বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করে তিনি লিখেছেন-
রাস্তাটির নির্মাণকাজ নব্বইয়ের দশকে শেষ হয়েছিল, কিন্তু তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সেটা খুব ব্যবহার করা হতো না। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে যায়। ফলে এখন এ রাস্তা কার্যকর বলে বিবেচিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার সর্বসাধারণের এখন চট্টগ্রাম ঘুরে নয়, সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে।
অর্থাৎ, পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের একটি আপাত শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং সে এলাকায় অর্থনৈতিক বা যেকোন প্রকারের উন্নয় বলি না কেন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি লিখেছেন-
১৯৯০-৯২-এ কর্তব্যরত ছিলাম বান্দরবান সেনা রিজিয়নে, কমান্ডার হিসেবে। ওই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান চলছিল। পার্বত্য চুক্তি অন্তত সে পরিস্থিতির ইতি টেনেছে।
তিনি লিখেছেন-
যোগাযোগ অবকাঠামোর সঙ্গে বাজারব্যবস্থার যেমন উন্নতি হয়েছে, তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রাম, বিশেষ করে দক্ষিণের জেলা বান্দরবানে পর্যটনের যে দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে, তা অচিন্তনীয় ছিল। নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে যে কয়েকটি জায়গা পর্যটনের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল, আজ সেসব জায়গায় প্রতিদিন শত শত লোকের পদচারণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এদের সমাগম। পর্যটনকে কেন্দ্র করে আশপাশের উপজাতীয় গ্রামগুলোতে হস্তশিল্প গড়ে উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র। এরই প্রেক্ষাপটে স্থানীয়ভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
আমাকে লেখকের বা প্রবন্ধকারের উদ্ধৃতি একটু বেশি করেই দিতে হচ্ছে তার কারণ এতে তার লেখায় তিনি যা বলেছেন বা বলতে চেয়েছেন তা বেশি মাত্রায় স্পষ্ট হবে। এছাড়া আসলে তিনি যা বলেছেন তা-ই যেহেতু আলোচনার মুখ্য বিষয় সেহেতু তার আলোচনার বিষয়বস্তু আগে পাঠকদের জানা দরকার বলেই প্রতীয়মান। সে বিষয় বাদে আমার যা বক্তব্য বা যা মত তা সাধারণভাবে বিষয়কে, মাথাটি মাটির দিকে বা মাধ্যাকর্ষনের উল্টো দিকে না রেখে তা আকাশের দিকে বা যেভাবে থাকা স্বাভাবিক সেদিকে স্থাপন করার প্রচেষ্টাটাই মূখ্যকাজ হিসেবে বিবেচিত করছি মাত্র।
যা-ই হোক, এরপর তিনি তার লেখায় পার্বত্য এলাকায় শিক্ষার উন্নয়নের একটি চিত্র উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। এই প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনার প্রাক্কালে তিনি তার প্রবন্ধের প্রধান বিষয়বস্তুকে সামনে আনার চেষ্টা করেছেন। তিনি লিখেছেন-
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নিয়ে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের বিরোধিতা ছিল।
তবে কেন ও কী কারণে এই দুই রাজনৈতিক দল ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন নিয়ে ‘বিরোধিতা’ করেছিল তা নিয়ে তিনি আলোকপাত করেননি। সম্ভবত তাতে তার আলোচনার মোড় তিনি যেদিকে নিতে চাচ্ছেন তা ফিরে যাবে বা তার গতি অন্যদিকে যাবে বলে তিনি সে আলোচনায় যাননি!
এখানে বলা দরকার উপস্থানার মাধ্যমে তিনি দুই পার্বত্য রাজনৈতিক দলকে ‘শিক্ষার উন্নয়ন বিরোধী’ হিসেবে চিত্রিত করার সচেতন প্রয়াস না করলেও বক্তব্যের অন্তঃধ্বনি বা লুক্কায়িত থাকা বক্তব্যটি যে সেটিরই আভাস দেয় তা যারা পাঠক তারা সেভাবেই বুঝবেন বলেই বোধে আসে বলে প্রতীয়মান।
এখানে বলা দরকার যে, দুই রাজনৈতিক দল ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ নয় বরং মেডিক্যাল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করেছে। এবং এই বিরোধিতার অন্যতম কারণ হলো, পার্বত্য জুম্ম জনগণের ‘রাজনৈতিক অধিকার’কে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সরকারী যে ‘অপচেষ্টা’ তা তুলে ধরার  প্রচেষ্টা চালানো। সরকার, তা আওয়ামীলীগ বা বিএনপি বা মহাজোট বা ১৪ দলীয় জোট বা ২০ দলীয় জোট যারাই হোক না কেন, তারা যে সবসময় একই তালে পার্বত্য জুম্ম জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্রমাগত দুর্বলতর করারই চেষ্টা করে যাচ্ছে সেদিকটি নিয়ে সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে পার্বত্য জুম্ম জনগণকে ‘রাজা বাদশার হালে’ রাখলেও বা তাদের ‘সোনায় মুড়িয়ে দিলেও’ তারা যে পিঞ্জরাবদ্ধ ‘সোনার পাখি’ মাত্র তা তো বলা বাহুল্যমাত্র! সরকার একদিকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে অকার্যকর করে রেখেছে, কায়েম করেছে স্বার্থবাজ ধান্ধাবাজদের রাজত্ব। অন্যদিকে চুক্তি বাস্তবায়নের ’মেগা সিরিয়াল’ প্রদর্শন করে যাচ্ছে ক্রমাগত।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার বেহাল দশার পেছনে সরকারের জুম্ম ধ্বংসের নীতি যে কার্যকর রাখা হয়েছে তা নিয়ে আলাদাভাবে লেখা দরকার বলে মনেকরি।এখানে সে আলোচনা বাড়তি প্রসঙ্গ যোগ করবে মাত্র।
তবে এরপর ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন অন্য আলোচনার পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিকভাবে ‘ইউপিডিএফ’এর নামটি এনেছেন। এবং আমার মূল আলোচনা আমি সেখানেই নিবদ্ধ করার চেষ্টা করবো।
তিনি ইউপিডিএফ বা ইউনাটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট নিয়ে যা যা বলেছেন তা আমি তুলে ধরছি।
১. অতীতে যেমন ছিল, বর্তমানে সমগ্র দেশের তুলনায় সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। তবে ইউপিডিএফ নামে যে গোষ্ঠীটি পার্বত্য চুক্তির বিরোধী, তাদের তৎপরতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বলপূর্বক চাঁদা তোলার ঘটনা ঘটছে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনজীবন অতিষ্ঠ।
২. পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের তুলনায় যথেষ্ট স্থিতিশীল। তবে নতুন উপসর্গ ইউপিডিএফের নামে সংঘটিত সশস্ত্র তৎপরতাকে রাজনৈতিক ও স্থানীয়ভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে পরিস্থিতি অস্বস্তিকর হতে পারে।
ইউপিডিএফ সম্পর্কে তিনি এতকথা বলার পরে তার প্রবন্ধের সমাপ্তি রেখায় ‘আশার বাণী’ নিশ্চয়ই টেনেছেন! তিনি বলছেন- উসকানিমূলক বক্তব্য বা কর্মকাণ্ড নয়, সম্প্রীতি আর সৌহার্দ্যের মাধ্যমে অনেক জটিল বিষয়ের সুরাহা সম্ভব।
তবে তার এই ইউপিডিএফ নামা’র মাধ্যমে তিনি ‘সম্প্রীত ও সৌহার্দ্য’ কতটা দেখিয়েছেন এবং ‘উসকানিমূলক বক্তব্য বা কর্মকান্ড’ই বা কতটা না বলেছেন তা নিয়ে আমরা বিতর্কে যেতে পারি বটে!
ইউপিডিএফ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্য নিয়ে আলোচনার আগে আমি তার আগে করা উদ্ধৃতি বিষয়ে আগে দুয়েকটি কথা বলি। তবে বলা দরকার যে, আমার এই লেখা যেহেতু কোন প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ হবার সম্ভাবনা নেই এবং সাধারণভাবে এই ধরণের লেখা যেহেতু মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় না সেহেতু আমি সাধারণভাবে একটু রিল্যাক্স মুডে লেখা লিখে থাকি। রিল্যাক্স মুডে মানে হলো, লেখাটি এতটা ’স্ট্যান্ডার্ড’ বা মানসম্পন্ন না করলেও চলে!
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন তার লেখার প্রথমে পার্বত্য চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে গুণগান করেছেন। কিন্তু আদতেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে যদি পার্বত্য সমস্যার সমাধান হয়েছে এই সিদ্ধান্তে তিনি পৌঁছাতে চান বা তাঁর আগেও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান যেমন পার্বত্য সমস্যাকে অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তার সমাধানের উদ্যোগ নিয়েও সম্ভব করে উঠতে পারেননি, সেই একই কথার চর্বিতচর্বন করতে চান তবে তাতে আমার বা আমাদের বলার মতো তেমন থাকে না বলেই মনেহয়!
সুতরাং, এই পুরোনো কিন্তু ছাঁচে ঢালা বক্তব্যে পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের যে টিকিটিও নাগাল পাওয়া যাবে না তা তিনি জেনেশুনে যদি বলে থাকেন ভিন্ন কথা! কারণ, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি করে জেএসএসএর অস্ত্রসমর্পন করানোর শাসকশ্রেনীর মতলব বা উদ্দেশ্য ছিলই তো, জুম্ম জনতার রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের পাটাতনকে সরিয়ে নেয়া!
কিন্তু, সরকার প্রধান যখন বলেন মিলিটারির মাধ্যমে পার্বত্য সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়,  তখন পুরোনো সেই ’মিলিটারির মাধ্যমে’ দমনপীড়ন চালিয়ে এবং ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ করে বা ‘উন্নয়ন বোর্ড’ বানিয়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ’শান্তি’ স্থাপন করার দাওয়াই যখন কোনো অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা প্রদান করেন তখন আমাদের একটু অবাক বিস্মিত হতে হয় বৈকি!
এবার আসি ইউপিডিএফ প্রসঙ্গে। তিনি বলেছেন, ইউপিডিএফ বছরে ৫০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি করে থাকে। তবে কোন সূত্র থেকে তিনি একথা বলেছেন তা তিনি উল্লেখ করেননি। এবং একটি সক্রিয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন বিষয়ে একটি প্রগতিশীল দৈনিকে এধরণের সূত্র উল্লেখ বিহীন তথ্য বা ডাটা থাকলেও তাতে পত্রিকাটির ‘সম্পাদকীয় নীতিমালা’র লাভক্ষতি বা নীতির গতি পরিমাপরে ক্ষেত্রে কোনো হেরফের হয় না বা হবে না বলাই যায়! কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক চেতনাকে দমানোর নীতি যখন ‘প্রায়োরিটি’র বিষয় তখন তাতে ঘি ঢালাই তো মূলধারার গণমাধ্যমের কর্তব্য করণীয় হিসেবে নির্ধারিত!
যেকোনো প্রকারে হোক পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক চেতনাকে যখন রূদ্ধ করার বা দমন করার নীতি সামনে এসে হাজির হয় তখন কে কি করেছে বা করছে বা কোন সংগঠন কী করছে না করছে তা মুখ্য নয়, বরং, বাঘ ও হরিণের সেই গল্পটির ছড়ায় পানি পান করার মতো বাঘকে যে যুক্তিসম্পন্ন না হলেও বা ছলে না হলেও বলে বা শক্তি প্রদর্শন করে যে হরিণকে ’ভক্ষণ’ করতে হবে তা তো উদাহরণ হিসেবেই রয়েছে!
তবে আশার কথা(!) হলো, ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন ‘নতুন উপসর্গ ইউপিডিএফের নামে সংঘটিত সশস্ত্র ৎপরতাকে(বোল্ড মন্তব্য প্রদানকারী লেখকের) রাজনৈতিক ও স্থানীয়ভাবে মোকাবিলা’ করার কথা বলেছেন!
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের লেখাটি নিয়ে আলোচনা করতে হল এ কারণে যে, তিনি সাধারণভাবে একজন ’ক্লিন ইমেজের’ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে এবং একজন সজ্জ্বন ব্যক্তি হিসেবেও দেশে পরিচিত।সুতরাং তিনি যখন কোনো মন্তব্য বা মত প্রকাশ করেন তখন তার গুরুত্ব থাকা প্রয়োজন এবং দেয়া প্রয়োজন। সেনাবাহিনীতে কাজ করার কারণে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে যে চিন্তা ভাবনা করেন তা যে দেশের সেনাবাহিনীতে কর্মরত বর্তমান ও সাবেক ধিকাংশ জনের সাথে মিলে থাকবে তাও নিশ্চয় বিবেচনায় নিতে হয়। তার লেখা নিশ্চয়ই আরো অনেকে পড়েছেন এবং তাতে বর্তমান সমস্যা কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে ‘ক্লু’ যে অনেকে পাবেন তা বলা যায়। এছাড়া আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে, বর্তমান সরকার বা এর আগের ও কোনো সরকারই ‘জাতীয় নিরাপত্ত নীতি’ নিয়ে কোনো ধরণের ‘নীতিমালা’ নির্ধারণ করেনি। তাতে দেখা যায়, ব্যক্তিবিশেষের মতামত বা চিন্তাধারার প্রাধান্য সরকারের নীতিমালা ঠিক করতে অনেকসময় প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এবং এখনো পর্যন্ত ‘আধিপত্যবাদী’ ধ্যানধারণা বা দৃষ্টিকোণ থেকেই সরকারী শাসক পর্যায়ের নীতি নির্ধারক মহল পার্বত্য সমস্যা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলেই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়।
সেদিক থেকে আমরা শুধু এটাই আশা করবো যে, সরকার বা শাসকশ্রেনী এই ‘আধিপত্যবাদী ধ্যান ধারণা’ থেকে বেরিয়ে আসবে!
পাদটীকাঃ আমার লেখায় আমি ইউপিডিএফ নিয়ে আলোচনা করিনি।বরং পার্বত্য সমস্যা নিয়ে শাসক মহলের বা শাসকশ্রেনীর নানা অংশের ‘আধিপত্যবাদী’ দৃষ্টিভঙ্গি ও ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি যে রয়েছে তা নিয়ে  আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

Tuesday, February 9, 2016

সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টিঃ প্রেক্ষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম

তারিখঃ ১২ জানুয়ারি, ২০১৬
মিঠুন চাকমা
পারিবারিক অভিজ্ঞতা জ্ঞাপন
আমার দাদীর বাড়ি রাঙামাটির লুঙুদু উপজেলার মাহজনপাড়া গ্রামে।বলে রাখি তিনি লেখাপড়া করেননি।তার সময়ে মেয়েদের লেখাপড়া করা বারণ ছিল। তাই সবাই স্কুলে যাবার সময়ে তিনি হয় রান্নাঘরের চুলা সামলাতে মায়ের সহকারী হয়েছেন নতুবা ঘরের নানা কাজে সহযোগিতা করেছেন।তার সাথে আলাপ করার সময় তার বাপের বাড়িতে ঘটা একটি ঘটনার কথা তিনি স্মরণ করছিলেন।তখন তিনি দাদুর বাড়িতে স্ত্রী হিসেবে চলে এসেছেন এবং কয়েকজন ছেলেপিলেও তার হয়েছে।একদিন তিনি জানতে পারেন তাদের গ্রামে তার পিতার ঘর  ‘সর্বহারা’রা লুট করেছে। সর্বহারা নামে যারা এই ঘটনা ঘেটিয়েছিল তারা লুট করেছিল ধানের গোলা থেকে ধান, টাকা পয়সা যা ছিল ও তাদের ঘরে যে সকল কাপড়চোপড় ছিল সবকিছু।তিনি জানাচ্ছিলেন, তার মা বেশ কষ্ট করে বেইন বুনে বুনে পিনন ও খাদি (চাকমা নারীদের পরনের পরিধান)বুনতেন। এবং তা একটি পুটলি বা বোাঁচকায় রেখে দিতেন। সর্বহারা’রা যেদিন লুট করতে আসল সেদিন তার মা পিনন ও খাদি’র সেই পুটলি যেন লুটের হাত থেকে বাাঁচাতে পারেন তার জন্য তা ঘরের বাইরে পাহাড়ের নিচে ছুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বহারা’রা তাও কুড়িয়ে নিয়ে যায়। লুটের পরে তার মায়ের পড়নের কাপড় ছাড়া কিছুই ছিল না। তাকে অন্যজন থেকে কাপড় চেয়ে নিতে হয়েছিল। পরে তিনি নিজে তার মায়ের জন্য পিনন বা পরনের কাপড় পাঠিয়ে দেন।
সর্বহারারা কেন মাহজনপাড়া গ্রামে আমার দাদী’র পিতার বাড়ি লুট করেছিল? এ বিষয়ে দাদী কিছু্ই বলতে পারেননি। কারণ তিনি কীই বা বুঝবেন শ্রেনীশত্রু-মহাজন শ্রেনী বিষয়ে! আমি তো অবাক হই এতদিন পরে তিনি কিভাবে এই ‘সর্বহারা’ শব্দটি মনে রাখতে পারলেন তা নিয়ে!
আদতে দাদী বা তাদের পিতার পরিবার কি বড়সড় কোনো জমিদার কেউ ছিলেন? অথবা ছিলেন অত্যাচারী জমিদার, জোতদার?
ধনসম্পত্তির দিক থেকে হয়ত তাদের অন্যজনের চেয়ে ভালো অবস্থান ছিল। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রেক্ষাপটে ধনী বা জমিদার বলতে যা বোঝায় তা হল, ‘বজরঅ ভাদে পারানা’ বা একুনে ধানের যা উৎপাদন তা দিয়ে পুরো একটি বছর কাটিয়ে দিতে পারাই হলো তৎকালীন সময়ে ধনী বা থাউইএ(চাঙমা ভাষায় ধনী অর্থে বোঝাতে) বা জমিদার হিসেবে পরিচিতির বৈশিষ্ট্য।কিন্তু এটাও ঠিক যে এই জমিদার বা ধনী বা চাকমা ভাষায় থাউইএ শ্রেনীর লোকজনকে তাদের নিজেদের জমিতে নিজেদের গতরও খাটতে হতো।তারা বা এই শ্রেনী কাউকে অত্যাচার করতো কি না তা খুঁজতে হলে পাই পাই করে প্রতিজনের বিষয়ে বাস্তব ধারণা নিতে হবে। কিন্তু তারপরেও কি শ্রমিক শ্রেনীর কমিউনিস্ট বা বিপ্লবী রাজনীতিতে এই ‘মাঝারী ধনী’ বা ‘স্বচ্ছল ধ্বনী’ক শ্রেনীকে ‘শ্রেনীশত্রু’ তকমায় ফেলা যায়?
সম্ভবত, চীনে মাও সেতুঙের পিতা তারও চেয়ে অধিক ধনী বা বিত্তবান বা অধিক জমিদার ছিলেন। কিন্তু মাও সেতুঙ কি এই শ্রেনীকে ‘শত্রু’র কাতারে ফেলেছিলেন?
সর্বহারা পার্টি’র ‘পূর্ব বাংলার সমাজের শ্রেনী বিশ্লেষণ’ লেখাটি পড়লে বোঝা যাবে ‘দাদী’র পিতা কোন শ্রেনীতে পড়তেন। সম্ভবত, তারা বড়জোর ধনীক শ্রেনীর কাতারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।তবে ধনীক শ্রেনীর কাতারে পড়বেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। দাদী বলেছেন, তার পিতা খুব কষ্ট করে নিজে পরিশ্রম করে ‘আগাব ভুঁই’ চাষ অযোগ্য জমির মাটি কেটে কেটে চাষাবাদযোগ্য জমি প্রস্তুত করেছেন। খেটে খেটে জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন। এবং জমিতে তিনি যেমন মজুর নিয়োগ করতেন তেমনি নিজেও জমিতে শ্রম দিতেন। পরে তিনি এলাকায় মহাজন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
এই শ্রেনী সম্পর্কে বলা হচ্ছে-
‘সাধারণভাবে বলতে গেলে তারা পূ্র্ব বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে কিছুটা ভুমিকা পালন করতে পারে এবং জমিদার বিরোধী ভূমি বিপ্লবী সংগ্রামে নিরপেক্ষ থাকতে পারে। এ কারণে আমরা ধনী চাষীদের জমিদার শ্রেনীভুক্ত করবো না এবং অপরিপক্কভাবে তাদের ধ্বংস করার নীতি নেব না।’(সূত্রঃ সিরাজ সিকদার রচনা সংগ্রহ, শ্রাবন প্রকাশনী; প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯; পৃঃ ৫০।
মাও্ সেতুঙ তার ‘চীনা সমাজের শ্রেনী বিশ্লেষণ’ প্রবন্ধে জমিদার শ্রেনী ও মুৎসুদ্দী শ্রেনী ব্যতীত মাঝারী বুর্জোয়া শ্রেনী থেকে শুরু করে পাতি বুর্জোয়া, স্বত্ত্বাধিকারী কৃষক, মালিক-হস্তশিল্পী, ছাত্র-প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক, অফিসের কেরানী, ছোট ব্যবসায়ী, দোকান কর্মচারী, ফেরী ‍ওয়ালা, আধা সর্বহারা, সর্বহারা শ্রেনী প্রমুখকে বিপ্লবে সম্পৃক্ত করার কথা বলেছিলেন। ছোট প্রবন্ধটির শেষে তিনি বলছেন-
‘সংক্ষেপে, এটা সুস্পষ্ট যে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে যোগসাজশে লিপ্ত সমস্ত সমরনায়ক, আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজিপতি শ্রেনী, বড় জমিদার শ্রেনী এবং তাদের সঙ্গে সংযুক্ত বুদ্ধিজীবীদের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ হলো আমাদের শত্রু। শিল্পকারখানায় কর্মরত সর্বহারা শ্রেনীই হলো আমাদের বিপ্লবের নেতৃত্বস্থানীয় শক্তি। সমস্ত আধা সর্বহারা এবং পাতি বুর্জোয়া হলো আমাদের নিকটতম বন্ধু। দোদুল্যমান মাঝারী বুর্জোয়া শ্রেনীর দক্ষিণপন্থীরা আমাদের শত্রু হতে পারে এবং বামপন্থীরা আমাদের মিত্র হতে পারে- কিন্তু আমাদের সর্বদাই সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদেরকে আমাদের ফ্রন্টের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে দেয়া চলবে না।
(পৃঃ ৯)
সুতরাং, শ্রেনী দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে এই ‘ধনীক শ্রেনী’ বা গ্রাম্য ভাষায় ‘জমিদার শ্রেনী’র প্রতি বিপ্লবী পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত বা তাদের বিষয়ে কী কর্মসূচি প্রদান করা করণীয় তা নিশ্চয়ই স্পষ্ট হয়ে থাকবে। তাই নতুনভাবে আর ব্যাখ্যা প্রদান করার দরকার নেই বলে বিশ্বাস।
নিকটাত্মীয় স্থানীয় ব্যক্তির পরিবারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে এত উদ্ধৃতি দেয়ার কারণ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বহারা পার্টির ভুমিকা বা তার রাজনৈতিক সাংগঠনিক কার্যকৌশল তথা বাস্তব কর্মসূচি বিষয়ে আলোকপাত করা এবং তা যে শ্রেনী আন্দোলন তথা কমিউনিস্ট আন্দোলনের দিক থেকে নানা দিক থেকে ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে সেদিকে দৃষ্টি দেবার চেষ্টা করা। এখানে সিরাজ সিকদার বা তার পরিচালিত সর্বহারা পার্টিকে ‘তুলোধুনো’ করার জন্য এই কাজটি করা হচ্ছে না। এটা বলা প্রয়োজন যে, বিল্পবকে এগিয়ে নিতে হলে বিল্পবী পার্টিকেই ‘মূল্যায়নের’ মধ্যে আনতে হবে। সেদিক থেকে বিবেচনা করেই এই লেখা। সর্হারা পার্টি বা অন্য কোনো পার্টি যদি আদৌ বিপ্লবী পার্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, তবে সেই পার্টিকে এই ‘স্ক্রীনিং’এর ভেতর দিয়েই যেতে হবে। অর্থাৎ পার্টিকে অবশ্যই তার অতীত থেকে বা অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে বাস্তবভাবেই শিক্ষা নিতে হবে।
জাতি বা জাতিসমূহের অধিকার বিষয়ে গঠনতান্ত্রিকভাবে বা দলিলে সর্বহারা পার্টির অবস্থান
সর্বহারা পার্টির নিউক্লিয়াস সংগঠন পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত তাদের থিসিসে ‘জাতীয় জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের সাধারণ কর্মনীতি’ অংশে জাতি বা জাতিসত্তাসমূহের বিচ্ছিন্ন হবার অধিকারসহ স্বায়ত্তশাসন ও সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বিকাশের পূর্ণ সুযোগ দেয়ার কথা বলেছে।
এই কর্মনীতি’র ৯ ও ১০ নম্বর অংশে বলা হয়েছে-
‘৯. বিচ্ছিন্ন হবার অধিকারসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিকে স্বায়্ত্তশাসন ও বিভিন্ন উপজাতিকে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দেয়া হবে।’
’১০. সকল অবাঙালী দেশপ্রেমিক জনগণের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বিকাশের পূর্ণ সুযোগ দেয়া হবে।’
(সিরাজ সিকদার রচনা সংগ্রহ; পৃঃ ২৪)
কিন্তু পরে উক্ত সংগঠন পার্টি হিসেবে সর্বহারা পার্টি নাম ধারণ করে তার কাজ পরিচালনার সময় ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করে তাতে সুস্পষ্টভাবে ‘জাতি বা জাতিসত্তাসমূহের জনগণের’ অধিকারের পক্ষে কোনো বাক্য বা বাক্যাংশ সংযুক্ত করা হয়নি।শুধুমাত্র প্রথম অধ্যায়ের সাধারণ কর্মসূচি’র ৪ নম্বর অংশে ‘নিপীড়িত জনগণ ও নিপীড়িত জাতির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে’ ‘সমগ্র মানবজাতির মুক্তির জন্য সম্মিলিতভাবে সংগ্রাম’ চালানোর কথা বলা হয়েছে। (সিরাজ সিকদার রচনা সংগ্রহ; পৃঃ ১৩২)
এই খুবই নগন্য বা অস্পষ্ট তাত্ত্বিক সাংগঠিক বা কর্মর্সূচিগত অবস্থান পরে কী ধরণের ভ্রান্তিতে একটি দলকে নিপতিত করতে পারে আমরা পরে তা দেখবো। এবং এই ভ্রান্তির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকারের লক্ষ্যে আন্দোলনরত সংগঠনের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সর্বহারা পার্টির নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে দেখবো।
এই শ্রেনী বিশ্লেষণ বাদেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত বা জাতিসত্তাগত স্বাতন্ত্র্যের দিকটি বিবেচনায় নিলে সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টির জাতি বা জাতিসত্তাসমূহের জনগণের স্বাতন্ত্রের বা স্বাধিকার তথা স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের বিষয়টি নিয়ে আমরা আরো বেশি কিছু বলতে পারি।
তবে প্রসঙ্গটির বিষয়বস্তু ব্যাপক বিস্তৃতি হবে বিধায় আমরা সেদিকে আলোকপাত করছি না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনকামী সংগঠন বিষয়ে সর্বহারা পার্টি
এ বিষয়ে শুধুমাত্র একটি দলিল আমরা পাই। দলিলের শিরোনামা- ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদীদের প্রতিক্রিয়াশীল কার্যকলাপ’। ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্ফুলিঙ্গ নামক প্রকাশনায় লেখাটি প্রকাশিত হয়। এতে জনসংহতি সমিতি বা জেএসএস’র আন্দোলনকে ‘চাকমাদের আন্দোলন’ বলে অবস্থান তুলে ধরা হয়। লেখাটির প্রথমেই বলা হয়েছে-
সামন্ত ক্ষুদে বুর্জোয়াদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের চাকমা জাতিসত্তার মধ্যে একটি সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চলে আসছে। তারা শোষক ও শোষিত বাঙালীদের মধ্যে কোন পার্থক্য রেখা টানে না, সকল বাঙালীকেই শত্রু মনে করে।(সিরাজ সিকদার রচনা সংগ্রহ; পৃঃ ৬০৩)
এছাড়া এই সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী চাকমা জাতিগোষ্ঠী অন্যান্য জাতিসত্তার প্রতি নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে বলে বক্তব্য দেয়া হয়। লেখা হয়েছে-
‘তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতিসত্তার জন্য স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি না দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন, কখনো কখনো বিচ্ছিন্নতা দাবি করে।
এ দাবির অর্থ হচ্ছে কিছুটা ক্ষুদে বুর্জোয়া আলোকপ্রাপ্ত সংখ্যাধিক চাকমা জাতিসত্তার ক্ষমতা দখল এবং অন্যান্য জাতিসত্তার উপর তাদের কর্তৃত্ব ও নিপীড়ন।’(সূত্রঃ সিরাজ সিকদার রচনা সংগ্রহ; পৃঃ ৬০৩)
উক্ত দলিলে দেখা যায় কমিউনিস্ট পার্টি জাতি সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম উপাদান বা যা সর্বহারার পার্টির নিউক্লিয়াস পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন ঘোষনা দিয়েছে, সেই ‘বিচ্ছিন্ন হবার অধিকারসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিকে স্বায়ত্তশাসন’ প্রদানের কথা উল্লেখ নেই। তার বিপরীতে লেখা রয়েছে-
‘পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি নিপীড়িত বাঙালী-পাহাড়ীদের ঐক্যের পক্ষপাতি এবং পাহাড়ী-বাঙালীদের সমঅধিকার, পাহাড়ী জাতিসত্তাসমূহের প্রত্যেকের জন্য স্বায়ত্তশাসনের পক্ষপাতী।’(সূত্রঃ সিরাজ সিকদার রচনা সংগ্রহ)
উক্ত দলিলে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনী বা জনসংহতি সমিতি দুর্বল হচ্ছে বা জনভিত্তি হারাচ্ছে এবং সর্বহারা পার্টি শক্তিশালী হচ্ছে।
সর্বহারা পার্টি বিষয়ে জেএসএস বা শান্তিবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত সংগ্রামের কাল ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বলা যায়। এই সময়ের প্রথমদিকে উক্ত অঞ্চলে সর্বহারা পার্টিও সক্রিয় ছিল। তাদের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষ হয়েছে। এবং এ বিষয়ে উপরে উল্লিখিত দলিলে বক্তব্যও দেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত না গিয়ে শান্তিবাহিনী বা জেএসএস সর্বহারা পার্টি বিষয়ে কী মত পোষণ করতো তা নিয়ে কিছু উল্লেখ করা প্রয়োজন। তবে এক্ষেত্রে জেএসএস আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দলিল আকারে লেখা প্রকাশ করেনি। অন্তত এ পর্যন্ত সেরকম দলিল আমরা পাইনি। তবে বিভিন্ন প্রকাশনায় বা বইয়ে ব্যক্তিগতভাবে শান্তিবাহিনী বা জেএসএস সদস্যদের বক্তব্য আমরা পাই
সর্বহারা পার্টি বিষয়ে তাতিন্দ্রলাল চাকমা প্রকাশ মেজর পেলে জানাচ্ছেন-
“১৯৭৪ সালের এপ্রিল অথবা মে মাসের ঘটনা। স্থানটির নাম নাহক্য, গবমারা। এটা রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী থানার একটি গ্রাম। আমার গেরিলা জীবনের প্রথম অপারেশন। ….। খবর পেলাম পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি নিয়ন্ত্রিতি একটি সশস্ত্র গেরিলা গ্রুপের অবস্থান। জানতে পারলাম পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির এই গ্রুপে সাতজন গেরিলা আছে এবং তারা সবাই অস্ত্রধারী।হালকা ভারী সব অস্ত্রই আছে তাদের কাছে।…।সর্বহারা পার্টির জোন কমান্ডার লগ্ন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা রয়েছেন নেতৃত্বে।
এরা নানাভাবে আমাদের সংগ্রামে বাধা সৃষ্টি করছিল। স্বাধীনতার পর থেকেই এদেরকে মোকাবেলা করতে হচ্ছিল আমাদের। (বোল্ড করা হল)সিদ্ধান্ত হল সর্বহারার এই গ্রুপটির গোপন আস্তানায় গিয়ে আকস্মিকভাবে আক্রমণ করবো।”(সূত্রঃ শান্তিবাহিনীঃ গেরিলা জীবন, গোলাম মোর্তোজা, সময় প্রকাশন, পৃঃ৬৩)
এছাড়া আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ জেএসএস সদস্য স্নেহ কুমার চাকমা সর্বহারা পার্টি বিষয়ে না হলেও পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্যের সাথে দেখা হবার পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে উক্ত ব্যক্তির মতামত জেনে এ বিষয়ে যে মন্তব্য করেন তা এখানে বলা দরকার। তিনি লিখছেন-
পার্টি জীবনে যে কয়েকজন বাঙালী মুসলমান বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীর সহিত আমার ঘটনাক্রমে দেখা হয়েছিল তারা সকলেই পার্বত্য চট্টগ্রামে ভুমি বেদখলকারী বাঙ্গালী মুসলমানদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করতেন। তাই মনে করি মুসলমান বাঙ্গালী কম্যুনিস্টরা তাদের জাতীয় স্বার্থে সম্প্রসারণ নীতিকে লালন করে কম্যুনিস্ট রাজনীতির চর্চা করেন। তাই করেন বলে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ে পড়া জুম্মদের অস্তিত্ব রক্ষার কথা চিন্তা করেন না, বলেন না।’(সূত্রঃ জীবনালেখ্য, জীবন, সংগ্রাম ও সংঘাতময় দিনগুলির কথা, স্নেহ কুমার চাকমা, আগস্ট, ২০১১; পৃঃ ১৮৫)
এখানে আমি মাত্র এই দুইজনের উদ্ধৃতি যোগ করলাম। পরে আরো কোনো জেএসএস সদস্য বা জেএসএস’র সাংগঠনিক বক্তব্য প্রকাশিত হলে নিশ্চয়ই তা যোগ করার আশা থাকলো। তবে এই দুই বক্তব্যের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগ্রাম চলাকালীন সর্বহারা পার্টি বা দেশের অন্য কমিউনিস্ট পার্টি বিষয়ে জেএসএস বা জেএসএস সদস্যদের মনোভাব প্রকাশ হয়েছে বলে মনে করা যায়।
এতে দেখা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সচেতন রাজনৈতিক অংশ বা যারা তৎকালীন সময়ে জনসংহতি সমিতি বা শান্তিবাহিনী গঠন করে লড়াই করে যাচ্ছিল তারা দেশের বৃহত্তর জাতি বা জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্বকারী পার্টিকে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি বা বিশ্বাস করেনি।
এখানে বলা দরকার পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের থিসিসের সাধারণ কর্মনীতি অংশের দশ নম্বর ধারায় লেখা হয়েছে- ‘সকল অবাঙালী(গুরুত্বপ্রদানের জন্য বোল্ড করা হল)দেশপ্রেমিক জনগণের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বিকাশের পূর্ণ সুযোগ দেয়া হবে।’ এই ‘অবাঙালী’ শব্দবন্ধ ব্যবহারের মাধ্যমেই বোঝা যায়, সর্বহারা পার্টি আন্তর্জাতিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করার কথা বললেও আদতে ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদ’ থেকে এই দলটি উপরে উঠতে পারেনি।
কমিউনিস্ট আন্দোলনে জাতি বা জাতিসত্তার অধিকারের প্রশ্ন
এই বিষয়বস্তু নিয়ে মার্ক্স, লেনিন, স্তালিন, মাও সেতুং থেকে শুরু করে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের অনেকেই লিখেছেন।সুতরাং আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত যাচ্ছি না।
বাংলাদেশের পাশের দেশ বার্মা বা মায়ানমার বা মিয়ানমার। এই দেশটির কমিউনিস্ট আন্দোলন বিষয়ে আমাদের সচেতন মহলে তেমন ধারনা নেই। এছাড়া এই আন্দোলন বিষয়ে এমনকি বার্মা বিষয়েও আমাদের দেশে তেমন বইপত্র পাওয়া যায় না। কিন্তু বার্মা কমিউনিস্ট পার্টি বিষয়ে সম্ভবত আমাদের দেশের কমিউনিস্ট নামে পরিচিত বিপ্লবী পার্টি-সংগঠন ও ব্যক্তির ধারনা থাকা দরকার বলে মনেকরি।
একসময় বার্মায় কমিউনিস্ট পার্টি অব বার্মা বা বিসিপি/সিপিবি খুব শক্তিশালী সংগঠন ছিল। এই সংগঠন সশস্ত্র সংগ্রামও করেছে। কিন্তু ১৮৮৯ সালের দিকে এই সংগঠন দুর্বল হয়ে যায় এবং একঅর্থে তাদের অস্তিত্ব নিভু নিভু হয়ে যায়, যদিও এখনো তা নেভেনি।
এই পার্টি একসময় সারা বার্মায় ছড়িয়ে ছিল। পরে তারা বার্মার শান রাজ্যের দিকে পশ্চাদ্ভাবন করে। সেখানে তারা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সহায়তায় বার্মার মধ্যে চীন বা হান জাতিসত্তার জনগণের মাঝে তাদের সংগঠনের ভিত সুদৃঢ় করে। কিন্তু ১৮৮৯ সালের দিকে হান জাতি বা সেখানে কোকাং নামে পরিচিত জনগণের কমিউনিস্ট যুবনেতৃত্ব পুরাতন বা বয়স্ক এবং বার্মা জাতিভুক্ত নেতৃত্বকে তাদের অঞ্চল থেকে হটিয়ে দেয়। বার্মা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ চীনে পালিয়ে যান। এই ধরনের অভ্যন্তরীণ ক্যুদেতা বা ক্ষমতা দখল কেন হলো। এ বিষয়ে তেমন জানা না না গেলেও এটা বলা যায় যে, মূলত জাতি বা জাতিসত্তার আন্দোলন বিষয়ে ভুল দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহনের জন্যই একসময়ের শক্তিশালী এই সংগঠন দুর্বল হয়ে যায়। Bertil Lintner নামে সুইডিশ লেখক The Rise and Fall of The Communist Party of Burma নামে একটি বই লেখেন। ১৯৮৬ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৮৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বার্মা কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে অবস্থান করে নেতৃবৃন্দের সাক্ষাতকার নিয়ে উক্ত বইটি প্রকাশ করেন। উক্ত বই নিয়ে বার্মা সংশ্লিষ্ট একটি ওয়েবসাইটে যে রিভিউ করা হয় তাতে লেখক বইয়ে যে মূল্যায়ন করেন তার দুই লাইনে তুলে ধরেন। তাতে লেখা রয়েছে-
তিনি লিখেছেন, ‘উত্তরপূর্ব অঞ্চলের ঘাঁটি এলাকার জনগণের কাছে কমিউনিস্ট মতাদর্শ ফাঁপা বুলি বা ধারণা হয়ে গেল জনগণের কাছে কোনো অর্থ বহন না করায় বা বস্তুগত কিছু বোধগম্য প্রমাণিত না হওয়ায়।’(Communist ideology became a hollow concept without any real meaning to the people in the northeastern base areas,” he writes.)।
‘বার্মা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ শিক্ষা যে,দলটি বিদ্রোহের মুখে পড়েছিল কারণ তারা মতাদর্শকে উপরে স্থান দিয়েছিল এলাকার জাতিসত্তাসমূহের অধিকার প্রদানের চেয়ে।’(“It would be an important history lesson for the CPB that it faced mutiny because they had prioritized their ideology rather than ethnic rights (in the region).”)
লেখকের বক্তব্যকে হুবহু আমলে না নিয়েও এটা বলা যায়, তত্ত্ব ও প্রয়োগের মধ্যে সংযোগ সাধন করতে না পারায় এবং জাতিসত্তার জনগণকে কমিউনিস্ট মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে না পারায় এতবড় একটি পার্টি পরে তার সকল শক্তি হারিয়ে ফেলে।
এই একই কথা পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির ক্ষেত্রেও যে অসত্য তা বলা যাবে না।
এখানে প্রসঙ্গক্রমে চীনে মাও সেতুঙের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি ঐতিহাসিক লংমার্চের সময় বিভিন্ন জাতি বা জাতিসত্তার জনগণ অধ্যুষিত জনগণের বিরাট বিরাট এলাকা অতিক্রম করার সময় সে সকল স্থানে অবস্থানকারী জাতি বা জাতিসত্তার জনগণের ব্যাপক প্রতিরোধ ও হামলার মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সে অঞ্চেলের জাতি বা জাতিসত্তার বিরুদ্ধে কোনো বিরুদ্ধ পদক্ষেপ না নিয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছিল এবং পরে চীনের এই সকল জাতি বা জাতিসত্তার জনগণ চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে সর্বতোভাবে সহায়তা করেছিল এমনকি হয়তো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকাও তারা পালন করতে সক্ষম হয়েছিল।
কিন্তু বাংলাদেশে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি থেকে শুরু করে কমিউনিস্ট নামে পরিচিত বিভিন্ন সংগঠন পার্টি জাতি বা জাতিসত্তার অধিকার নিয়ে যেমন সঠিক অবস্থান নেয়নি তেমনি বৃহত্তর প্রেক্ষিতে নিশ্চয়িই আরো অনেক গুরুতর ভ্রান্তির মধ্যে পড়েছিল বলে আজ দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলন যে মাত্রা ও গুরুত্ব নিয়ে জনগণের কাছে হাজির হবার কথা তার অনুপস্থিতি আমরা লক্ষ্য করি। এ বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ আরো হওয়া প্রয়োজন।
কৈফিয়ত: এখানে যে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা নিয়ে আরো অন্য দৃষ্টিভঙ্গি বা ভিন্ন বক্তব্য থাকতে পারে।এ বিষয়ে আলোচনা হলে খুশি হব।

সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...