Showing posts with label সহযোদ্ধার মৃত্যু. Show all posts
Showing posts with label সহযোদ্ধার মৃত্যু. Show all posts

Saturday, September 20, 2014

শহীদ রূপক চাকমাকে স্মরণ করছি, তাকে জানাই সশ্রদ্ধ লাল সালাম!

এক বছর আগের লেখা শেয়ার করলাম।

(এক)

[ শহীদ রূপক চাকমা। আমার কাছে এক আবেগের নাম, সম্মানের সাথে স্মরণ করার জন্য একটি নাম। ছোটোকালে তাকে দেখেছি। কিছুদিন আমাদের পরিবার নারাঙহিয়া অনন্ত মাস্টার পাড়ায় থাকার সময় তাঁর সাথে পরিচয়। একসাথে  'নাধেঙ(লাঠিম)' খেলেছি। তিনি আমাদের সিনিয়র। পরে সেখান থেকে চলে গেলে তাঁকে অনেকদিন দেখিনি। তারপর ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর তাঁর সাথে দেখা। তখন তো তিনি সংগঠনের একনিষ্ঠ কর্মী এবং নেতা। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি হয়েছিলেন। যখন বক্তব্য রাখতেন তখন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বক্তব্য রাখতেন। যুক্তি তুলে ধরতেন ধারালোভাবে।
২০০১ সালের ২০ মে। পিসিপির ১ যুগপূর্তি অনুষ্ঠান ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। থিম শ্লোগান ছিলো-
আদর্শের পতাকা সমুন্নত রেখে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে সামিল হোন- সমস্ত রকমের লাম্পট্য, নষ্টামি ও সুবিধাবাদীতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
র‌্যালি বা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে। আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাবি টিএসসি সেমিনার রুমে।
আলোচক হিসেবে কয়েকজনের মধ্যে ছিলেন বাংলাদশের সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ)-এর নেতা খালেকুজ্জামান। তিনি এই থিম শ্লোগানের সমালোচনা করে সভায় বলেছিলেন যে, এই শ্লোগান রাজনৈতিক শ্লোগান নয়। 'লাম্পট্য নষ্টামি' শব্দগুলো রাজনৈতিক শব্দ বা পরিভাষা নয় বলে তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন।
সকল আলোচক বক্তব্য দেবার শেষে সভাপতি হিসেবে রূপক চাকমা উঠে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিলেন। তিনি এই থিম শ্লোগানের পক্ষে তাঁর যুক্তি খুবই গুছিয়ে তুলে ধরলেন। আমি মন্ত্রমুগ্ধের(!) মতো শুনলাম। এবং উপস্থিত শ্রোতা যারা সেদিন বক্তব্য শুনেছিলেন তারা এই যুক্তিকে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু আজ এত বছর পরে ঐ যে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলাম! এখন তার কিছুই আমার মনে নেই! কিন্তু যেদিন এই জোরালে যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য শুনেছিলাম সেদিন  বুক সোজা সটান করে গৌরব করেছিলাম, হ্যাঁ, আমাদের সংগঠনের শ্লোগান ঠিক আছে। হ্যাঁ, আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠনের থিম শ্লোগান রাজনৈতিক দিক থেকে অবশ্যই অবশ্যই বেঠিক নয়।
এই হলেন রূপক চাকমা। আমার বা আমাদের রূপক চাকমা! এখন তিনি শহীদ রূপক চাকমা।
তাকে নিয়ে লেখা এ খন্ড খন্ড বক্তব্য আজ তুলে ধরছি পাঠকদের কাছে। ]

(দুই)

রূপক চাকমা শহীদ দিবস ২১ সেপ্টেম্বর

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

শহীদ রূপক চাকমা! ২০০১ সালে তুমি শহীদ হয়েছিলে। ২১ সেপ্টেম্বর পেরোলেই তোমার মৃত্যুর ১২ বছর পূর্ন হবে। তোমাকে এই দিনে তাই স্মরণ করছি। বড়ই কষ্টের কথা, তুমি হয়তো জানবে যে তোমার বড় ভাইও কয়েকমাস আগে চলে গেছেন। তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
তোমার বাবা এবং মা,যাদের আমি নারাঙহিয়া পাহাড়টি ওঠার সময় বা নামার সময় সবসময় দেখি, তারা কেমন আছে হয়তো তা তুমি জানো অথবা জানো না। তাদের আমি দেখি, তাদের দেখে থাকি। তারা নিঃশব্দ-নিশ্চুপ হয়েয়ে গেছেন। তারা এখন তাদের জীবন নীতি মাত্র পালন করছেন।
শহীদ রূপক! তুমি জীবন দিয়েছিলে! তুমি হয়তো ঝরে পড়েছিলে অসময়ে এবং বড্ডো অসময়ে!
তোমাকে নিয়ে এক স্মরণ সভায় আমি নেপালের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সেই বিপ্লবী উক্তি মুখে নিয়ে বলেছিলাম, মৃত্যুই বা শাহাদাৎ বরণই এক ধরণের বিপ্লবী প্রক্রিয়া! আর এই কথা বলার পরে অনেকেই, যারা সেই আলোচনা সভায় ছিলো তারা অবাক ভরা মুখ ও চোখ নিয়ে আমাকে তাকিয়ে ছিলো! আমি বুঝেছিলাম, কিন্তু কিছুই বলিনি!
সংগ্রাম বা বিপ্লব বা লড়াইকে যতই আমি বুঝতে চেযেছি, যতই তার পাঠ নিয়েছি গভীর থেকে গভীরে ততই এই ধারণাটিই শক্ত হয়েছে যে মৃত্যুও এক ধরণের বিপ্লবী প্রক্রিয়া! এ্ই কথাটি যতই তেতো হোক না কেন, তা-ই সত্য!
কিন্তু যেখানে বিপ্লব নেই! যেখানে বিপ্লব হচ্ছে না তার বেলায় তা কি সত্য!? না, না, নিশ্চয়ই নয়!!
শহীদ রূপক! তুমি চেতনায় থেকো! তুমি বিপ্লবের ময়দানে থেকো!
তোমাকে আরেকবার জানাই লাল সালাম! লাল সালাম ! রেড স্যালুট!

(তিন)

শহীদ রূপক চাকমা লড়াকু চেতনার সৌম্য প্রতীক


২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

শহীদ রূপক চাকমা। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শত শহীদের মাঝে একটি নাম, একটি চেতনা। ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল তিনি জন্মগ্রহণ করেন।  সেনাশাসন-নিপীড়নের আবহ এবং প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি-আতংকের আবহে যার শৈশব-কৈশোর কেটেছিলো।

স্কুলে পড়ার সময় সংগ্রামের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজের লড়াকু সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে তিনি কাজ করেন ।সংগঠনের সহযোদ্ধাদের কাছে তিনি ঠান্ডমেজাজের শান্ত প্রকৃতির তীক্ষধী সম্পন্ন একজন কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সবাই তাঁর এই সৌম্যভাবকে ভালবাসতেন। তাঁর অনুজ সহযোদ্ধাদের কাছে তিনি শিক্ষনীয়-অনুসরনীয় এক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন।

তিনি খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে এসএসসি পাশ করেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাঠ সম্পন্ন করেন। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স মাস্টার্সের পাঠ নেন।।  শেষ করেন ১৯৯৭ সালে। ২০০০ সালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব ছাড়ার পর তিনি ইউপিডিএফ এ যোগদান করে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

লেখাপড়ার পাঠ শেষ করে নিজের ব্যক্তিগত উন্নতি-আত্মপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে তিনি  মশগুল হননি।  বেছে নিয়েছিলেন জাতি-জনগণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে বন্ধুর লড়াই সংগ্রামে শরীক হবার পথ। বন্ধুর এই আঁকাবাঁকা পথে কেউ আছাড় খেয়ে পরে যায়। কেউ হারিয়ে যায় অকালে। কেউ সামনে এগুতে এগুতে হাজার হাজার জনকে  পথের নিশানা দেখিয়ে দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে সংগ্রামরে এক দিশারী হিসেবে।

লড়াই সংগ্রামের একটি বাঁকে শহীদ রূপক চাকমাও তাঁর জীবন উৎসর্গ করে দেখিয়ে দিয়েছেন লড়াইএর পথ খুবই পিচ্ছিল-ঝরঝঞ্ঝাপূর্ণ-বিপদসংকুল।

তিনি ২০০১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নিহত হন। জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর মধ্যে চলমান ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের মাঝে হারিয়ে যাওয়া শতজনের মাঝে তিনিও একজন; কিন্তু  তিনি নিজের গুণাবলী দ্বারা এক অনন্য অনুসরনীয় শহীদ।

আজ ২০১২ সালের এই দিনে তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ লাল সালাম।

তোমার পথ বেয়ে আজ আমরাও চলছি বন্ধুর পথ পেরিয়ে। জানি না সামনে আমাদের জন্য কী আঁকাবাঁকা ভবিষ্যত আছে। কিন্তু আমরা জানি সামনে নির্ভীক চিত্তে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই আমাদের লড়াইএ বিজয় অর্জনের প্রথম শর্ত ।

শোক হোক চেতনা শানিত করার এক হাতিয়ার।

শোক হোক অধিকার অর্জনেরর দৃপ্ত ঘোষণা তূর্য নিনাদ।

শোক হোক ঐক্যের ভিত।

যুগ যুগ জিও শহীদ রূপক, যুগ যুগ জিও শহীদ চেতনা।

Tuesday, March 12, 2013

সুদীর্ঘ দা তুমি বৃহৎ কাজের জন্য আরো বেশী কাজের বোঝা বাড়িয়ে দিয়ে গেলে, তোমায় লাল সালাম



সুদীর্ঘ দা খুন হলেন। আজ দুপুরে যখন এই খবরটি জানলাম তখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। এবং এটাই শুনতে চাচ্ছিলাম যেন খবরটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কিন্তু হায়, তা হলো না। এক ফেসবুক বন্ধুর লোড করা ফটো দেখে একদম নিশ্চিতই হতে হলো যে সুদীর্ঘ দা নেই। মনটা খুব খারাপ এবং খুব একা একাই লাগছিলো।

তাঁর সাথে পরিচয় ইউপিডিএফএর সাথে জেএসএসএর একটি অংশ যখন ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বাবোধকে মেনে নিয়ে কাজ করছিলো তখন থেকেই। সেই থেকেই তাঁর সাথে দেখা হতো। এক সময় তাঁর বাসায় আমরা যেতাম, নানা কথা বলতাম। আমার ছোটোভাইয়ের কাছে তিনি নিয়মিত যেতেন। ছোটোভাই হোমিও ডাক্তারী পেশায় জড়িত। সুদীর্ঘ দা এবং তাঁর পরিবার ঔষধ আনতে মাঝে মাঝে আমার ছোটো ভাইয়ের কাছে যেতেন। সেই সূত্রেও তাঁর সাথে অন্তরঙ্গ ভাব গড়ে ওঠে। আমার ছোটোভাইও তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। বলতে গেলে তিনি আপন কোনো আত্মীয় না হলেও আমরা পারিবারিকভাবে দুই ভাই তাঁকে আপনই মনে করতাম। তিনি এবং তাঁর পরিবারও আমাদের আপনের মতই ভাবতেন বোধকরি। তা না হলে এত আপ্যায়ন তো করতেন না!

সুদীর্ঘ দা'কে কে খুন করেছে? রাজনৈতিকভাবেই বলি। তাঁকে সন্তু লারমার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাই খুন করেছে। এই খবরটি পাবার পর আমার এক ছোটো ভাইয়ের সাখে কথা হচ্ছিল। সে বললো, এই খবরটি শোনার পরে জেএসএসএর সন্তু লারমা পক্ষের কর্মীদের অনেকের মধ্যেও তাঁর মৃত্যুতে আফশোশ বা হতাশা প্রকাশ করেছেন, তারা খুবই মর্মাহত হয়েছেন। আর আমরা যারা একসাথে বিভিন্ন সময় কাজ করেছি, যারা তাঁকে চিনতাম তারা সবাই এখন শুধু আফশোশই করছেন না। বরং পাশাপাশি ক্ষোভ-রাগও প্রকাশ করছেন। এখন যারা তাঁর সহযোদ্ধা তারা কি এই হামলা ও মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে শপথ নেবেন, অর্থাৎ আমরা কি রক্তের বদলে রক্ত ঝরতে দেখবো?

আমি কার্যত জানি না এই সংঘাতের শেষ কোথায়। এই সংঘাতের তাত্ত্বিক ভিত্তিই বা কী আমার এখনো জানা নেই। আমার মতে এই সংঘাতের  আদর্শিক বা তাত্ত্বিক ভিত্তি যা, তা হচ্ছে সমাজের গভীরে প্রোথিত সামন্তীয়-লুপ্ম্পেন সাংস্কৃতিক আর্থ-রাজনৈতিক ভিত ও  চেতনাবোধ। এই সংঘাতের এটিই মৌল ভিত্তি এবং পাশাপাশি শাসকগোষ্ঠীর 'জুম্ম ধ্বংসের নীল নকশা'র ফাঁদে তো আমরা পা দিয়েছিই।

আমার আজ আর রাজনৈতিক কোনো বিশ্লেষন করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

সুদীর্ঘ দা'র 'চুকচুক' নামে এক ৭/৮ বছরের ছেলে রয়েছে। পারিবারিক আন্তরিকতার সূত্রেই জানি তাঁর স্ত্রী গর্ভে রয়েছে আরেক সন্তান। আজ আমার এক ছোটোভাই খাগড়াছড়ির মাহজন পাড়ায় তাদের বাসা থেকে ফোন করলো। শুনলাম সুদীর্ঘ দা'র স্ত্রী-র আর্তনাদ। এর আগেও এই ধরনের আর্তনাদ শুনেছি। এখন দেখি মনটা এমন পাথর হয়ে যেতে বসেছে। কী আর বলবো!

সবাইকে অনুরোধ জানাবো এই মৃত্যুর মাঝে যেন থাকে শক্তি। অনুরোধ থাকলো, যেন আমরা লড়াইকে আরো আপন করতে পারি।

সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...