Showing posts with label সংক্ষেপে. Show all posts
Showing posts with label সংক্ষেপে. Show all posts

Sunday, July 30, 2017

জেনারেল অং সান General Aung San




তারিখঃ ১৯ জলাই, ২০১৭

বার্মা, এবং বর্তমানে মিয়ানমার নামে পরিচিত দেশটি গঠনে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁর নাম অং সান, জেনারেল অং সান। আজ ১৯ জুলাই, ২০১৭ তাঁর ৭০ তম মৃত্যুবার্ষিকী। মিয়ানমারের জনগণ আজ তাঁকে স্মরণ করছে।

দেশটি স্বাধীন হবার মাত্র ৬ মাস আগে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৯ জুলাই আততায়ীর হাতে শহীদ হন।

তাঁর দেশের বিভিন্ন জাতিসত্তাসমূহের মাঝেও তিনি ব্যাপকভাবে সম্মানিত রাষ্ট্রনেতা হিসেবে বিবেচিত হন।

বার্মা স্বাধীন হলে অন্যান্য জাতিসত্তাসমূহকে সমমর্যাদার ভিত্তিতে অধিকার প্রদান করার প্রতিশ্রুতি তিনি প্রদান করেন। এ উপলক্ষে তিনি জাতিসত্তাসমূহের প্রতিনিধিদের সাথে 'পাঙলঙ এগ্রিমেন্ট' নামে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন। এই চুক্তি এখনো মিয়ানমারে জাতিসত্তাসমূহের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে প্রধান ভিত্তি বা পথনির্দেশদাতা হিসেবে বিবেচিত হয়।

অং সানের কন্যা অং সাং সু'কি এখন 'স্টেট কাউন্সিলর' হিসেবে দেশটির শাসনক্ষমতার নেতৃত্বে রয়েছেন।

Thursday, February 9, 2017

লি চুমিঙে ভুদঅত্তুন স্যান্ডেলঅ বাড়ি হেলঅ

চিঙ নাঙে রাজা বংশঅর আমলঅত চীন দেজঅত সিনচেঙ নাঙে এগগান শঅরঅত এগগো মেজিসটেরেত এলঅ।  তার এগগো পো এলঅ। তা নাঙান এলঅ লি চুমিঙ। ত্যা হুব সাহজবলা এলঅ। ত্যা কিজু ন ডোরেদঅ।  তারার এগজন থাউইয়্যে কুদুম এলঅ। সিবে নাঙান ওয়াঙ চি লিআঙ। ওয়াঙ চি লিআঙঅর যে এগগান বড় ঘর এলঅ সিওত অমহদঅ বেচ ভুদ থেদাক ভিলি মানজে কোআকোহি গত্তাক।
লি চুমিঙ-এ এগবার সে বড় ঘরঅত বেড়েবাত্তেই গেলঅ।  তারে দিঘিনেই ওয়াঙ-এ ‍হুব হুজি অহলঅ। ত্যা তারে কঅলঅ-’আমা এ ঘরঅত তুই বেড়েবাত্তেই ইচ্চোচ শুনিনেই হুজি উইওঙ। ইদু তুই গাই গাই ন থেচ। ত সমারে তরে রেদোত সাঙেত দিবাত্তেই এগজন মানুজ পাধেই দিম। ‘ হালিক লি চুমিঙে তারে কলঅ, না না, মত্তুন সাঙেত র লাগিবঅ। মুই গাই থেই পারিম।। মত্তুন এ গরমঅ দিনওত গাই গাই থাগত্তে হুব গম লাগিবঅ। ইদু হুব হোলামেলা জাগা আঘে। চেরোকিত্তেত্তুন বুইয়্যের বাই। বারে বুইয়্যের হেই হেই থাগত্তে হুব গম লাগিবঅ।
তাত্তুন ভজমান গাই গাই থেবার পরানে কঅর। আর তাত্তুন ভুদ চেবার হুব পরানে কঅর। সেনোত্তেই ত্যা ওয়াঙঅরে সে কধাআন কুইয়্যে।
ওয়াঙেও আর কনকিজু ন কঅলঅ।  ভুদ কধাআন তুলিবার চেইনেইও আর ন তুলিলঅআর। দিন থাগত্তে ত্যা কামমো মানজোরে দিনেই ঘরঅ গুদি থিগথাগ গুরি দিলঅ। দোলে গুদি কাজেনেই ‍ঘুম জেবার বেবস্তা গুরি দিলঅ। সে সমারে সাচ সাচ অহদে সলাত বাত্তি জালেই দিনেই ত্যা তা আরেগ্গান থাইদে ঘরঅত জেলঅগোই।
ইন্দি লি চুমিঙে সাচ সাচ অহবার পর এগগো বাত্তি লোইনেই ঘরঅ চেরোকিত্তে হানঅক্কন গাই বেড়েই চেলঅ। ঘরআনঅ চেরেকিত্তে হালি জাগা বুউত আঘে। গাজবাজঅ কম। সেনোত্তেই চেরোকিত্তেত্তুন ফাগুনঅ বুইয়্যের এজে।  রেদোত রেদোত ত্যা এগ্গান জাগাত বুজিলঅ। চেরোকিত্তে কনঅজন নেই। কনঅ সারাশবদও নেই।  আস্তে গুরি আগাজঅত চানআন উদা শুরু গুজ্জে।  লি চুমিঙঅত্তুন এক্কা এক্কা ঘুম এজঙ এজঙ গরের। ত্যা ঘরঅ ভিদিরে সুমিলঅ। তারপরে গুদিত সুমি ঘুম জেবার জাগাত গেলঅ। ঘুম এত্তে সলাত ত্যা শুনিঅঅ হাঙদক দুরঅত কি েএগ্গগো লরের। থচ থচ গরের। গমে চেইনেই এক্কা এক্কা জুনঅ পঅরঅত ত্যা দিঘিলঅ টেবিলঅত ত্যা চা হেইনেই যে কাপপো রাঘেইয়্যে সিবে গাই গাই উগুরে উদানা শুরু গুজ্জে। সিবে গাই গাই পাক হেইনেই ঘুরা শুরু গুজ্জে। ইআন অন্য মানজে গাই গাই এগ্গান ঘরঅত দিঘিলে মুজজো জেবার অক্ত অহলাক্কুন। হালিক ত্যা এককেনাও ন ডোরেলঅ। চা কাপপো হাঙদক বাদে গাই গাই ঘুরানা থামিলঅ। সে পরে জিওত পোইরাক জালা উইয়্যে সে পততো উগুরে গাই গাই উদিনেই ঘুরানা শুরু গুরিলঅ। ত্যা সিন্দি হানক্কন রিনি চেই থেলঅ।  পোইরাকঅ পততো গুদি উগুরেন্দি হাক্কে ইন্দি হাক্কে উন্দি গাই গাই বেড়ানা শুরু গললঅ।
লি চুয়ােঙে সিআন চাআদে চাআদে কি গললঅ, সিন্দি চেইনেই চোক রাঙা গুরি কঅলঅ, ‘ভুদতো, তুই দ ভজমান বেচ গরর। মরে তুই ডর লাগেবার চত্তে, মরে তুই চিনঅচ? মুই কনঅ ভুদ ন ডোরাঙ সিআন তুই হবর ন পাচ?’ ইআন কোইনেই ত্যা বিচ্চোনওত্তুন একফাল দিইনেই ভুদতোরে ধুরিবাততেই গেলঅ।
ইন্দি ত্যা পিননেদ্যা কাবর চুবর কক্কে হুলি জিএগোই সিআনঅ মুক্কে তার হেআলঅ নেই। ত্যা কিএত কনঅ কাবর চুবর ন পিনিনেই ভুদতোরে ধরার চেরেত্তা গললঅ। ত্যা পোইরেক পততো মুক্কে জেইনেই ভুদতোরে ধুরিবাত্তেই গেলঅ। হানক্কন বাদে পেইরেকঅ পততো টেবিলঅত গাই গাই বুজিলঅ। ত্যা সে পোইরেকঅ পততো ধরা গেলা।
ধরা জাদে সলাত ত্যা থারেলঅ তারে কননা জানি তা বাঙ গালঅত এগেগো বড় ড়ুরি চুওর মারিলঅ। ভুদতো তারে চুওর মাজ্জে ভিলি ত্যা থারেলঅ। চুওর হেবার পরে ত্যা থারেলঅ, তা কিএত কনঅ কাবর চুবর নেই । তরাতাঙরি ত্যা বিচ্চোনওত্তুন কাবর চুবর আনিনেই পিনিলঅ। তারপর ত্যা ঘর দোর হুলিনেই বড়ে গেলঅ।  কুরে যে কামমো মানজো ঘর এলঅ তারে জাগেলঅ। তাত্তুন ত্যা এগগো বাত্তি আনিলঅ। বাত্তিবো জালেনেই ত্যা তা স্যান্ডেলআনি তোগা শুরু গুরিলঅ। হালিক এগ্গান স্যান্ডেল প্যালেও ত্যা আরেগ্গান স্যান্ডেল তোগেই ন পেলঅ।
রেত্তোবো ত্যা আরঅ বাত্তি মারেনেই ঘুম গেলঅ।  ভুদতো হালিক আর তা মুজুেঙে ভেদা ন দিলঅ আর। ত্যা বিন্নে পঅর অহয় সঙ ঘুম গেলঅ।
ঘুমঅত্তুন উদিনেই ত্যা গুদিবো দোলে রিনি চেলঅ। ত্যা দিঘিলঅ গুদিবো উগুরে চালঅ এক কিত্তে েএগগো কানা স্যারে তা স্যান্ডেলআন ধুলি ধুলি আগে। আর তা কুরে জে কামমো মানুচচো এলঅ ত্যা হেআল গুরিলঅ, লি চুমিঙঅ বাঙ গালঅত স্যান্ডেলঅ বারি ছবি ধুক্কেন লাগি আগে। তারা বুজিলাক, ভুদতো রেদো মাই লি চুমিঙঅরে তা নিজঅ স্যান্ডেলওই বাড়ি মাজজে।
মনেঅয় ভুদতো তারে কিচচু গুরি ন পারিনেই স্যান্ডেলঅ বাড়ি দিইনেই সে ঘরঅত্তুন জনমঅত্তেই ধেই জিএগোই। সে পরে আর সে ঘরঅত ভুদ দেঘা নহ জাই আর।

তুরস্ক দেজঅর পজ্জন বা কিত্তেএ:: তিনআন প্রশ্ন’র জ্যোপ

নিবেদিত কল্যাণকামী শাসকই হলেন যোগ্য শাসক 

কোনো এক দেজঅর এগজন রাজার কধা।  রাজা ভালক বজর ধুরি রেজ্য শাজন গুরি ইচ্চে।  ইক্কো ত্যা বুড়ো ওই জিএগোই। আগঅ ‍ধুক্কেন মানজোর সুখ দুগ চেই ন পারে। নানান জনে নানান সুখ দুগ সমস্যার কধা লোইনেই এজন। তারার সমচস্যা চেবার মতন মন ত্যা আর দিই ন পারে আর। ইন্দি ত্যা ইক্কো চোঘেনদিও কম দ্যাঘে। কানএনদিও কম শুনে। কিইএতঅ আগঅ ধুক্কেন বল নেই। হানক্কন বোই  থ্যালে গাই গাই বল পঅরে। কিইএআন বলবলা ন পাই আর। ইঙিরি ত্যা আর রেজ্য শাজন গুরিবার মন দিই ন পারে। ত্যা ভালক দিন ধুরিনেই মনে মনে চিদে চাত্তা গুরিলঅ,এবারা রেজ্য শাজন তাজন বাদ দিইআ পুরিবঅ। তাআ তিননো পো আঘঅন। তারাত্তুন কারে রেজ্যর দায়িত্ব সারি দি পারা জেবঅ সিআন লোইনেই ত্যা চিদে গরা শুরু গুরিলঅ।  ত্যা মনে মনে কঅলঅ, তিননো পো’ওশা ভিদিরেত্তুন েবেগঅত্তুন বেচ গেআনি গুনি দায়িত্ববান একজনঅ আহদঅত রেজ্যর শাজন সারি দি পারিলে হুব গম ওলুন। বুড়ো কালঅত ঝারঅত দূরঅত জেইনেই ধরমঅ করমঅ গুরিনেই নিরিবিলি গুরি দিন কাদেই দিই পাললে হুব গম লাগিলু। 
ইআন চিদে গুরি ত্যা থিগ গুরিলঅ, তা তিননো পোওরে বুদ্দির পোরিক্কে লোও পুরিবঅ।  পোল্লেম ত্যা তা দাঙর পোওবোরে  দাগিলঅ।  তা দাঙর পোওবো বিন্নে মাদান তা বাবঅ ঘরঅত এলঅ। রাজা তা পোওবোরে কলঅ, ; পুত, মুই দ বুড়ো ওই জিওঙগোই।  তিনকাল দিগিলুঙ। আরঅ যা আঘে সিআন দ্যাক্কে দ্যাক্কে জেবঅগোই। মর বিদেয় লবার অক্ত ইচ্চে। মুই চাঙঅত্তে তোমা তিনজনঅ ভিদিরেত্তুন জে পোওবো বেচ গেআনি গুনি দায়িত্ববান তারে এই রেজ্যর ভার দি দিম। ‘ 
কধাআন শুনিনেই দাঙর পোওবোত্তুন হুব রাজা অহবার ধারাচ অহলঅ। ত্যা তা বাবঅরে হুব কোচ পানাআহ দেঘেলঅ। 
তা বাবে তারে কলঅ, পুত, মর তিনআন কধার জ্যোপ তত্তুন দিআ পুরিবঅ। জুনি তুই এই কধার জ্যোপ ধগেধাগে দিই পারঅচ, তোইলে মুই মনে গুরিম তুই রেজ্যর ভার লবার মতন জোগগো আঘচ। 
দাঙর পোওবো কলঅ, বাবাআ, তুই ত কধাআন পুজোর গুরি পারিবে। 
রাজা তারে কঅলঅ, আচ্চা কোই চাআদে, পিত্তিমি ভিদিরে চেরোকিত্তেন্দি সুবুল পিঙুল কী জিনিচ আঘে? আর বেগঅত্তুন বেচ ধাবা দিই পারেদে জিনিচচান কি? সে সমারে বেগঅত্তুন বেচ দোল জিনিচ পিত্তিমি ভিদিরে কুবান? 
দাঙর পোওবো কলঅ, বাবাআ, আ সিআন হুব উচ্চো কধা। ত প্রশনআন দ হুব উচ্চো! বেগঅত্তুন বেচ সুবুল পিঙুল জিনিচচ্চান অহলঅদে দ তুই! ত ধুক্কেন সুবুল গম ভালেদি চাউইয়্যে আ কন্না এ পিত্তিমিত আঘে!?
আর বেগঅত্তুন বেচ ধাবা দিইনেই জেই পারেদে ত ঘোড়াবো।  বেগঅত্তুন বেচ দোল অহলঅদে আমা মাআ, মানে ত মোককো। 
দাঙর পোওবোর জ্যোপ শুনিনেই রাজা তারে কিজু ন কলঅ। ত্যা কলঅ, থিগ আঘে তুই জাআ। 
সে পরে রাজা তা মাঝ্যাঙ পোওবোরে দাগি পাদেলঅ।  তারেও ত্যা দাঙর পোওবোরে জিআনি কুইয়্যে সিআনি কলঅ। তারপরে তারে সে তিনআন কধার জ্যোপ পুজোর গুরিলঅ। 
প্রশনআনি শুনিনেই তা মাঝ্যেঙ পোওবো তা বাবঅরে কলঅ। বাবাআ, ত কধার জ্যোপ দ হুব উচ্চো। তুই দ হবর পাআচ বাবাআ, মুই ওলুঙ্গে এ রেজ্যর বেগততুন বেচ গেআনি, গুনি আ দায়িত্ববান বুঝিয়ে সুঝিয়্যে।  সেনোত্তেই পিত্তিমি ভিদিরে মুই-ই ওলুঙগে চেরোকিত্তেন্দি সুবুল পিঙুল মানুচচো।  আর বেগঅত্তুন চে ধাবা দি পারেদে মঅ শিগের গুরিয়্যে কুগুরবো। তারে তুই বানা শিগেরবো দেঘেই দিলে অহয়, ত্যা ধাবা দিইনেই ঝাবাদাত শিগের ধুরি আনি পারে। তর তিন নম্বর প্রশনঅ আনঅর জ্যোপ অহলদে, ম মোককো অহলঅদে এই পিত্তিমির বেগঅত্তুন বেচ দোল মিলেবো।
রাজা তা মাঝ্যাঙ পোওবোর জ্যোপ শুনি কঅলঅ, থিগ আঘে পুত, ম প্রশনঅর জ্যোপ তত্তুন দ পেলুঙ। তুই ইক্কো বারে জা।  আর ত চিগোন পোওবোরে ম ঘরঅত এবাত্তেই কঅ। 
তা মাঝ্যাঙ পোওবো হুব আহঝি রুজি গুরি বাড়ে গেলঅ। ত্যা তা গুরো ভেইবোরে তা বাবঅ ঘরঅত দি পাধেলঅ। 
রাজা তা চিগোন পোওবোরে জেএ সে তিনআন কধার জ্যোপ ধুরিলঅ। 
তা পোওবোরে ত্যা কলঅ, মুই ত দি ভেইওরে জেএ তিনআন কধার জ্যোপ পুজোর গুজ্জোঙ। তারাত্তুন বেচ দোলে থিগগুরি  জুনি তুই জ্যোপ দিই পারঅচ, তোইলে তরে মুই রাজা বানেম। 
তারপর রাজা তারে সে তিনআন কধা পুজোর গুরিলঅ। 
তা চিগোন পোওবো তিনআন প্রশনঅ শুনিনেই হানক্কন মন দিনেই ভাবি চেলঅ।  তারপরে ত্যা তা বাবঅরে কলঅ, বাবাআ, এ পিত্তিমিত বেগঅত্তুন বেচ সুবুল পিঙুল জিনিচ অহলঅদে আমা হেতহিত্তিআনি, আমি যে চাষবাস গুরি সে জাগাআনি।  হেতহিত্তি গুরি আমি জে ফজল পেই সিআনি হেইনেই আমি বাজি থেই। সেনোত্তেই সিআনি অহলঅদে সুবুল পিঙৃল। 
তা বাবে তা বেগঅ চিগোন পোওবোত্তুন তার দার্শনিক কধার জ্যোপ শুনিনেই হুব হুজি অহলঅ। ত্যা কলঅ, বাআ বাআ, তুই দ হুব দোলে ম কধার জ্যোপ দি পাজ্জোচ। আচ্চা, তোইলে তা পরে কধার জ্যোপ দ্যা চাঙ। 
তা চিগোন পোওবো কলঅ, পিত্তিমিত বেগঅত্তুন বেচ ধাবা দিইনিই জেই পারেদে আমা চোক আর আমা মনআনি। আমা চোঘোন্দি আমি জিআন দিঘি সিআন ঝিমিদঅত দিঘি। আর আমা মনআনদোই আমি জিদু মনে কঅয় সিদু জেএই পারি। 
আর তনি নম্ব জ্যোপ অহলাদে, আমা পিত্তিমির বেগঅত্তুন বেচ দোল জিনিচচ্চান অহলদে আমা এই মোন মুড়ো সরা গাঙ নাল গাজ বাজে ঘিরি থিইয়্যে এই জাগাগান, আমা পিত্তিমিআন। 
আমা এই জাগাগানঅত বেক্কানি আঘে। রেত আঘে দিন আঘে। তারা আঘঅন, চান আগে, বেল আগে, জুনি আঘঅন, আঘঅন নানা বাবত্যা পেক পুক জুক অহরিঙ চঙরা আরঅ কতকিজু।  গোদ বজরবো ধারাদেঘোলি বারিজে, গরমকাল, জারকাল এজে। ইআনি বেক্কানি আঘে কিনে পিত্তিমিআন হুব দোল লাগে, পিত্তিমিআনঅত জনম ধুরি বাজি থেবার পরানে কঅয়। পিত্তিমি আন ইরিই জেবার পরানে ন কঅয়। 
বুড়ো রাজা তা চিগোন পোওবো কধা শুনিনেই হুব গম পেলঅ। ত্যা বুজিলঅ, তা এই চিগোন পোওবোই এ রেজ্য দোলেদালে চালেই পারিবঅ। তারপর ত্যা সময় গুরি রেজ্যর উজির নাজির পাইক পেয়াদা সইন্য সেনাবদি বেককুনোরে দাগিনেই তা চিগোন পোওবোরে তা রেজ্যর রাজা বানেলঅ। 
আর তা বাগি পোউনোরে ত্যা জাগা জুমি তেঙা পোইঝে দিলঅ। তারাও জ্যাএন নিজঅর ভালেদ গুরি পারঅন সে বেবস্তা গুরিলঅ। 
সে পরে ত্যা সুগে মুরি গেলঅ।
আর ইন্দি তা চিগোন পোওবো রেজ্যর বেগ প্রজাউনো সুখ দুঘঅর ভাগ লোইনেই বেগঅরে কোচ পেইনেই রেজ্য শাজন গরা ধুরিলঅ। দিনে দিনে তার শাজনঅর নাঙ পিত্তিমির চেরোকিত্তে ফুলঅ তুমবাচঅ ধুৃক্কেন সিদি পুরিলঅ। 

## পজ্জন বা কিত্তেএ’র নীতিকধা- যোগ্য উত্তরসূরী থিগ গুরিবাত্তেই উত্তরসূরীরে জোগ্য গুরিবার চেরেস্তা গরা পরে। 









Sunday, January 15, 2017

ইচ্ছা বা চাওয়া

তারিখ: ০৬ জানুয়ারি, ২০১৭
চেয়েছি আকাশ অনন্ত যাতে চোখ জুড়োবে
যা দেখে মহান মহতের সাধনার পরশ পাওয়া যাবে।
ছুঁতে চেয়েছি পাহাড় বা সুউচ্চ শিখরকে
যার গা ছুঁয়ে চলে গেছে অনাবিল বিশুদ্ধ বাতাস
যে ছিল অনড় অটল।
স্পর্শে স্পর্শে নিজেকে স্নিগ্ধ, সৌম্য বা শান্ত সমাহিত করতে চেয়েছি, অবারিত আকাংখায়।
পেতে চেয়েছি গভীর এক নদী সাগর অতলকে
যেখানে সূর্য তার তাপ ও আলো বিদ্ধ করতে গিয়ে রিক্ত হয়েছে বা হয়েছিল।
আমি এক অজানা অজ্ঞাত বা দুর্জ্ঞেয়র উপর ঝান্ডা উড়াতে চেয়েছিলাম, সত্যিই তো আমি তা-ই চেয়েছিলাম!
সময়ের সীমিতি বা তার সীমাকে আমি চেয়েছিলাম তুচ্ছ বা তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যবচ্ছেদে বিবর্ণ করতে।
আমি চেয়েছিলাম তোমাকে, তুমি নিজেকে চেয়েছিলে!
তারপর অমোঘ নিয়মে
নিজেকে সিক্ত করতে থাকি এই *আমি*!
এক সময় আমার বোঝাপরা হয়
আমি দুলতে থাকি
নিজেকে চিনতে থাকি, বুঝতে থাকি জানার আর কী আছে বাকি।
এবং তারপর
যা হবার তা-ই হল, যা ছিল স্বাভাবিক, বাস্তবিক
তারপরও আমি থেকে গেছি নি:সীমতায়!
কে আমি তবে, তবে তুমিই বা কে?
বুঝে নিও অক্লেশে হতে গিয়ে ক্লিশে!!!

সময় ও অসময়ের বাহাস


তারিখ: ০৯ জানুয়ারি, ২০১৭
দুর্দান্ত সব ফাগুন-চৈত্র-বৈশাখ সেগুলো ছিল
এলোমেলো বাতাসের হাওয়ায় ওড়া মন উথালপাতাল সেইসব দিন ছিল!
মনের দাগে কালিমা ছিল না, ছিল না তাপদাহে পুড়ে যাওয়ার ভাবনা!
ছিল না বরষায় চুপসে যাওয়া
উন্মাতালে পাগলপারা হবার কথাওনা।
দিনগুলো ছিল না গোনার সময়!
এখন এই অসময়ের সময়ে ভাবি বসে
ভাবনা যা আসে তাই নিয়ে!
এখন সময়ের অসময়ে শীতের পৌষ মাঘে চৈত্রের তাপদাহে নিরালে আড়ালে বা জনজমায়েতের ঝঞ্জাময়ে বরষায় কোনো এক ফাঁকতলে
তালমাতাল এক অস্থিরতায় চোখ বুঁজে বা না বুঁজে খোলা চোখে মনহারা দিনযাপনে
আমি সময় গুনি অসময়ের কোপানলে!!
সময় ও অসময় সব ঝঁটা হ্যায়!
যাচ্ছি যেমন যাবো তেমন
এমনই তো জীবন জীবিকা তা-ই।
সব ঋতু আজ আসুক যাক
দিন ও রাত ফিরতি যৌবন পাক
আমি এঁকে যাই এক পাখির ঝাঁক
উড়ে উড়ে জীবন শুন্যে মিলাক।
আমি এঁকে যাই এক পাখির ঝাঁক উড়ে উড়ে জীবন ভবিতে মিলাক।

ন ডোরানদে মানজো সিদু ভুদতুনউনে দেঘা দি ন পারন

চীন দেজঅত চিঙ নাঙে এক রাজা আমলঅত ই চিনু নাঙে এগগো লেঘ্যিয়্যে এলঅ। ত্যা এ ভুদঅ পজ্জননো তা বাপ ইআও এনঅত্তুন শুন্যে। ইআও শুন্যে তা আজু বাপপো জুন শেঙঅত্তুন।  জুন শেঙে আরঅ কাআত্তুন শুন্যে সিআন হবর পাআ ন জাই। তবে এ পজ্জননো কধা জেক জেক কধা, ইওত কোনো মিঝে কধা নেই।
ঙি চেঙ নাঙে এগ্গান শঅরঅত চিআঙ স্যান মাঙ নাঙে একজনে এলঅ। ত্যা এলঅ হুব সাহজী, বলীবন্দ। হালিক ত্যা এলঅ অমহদঅ একবুচ্যা, আর মাধাবোত ঘিলু এলঅদে কম। সে বাদেও ত্যা এলঅ হুব নাদা, থাউইয়্যে ন এলঅ ত্যা। একবার ত্যা কোনো একজনঅত্তুন শুনিলঅ, তারাা শঅরঅ কুরে শুঙ তিঙ পো নাঙে একজনে ভুদঅ বেআর হুরি থাউইয়্যে উইয়্যে।
এ কধাআন শুনিনেই তাআত্তুন ভুদঅ বেআর গুরি থাউইয়্যে অহবার পরানে কঅলঅ।  ত্যা মনে মনে কঅলঅ, মুই দ সাহজবলা আঘঙ, আর বলঅ আঘে মঅর অমহদঅ। সুঙ মানুজচো ‍জুনি ভুদঅ ধুরিনেই বেআর গুরি থাউইয়্যে ওই পারে, সালেন মুিই কিত্তেই ন পারিম? ত্যা কলঅ, ভুদতুনউনোরে মুই পত্তি রেদোত ধুরিম, তারপর তারা কিএত স্যাপ(থুথু) ফেলেই দিম। সে পরে তারা ছাগল অহবাক। আর তারা ভুদ ওই ন পারিবাক। পরে তারারে বাজারঅত নেজেনেই বিজি দিলে মুই থাউইয়্যে ওই পারিম। মুই থাউইয়্যে অহলে থাআজা মদ হেই পারিম আর হাজি হেই পারিম।
ইআন চিদে গুরি ত্যা কুদু ভুদ আঘন সে হবর ধরা শুরু গললঅ। ত্যা হবর পেলঅ চিঙচেঙ নাঙে এগগান শঅরঅত ভুদ আঘঅন। সিদু ভিলি মরা মানজোরে যে জাগাত রাঘানে সে কুরেকারে ভুদঅ জালাই কনঅজনে সাচসাচ অহবার পরে থ্যাঙঅ ন দোন।  এ কধা শুনি ত্যা সিদু জেইনেই ভুদ ধুরিবঅ চিদে ‍গুরিলঅ।
চিআঙে স্যান মাঙ গাচাচোই এগগো লুধিক বানেলঅ। আর সমারে লঅলঅ এগ্গান লাম্বা দুড়ি। তারপরে ত্যা চিঙচেঙ শঅরঅত জেলঅ। সিদু জেইনেই রেদোত ত্যা মরা মানুজ রাঘান্দে সিদু রেদোত আহদি আহদি গেলঅ। ত্যা লুগেই লুগেই ভুদতুনউনেও হবর ন পাআন পারাআ মরা মানুজ রাঘান্দে জাগাত জেইনেই চেরোকিত্তে বেড়ানা শুরু গললঅ।  হালিকক একবার দিবার তিনবার চেরবার ত্যা চেরোকিত্তে ঘুরি বেড়েনেইও ভুদঅ পাদা বা হবর নন পেলঅ। ভুদতুনউনে তা মুজুঙে নয়ও এলাক।
সে পরে ত্যা সে শঅরঅত এগগো জমিদারঅর পুরোন এগ্গান ঘরঅত গেলঅ। সিদু ভালক বজর আগে জমিদারজে ভালকজনঅরে মারেই ফেলেইএ।  সিওত ভুদঅ ডরে কনঅজনে ন জেদাক। সিদু চিআঙে রেত্তোবো গাই গাই রেদ কাদেলঅ। হালিক দিবে তিননো পেজা আর কয়েগগো উন্দুর ধাবা দেনার রঅ বাদে ত্যা কোনো কিজুই ন  শুনিলঅ, ন দিঘিলঅ। ভুদতুনউনে তা মুজুঙে দেঘাও ন দিলাক। ত্যা ভজমান মনত দুগ পেলঅ। আর পেরেশান অহলঅ।
তারপরেও ত্যা আহল ন সারিলঅ। ত্যা আরেকদিন রেদোত ভজমান ডাঙর এগ্গান তারুম ঝারঅত গেলঅ। সিআন ভজমান তারুম ঝার এলঅ। মানজে কদাক, সিদু শদে শদে ভুদ থাআন। চিআঙে সিদু ঘনদা কে ঘনদা বুজি থেলঅ, হাপ দি থেলঅ। হালিক ত্যা বানা ঝারঅ পজুপেকক বাদে কিচচু ন দিঘিলঅ। একবার বানা ভালুদ্দুরঅত পঅর ‍গুরিবার এগগো চেরাগ জলেত্তে কিজু এগ্গান দিঘিনেই ত্যা সিদু ঝাদিমাদি জেইনেই চাইওইদে সিআন কিচচু নয়।
ত্যা গোদ রেততো সিদু কাদেনেই বিন্নে পঅর ওইনেই আঝা সারি দিনেই ঘরঅ মুক্কে আহদা ধললঅ। ইঙিরি ত্যা আরঅ নানা জাগাত মাহজমুলো ঘুরি বেড়েলঅ। হালিক ভুদঅ মাজারাও ত্যা লাআপ ন পেলঅ। বানা পেরেশানি হেলঅ।
আঝা সারিনেই ত্যা তা শঅরঅত ফিরি এলঅ। তা এ অবস্তা দিঘিনিই শঅরঅর গেআনি ‍বুদ্ধিবলা মানজে তারে কলাক, ‘চিআঙ, গোদা জিঙানিআন ঘুরি বেড়েলেও তুই ভুদঅ মাজারা লাআপ ন  প্যাবেএ। ভুদতুনউন ত ধুক্কেন সাহজবলা মানজো মুজুঙে ন এবাক। তারা জ্যাক্কেনে হবর পিওন তুই ভুদতুনউনোরে ধুরিনেই তারারে স্যাপ সিদি দিইনেই তারারে ছাগল বানেনেই বাজারঅত বিজি দিবে তারা ইক্কো মুজজো গ্যালেও ত মুজুঙে ন এবাক আর। তুই আঝা সারি দ্যা।
তবে চিআঙে এনজান রমচক্র গুরি ভুদ তোগা লামিবার পরে চিঙচেঙ শঅর আর তা কুরেকারে জাগাআনিত ভুদঅ জালা আর ন এলঅ আর। তা ডরে ভুদতুনউনে বেএক দুরঅত ধেই জিওন্দোই। সেনোত্তেই তা শঅর আর কুরেকারে মানুজচুন তারে হুব বাইনী গুজ্জোন।
এ গলপবো বা পজ্জননো শুনিনেই আমি হবর পেলঅঙ ন ডোরাইদে মানজে ভুদ ন দেঘঅন। সাহজবলা মানজে ভুদ ন দেঘঅন। ভুদ দেঘঅন্দে পাদারাআ মানজে।

Tuesday, December 27, 2016

মিঠুন চাকমার বিরুদ্ধে কেন চাঁদাবাজি মামলা?

২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং আমার বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার ধারা হল ৩৪২/৩৮৫/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড। অভিযোগ হল চাাঁদাবাজির। এমনিতেই রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ধারাসহ মোট ১৩টি মামলা। এই মামলাগুলোর জন্য কোর্ট হাজিরা দিতে হচ্ছে মাসে ১০ থেকে ১২ দিন। অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার এই দুই ছুটির দিন বাদে প্রায় প্রত্যেকদিন আমাকে কোর্র বারান্দায় থাকতে হয়! ডিসেম্বর মাসে কোর্টে ছিলাম ৪, ৬, ৭, ৮, ১৩, ১৪, ১৯ ও ২১ ডিসেম্বর। মাসটি এখনো শেষ হয়নি। আরো কয়েকদিন কোর্ট হাজিরার ডেট রয়েছে। কিন্তু কী এক ‘শনির দশা’ বা ‘বদ নসিব’ পেয়ে বসেছে যে, আরো মামলায় জেরবার হতে হচ্ছে?? কারাগার বা জেলখানা যেন ডাকছে!!
কেন এই মামলা?
শেষ কোর্ট হাজিরা ছিল ২১ তারিখ। তার আগের দিন খাগড়াছড়িতে সাংবাদিকরা একটি মানববন্ধন করেছে। প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক নীরব চৌধূরীকে মারধর করার প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। এলাকার একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে এই ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছিল। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে মাঝে মাঝে একটি ব্যক্তিভিত্তিক নিউজ ওয়েবসাইটে লেখালেখির কারণে আমাকে কেউ কেউ ‘সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিতি দিতেও সহায়তা করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেকে ফ্রিল্যান্স সংবাদ প্রচারক হিসেবে পরিচয় দিতে রাজি থাকলেও থাকতে পারি!
সে যাই হোক, আন্তরিকতার দাবি রেখে এই প্রোগ্রামে প্রথমে দূর থেকে অংশ নিয়েছিলাম। পরে কিছুক্ষণের জন্য মানববন্ধনে দাঁড়িয়েও ছিলাম। দাঁড়িয়ে যা দেখেছি সে বিষয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে যা বলেছিলাম তা নিচে তুলে ধরছি-
আজ ২০ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির সাংবাদিকদের উদ্যোগে ফটো সাংবাদিক নীরব চৌধুরীর উপর হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা যে কর্মসূচি তাতে ছিলাম। এ বিষয়ে আমার এক বন্ধু বললো, দোস্ত, তোমাকেও সেই প্রোগ্রামে দেখলাম, ব্যাপার কী? আমি বললাম, ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে তাতে জোরজবরদস্তি ও অন্যায় রয়েছে, তাই সেখানে ছিলাম। সাংবাদিক নীরব চৌধুরী অন্যায্য কিছু করলে সে বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নেয়া যেত নিশ্চয়ই। এছাড়া বললাম, পৌর মেয়র রফিক সাহেব যদি সাংবাদিক মেরে থাকেন তবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যা করেছেন তা তিনি সঠিক কাজ করেছেন বলে মনে হয় না। এভাবে যত্রতত্র অনাবশ্যক হ্স্তক্ষেপে তার ক্যারিয়েরই বরং ক্ষতি হবে। তিনি পৌর মেয়রের চেয়ে বড় কিছু হতে পারবেন না। তবে প্রোগ্রামে সরাসরি থেকে যা অবাক করেছে তা হল, সাংবাদিকদদের বিপরীতে পাল্টা প্রোগ্রাম ডেকেছিল পৌর মেয়রের সমর্থকরা। বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করার মত হলেও *রাজনৈতিক* রূপ দিয়ে মিছিল পাল্টা মিছিল একটু বেখাপ্পাই লাগে!!! মাথায় *রাজনীতি* ঢুকলে যা হয় আরকি!! সে যা হোক অনেকদিন পরে খাগড়াছড়ির *মাঠ* গরম দেখে এই শীত উপলভ্য বোধ হয়েছে!!!!


সাংবাদিকদের মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের একজন হিসেবে 


তারপরের দিন আরো মন্তব্য করেছিলাম -
যা বলা দরকার সাংবাদিক নীরব চৌধুরীর উপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল ২০ ডিসেম্বর সাংবাদিকরা মানববন্ধ করেছে। উক্ত কর্মসূচিতে কেন আমি উপস্থিত ছিলাম তার কথা গতকালকে ফেবু স্ট্যাটাসে বলেছি। গতকালকের কর্মসূচি নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদন দেখার পরে আরো কিছু বলা দরকার মনে করছি। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘দিদার কসাই’এর নেতৃত্বে মেয়র রফিক গ্রুপের ৪০/৫০ জন মিছিল করেছে। উক্ত মিছিলে শ্লোগান দেয়া হয়েছে- ‘একটি-দুটি সাংবাদিক ধর, ধরে ধরে জবাই কর; সাংবাদিকদের আস্তানা-জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’। তবে আমি বলতে চাই যে, প্রোগ্রামে সরাসরি থেকে আমি এই শ্লোগানগুলো শুনিনি। তারা যে শ্লোগানগুলো দিয়েছে তার মধ্যে আমি যেগেুলো শুনেছি সেগুলো হল- চাঁদাবাজদের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে। চাঁদাবাজদের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও উন্নয়নে বাধা দিলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।
(এক সাংবাদিকের নাম ধরে শ্লোগান দেয়া হয়েছে) ... চোরের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে এছাড়া তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল কিনা তাও খেয়াল করিনি। তবে ’কসাই’ দিদারের নেতৃত্বে যে মিছিল হয়েছে, তাদের যে অঙ্গভঙ্গি তা অবশ্যেই ‘উস্কানিমূলক’ ‘আক্রমণাত্মক’ ছিল তা বলা যেতে পারে।
প্রথম আলোর মতো একটি স্বনামধন্য/বস্তুনিষ্ঠতার দাবিদার পত্রিকায় যখন কোনকিছু লেখা হয়, তখন তা গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে নিশ্চয়ই। তাই প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনে বস্তুনিষ্ঠতা দেখাবে তার আশা, প্রথম আলোকে কেউ পছন্দ না করলেও, সকল পাঠক অন্তত কিছুটা করে থাকে। প্রথম আলোর ভুমিকা যেন ‘অতিরঞ্জনাত্মক’ না হয় সে আশা রইল
তারপর ২৫ ডিসেম্বর আরেকটি স্ট্যাটাসে বলি-
আমার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে শোনার পর এক শুভাকাঙ্ক্ষী বললেন, মেয়র রফিকের *হাত* কতো লম্বা তুমি জানো না। আমি শুনে স্তম্ভিত! আমার নামে মামলা হবার সাথে মেয়র রফিকের *হাত* কত লম্বা-এর সম্পর্ক কি তা বুঝলাম না!?? তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে এই *প্রেডিকশন* *মিথ্যা* হবে এমন নাও হতে পারে!! এই কদিন খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকের সাংবাদিক *পিটানো* নিয়ে *সরব* থাকার কারনে *মামলা* যে দেয়া হয়নি তাও বা কী করে বলি!?? অথবা জেল থেকে মুক্তি পাবার পরে এখন খাগড়াছড়ি সদরে *মুক্ত মানুষের মত* ঘোরাফেরা করতে পারায় *কেউ না কেউ* *শংকিত* এই ধারণা মিথ্যা নাও হতে পারে!! সে যাহোক,....!


২২ ডিসেম্বর যেদিনের ঘটনার জন্য চাঁদাবাজি মামলা দেয়া হয়েছে সেদিন পিসিপি খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার কাউন্সিলে আমন্ত্রিত একজন অতিথি হিসেবে আমি মিঠুন চাকমা বক্তব্য দিচ্ছি


খাগড়াছড়িতে সাংবাদিককে মারধর করার ঘটনা নিয়ে সোচ্চার থাকার জন্যই সম্ভবত আমার নামে মামলা দেয়া হয়েছে! মামলা যে দেয়া হয়েছে তা জানতে পারি ২৫ ডিসেম্বর। শুভাকাঙ্খীরা আমাকে বললো কিছুদিন বাইরে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা না করতে। কিন্তু খুব মনেকষ্টের সাথে বলতে হচ্ছে আমার এই প্রাণপ্রিয় খাগড়াছড়িতে কিছুক্ষণ আলো হাওয়া বাতাস গায়ে লাগিয়ে না আসলে কেমন যেন মন আনচান করে!
আসলে পাহাড়ের সাধারণ জীবনযাপন এবং রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক চিন্তা এতবেশি সংকীর্ণভাবে সবার মনে ‘বিরাজ করে’ যে এখানে একজন ইউপিডিএফ সদস্য যখন মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করে তখন কারো কারো যেন মাথ্যাব্যথা সৃষ্টির কারণ হয়ে থাকে!
ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে সেই বৃত্ত থেকে মুক্ত মনে করলেও যেন তা-ই আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে!!!
ইচ্ছে ছিল খাগড়াছড়ি শহরে সবার সাথে মিশে একটা নতুন কিছু করার উদ্যোগ নেব যেন এই ....
এই ফেসুবক নেটা একিটু খাপছাড়ভাবেই লিখছি!
যে মামলা দেয়া হয়েছে আইনজীবির সাথে পরামর্শ করে তা আইনীভাবেই মোকাবেলা করব। আদালত জেলে পাঠায় তাতেও রাজি!
যারা মামলা দিয়েছে তাদের তো অন্তত ‘সুখবোধ’ সৃষ্টি হবে!
আর নিশ্চয়ই নিজেকে ‘নিরপরাধ’ প্রমাণ করে আবার অনলাইন ফেসবুকে আসেতে পারব এই প্রত্যাশাই থাকল!
লেখালেখির জন্য ৫৭ ধারায় মামলা হবার পর ‘সন্তুষ্টি’ ‘আত্মতৃপ্তি’ ছিল, যাই হোক, অন্তত লেখালেখির জন্য তো মামলায় অভিযু্ক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলাম!
কিন্তু এখন ‘চাঁদাবাজি’ মামলার আসামী হিসেবে নিজেকে দেখতে পেয়ে নিজেকে বেমানানই লাগছে!
তবে তারপরেও এটা তো জানা যে, রাজনীতিতে ‘মামলায়’ জেরবার হওয়া স্বাভাবিক একটি প্রবণতা মাত্র!

Wednesday, November 30, 2016

প্যালেস্টাইনের জনগণের সংগ্রাম


মিঠুন চাকমা

ভূমিকা

১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল, প্রতিবছরের ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের পক্ষে সংহতি প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস পালন করা হবে। তারপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য পালন করা হয়ে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামেও সাধারণভাবে এই দিবসটি পালন করা হয়।
আমাদের মনে হয়েছে, এই দিবসটি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার সাথে পালন না করে এই দিবসকে উপলক্ষ করে আমাদের এই লড়াইকে বোঝা জানা এবং নিপীড়িত জনগণের এই লড়াই থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণের আন্দোলন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়কামী জনগণের অনেক কিছুই শেখার রয়েছে।
এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ফিলিস্তিনি জনগণ বা প্যালেস্টাইন অঞ্চলের জনগণের আন্দোলনের সাধারণ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আমরা নিচের আলোচনায় ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছি।
এই লেখাটিতে ফিলিস্তিনি জনগণের লড়াই সংগ্রামের সাধারণ বর্ণনা মাত্র দেয়া হয়েছে। সুতরাং, এই লেখা পড়ে আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের লড়াইকে সার্বিকভাবে বুঝতে পারবো না। তবে সাধারণ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করে আমরা এই লড়াইয়ের মুখ্যদিকগুলো গোচরীভূত করার চেষ্টা করেছি।
এই সংক্ষিপ্ত লেখাটি পাঠকগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ



প্যালেস্টাইন ভূখন্ডের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ভৌগোলিক কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্যালেস্টাইন অঞ্চল এশিয়া, ইউরোপ আফ্রিকা এই তিন মহাদেশের সীমানা বিন্দুতে অবস্থিত। সংস্কৃতি-ধর্ম-অর্থনীতি রাজনীতিসহ নানাদিক থেকে এই অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে ক্রশরোড বা সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করেছে। এই অঞ্চলের কথা লেখা রয়েছে খ্রিস্টান ধর্মে, ইসলাম ধর্মে ইহুদী ধর্মে। অনেক নবী-রাসূলগণ এই অঞ্চলে জন্মেছেন। এই সকল কারণে এই অঞ্চল বিশেষ তাপর্য নিয়ে দেখে থাকে ইসলাম-খ্রীস্টিয় ইহুদী ধর্মের শতকোটি জনগণ। একসময় এই অঞ্চলের নাম ছিলকানান খ্রীস্টপূর্ব ১১৫০-১২০০ শতকের সময় এই অঞ্চলটি মিশরের শাসনাধীন ছিল।  মূলত, ফিলিস্তিনী, ইহুদী আরব জাতি বা কালীন সময়ে এই সকল জাতিগোষ্ঠী বা গোষ্ঠীভক্ত জনগণ তখন এই এলাকায় বসবাস করত। খ্রীস্টপূর্ব ৭০০ শতকের সময় এই অঞ্চলটি এসিরিয়দের শাসনে চলে যায় এবং ফিলিস্তিনীয়রা তাদের রাজ্য হারিয়ে ফেলে। এরপর পার্সিয়ানরা অঞ্চলটি দখল করে। পরবর্তীতে রোমানরা অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তখন এই অঞ্চলটির নাম ছিল জুদাইয়া, এবং তখন ইহুদীরা সেখানে বসবাস করত। খ্রীস্টিয় ৬৬ থেকে ৭০ সালে ইহুদীরা রোমানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন সংগঠিত করে। এই লড়াইয়ে প্রায় ১১ লাখ লোক মারা যায়। এছাড়া ১১৫-  খ্রীস্টাব্দে আরেকবার যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ১৩২ তেকে ১৩৬ খ্রীস্টাব্দে সংঘটিত হয় বার-কোখবা যুদ্ধ। এতে ইহুদীরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় এবং সেখান থেকে তারা অনেকেই বিতাড়িত হয়ে চলে যায়। খ্রীস্টানদের প্রাধান্য রোমানদের বিজয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। খ্রীস্টিয় ৩০০ থেকে ৬৫০ অব্দ পর্যন্ত খ্রীস্টানরা উক্ত এলাকা শাসন করে। এরপর অঞ্চলটিতে মুসলিশ শাসকরা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। মুসলিম শাসকরা শাসনক্ষমতায় আসার পরে ইহুদীরা আবার ফিরে আসে। খ্রীস্টিয় ১০০০ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিমরা অঞ্চলটি শাসন করতে সক্ষম হয়। এরপর খ্রীস্টান মুসলিমদের মধ্যে ধর্মযুদ্ধ বা ক্রুসেড শুরু হয়। ১২৫০ সাল পর্যন্ত তাদের মধ্যে যুদ্ধ চলে এবং কোনসময় খ্রীস্টানরা বিজয়ী হতে সক্ষম হলেও কোন কোন সময় মুসলিমরাও বিজয়ী হতে সক্ষম হয়। এরপরে তুর্কীরা ১৫ শতকের কিছুসময় তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়। এই শতশত বছর ধরে খ্রীস্টান-ইহুদী মুসলিমরা তাদের সবার জন্য পবিত্র শহর জেরুজালেম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা নিজেদের মতো করে গিয়েছিল। 
১৭ শতক থেকে বিশ শতক পর্যন্ত নানা উত্থান পতন ঘটতে থাকে এই তিন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শাসকদের মধ্যে। ১৭৯৮ থেকে ১৮০০ সালের দিকে নেপোলিয়ন এই অঞ্চলসহ জর্ডান এলাকা দখল করে। পরে তা আবার তুর্কীদের হাতে চলে যায়। তুর্কীরা দুর্বল হতে থাকে এবং ১৯১৬ সালের ১৬ মে ব্রিটেন ফ্রান্স সাইকস-পিকট চুক্তি করে। এই চুক্তি অনুযায়ী ধরে নেয়া হয় যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পরে তুর্কী সাম্রাজ্য দুর্বল হবে এবং এই দুর্বলতার কারণে তুর্কী তার সাম্ররাজ্যের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। ব্রিটেন ফ্রান্স এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে তুর্কীদের হৃত সাম্রাজ্যের কোন অঞ্চল কে দখলে নেবে তা নিয়ে যে চুক্তি করেছিল তা- ছিল সাইকস-পিকট চুক্তি। সে অনুযায়ী প্যালেস্টাইন অঞ্চল ব্রিটেনের হাতে চলে যায়। ১৯১৭ সালের শেষদিকে ব্রিটেন তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্য থেকে প্যালেস্টাইনের গাজা-জেরুজালেমসহ বিভিন্ন এলাকা দখল করতে সক্ষম হয়। 
বেলফোর ডিক্লারেশন
১৯১৭ সালের নভেম্বর ব্রিটেনের তখনকার ফরেন সেক্রেটারী লর্ড আর্থার জেমস বেলফোর জায়নবাদী/ইহুদীবাদী আন্দোলনের নেতা ব্যারন রথসচাইল্ডকে একটি চিঠি লিখলেন। এতে তিনি লেখেন, ’ সরকারের পক্ষ থেকে আমার একথাটি আপনাকে জানাতে বড়ই ভাল লাগছে যে, ইহুদীদের জায়নবাদী আকাঙ্খার প্রতি সহমর্মিতা স্বরূপ নিম্নোক্ত ঘোষনা ব্যক্ত করছে, যা একইসাথে মন্ত্রীপরিষদ বা কেবিনেটে উপস্থাপন অনুমোদন করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত চিঠিতে এরপর তিনি ইহুদী জনগণের জন্য প্যালেস্টাইনীয় অঞ্চলে একটি জাতীয় ভূখন্ড প্রদানের পক্ষে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুললেন
 ১৯১৯ সালে তিনি এক মেমোরেন্ডামে লিখলেন, ’ইহুদীবাদ সঠিক অথবা বেঠিক যাই হোক না কেন তার গুরুত্ব লাখ আরব জনগণের চেয়েও অধিক বেশি তখন প্যালেস্টাইনের জনসংখ্যা ছিল লাখ ৫০ হাজার। তার মধ্যে লাখই ছিল প্যালেস্টাইনীয়।   
১৯৩৬-৩৯ সালে আরব-প্যালেস্টাইনীদের প্রতিরোধ সংগ্রাম
বেলফোর ডিক্লারেশনের পরে ইহুদীরা তাদের দেশ তৈরীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তারা তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে থাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ইহুদীরা প্যালেস্টাইন ভূখন্ডে আসতে থাকে। প্যালেস্টাইনীয় আরবরা ব্রিটেনের দখলদারিত্ব, ইহুদীদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮৩৬ সালের অক্টোবরের দিকে শহর এলাকায় ধর্মঘট প্রতিবাদী সমাবেশের ডাক দেয়। কালীন প্যালেস্টানীয় নেতা খলিল আল-সাকাকিনি অধিকার আদায়ের জন্যজীবন মরণের সংগ্রামেঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানান। কিন্তু ব্রিটেন এই প্রতিবাদ প্রতিরোধ কঠোর হাতে দমন করে। পরে ১৯৩৭ সালের আরব প্যালেস্টাইনীয়রা সহিংসভাবে বিক্ষোভ সংঘটিত করতে থাকে। ব্রিটেনও সহিংসভাবে প্রতিবাদ দমনের উদ্যোগ নেয়। এই লড়াইয়ে হাজার আরব যোদ্ধা প্রাণ হারায়। ১০৮ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়

ফেদায়িন বা সর্গীকৃত আত্মত্যাগী বাহিনী

ষাট বছরের অধিক বয়সী ইসলামী চিন্তাবিদ শেখ ইজ্জেদদীন কাশাম। ১৯৩৫ সালের ১২ নভেম্বর ইহুদীদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ফেদায়িন বা সর্গীকৃত আত্মত্যাগী বাহিনী গঠনের আহ্বান জানান। তিনি হাজার খানেক তরুণ সদস্য সংগ্রহ করেন। তাদের দিয়ে তিনি আত্মঘাতী আক্রমণের সূচনা করেন।  এবং এক পর্যায়ে তিনি এক আক্রমণের শাহাদ বরণ করেন। তাঁর এই উদ্যোগের ফলে আরব প্যালেস্টাইনীদের মধ্যে জাগরণের ঢেউ ওঠে। তার আদর্শ আরবদের মধ্যে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মানসিকতার সৃষ্টি হয়

প্যালেস্টাইনীয়দের এই প্রাথমিক পর্যায়ের সংগ্রাম ব্যর্থ হয়ে যায়। কিন্তু তারা তারপরেও থেমে থাকেনি। একইসাথে ইহুদীদের রাষ্ট্র ইসরাইল গঠনের পরতাও চলতে থাকে। 

ইহুদী জাতির উত্থান বা রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের আবির্ভাব
ইহুদী নামের জাতিগোষ্ঠীর জনগণের ধর্ম হচ্ছে েইহুদী ধর্ম। এই ধর্মের জন্মস্থান হিসেবে বর্তমান ইসরায়েল বা ফিলিস্তিন এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়। খ্রীস্টের জন্মের একহাজার বা তারও অধিক বছর আগে বর্তমান ফিলিস্তিন বা ইসরায়েলের কিছু এলাকায় ইহুদী জাতি বসবাস করতো বলে ইহুদী ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে। ইতিহাস মতে জানা যায় এই এলাকায় একসময়জুডাহরাজ্যের অস্তিত্ব ছিলো। এই জুডাহ রাজ্যের জনগণকেই ইহুদী জাতির পূর্বপুরুষ বলে অভিহিত করা হয়। তবে খ্রীস্টপূর্ব ৭শশতকের দিকে এই রাজ্য নয়া  এসিরিয় সাম্রাজ্য কর্তৃক পরাভূত হয়। ইহুদী জাতির লোকজনকে তাদের নিজ আবাসভূমি থেকে পালিয়ে যেতে হয়। হাজার বছরের ব্যবধানে তারা সারাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সাংস্কৃতিকভাবে তাদের ধর্মীয়  ঐতিহ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। এবং তারা নানা বিপদ আপদ মোকাবেলা করে নানা জায়গায় ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্পকলা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ইত্যাদি নানা পেশায় উন্নতি লাভ করতে থাকে। একসময় তারা অনুভব করতে থাকে যে, তাদের নিজস্ব আবাসভূমি থাকা প্রয়োজন। পৃথিবীর নানা জায়গায় নানাভাবে নিগৃহীত, নির্যাতিত হতে হতে তাদের মধ্যে এই বোধ জন্মায়। 

নিজস্ব আবাসভূমি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রথম বাস্তবকাজে হাত দেন থিওডোর হারাজেল নামে এক  ইহুদী। তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক। তিনি ফ্রান্সের এক প্রভাবশালী পত্রিকায় কাজ করতেন। তিনি ১৮৯৭ সালের দিকে সুইজারলান্ডের বাজেল নামক স্থানে ইহুদীদের নিয়ে এক সম্মেলন আহ্বান করেন। এই সম্মেলনে গঠন করা হয় দ্য ওয়ার্ল্ড জিউইশ অর্গানাইজেশান। তিনি এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে স্বীকৃত একটি ইহুদী জাতির দেশ গঠনের মাধ্যমেই ইহুদী জাতির দুরবস্থা দূর হতে পারে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তিনি জনমত গঠন বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সাহায্য লাভের জন্য চেষ্টা চালাতে থাকেন। এছাড়া এই কাজকে এগিয়ে নিতে যে অর্থের প্রয়োজন তার সংস্থান করতে তিনি বিশ্বের বিভিন্নস্থানে অবস্থানরত ধনী ইহুদীদের কাছ থেকে ফান্ড সংগ্রহের জন্য প্রস্তাব করেন। তবে দেখা যায়, প্রথমদিকে ধনী বা প্রভাবশালী ইহুদী ব্যক্তিগণ তেমন সাহায্য করেনি। কিন্তু, সাধারণ ইহুদী জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহায়তা দিতে থাকে। 
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে পরে ইহুদী নেতৃবৃন্দ গোপনে নিজেদের সংগঠিত করতে শুরু করেন। নিজেদের একটি দেশ গঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তারা ফিলিস্তিনের জেরুজালেম, তেল আবিব ইত্যাদি এলাকায় ব্যাপকভাবে ইহুদী জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের কাজ হাতে নেন। উক্ত এলাকা তার আশেপাশের এলাকাগুলো তখন অনুর্বর ছিলো। এই এলাকাগুলো বেশিরভাগই শহরে বা দূর অঞ্চলে বসবাসকারী জমিদার-ধনীদের মালিকানায় ছিলো। ইহুদীরা ছলে বলে কৌশলে এই এলাকার হাজার হাজার একর দাম দিয়ে জমিদার বা ধনীদের কাছ থেকে কিনে নিতো। এছাড়া সাধারণ স্থানীয় আরবদের কাছ থেকেও তারা জায়গাগুলা কিনে নিতো। আর অনেকের কাছ থেকে তারা জোর করে জায়গাগুলো দখলে  নিতো। এভাবে তারা বিরাট এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। 

তারপর তারা অগ্রসর হয় নিজেদের জন্য  একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার কাজে। তারা সংগৃহীত ফান্ডের মাধ্যমে এবং প্রভাবশালী ইহুদীদের মাধ্যমে তাদের নিজেদের জন্য একটি আবাসভূমি গঠনের সপক্ষে বিশ্বে প্রচারণা চালাতে থাকে। একইসাথে তারা নিজেদের জনবল অস্ত্রশক্তিতে বলীয়ান করতে থাকে। 
১৯৪৮ সালের ১৪ মে তারা স্বাধীন  ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের ডাক দেয়। 
আজ পর্যন্ত এই রাষ্ট্র নিজের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে টিকে আছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক বছর এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই প্রতীয়মান। 

প্যালেস্টাইনকে দুইভাগ করার জাতিসংঘ সিদ্ধান্ত
১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৮১() নং সিদ্ধান্ত বা রেজ্যুলেশনের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইন অঞ্চলকে দুইভাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। উক্ত সিদ্ধান্তে প্যালেস্টাইনের মোট ভূখন্ডের ৫৬.৪৭ ভাগ ইহুদী রাষ্ট্রের জন্য এবং বাকী ৪৩.৫৩ ভাগ আরব প্যালেস্টাইনীয়দের দেয়ার কথা বলা হয়। জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্ত আরবরা মানতে পারেনি। কিন্তু ইহুদীরা তা মেনে নেয় এবং এর ভিত্তিতে তাদের নিজেদের দেশ গঠন করতে তারা অগ্রসর হতে থাকে। 
জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মতে প্যালেস্টাইন ইসরাইল নামে দুইটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হবার কথা থাকলেও ১৯৪৮ সালের মে মাসে ইসরাইল নামক একটি সেটলার স্টেট বা দেশ গঠিত হয়। এই রাষ্ট্রগঠনকে কেন্দ্র করে ইসরাইল-আরব যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ইসরাইল তার পেশীশক্তি তথা সমরশক্তি প্রয়োগ করে ফিলিস্তিন ভূখন্ডের অনেক এলাকা নিজের করায়ত্তে নিয়ে নেয়। জেরুজালেম শহর বিশেষ আন্তর্জাতিক শাসনব্যবস্থার ভিত্তিতে পরিচালিত হবার কথা থাকলেও ইসরাইল এই শহরটিও দখল করে নেয়। এই শহরটি মূলত ইসলাম-খ্রীস্টান ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত মোতাবেক যে এলাকা নিয়ে ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠন হবার কথা ছিল তার ২৬ শতাংশ এলাকাও ইসরাইল দখল করে নেয়। এসময় একদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ইহুদীরা বিপুল সংখ্যায় ইসরাইলে আসতে থাকে এবং অন্যদিকে সেই বছরেই প্রায় লাখ প্যালেস্টাইনী জনগণ নিজেদের জায়গাজমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। 
১৯৬৭ সালের জুন মাসে    থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ইসরাইল আরবদের মধ্যে ৬দিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে ইসরাইল মিশর থেকে দখল করে গাজা স্ট্রীপ সিনাই উপত্যকা, জর্ডানকে পরাজিত করে  দখল করে নেয় পশ্চীম তীর পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার কাছ থেকে কেড়ে নেয় গোলান মালভমি। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে মিশর সিরিয়ার সাথে ইসরাইলের আবার যুদ্ধ হয়। ইসরাইল বিবদমান দুই পক্ষের সাথে দখলীকৃত ভুখন্ড নিয়ে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে

কারামে যুদ্ধে আত্মমর্যাদার লড়াই

১৯৬৮ সালের মার্চমাসে ইসরায়েল জর্ডানে ফিলিস্তিনিদের শরনার্থী অধ্যূষিত এলাকায় আক্রমণ চালায়। মার্চের ২১ তারিখ ইসরায়েলী বাহিনী ১৫ হাজার সৈন্য যুদ্ধাস্ত্রসহ জর্ডান নদী পাড় হয়। এই সময় প্রায় ৪শফেদায়িন বা সর্গীকৃত আত্মত্যাগী যোদ্ধা হাল্কা মেশিনগান, এন্টিট্যাংক গান গ্রেনেডসহ হাল্কা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে এই বাহিনীকে রুখে দাঁড়ানোর সংকল্প ব্যক্ত করে। ফিলিস্তিনিদের কাছে এই লড়াই হয়ে ওঠে আত্মমর্যাদা রক্ষার লড়াই। ইসরায়েলী বাহিনীর সাথে এই অসম লড়াইয়ে জড়িয়ে পরার কারণ হলো, ফিলিস্তিনিরা ভাবতে থাকে ইসরায়েলীদের যদি ফিলিস্তিনিরা  এই লড়াইয়ে প্রতিরোধ করতে না পারে তবে বিশ্বের জনগণের কাছে তারা হেয় হয়ে যাবে, তাদের জাতীয় মর্যাদা ধুলোয় মিশে যাবে। তারা তাই সংকল্প করে, ইসরায়েলীদের তারা অক্ষত ফিরতে দেবে না। কারামের এই যুদ্ধে ইসরায়েলী বাহিনীর বেশ ক্ষতি সাধিত হয়। ফিলিস্তিদের প্রায় ১৫০ জন আত্মত্যাগী যোদ্ধা বা ফেদায়িন শাহাদ বরণ করে
এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সাহসিকতা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা সারা আরব বিশ্ব এবং বিশেষ করে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিদের মনে উদ্যম, সাহস লড়াকু মানসিকতা উজ্জীবিত করে তোলে। এই লড়াইয়ে জীবনের বিনিময়ে ইসরায়েলীদের নাস্তানাবুদ করতে পেরে বিশ্বের লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শাহাদা বরণের গর্ব নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। ফেদায়িনদের এই আত্মত্যাগ ফিলিস্তিনিদের মনে জাগরণের সৃষ্টি করে। এবং এই লড়াইয়ের ফলে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধকামী সংগঠন পিএলও এবং ফাতাহ পরিচিতি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে তারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে


পিএলও গঠন
১৯৬৪ সালের ২৮ মে গঠিত হয় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন(পিএলও) জেরুজালেমে ১৯৬৪ সালের ২৮ মে থেকে ০২ জুন পর্যন্ত প্যালেস্টানিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনের মাধ্যমে উক্ত সংগঠন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা প্রদান করা হয়। সংগঠনের লক্ষ্য হিসেবে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা অর্জনের কথা বলা হয়। পিএলও মূলত, প্যালেস্টাইনে সক্রিয় বিভিন্ন অধিকারকামী সংগঠন-গ্রুপ-গোষ্ঠীর একটি আমব্রেলা বা সম্মিলিত প্রতিনিধিত্বমূলক প্লাটফর্ম।আরবদেশগুলো এই সংস্থাকে ১৯৭৪ সালের দিকে প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিনি জনগণের একমাত্র প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এই সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
পিএলও গঠিত হবার পরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের লড়াই ত্বরান্বিত হতে থাকে। আগে ফিলিস্তিনি জনগণের কোনো ধরণের বৈধ সংগঠন না থাকায় লড়াইকে এগিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছিল। পিএলওতে অন্যান্য সংগঠনসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও ইয়াসির আরাফাতের ফাতাহ সংগঠনই এই সংগঠনকে প্রধানত নেতৃ্ত্ব প্রদান করেছে। এই আল ফাতাহ সংগঠন ছাড়াও আরও দুটি সংগঠন ফিলিস্তিনি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে এখনো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে এই দুই সংগঠনের কাজের কিছু ধরণ নিয়ে আলোচনা করলে ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনকে আরো ভালো করে বোঝা সম্ভব হবে।

পিএফএলপি বা পপুলার ফ্রন্ট অব দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন
বামপন্থী বা মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ধারার এই সংগঠন ১৯৬৭ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন জর্জ হাবাশ। তিনি একজন প্যালেস্টাইনী খ্রিস্টান। তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সৎ এবং ন্যায়পরায়ন একজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। আল হাকিম নামে সহযোগীদের কাছে পরিচিতি ছিলেন। আল হাকিম অর্থ জ্ঞানী বা ডাক্তার। জর্জ হাবাশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন প্যালেস্টাইনী জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করার জন্য ‘সন্ত্রাসবাদী’ ধারার কাজে জড়িত হয়ে পড়ে। যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করা, ইহুদীদের জিম্মি হিসেবে ব্যবহার ইত্যাদি কাজ করে এই সংগঠন আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। তবে জর্জ হাবাশ এই ’সন্ত্রাসবাদী’ কাজকে সাময়িকভাবে সমসাময়িক পরিস্থিতির ভিত্তিতে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করার পক্ষে নিজের মত ব্যক্ত করেছেন। স্থায়ীভাবে শুধুমাত্র ’সন্ত্রাসবাদী’ কাজ করার নীতিকে তিনি সমর্থন করেননি। তিনি একইসাথে একজন গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে সবার কাছে বিবেচিত ছিলেন। তিনি বা তার সংগঠন এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করেছেন যে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র সামরিকভাবে আক্রমণ না করে তার বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিকভাবে লড়াই্ও চালিয়ে যেতে হবে। এভাবে ইসরায়েলকে স্থায়ীভাবে ব্যাপক চাপের মধ্যে রাখতে হবে।
এই সংগঠন প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষণাপত্রে আদর্শিকভাবে বাস্তবতা বিবর্জিত স্বপ্ন না দেখতে ও বর্তমান এবং অতীতের বাস্তব মূল্যায়ণের মাধ্যমে ভবিষ্যত নির্মাণের আহ্বান জানায়।
এই সংগঠনেরই একজন সদস্য, যিনি একজন নারী, নাম লায়লা খালেদ। ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনে নারী সংগ্রামী বলতেই বোঝানো হয় লায়লা খালেদকে। তিনি বিমান ছিনতাইয়ে দুঃসাহসিক নেতৃত্ব দেয়ার জন্য সারাবিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি ১৫ বছর বয়স থেকে সংগঠনের কাজে যোগদান করেন। বেশ কিছুদিন তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ লাভ করেন। এরপর তিনি পিএফএলপির বিশেষ মিশনে অংশ নিয়ে বিমান ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব প্রদান করেন। বিমান ছিনতাই করার পরে তিনি গ্রেপ্তারও বরণ করেন। পিএফএলপির এই ’সন্ত্রাসবাদী’ কাজের একটি ধরণ ছিলো, তারা বিমান ছিনতাই করার পরে বিমানের যাত্রীদের সবাইকে নিরাপদে অবতরণ করার ‍সুযোগ করে দিতেন। তারপরে বিমানটি তারা বোমা মেরে উড়িয়ে দিতেন। পিএফএলপির এই ধরণের একান্তই প্রচারণামূলক ‘ছিনতাই’ কাজের জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের আন্দোলনের কথা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের নিপীড়িত জনগণ ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য লড়াইকে সমর্থন প্রদান করতে থাকে।

হামাস বা ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন
এই সংগঠন আদর্শিকভাবে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের দ্বারা প্রভাবিত বলে মনে করা হয়। মূলত, সামাজিক সেবা ও অর্থনৈতিক নানা ধরণের কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে এই সংগঠন ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৮৭ সালে এই সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শেখ আহমদ ইয়াসিন হলেন এই সংগঠনের ভাবাদর্শিক নেতা। ২০০৪ সালে তাকে ইসরায়েল রাষ্ট্র হত্যা করে।
এই সংগঠন রকেট দিয়ে ইসরায়েলের সেনা ও সাধারণ জনগণের উপর নির্বিচার আক্রমণ, আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ইসরায়েলকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা করে।

সংগঠনটি বর্তমানে ফিলিস্তিন অধ্যুষিত গাজা অঞ্চল শাসন করছে। হামাস ইরান প্রভাবিত সংগঠন হিসেবে বিবেচিত।

ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াই
১৯৬৯ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম কাউন্সিলে পিএলও তাদের উদ্দেশ্য লক্ষ্য হিসেবেস্বাধীন ফিলিস্তিনে/প্যালেস্টাইনে মুসলিম,খ্রিস্টান, ইহুদীসহ সকলের জন্য স্বাধীন মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠারঅঙ্গীকার ব্যক্ত করে। ইয়াসির আরাফাত ছিলেন এই সংগঠনের নেতা। ১৯৭৪ সালে মিশরের কায়রোতে অনুষ্ঠিত পিএলও সম্মেলনে দশদফা কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। এই কর্মসূচিতে ইসরাইলী-প্যালেস্টাইনিয়ান গণতান্ত্রিক দ্বিজাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের ঘোষনা দেয় হয়।
১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৩২/৪০ নম্বরের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছরের ২৯ নভেম্বরকে প্যালেস্টাইনী জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস পালনের ঘোষনা করা হয়। এই দিনটিতে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করে নানা ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ করে। এছাড়া এই দিনটিতে ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে বিশ্নজনমত গঠনের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জনগণ-ব্যক্তি-সংস্থা-এনজিও এবং রাজনৈতিক দলগুলোও নানা ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে
১৯৭৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আমেরিকার মধ্যস্থতায় প্যালেস্টাইনের জনগণ ইসরাইলের মধ্যে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায় মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিনের উপস্থিতিতে উক্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি স্বাক্ষরের আগে গোপনে ১২ দিন ধরে আলোচনা চলে। 
এই চুক্তিতে দুইটি অংশ ছিল। প্রথমটি হল, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ফ্রেমওয়ার্ক বা কার্যকাঠামো নির্ধারণ। এই কার্যকাঠামো অনুযায়ী পশ্চীম তীর গাজা ভূখন্ডকে নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত শাসন ব্যবস্থা সম্বলিত কর্তৃপক্ষ গঠনের পক্ষে ঐক্যমত সৃষ্টি হয়।  দ্বিতীয়টি হল, মিশর ইসরাইলের মধ্যে শান্তি সমঝোতা স্বাক্ষর করার কার্যকাঠামো নির্ধারণ করা। সে অনুযায়ী ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে ইসরাইল মিশরের মধ্যে শান্তি সমঝোতার সৃষ্টি হয়। 
এই চুক্তিতে প্যালেস্টাইনী জনগণের কোন প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তবে এই চুক্তির মাধ্যমে বহুপাক্ষিক এই সংঘাতের মূল দুই গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ মিশর ইসরাইল সমঝোতায় উপনীত হওয়ায় সংঘাতের মাত্রা কমার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়
১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর আলজেরিয়ার আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পিএলও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ঘোষনা প্রদান করেন। ১৯৯৩ সালে ইসরাইলের সাথে পিএলও চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির নাম অসলো চুক্তি। এই চুক্তিতে পশ্চিম তীর গাজা ভুখন্ডকে নিয়ে ফিলিস্তিন/প্যালেস্টাইন গঠনের কথা বলা হয়। 

প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনের প্রাথমিক ধাপ 
২০১২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে প্রথমবারের মত সদস্যবহির্ভুত পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়। এই মর্যাদা প্রাপ্তির পরে ফিলিস্তিনের প্রশাসনিক চিঠিপত্র-দলিল দস্তাবেজ-সিলমোহর-স্বাক্ষরেপ্যালেস্টাইনিয়ান ন্যাশনাল অথরিটিলেখার বদলেস্টেট অব প্যালেস্টাইনলেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফিলিস্তিন সরকার। ২০১৩ সালের জানুয়ারি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বিভিন্ন দেশে তাদের যে দূতাবাস রয়েছে তাতে রাষ্ট্রের নামপ্যালেস্টাইনিয়ান অথরিটি পরিবর্তেস্টেটে অব প্যালেস্টাইনলেখার নির্দেশনা প্রদান করেন। 
২০১৫ সালে জাতিসংঘের সদর দপ্তর নিউ ইয়র্কে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পতাকাও উত্তোলন করা হয়। জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাধারণভাবে স্বাধীন রাষ্ট্রের পতাকা উত্তোলনের রেওয়াজ আছে। সেদিক থেকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে এই পদক্ষেপ এক বিরাট অগ্রগতি। 
ইসরাইল নামক ইহুদী রাষ্ট্র গঠিত হবার আগে ১৯১৮ সালের জনগণনার এক হিসাব মতে প্যালেস্টাইন অঞ্চলে লাখ আরব জাতিগোষ্ঠীর জনগণ ৫৬ হাজারের মতো ইহুদী জাতিগোষ্ঠীর জনগণ বসবাস করত। ১৯২২ সালে ব্রিটিশ পরিচালিত জনসংখ্যা গণনায় দেখা যায় প্যালেস্টাইনের লাখ ৫০ হাজার জনগণের মধ্যে ৭৮ শতাংশ ছিল মুসলিম, ১০ শতাংশ খ্রিস্টান এবং বাকি ১১ শতাংশ ছিল ইহুদী জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত। ১৯৪৭ সালে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৮ লাখ। তারমধ্যে ৬০ শতাংশ ছিল মুসলিম, ৩১ শতাংশ ইহুদী এবং শতাংশ ছিল খ্রিস্টান। বর্তমানে উক্ত অঞ্চলে ইহুদীদের অনুপাত হলো ৫৩ শতাংশ। আর মুসলিমরা হল মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ। বাকি দুই শতাংশ হল খ্রিস্টান। 
এভাবে গত প্রায় একশবছর ধরে জনসংখ্যাগত দিক থেকে ইহুদীরা প্যালেস্টাইনীয়দের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। একইসাথে তারা ভূখন্ড দখলে নিয়ে তাদের দখলদারিত্ব নিরংকুশ করতে সক্ষম হয়েছে। 
তবে ইহুদীদের এই আধিপত্যবাদী ধারার বিপরীতে প্যালেস্টাইনীয় জনগণ এখনো লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। প্যালেস্টাইনীয়দের বা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের যে সংগ্রাম তার সাথে জড়িয়ে আছে জায়নবাদী বা ইহুদীবাদী কট্টরপন্থার মত জাত্যাভিমানী দৃষিভঙ্গির বিপরীতে নিপীড়িত জনগণের লড়াইয়ের ন্যায্য পরিণতির নতুন ভবিষ্যত রচনার জন্য রাজপথ সৃষ্টির আকাঙ্খা। এর সাথে জড়িয়ে আছে আধিপত্যবাদী শাহীসাম্রাজ্য ব্যবস্থার বিপরীতে নতুন ব্যবস্থা তথা শোষণবঞ্চনাহীন সমাজ গঠনের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টার সার্থক রূপায়নের আকাঙ্খার। 

সূত্র:
7.       http://www.meforum.org/


9. https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_the_Jews_and_Judaism_in_the_Land_of_Israel


10. প্যালেস্টাইন এক সংগ্রামের ইতিহাস- গাজীউল হাসান খান; দিব্য প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি, ২০১১
11. প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিন সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট।


সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...