Showing posts with label এম এন লারমা. Show all posts
Showing posts with label এম এন লারমা. Show all posts

Thursday, January 14, 2016

এম এন লারমা স্মরণেঃ জয় আমাদের হবেই-হবে

তারিখঃ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
এম এন লারমা, কারো কাছে তিনি পরিচিত লিডার, তার ভাই-বোনের কাছে তিনি মঞ্জু নামে পরিচিত, জুম্ম জনগনের প্রায় সকলের কাছে তিনি 'অবিসিংবাদিত নেতা, কারো কাছে 'আমাদের নেতা, পার্টি নামে তিনি পরিচিত 'প্রবাহন'।
তাঁর পুরো মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা।
আজ ১৫ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের সেই মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা'র ৭৬তম জন্মদুন। ১৯৩৯ সালের এই দিন তিনি রাঙামাটির 'মাওরুম' নামে ছোট্ট নদীর/ছড়ার তীরে মাওরুম গ্রামে জন্মেছিলেন।
তাকে নিয়ে অনেকেই আজ লিখবেন, বলবেন, আবেগাক্রান্ত হবেন; হয়তো তারপরও দেশের 'মূলধারা'র মিডিয়া-নিপীড়িত জনতার কণ্ঠ থেকে শতাংশের তুচ্ছভাগ তাকে তর্পণ করবে অথবা তাও হয়তো করবে না।
কিন্তু আমরা জানি, বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশের আইনপ্রণয়ননের যে ভবন রয়েছে সেই ভবনের ভেতরে গিয়ে গোটা দেশের জনমানুষের অভাব অভিব্যক্তির কথা একমাত্র তিনিই ধারণ করেছিলেন, আর সকলে ছিলো তাদের নিজ নিজ দলেরই সেবাদাস।
এম এন লারমা সংসদে দাঁড়িয়ে সেই বাহাত্তর সালে বলেছিলেন, '... আমার বিবেক, আমার মনের অভিব্যাক্তি বলছে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের কথা এই খসড়া সংবিধানে নেই'। তিনিই সংসদে বসে হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছিলেন, '... আজ যদি তাড়াহুড়ো করে এই সংবিধান পাশ করতে যাই, তাহলে এর মধ্যে ভুল-ত্রুটি থেকে যেতে পারে এবং সেই ভুল-ত্রুটি আমরা পরে সহজে সংশোধন করতে পারবো না। তা ফলে অনেক অসুবিধায় পড়তে হবে'। তিনি সংবিধানকে জনমানুষের কাছে নিয়ে যাবার জন্য সংসদে অনুরোধ করে বলেছিলেন, 'জনমত যাচাইয়ের জন্য এই বিল প্রচার করা হোক'।
আওমীলীগের জাতীয়তাবাদী সমাজতন্ত্রকে তিনিই প্রথম সংসদে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে বলেছিলেন, '... এই সংবিধানের মাধ্যমে আমরা যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি সেই সমাজতন্ত্রের নামে আমরা যদি উচ্চ শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর ও সেই ক্ষমতা অপব্যবহারকারীদে
রই আবার দেখতে পাই তাহলে ভবিষ্যতের নাগরিক, যারা আমাদের ভবিষ্যত বংশধর, তারা আমাদের বলবে যে, যারা এই সংবিধান প্রণয়ন করে গিয়েছেন, তারা ক্ষমতায় মদমত্ত হয়ে জনগনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন.. '।
জাতীয় সংসদে বসে তিনিই প্রথম 'সাম্রাজ্যবাদ' শব্দটি ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করেছিলেন।
১৯৭৪ সালের ৫ জুলাই সংসদে বাজেট আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, "... মাননীয় স্পীকার সাহেব, সুতরাং সরকার জেনেশুনে এক শ্রেণীর মানুষকে ধনী করার পথ প্রশস্ত করেছেন। এটা সরকারের পক্ষে অশুভ লক্ষণ"।
তিনি ১৯৭৪ সালের ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ভাষনের উপর ধন্যবাদ প্রস্তাব বিষয়ে আলোচনার সময় সংসদে উঠে দাঁড়িয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে বলেছিলেন, "কিন্তু দুঃখের বিষয়, পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ডের নিকট আত্মসমর্পণ করে আজো সেই হানাদারকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে বিচার করা হয়নি,... "

কিন্তু তার এই জাতীয় ভুমিকাকে কি এই দেশের সংকীর্ণ জাত্যাভিমানে মত্তগণ স্বীকার করেন???
আমরা কি আশা করতে পারি না যে, তিনি মূলধারার জনমানুষের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবেও সবার কাছে পরিচিত হবেন?
তিনি ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর তিনি নিজ দলেরই বিভ্রান্ত-বিভেদকারী কয়েকজনের হাতে খুন হন।
তিনি তাঁর শেষ ডায়েরি'র পাতা'র প্রথম পাতাটিতে লিখেছিলেন, "মহান জুম্ম জনগণের আন্দোলন দীর্ঘজীবী হোক, সারা দুনিয়ার নিপীড়িত জনতা এক হও। জয় আমাদের হবেই হবে"।
আজ, এবং আজও সেই বিজয়ের আশা নিয়ে আমরা লড়াইয়ে আছি, অতন্দ্র প্রহরী!
সত্যিই কি তা-ই???

Thursday, December 27, 2012

এম এন লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের অগ্রগামী লড়াইয়ের পুরোধা পুরুষ, অনন্য এক ব্যক্তিত্ব

সকল নেতৃত্বের কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, এম এন লারমারও থাকতে পারে। তবে পার্বত্য জুম্ম জনগণ তাঁর নেতৃত্বেই প্রথম সংগঠিত হয়েছিল, লড়াই করেছিল প্রাণপন। তাঁকে জানাই লাল সালাম। তাঁকে "আইকনাইজড" করার প্রয়োজন মনে করিনা, যাতে মনে হতে পারে তিনি শুধু 'দেবতাতূল্য' ' তাঁর বিকল্প কেউই হবেনা। আমাদের প্রয়োজন তাঁর কর্ম থেকে শিক্ষা নেয়ার, তাঁকে অনুসরণ করার। তাঁর যদি কোনো ভুল থাকে তা শুধরে নিজেকে জাতির প্রয়োজনে গড়ে তোলার কাজ করে যাওয়াটাই আজ সবচেয়ে প্রয়োজনীয় করণীয়। 

M N Larma এম এন লারমা

 এম  এন লারমা। জন্ম ১৯৩৯ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর পার্বত্য রাঙামটি জেলার নান্যাচর থানাধীন মাওরুম নামে এক গ্রামে। তাঁর ডাক নাম মঞ্জু। পার্টিতে যুক্ত হয়ে তাকে ডাকা হতে  'প্রবাহণ' নামে। তার পিতার নাম চিত্ত কিশোর চাকমা। মায়ের নাম সুভাষিনী দেওয়ান। 
১৯৫৮ সালে তিনি রাঙামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে  ম্যাট্রিকুলেশন সার্টিফিকেট অর্জন করেন। ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম গভমেন্ট কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন।
১৯৫৭ সালে পার্বত্য জুম্ম ছাত্রদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলন সফল করতে তিনি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেন।
ছাত্রাবস্থায় চট্টগ্রামে অবস্থান করার সময় তিনি  ১৯৫৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং লড়াইয়ে সক্রিয় অংশ নেন।

১৯৬০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে কাপ্তাই বাঁধ নির্মানের উদ্যোগ নেয়। কাপ্তাই বাঁধ তৈরী করা হলে হাজার হাজার জুম্ জনগণ উদ্বাস্তু হবে এবং তারা তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হবে। এই বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি এই  কাপ্তাই বাঁধ গঠনের বিরোধীতা করার উদ্যোগ নেন। তিনি "কাপ্তাই বাঁধ পাহাড়িদের মরণ ফাঁদ"  এই শ্লোগান সম্বলিত একটি লিফলেট প্রকাশ করে  কাপ্তাই বাঁধ গঠনের বিরোধীতা করেন।
সরকার এ কারণে তাকে কারারুদ্ধ করে রাখে। ১৯৬৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী হতে ১৯৬৫ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত তিনি কারান্তরীন থাকেন। পার্বত্য জুম্ম আন্দোলনের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি জুম্ম জনগণের সার্বিক কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য সরকারের রোষানলের শিকার হন এবং কারাবরণ করেন।
১৯৬৫ সালে তিনি জেলে থেকে বিএ পরীক্ষা দেন এবং বিএ পাশ করেন।
এরপর তিনি ১৯৬৬ সালে দিঘীনালা উচ্চ বিদ্যালয়ে কিছুদিন সহকারী শিক্ষক হিসেবেশিক্ষকতা করেন।
পরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে  ১৯৬৮ সালের দিকে কিছুদিন চাকুরী করেন।
১৯৬৮ সালে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে এলএলবি পাশ করেন  এবং চট্টগ্রাম বার এসোসিয়েশনে যুক্ত হয়ে আইন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।

১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে তিনি আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে উত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
এরপর ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। সে সময় তিনি কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপে নিজেকে যুক্ত না করে চুপচাপ বা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় জীবন যাপন করেন।
১৯৭২ সালে তার নেতৃত্বে তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ মুজিবের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বিশেষ শাসনব্যবস্থার দাবি জানিয়ে  তিনি ৪ দফা দাবিনামা পেশ করেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান এই দাবিনামার প্রতি ইতিবাচক সায় প্রদান না করে উল্টো প্রতিনিধি টীমকে এককথায় অপমান করেন। এতে এমএন লারমা বুঝতে পারেন পার্বত্য জুম্ম জনগণ এই শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে কোনো অধিকার পাবে না। তাই পরে তিনি ঢাকা থেকে ফিরে 'জন সংহতি সমিতি' গঠনের উদ্যোগ নেন। এ সময় তিনি জুম্ম জনগণের নিজস্ব অস্তু শক্তিসম্পন্ন সশস্ত্র সংগঠনের প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেন। এবং গোপনে 'গণ মুক্তি ফৌজ' নামে একটি সশস্ত্র সংগঠনও দাঁড় করান। এই সংগঠন ও তার কার্যকলাপ পার্বত্য জুম্ম জনগণের কাছে এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে জনগণ এই সংগঠনকে ভালবেসে "শান্দিবাইনি" বা বাংলায় "শান্তি বাহিনী" নাম বসিয়ে দেয়। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পরে পাবত্য চট্টগ্রামের  'ডাকাত দল'গুলোকে দমন করে, এছাড়া শান্দিবাইনি/শান্তিবাহিনী গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রেখেছিল।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সেই নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আসন থেকে এসেম্ব্লি মেম্বার নির্বাচিত হন। এরপরে তিনি শেখ মুজিবের প্রতিষ্ঠিত 'বাকশাল'এ যোগ দেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব নিহত হলে এমএন লারমা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন। পরে তিনি আত্মগোপনে থেকে সশস্ত্র লড়াই শুরু করেন।
১৯৭৬ সালে শান্তিবাহিনী সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র আক্রমণ পরিচালনা করে।

১৯৮২ সালের ২৪ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর এমএন লারমা প্রতিষ্ঠিত জেএসএস এর কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এই কংগ্রেসে সংগ্রামের লাইন নিয়ে নেতৃত্ব দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এমএন লারমা "রণনীতিগতভাবে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রাম ও রণকৌশলগতভাবে দ্রুত নিষ্পত্তির লড়াই" এই তত্ত্ব প্রদান করেন। তার বিপরীতে প্রীতি কুমারের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ "রণনীতিগতভাবে দ্রুতণিস্পত্তি"র তত্ত্ব উপস্থাপন করেন।এ গ্রুপটি 'বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর নীতি' অনুসরণ করে পরদেশের সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা উত্থাপর করেছিল।
এই  দুই ধারার মধ্যে বিরোধ 'আলোচনা-সমালোচনা' পদ্ধতিতে মীমাংসিত না হয়ে তা সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়।
১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর তিনি এমএন লারমা উক্ত গ্রপ দ্বারা হামলার শিকার হন। এবং তিনি শহীদ হন। তার সাথে আরো ৮ জন শহীদ হয়েছিলেন।


সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...