Showing posts with label সংগঠন. Show all posts
Showing posts with label সংগঠন. Show all posts

Sunday, July 30, 2017

ফ্যশন অর এসটাইল ইন দ্য লাড়েই!-এগ্গান তেম্বাঙ



তারিকঃ ২৭ জুলাই, ২০১৭

এ লেঘাগান লিঘিবার কারণ অহলদে গুরো ভেই ফেসবুক বন্ধু সুদর্শী চাকমা মিশিলঅত সানগ্লাস চোঘোত দে’না লোইনেই এগ্গান লিককে। সিওত ত্যা সানগ্লাস ন দিবার কধা কুইয়্যে।সাদাচোঘে বিষয়আন লোইনেই আজলে কধা কবার তেমন নেই মনে অহবঅ। হালিক,আমি আমা সমাজ পরিবর্তনঅর ক্ষেত্রে বা আমার লাড়েইআন আক্কোই নেজেবার ক্ষেত্রে সাদাবাওচ্চে তুত্রিনিংতাত্রাং এত চিগোন চাগোন বিষয় বা সমস্যা লোইনেই এতঅ সময় কাদেই দিই যে, দেঘা জাইদে আমি আজলে শেজেনদি আমা লাড়েইওর মূল উদ্দেশ্যআন’ওই পুড়িই ফেলেইওই!
ম’র এই আলোচনা বা তেম্বাঙআনঅত মুই আলোচনাগুরিনেই সেই বিষয়আন তুলি ধুজ্জোং। আমি জুনি আজল কাম তুত্রিং নাত্রিং কাম ভাগ ন গুরি তোইলে শান্দিবাইনীউনে তারা জিঙানী লাড়েইওত নিজঅর জিঙানির বেকভাগ দিইনেই বয়চকালে জ্যাএন উভোককাককাক উইওন, বজর বিদি জাদে জাদে কমলে কমলে আমা উগুরেও সে দঝাআনি ব দঝা ভেদা দ্যাএ সিআন থাআরও গুরি ন পারিবং!
লেঘাগান মন দিইনেই কেউ পুড়িনেই কিজুকাজু সজাগ চোকমুফুত্যা অহলেও মনআন হুজি অহবঅ!

লেঘাগানঅর শুরু...

বাংলাদেঝ'অত ওবোচ্চো 'বিপ্লবী মিশিল' দেঘা ন জাই। আর 'সান গ্লাশ' বা 'চোকশমা'আন বেধক্যা সা'আন দেঘেলে'য়ো 'সাংনগ্লাশ' দ সমচ্যা নয়! সমচ্যা অহলদে 'লাড়েই'আন বা সংগ্রাম বা 'বিপ্লব' বা সংগ্রাম'আন। মাও বা চে বা কাস্ত্রো সিগেরেট হ্যানেই দ তারা বিপ্লবী!তারারে দ কনঅজনে ‘;অবিপ্লবী’ ন কলাক!

ভাব দেঘানা, ভাব ল'না, ভাব মারানা বা এসটাইল দেঘানা সমারে জাদে বা জেকজেক গুরিনেই লাড়েই গরানা, লাড়েইওত থানা, লাড়েই'আন'অরে নিজর গুরি ল'না ভিদিরে পার্থক্য দ আঘে! আর লাড়েইওর কারণে এসটাইল গরানা, সানগ্লাশ দি পানাহ, তুক্যা দেনা সি'আন দ লাড়েইওর কারণে। হালিক অহয়'আন'অত নয়'আনত এসতাইল মারানা সি'আন দ 'বিপ্লবী' 'সংগ্রামী' কাম নয়! সি'আনি কধা বাদ, এই 'হাচ্চত' স্বাভাবিক সংস্কৃতি বা মূল্যবোধ'ওর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য'ও নউয়।

এ উপমহাদেশ'অত যারা সংগ্রাম গরন তারার কিজু 'ডগমা' আঘে। এই দেঝত যারা 'বিপ্লবী' হলান তারা সমাজ জাত দেঝ লোইনেই নিরাল নিবিড় গুরিনেই কাম ন গুরিনেই 'মদ হানা' 'শুগর এহরাহ ' হানা বা সমাজ'অত জি'আন 'ট্যাবু' সি'আন ভাঙানা'আনঃঅরে 'বিপ্লবী কাম' মনে গরন। আমা সিদু বিপ্লব বা সংগ্রাম যারা গরন তারা 'মদ ন হানা' ই'আন'অরে 'সংগ্রামী কাম' মনে গত্তাক বা এবঅসং মনে গরন। সেনোত্তেই সমাজ'অর স্তর ন বুজিনেই সমাজ'অত যারা মদ হান তারারে মদ'অ ভাদি বোগেই দোন। হালিক এত বিধিনিষেধ দিবার পরেও, এতঅ শাস্তি দিবার পরেও,এতঅ চেরেস্তারপরেও মদ হানা মদতি অহনা বন্ধ ন অহয়। অন্য কিত্তে চীন দেঝত, কিউবা সিদু তারা মদ হেইনেই বিপ্লব গুজ্জোন। আজলে পোল্লেম সমাজ লোনেই স্টাডি ন গুরিলে সমাজ বোদোলেবার মতন যুগোপযোগী কর্মসূচি ন ললে দ সমাজ বোদোলেবার আঝা বা বোদোলেবার কামআনঅত আমি ফেইল মারিবঙ! মদতদ নঅ হেইনেই সন্যাসব্রত ধারণ বা সাধু ‘সাজানাহ’ বা সেনজান কাম গরানা মানে দ রাজনৈতিক ভাষায় 'ভাববাদী' অহনা। অর্থাৎ বস্তুবাদী বা দ্বন্দ্বমূলক ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দৃষ্টিভংগী বা সঠিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগী অরজন ন গরানা। যারা আগেদি সমাজ বোদোলেবার বাগকাম আহদঅত লুইওন তারা দ বানাহ এই ভাব ন মারঅন!

আজলে আমি অহত্তে অহত্তে সমাজ'অ ভিদিরে থেইনেই নানা চিন্তাগত সংস্কার বা দৃষ্টিভংগী লালন গুরি। সে দৃষ্টিভংগী অবশ্যই আমার সংস্কৃতি বা সংস্কার। সি'আনর কারনে কোনো এগগান জিনিচ বা বিষয়'অরে গম বা ভান্যা বা সা'চ্যা বা বেসাচ্যা(সাজ'অন, বেসাজ'অন) কোই। হালিক সি'আন'অ সমারে সমাজ পরিবর্তন'অর সম্পর্ক আপতিক মাত্র। সি'আনঃঅর স্ট্যাটিক 'গম ভান্যা' কিজু নেই। গম আর ভান্যা স্ট্যান্ড'অ উগুরে বা অবস্থানগ্রহণঅ উগুরে নির্ভর গরে। আর 'বিপ্লবী' বা 'সংগ্রামী' রাজনীতি বা এই ধরনঃঅর রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগী উন্নততর মতাদর্শ ধারণ গরে। উন্নত বা উচ্চতর মতাদর্শ মানেই সংস্কারমুক্ত নৈর্ব্যক্তিক চিন্তাচেতনার মাধ্যমে সমাজ বিশ্লেষণ এবং সমাজ পরিবর্তন'অর কাম গরানা সেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভংগীর ভিত্তিতে। তবে কধা আঘে, সমাজ পরিবর্তন গুরিলে সমাজ'অত উপযোগী কর্মসূচিই লো পুরিব'অ।

সমাজ পরিবর্তন গুরিবার চ্যালে সমাজ'অর উপযোগী কাম গরা পুরিব'অ। মদ'অ ভাদি বোগেই দে'না জ্যান সঠিক কর্মসূচি নয়, সেনজান মদ হেবার ঢালাও সুবিধে দেনাও সঠিক কর্মসূচি নয়। কুবোত দাড়ি বজা পড়ে, কোন জাগাত কমা, কোন জাগাত হাইপেন, সেমিক্লোন, প্রশ্নবোধক চিহ্ন দি'ইয়া পরে সি'আন যারা লেঘানাত এক্সপার্ট তারাত্তেই নিশ্চয় হবর পা'আ পড়ে। আর যারা্ দেচজাদঅর কাম গুরিবাক তারাততুনো সমাজচোরে স্টাডি গুরিনেই কন কামআন আগে গরা পুরিবঅ, সমাজঅর কন সমস্যাআন মৌলিক,কুবান সেকন্ডারি বা গৌণ সিআন তলবিচ গুরিনেই বাজি ল’বার বাস্তবিক রাজনৈতিক জ্ঞান থাআ পুরিবঅ।
আমি জুনি সমাজ লোইনেই গভীর অনুসন্ধান ন গুরিনেই কুড়ো আঙত্যেদে ধক সমাজ লোইনেই কাম গুরি তোইলে দ আমি জাদঅর ভালেদ গুরি ন পারিবং। বরং আমার সে কামআনির কারণে আমা জাদঅর হারাপ কিজু অহবারই সম্ভাবনা বেচ আগে। আর সে কারণেই জাদঅর ভালেদ গুরিবার মত এতঅ কাম আপাতভাবে অহবার পরেও আমা জাদঅর এতঅ দুর্বল অবস্থা আমি লাআক পেইর। কারণ যারা বিপ্লব গুরিবার বা সমাজ বোদোলেবার কধা তারা তিলে তিলে কুড়ো(মুরগী) আঙুত্যে পারাআ সমাজ লোইনেই আঙুদা আঙুদি গুজ্জোনদে বানাহ। চেুদোমেএ উদোনআন আধং গুজ্জোন পারাআ উইয়্যে।


আমা জাদঅর যারা বিপ্লবী হোলান বা যারা সমাজ লোইনেই কাম গরঅন তারার আরেগ্গান সমস্যা দেঘা দেএ।
গভীর সঠিক রাজনৈতিক চেতনা আর দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন ন গুরিবার কারণে এ বালখিল্যতা বা চিগোনগুরো ধক মানসিকতা দেঘা দেএ। আমি দেঘি যারা লাড়েই গরঅন বা লাড়েইও থান তারা লাড়েই গত্তে গত্তে নিজঅরে পোললেম জমঅর বিপ্লবী বানেই রাঘান। হালিক হানক্কন পরে সে সলংবোদোলেইনেই শুন্য ডিগ্রিততুন তিনশষাইট ডিগ্রি বুদুলিনেই বিরাট প্রতিবিপ্লবী বা প্র্রতিক্রিয়াশীল ওই জানদোই। বিশেষগুরি সমাজ বোদোলেবার কর্মসূচি লোইনেইও তারা শুন্য ডিগ্রিততুন তিনশষাইট ডিগ্রি বুদুলি জাআদে দেঘাজাই।ধরা জোক,মিলে ষ্বাধীনতার কধা। মুই ম আলোচনাআনঅত বোঝেবার চেলুংগে, সমাজঅর স্তরভেদে সমাজ পরিবর্তনঅর কাম গরাপরে। হালিক ইআন ক’বার পরে নারী স্বাধীনতা লোইনেই ,মুই কী আমা সমাজঅত মিলেউনোরে পশ্চিমা ধাঁচে স্বাধীনতা দিবার চাআং কিনা কোআ অহলঅ। সে জবাবে জবাবে মুই লিক্কোঙ- নারী স্বাধীনতা মানে নারীর মর্যাদা, নারীর স্বকীয়তা স্বাতন্ত্র্যরে স্বীকার গরানা, নারীর সামাজিক দায়িত্ব কর্তব্য বিষয়ে সচেতন অহনা। আর দায়িত্ব করতব্যবোধ অহলদে পারস্পরিক। নারীরে সম্মান দি'আ পুরিব'অ, নারী সমাজ'অর সম্মান বজায় রাঘেব'অ।ইক্কো সানগ্লাস দেনা ন দেনা লোইনেইও বা অন্য বিভিন্ন ধুক্কেন সমস্যা লোইনেইও সে কধাআন কোআ জাই।
মুই নিজে জ্যাক্কেনে হাগারাছুরি পাআটি(পার্টি) কাম গুজ্জোঙ,স্যাক্কেনে দিক্কোঙ, আমি হবংপুজ্জে আদামঅত স্কুলঅ পো-গাবুজ্জেউনো ভিদিরে শৃংখলা আনিবার জেইনেই কিজু কিজু সমাজঅর অতি উৎসাহী মানজে স্কুল পো আর গাবুজ্জেউনোরেেএককধায় ‘জেলহানা’ত রাঘাই পারাআ রাঘেবার পরামর্শ দিলাক! হালিক, কিজুদিন বাদে দেঘা জেলঅদে এ চরম ‘বিপ্লবী’ চিদে গুরিইএ মানুচ্চুনোর ‘বিপ্লব’ মাধা্-আগা দেঘাইও নেই! শেজেনদি আজল কামআন বুদি রাঘিইওন! ইআনঅরেই কঅবার চিওঙ শুন্য ডিগ্রিততুন তিনশষাইট ডিগ্রি উল্লানা। আমা সমাজ বা জাদঅর এ হাচ্চত সমাজঅ ভিদিরে, রাজনৈতিক দলঅ নেতাউনো ভিদিরে, মানজো ভিদিরে আহরে আহরে কেজেএ কেজেএ আঘে!

আমি সমাজ'অর সেকন্ডারি সমস্যালোই মশগুল থ্যানেই দ 'বিপ্লব' 'সংগ্রাম' আক্কোই নেজেই ন পারিবং!

সমাজ'অর নানা তুতত্রিং নাতত্রিং সমস্যা আঘে। এধকভিলোন দেঘা জিইয়ে, আমি কোন সমস্যাগান মুখ্য আর কোন সমস্যাগান গৌন সি'আন তলবিচ ন গুরিনেই বানা তেম্বাং সুলুক গুরি গুরি থেই। সেনোত্তেই আমি তলা লা'আপ ন পেবার অক্ত অহয়! আমি দ ব্যাগে সমাজ'অ ডাক্তর নয়। ধরা জোক এগগো রুগি ডাক্তর'অ সিদু মাধাপিড়েত্তেই জেল'অ। ডাক্তজ্যে দ বানা মাধা পিড়ে কিনে দারু ন দিব'অ! ত্যা চেব'অ কী কারণে মাধা পিড়ে অহর। সি'আন চোঘোর কারনে অহলে চোঘও দারু দিব'অ। প্রেশার'অর কারনে অহলে আরেকধুক্কেন দারু বা অন্য কারণে অহলে আরেকধুক্কেন দারু দিব'অ। সেনজান গুরি সমাজ'অর যারা বা জ্যা ডাক্তর ত্যা বা তারা সে অনুযায়ী দারু জোগওলেবাক, বা জোগোলে পেবাক। জোগোলে ন পারিলে দ অসুক বা পিড়ে গম ন অহব'অ, বরং আরো জটিল অহব'অ!
আপাত মুই ইআন লোইনেই ম আলোচনা ইওত থুম গুরিলুঙ।

শিল্প-সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা

তারিখঃ ২৪ জন, ২০১৭
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে হলো। অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো আলোচ্য বিষয় খুবই সহজ মনে হতে পারে! কিন্তু এই আলোচনার একটি জটিল 'অমীমাংসিত' প্রপঞ্চ রয়েছে। অনেকটা 'ডিম আগে নাকি মুরগী আগে' প্রশ্নটির মতো একটি উত্তর প্রাপ্তির বিষয় জড়িয়ে রয়েছে! 
শিল্প-সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা থাকা বা না থাকা বা এই ধারার প্রাধান্য থাকা না থাকার সাথে সাথে নিচের প্রশ্নটি নিয়ে আমরা ভাবতে পারি!
'সংগ্রামী ধারার সাহিত্য আগে সৃষ্টি হবে নাকি সংগ্রাম জারি থাকা বা সংগ্রামী ধারা জোরদার' হওয়া আগে সৃষ্টি হতে হবে?
সংগ্রাম যদি জারি না থাকে বা যদি সংগ্রাম বা 'বিপ্লব' জোরদার না হয় তবে সংগ্রামী ধারার শিল্প ও সাহিত্য চলমান সমাজ জীবনে কী প্রাধান্য পাবে? অথবা প্রথমে সমাজের শিল্প ও সাহিত্যে সংগ্রামী ধারা সৃষ্টি হবে, তারপরে পরবর্তী প্রেক্ষাপট হিসেবে আসবে জোরদার সংগ্রাম?
কখন একটি চেতনামূলক গান মানুষকে জাগাতে পারে? 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে' গানটির আবেদন কি '৭১ সালের আগে ছিল? নাকি '৭১ এর ৯ মাসের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে এই গানটি 'আবেদনময়ী' হয়ে মানুষকে জাগিয়েছিল?
শিল্প ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনার সময় এই বিতর্কটির মীমাংসা তবে কি আবশ্যকীয়ভাবে সামনে আনতে হয়/হবে?
বিষয়টি নিয়ে কথাবলতে হোল, কারণ এ নিয়ে বিভ্রান্তির কারণে আমরা একে অন্যকে দোষারোপ করে থাকি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে যে সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব চলছে তাতে আমরা এই বিষয়টি নিয়েও নানা ধোঁয়াশামূলক চিন্তাভাবনা করি। অথচ, সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে বা সমাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে নেতৃত্ব দিতে গেলে বা এ নিয়ে ভুমিকা রাখতে হলে আমাদের এই বিষয়টিকে সিরিয়াস আলোচনা করে মীমাংসায় যেতে হবে। 
আপাতত এটুকু মাত্র যোগ করলাম। 

Sunday, July 23, 2017

লুঙুদু হামলা বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাধারণ মূল্যায়ন

তারিখঃ ০৪ জুন, ২০১৭
[ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে এই মূল্যায়ন নিশ্চয়ই আমাদের ভাবতে শেখাবে এই প্রত্যাশা রেখে লেখাটি ফেসবুকে শেয়ার করলাম]
মোট ১১ টি বাংলা পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণের ০৩ জুন, ২০১৭ প্রকাশিত সংখ্যায় লুঙুদু সাম্প্রায়িক হামলা বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাধারণ পর্যালোচনামূলক সংক্ষিপ্ত আলোচনা এখানে করা হয়েছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, পত্রিকার প্রতিবেদক বা রিপোর্টারগণ কেউই লুঙুদুর মূল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে তথ্য সংগ্রহ করেননি। তাই দেখা গেছে, আসলে কী ঘটনা ঘটেছে তা সংগ্রহ করতে অনেকেই সোর্স হিসেবে ফেসবুককেই ব্যবহার করেছেন। এতে প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে মারাত্মক ত্রুটি দেখা গেছে।
বিশেষ করে গাজীপুরে ব্রয়লার বিস্ফোরণের একটি ছবি লুঙুদু’র ঘটনা হিসেবে ফেসবুকে কে বা কারা শেয়ার করার পরে সেই ছবি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকায় মূল হেডিঙ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি পত্রিকা সেই ছবিটি ব্যবহার করেছে। এতে প্রশ্ন থেকে যায়, রাঙামাটি জেলার লুঙুদুতে কোনো পত্রিকারই কি কোনো প্রতিনিধি নেই? তারা কি এই গুরুতর ত্রুটি ধরিয়ে দিতে পারেননি? অথবা নাকি অসাবধানতাবশতঃ না হয়ে এই ত্রুটিকে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করা হয়েছে? খেয়াল করা গেছে গাজীপুরের ব্রয়লার বিস্ফোরণের এই ছবিটি প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় লীড কলাম আকারে ছাপা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে দৈনিক আমাদের সময়ের শেষ পৃষ্ঠায়। ব্যবহার করা হয়েছে যায়যায়দিন পত্রিকার শেষ পাতায়। দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায়ও এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সমকাল পত্রিকায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে বলে জেনেছি। প্রতিষ্ঠিত এই সকল পত্রিকার রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি যারা রয়েছেন তাদের নিশ্চয়ই লুঙুদু উপজেলারও প্রতিনিধি বা পরিচিত কেউ থাকার কথা। যখন এই ছবিটি পত্রিকায় ব্যবহার করা হচ্ছে তখন তারা এই ছবিটি ভ্যারিফাই কেন করেননি তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে থাকলো। অথবা জেনেশুনেই এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তাও এখন প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে যাবে বলেই আশংকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। হয়তোবা ঘটনার মাত্রা নিয়ে বা ঘটনা নিয়ে যাতে প্রশ্ন করা যায় সে দিকটি মাথায় রেখে এই ’কাঁচা ভুল’ যে জেনেশুনে করা হয়নি তা-ই বা কে বলতে পারে?!
পত্রিকার প্রতিবেদনের দিকে খেয়াল রাখলে বোঝা যায় ১১ টি প্রতিবেদন আলাদা আলাদা মনে হলেও মূলত, দুএকটি বাদে বাকি সকল প্রতিবেদনের মূল সূত্র বা মূল লেখক বা মূল তথ্যদাতা বা মূল তথ্য সংগ্রহকারী সম্ভবত দুইজন বা তিনজন হতে পারেন। তাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করার পরে প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং পরে তার দুএকটি বাক্য বা বাক্যাংশ বা প্যাটার্ন বদল করে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনসমূহ পড়ে ভাষাগত ও বানানগত নানা ভুল সহজেই চোখে পড়ে। বিশেষ করে দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রথম অংশেই এই ভুলচুক বেশি উৎকটভাবে দৃশ্যমান।
প্রতিবেদনসমূহ পড়ে আমি তিনটি ক্যাটাগরিতে প্রতিবেদনসমূহ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। তাতে দেখা গেছে, ক্ষয়ক্ষতির বিবরণে প্রশাসনের সূত্র থেকে ১০/১২টির বেশি বলা হয়নি। তবে একটি বেসরকারী সূত্র থেকে ৮৬টির মতো ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পাহাড়িদের পক্ষ থেকে ২০০ বা আড়াইশ বা তারও অধিক বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে। এবং এতে প্রায় সকল পত্রিকায় জনসংহতি সমিতি লুঙুদু উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিশংকর চাকমার উদ্ধৃতি দিয়ে বাড়িঘর পুড়ে যাবার সংখ্যাটি বলা হয়েছে।
প্রশাসনের বক্তব্য সাধারণভাবে গতানুগতিক হয়ে থাকে। এতে সাধারণত, পুড়ে যাবার ঘটনা স্বীকার করা হলেও কম পুড়ে যাবার কথা স্বীকার করা হয়। তাছাড়া ঘটনার জন্য আদতেই দোষী কোন অংশ তা জানার পরেও জটিলতা এড়ানোর জন্য দোষী কোন অংশ তা স্পষ্ট করে বলা হয় না। এখানেও আমরা সেই প্রবণতা দেখতে পাই। অন্যতম জাতীয় একটি দৈনিকে বলা হচ্ছে ’পাহাড়ি বাঙালি সমস্যার কারণে’ ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
তবে দুএকটি পত্রিকায় উদ্ধৃতিসমূহ পাঠ করে সহজেই বোঝা যায় ঘটনার মূল অংশ কে বা কারা ছিল। এক্ষেত্রে আমরা দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মমিনুল ইসলামের বিবরণ উদ্ধৃত করতে পারি। তাকে উদ্ধৃত কওে বলা হচ্ছে- তিনি ’.. ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নয়নের লাশ নিয়ে র‌্যালি করে আসার পথে কিছু লোক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়। এ সময় পুলিশসহ যৌথবাহিনী ও প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ায় পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’। এতে দেখা যায় মিছিল করার সময়ই কিছু লোক ’অপ্রীতিকর’ভাবে হামলা করেছে ও পাহাড়িদের বাড়িঘরে নির্বিচারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় বলা হয়েছে- ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তাঁরাও নিরুপায় হয়ে পড়েন। অর্থাৎ, ঘটনা ঘটার সময়ে আইন শৃংখলা বাহিনী উপস্থিত ছিল। তবে তাদের ভুমিকা রাখার মতো পরিস্থিতি সেখানে ছিল না। কিন্তু পাহাড়ি জনগণের পক্ষ থেকে বিভিন্নজনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবরে আমরা দেখতে পাই, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ভুমিকা নিরপেক্ষ না থেকে সাপেক্ষে যেন তারা একটি পক্ষের দিকে বেশি ঝুঁকে গেছেন!
পত্রিকাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি একপেশে ও পাহাড়ি বিদ্বেষী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা। লংগদুতে অনুষ্ঠিত সমাবেশের খবরে বক্তাদের উদ্ধৃত করে উক্ত পত্রিকায় বলা হয়েছে- ’সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করার জন্যে পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়- এনিয়ে গত কয়েকমাসের ব্যবধানে পাহাড়ে তিনজন মোটর সাইকেল চালককে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। প্রতিবেদনে পাহাড়ি জনগণের কোনো বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে সেটলার বাঙালি সংগঠনের খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে ১৪৪ ধারা জারি করার কথা একটু করে বলা হলেও প্রশাসনের আর কোনো ধরণের উদ্ধৃতি বা বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি।

Tuesday, December 27, 2016

মিঠুন চাকমার বিরুদ্ধে কেন চাঁদাবাজি মামলা?

২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং আমার বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার ধারা হল ৩৪২/৩৮৫/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড। অভিযোগ হল চাাঁদাবাজির। এমনিতেই রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ধারাসহ মোট ১৩টি মামলা। এই মামলাগুলোর জন্য কোর্ট হাজিরা দিতে হচ্ছে মাসে ১০ থেকে ১২ দিন। অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার এই দুই ছুটির দিন বাদে প্রায় প্রত্যেকদিন আমাকে কোর্র বারান্দায় থাকতে হয়! ডিসেম্বর মাসে কোর্টে ছিলাম ৪, ৬, ৭, ৮, ১৩, ১৪, ১৯ ও ২১ ডিসেম্বর। মাসটি এখনো শেষ হয়নি। আরো কয়েকদিন কোর্ট হাজিরার ডেট রয়েছে। কিন্তু কী এক ‘শনির দশা’ বা ‘বদ নসিব’ পেয়ে বসেছে যে, আরো মামলায় জেরবার হতে হচ্ছে?? কারাগার বা জেলখানা যেন ডাকছে!!
কেন এই মামলা?
শেষ কোর্ট হাজিরা ছিল ২১ তারিখ। তার আগের দিন খাগড়াছড়িতে সাংবাদিকরা একটি মানববন্ধন করেছে। প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক নীরব চৌধূরীকে মারধর করার প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। এলাকার একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে এই ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছিল। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে মাঝে মাঝে একটি ব্যক্তিভিত্তিক নিউজ ওয়েবসাইটে লেখালেখির কারণে আমাকে কেউ কেউ ‘সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিতি দিতেও সহায়তা করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেকে ফ্রিল্যান্স সংবাদ প্রচারক হিসেবে পরিচয় দিতে রাজি থাকলেও থাকতে পারি!
সে যাই হোক, আন্তরিকতার দাবি রেখে এই প্রোগ্রামে প্রথমে দূর থেকে অংশ নিয়েছিলাম। পরে কিছুক্ষণের জন্য মানববন্ধনে দাঁড়িয়েও ছিলাম। দাঁড়িয়ে যা দেখেছি সে বিষয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে যা বলেছিলাম তা নিচে তুলে ধরছি-
আজ ২০ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির সাংবাদিকদের উদ্যোগে ফটো সাংবাদিক নীরব চৌধুরীর উপর হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা যে কর্মসূচি তাতে ছিলাম। এ বিষয়ে আমার এক বন্ধু বললো, দোস্ত, তোমাকেও সেই প্রোগ্রামে দেখলাম, ব্যাপার কী? আমি বললাম, ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে তাতে জোরজবরদস্তি ও অন্যায় রয়েছে, তাই সেখানে ছিলাম। সাংবাদিক নীরব চৌধুরী অন্যায্য কিছু করলে সে বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নেয়া যেত নিশ্চয়ই। এছাড়া বললাম, পৌর মেয়র রফিক সাহেব যদি সাংবাদিক মেরে থাকেন তবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যা করেছেন তা তিনি সঠিক কাজ করেছেন বলে মনে হয় না। এভাবে যত্রতত্র অনাবশ্যক হ্স্তক্ষেপে তার ক্যারিয়েরই বরং ক্ষতি হবে। তিনি পৌর মেয়রের চেয়ে বড় কিছু হতে পারবেন না। তবে প্রোগ্রামে সরাসরি থেকে যা অবাক করেছে তা হল, সাংবাদিকদদের বিপরীতে পাল্টা প্রোগ্রাম ডেকেছিল পৌর মেয়রের সমর্থকরা। বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করার মত হলেও *রাজনৈতিক* রূপ দিয়ে মিছিল পাল্টা মিছিল একটু বেখাপ্পাই লাগে!!! মাথায় *রাজনীতি* ঢুকলে যা হয় আরকি!! সে যা হোক অনেকদিন পরে খাগড়াছড়ির *মাঠ* গরম দেখে এই শীত উপলভ্য বোধ হয়েছে!!!!


সাংবাদিকদের মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের একজন হিসেবে 


তারপরের দিন আরো মন্তব্য করেছিলাম -
যা বলা দরকার সাংবাদিক নীরব চৌধুরীর উপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল ২০ ডিসেম্বর সাংবাদিকরা মানববন্ধ করেছে। উক্ত কর্মসূচিতে কেন আমি উপস্থিত ছিলাম তার কথা গতকালকে ফেবু স্ট্যাটাসে বলেছি। গতকালকের কর্মসূচি নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদন দেখার পরে আরো কিছু বলা দরকার মনে করছি। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘দিদার কসাই’এর নেতৃত্বে মেয়র রফিক গ্রুপের ৪০/৫০ জন মিছিল করেছে। উক্ত মিছিলে শ্লোগান দেয়া হয়েছে- ‘একটি-দুটি সাংবাদিক ধর, ধরে ধরে জবাই কর; সাংবাদিকদের আস্তানা-জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’। তবে আমি বলতে চাই যে, প্রোগ্রামে সরাসরি থেকে আমি এই শ্লোগানগুলো শুনিনি। তারা যে শ্লোগানগুলো দিয়েছে তার মধ্যে আমি যেগেুলো শুনেছি সেগুলো হল- চাঁদাবাজদের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে। চাঁদাবাজদের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও উন্নয়নে বাধা দিলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।
(এক সাংবাদিকের নাম ধরে শ্লোগান দেয়া হয়েছে) ... চোরের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে এছাড়া তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল কিনা তাও খেয়াল করিনি। তবে ’কসাই’ দিদারের নেতৃত্বে যে মিছিল হয়েছে, তাদের যে অঙ্গভঙ্গি তা অবশ্যেই ‘উস্কানিমূলক’ ‘আক্রমণাত্মক’ ছিল তা বলা যেতে পারে।
প্রথম আলোর মতো একটি স্বনামধন্য/বস্তুনিষ্ঠতার দাবিদার পত্রিকায় যখন কোনকিছু লেখা হয়, তখন তা গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে নিশ্চয়ই। তাই প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনে বস্তুনিষ্ঠতা দেখাবে তার আশা, প্রথম আলোকে কেউ পছন্দ না করলেও, সকল পাঠক অন্তত কিছুটা করে থাকে। প্রথম আলোর ভুমিকা যেন ‘অতিরঞ্জনাত্মক’ না হয় সে আশা রইল
তারপর ২৫ ডিসেম্বর আরেকটি স্ট্যাটাসে বলি-
আমার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে শোনার পর এক শুভাকাঙ্ক্ষী বললেন, মেয়র রফিকের *হাত* কতো লম্বা তুমি জানো না। আমি শুনে স্তম্ভিত! আমার নামে মামলা হবার সাথে মেয়র রফিকের *হাত* কত লম্বা-এর সম্পর্ক কি তা বুঝলাম না!?? তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে এই *প্রেডিকশন* *মিথ্যা* হবে এমন নাও হতে পারে!! এই কদিন খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকের সাংবাদিক *পিটানো* নিয়ে *সরব* থাকার কারনে *মামলা* যে দেয়া হয়নি তাও বা কী করে বলি!?? অথবা জেল থেকে মুক্তি পাবার পরে এখন খাগড়াছড়ি সদরে *মুক্ত মানুষের মত* ঘোরাফেরা করতে পারায় *কেউ না কেউ* *শংকিত* এই ধারণা মিথ্যা নাও হতে পারে!! সে যাহোক,....!


২২ ডিসেম্বর যেদিনের ঘটনার জন্য চাঁদাবাজি মামলা দেয়া হয়েছে সেদিন পিসিপি খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার কাউন্সিলে আমন্ত্রিত একজন অতিথি হিসেবে আমি মিঠুন চাকমা বক্তব্য দিচ্ছি


খাগড়াছড়িতে সাংবাদিককে মারধর করার ঘটনা নিয়ে সোচ্চার থাকার জন্যই সম্ভবত আমার নামে মামলা দেয়া হয়েছে! মামলা যে দেয়া হয়েছে তা জানতে পারি ২৫ ডিসেম্বর। শুভাকাঙ্খীরা আমাকে বললো কিছুদিন বাইরে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা না করতে। কিন্তু খুব মনেকষ্টের সাথে বলতে হচ্ছে আমার এই প্রাণপ্রিয় খাগড়াছড়িতে কিছুক্ষণ আলো হাওয়া বাতাস গায়ে লাগিয়ে না আসলে কেমন যেন মন আনচান করে!
আসলে পাহাড়ের সাধারণ জীবনযাপন এবং রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক চিন্তা এতবেশি সংকীর্ণভাবে সবার মনে ‘বিরাজ করে’ যে এখানে একজন ইউপিডিএফ সদস্য যখন মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করে তখন কারো কারো যেন মাথ্যাব্যথা সৃষ্টির কারণ হয়ে থাকে!
ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে সেই বৃত্ত থেকে মুক্ত মনে করলেও যেন তা-ই আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে!!!
ইচ্ছে ছিল খাগড়াছড়ি শহরে সবার সাথে মিশে একটা নতুন কিছু করার উদ্যোগ নেব যেন এই ....
এই ফেসুবক নেটা একিটু খাপছাড়ভাবেই লিখছি!
যে মামলা দেয়া হয়েছে আইনজীবির সাথে পরামর্শ করে তা আইনীভাবেই মোকাবেলা করব। আদালত জেলে পাঠায় তাতেও রাজি!
যারা মামলা দিয়েছে তাদের তো অন্তত ‘সুখবোধ’ সৃষ্টি হবে!
আর নিশ্চয়ই নিজেকে ‘নিরপরাধ’ প্রমাণ করে আবার অনলাইন ফেসবুকে আসেতে পারব এই প্রত্যাশাই থাকল!
লেখালেখির জন্য ৫৭ ধারায় মামলা হবার পর ‘সন্তুষ্টি’ ‘আত্মতৃপ্তি’ ছিল, যাই হোক, অন্তত লেখালেখির জন্য তো মামলায় অভিযু্ক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলাম!
কিন্তু এখন ‘চাঁদাবাজি’ মামলার আসামী হিসেবে নিজেকে দেখতে পেয়ে নিজেকে বেমানানই লাগছে!
তবে তারপরেও এটা তো জানা যে, রাজনীতিতে ‘মামলায়’ জেরবার হওয়া স্বাভাবিক একটি প্রবণতা মাত্র!

Sunday, December 4, 2016

ফিডেল ক্যাস্ট্রো- যিনি তাঁর মৃত্যুর পরও বিপ্লবের পতাকা উচ্চে তুলে ধরবেন!

ফিডেল ক্যাস্ট্রোর ছবির পাশে লেখা রয়েছে-
তিনি অসম্ভবের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, এবং বিজয় অর্জন করেছেন

তারিখ: ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬
[মূলত, জানতে চাওয়াকে আরো ভালোভাবে আত্মস্থকরণের জন্যই  আমার লেখাসমূহের অবতারণা।  ক্যাস্ট্রোকে নিয়ে অনেকেই লিখেছেন। লেখায় হয়তো তথ্য দেয়া হয়েছে, অথবা কোথাও আবেগের আতিশয্যের কারণের তার বিপ্লবী জীবনের বস্তুগত ভিত্তিকে ভালভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। অথবা তাঁকে যারা শত্রুশিবিরের অন্তর্ভূক্ত করেছেন তারা তাঁকে অতিমাত্রায় চিত্রিত করেছেন,  এবং যারা তাঁকে ভালবেসেছেন তারা তাঁকে নিয়ে স্তুতি রচনা করেছেন। কিন্তু আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, তাঁকে আরো নানাভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার, কেননা, তিনি বিশ্ববাসীর এমন এক সম্পদ, তিনি এমন এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব যাকে নিয়ে আমরা যে কেউই আলোচনা করি না কেন, আমরা তাঁর কাছ থেকে গুণাবলীসমূহ বা যোগ্যতা বা দক্ষতাসমূহ শিখতে চেষ্টা করতে পারব অবশ্যই। এবং তাঁকে নিয়ে এই পর্যালোচনা আমাদের সবার জন্য, রাজনীতিবিদদের জন্য, সমাজ নেতৃত্বের জন্য, সংস্কৃতিমনাদের জন্য, পরিবর্তনের আকাংখা লালনকারীদের জন্য অব্শ্যই শিক্ষণীয় ফলপ্রসূ কিছু এনে দেবে বলেই প্রতীয়মান। সুতরাং তাকে নিয়ে  এই লেখা হলো সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে।  লেখায় দুর্বলতা থাকুক, কিন্তু তা থেকে আমরা নিজেকে বা নিজেদের কিছুটা তুলনাত্মক বিচার করতে পারব এই প্রত্যাশা রইল। ধন্যবাদ]

নতুন কিউবা গঠনের কারিগর ক্যাস্ট্রো
পুঁজিবাদের মোড়ল আমেরিকা বা ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা’র মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে জন্ম নিয়েছিল একটি কম্যুনিস্ট রাষ্ট্রের। ৪৪২১৮ বর্গমাইল আয়তনের সেই নতুন রাষ্ট্রের জন্মকালীন ধাত্রীর ভুমিকা যিনি নিয়েছিলেন তিনি হলেন ফিডেল ক্যাস্ট্রো। একনামে নিশ্চয়ই আমরা তাকে সবাই চিনি! ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট তিনি জন্মেছিলেন। এবং প্রায় নব্বই নছর ধরে এই ধরামর্ত্যে জীবন কাটিয়ে তিনি চলে গেলেন গত ২৫ নভেম্বর, ২০১৬ ইং কিউবা’র স্থানীয় সময় রাত ১০.০০ টায়(বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল নয়টায়)।
ফিডেল ক্যাস্ট্রোর পোশাকী নাম ফিডেল আলেসান্দ্রো ক্যাস্ট্রো রুজ। পিতার নাম এনজেল ক্যাস্ট্রো, যাঁর মূল শেকড় ছিল স্পেনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় গ্যালিসিয়া নামক এলাকায়। যেভাবে অন্য অনেকেই এসেছিল সেভাবে ঠিক তিনিও এসেছিলেন কিউবায় কোন অনির্দিষ্ট এক কারণে। এরপর তিনি বাগান মালিক হয়ে নব্য ধনী হয়ে উঠেন। তারপর তিনি লিনা রুজ গনজালেজ নামে এক নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। এবং এই নারীর গর্ভে  জন্ম নেয়া সাত সন্তানের মধ্যে একজন হিসেবে এনজেল ক্যাস্ট্রোর ঔরসে জন্ম নেন ফিডেল ক্যাস্ট্রো। জন্মস্থান কিউবার পূর্বাঞ্চলীয় ওরিয়েন্ট প্রভিন্সের বিরান নামক এলাকা।
ছয় বছর বয়সে ফিডেল ক্যাস্ট্রোকে কিউবার শান্তিয়েগোতে লেখাপড়া শিখতে পাঠানো হয়। এরপর হাভানার একটি কলেজে তিনি ১৯৪৫ সালের দিকে ভর্তি হন। এসময় তিনি লেখাপড়ার দিকে মনোযোগ দেয়ার চেয়ে খেলাধুলায় সময় কাটানোর দিকে বেশি সময় দেন। এরপর হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে তিনি রাজনীতিতে দীক্ষা নিতে থাকেন। প্রথম দিকে তিনি ছিলেন রাজনীতি সম্পর্কে অসচেতন ’অজ্ঞ’ একজন ব্যক্তি। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই ’অজ্ঞ’ ব্যক্তি পুরো বিশ্বের রাজনীতিতে জীবনের শেষ পর্যন্তও এবং মরণের পরেও আরো অনেক বছর বা কাল ধরে নিশ্চয়ই জ্ঞানকান্ডসহ বাস্তব রাজনীতির দিকনির্দেশক হিসেবে থাকবেন এটা ধরেই নেয়া যায়!
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ’সততা-শিষ্টতা ও ন্যায়পরায়নতা’ এই শ্লোগানকে ভিত্তি করে ছাত্র সংসদ নির্বাচেনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং পরাজয় বরণ করেছিলেন।  তিনি সান্তিয়াগোর  একটি মিশনারী স্কুলে লেখাপড়া করেন। স্কুলে থাকার সময় তিনি দুর্দান্ত রকমের দুষ্টুমি করতেন।  ছাত্রাবস্থায় প্রথম জীবনে তিনি খেলোয়ার হতে চেয়েছিলেন।  ১৯৪৫ সালে তিনি যখন হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর।  লম্বায় ছয় ফুট।   বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময় তিনি একবার কিউবার আরো ৩ হাজার জনের একটি দলের সাথে যোগ দিয়ে ডোমিনিকান রিপাবলিকের স্বৈরশাসক ট্রুডিলোকে হটিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টায় অংশ নেন। কিন্তু তারা বোটে করে ডোমিনিকান রিপাবলিকে যাবার সময় কিউবার পুলিশ তাদের ধরে ফেলে।  ক্যাস্ট্রো নৌকা থেকে ঝাঁপিয়ে পরে সাঁতার কেটে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোযার টীমে নিগ্রোদের অংশগ্রহণের দাবি জানিয়ে  যে আন্দোলন হয় তাতেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। 
১৯৪৮ সালের ১২ অক্টোবর তিনি মার্থা দিয়ার বালাট নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন। তবে ১৯৫৫ সালের দিকে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়।  এরই মধ্যে তাকে কয়েকবার জেলে যেতে হয়।  ১৯৫০ সালে তিনি আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। 
১৯৫৯ সালে যখন সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বাতিস্তা সরকারকে উচ্ছেদ করতে সক্ষম হন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর।
বিপ্লবের কেন্দ্রভূমি সিয়েরা মায়েস্ট্রা পর্বতে ফিডেল ক্যাস্ট্রো


কিউবার বিপ্লবী রূপান্তরের প্রথম ধাপ
কিউবায় ১৪৯২ সালের অক্টোবর মাসে কলম্বাস তার জাহাজ নিয়ে আসেন। কিউবাকে দেখে তিনি অভিভূত হন। তিনি কিউবাকে মানুষের চোখে দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে মনোরম ভূমি বলে মন্তব্য করেন। এই কিউবায় তেল বা কয়লা নেই। তবে সম্পদ হিসেবে রয়েছে লোহ ও নিকেল। 
বিপ্লবের আগে কিউবা ছিল গরীব একটি দেশ। দেশটির কৃষি সম্পদের ৭১ ভাগ ছিল মাত্র ৭ ভাগ মানুষের দখলে। এবং পুরো দেশের চাষযোগ্য জমির অর্ধেক অংশে তখন আখ চাষ করা হত। কিউবা ছিল তখন স্প্যানিশ কলোনী। আমেরিকা তার কাছের এই স্প্যানিশ কলোনীকে একবার মাত্র ১০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে স্পেনের কাছ থেকে কেনার প্রস্তাব দেয়। তবে স্পেন সে প্রস্তাব মেনে নেয়নি। কিন্তু আমেরিকা রাষ্ট্রের শাসকরা এই কিউবাকে রাজনৈতিক বা ভৌগোলিক মাধ্যকর্ষন সূত্র অনুসারে আপেলের সাথে তুলনা করতেন। তারা মনে করতেন এই কিউবা স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকার দিকে চলে আসবে। কিন্তু দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে কিউবার বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক সরকার আমেরিকার এই দৃষ্টিভঙ্গিকে নাকচ করে দিয়েছে। বরঞ্চ এখন কিউবা মাধ্যাকর্ষণের সূত্র অনুযায়ী আমেরিকার বিপরীত মেরুতেই অবস্থান করছে! 
কিউবার জনগণ ১৮৮৬ সালে একবার স্পেনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করে। প্রায় ১০ বছর ধরে এই সংগ্রাম চলে। প্রায় ৮০ হাজার স্প্যানিশ সৈন্য নিহত হবার বিনিময়ে কিউবা স্প্যানিশ কলোনী হিসেবে থেকে যায়। ১৮৯৮ সালের দিকে কিউবা স্পেনের বিরুদ্ধে যখন লড়াই করছিল তখন আমেরিকা কিউবাকে নিউটনের মাধ্যাকর্ষসূত্রের ’আপেল’ হিসেবে বিবেচনা করে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। আমেরিকার কংগ্রেস ১৯ এপ্রিল এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, স্পেনকে কিউবা থেকে তার সামরিক উপস্থিতি সরিয়ে নিতে হবে। কিউবাকে স্বাধীন দেশ হিসেবে এতে বিবেচনা করা হয়। এবং স্পেনকে সামরিকভাবে মোকাবেলা করা হবে বলে কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৯৮ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে এক চুক্তির মাধ্যমে কিউবাকে স্বাধীনতা প্রদানের কথা বলা হয়। ১৮৯৯ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ স্প্যানিশ সৈন্য কিউবা থেকে চলে যায়। কিন্তু সাথে সাথে আমেরিকার সৈন্যবাহিনীর প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। কিউবায় আমেরিকার সেনা উপস্থিতি ও প্রভাব পাকাপাকি করার জন্য আমেরিকা কিউবার সংবিধানে এক সংশোধনী বা আইন যুক্ত করে যা প্ল্যাট আ্যামেন্ডমেন্ট নামে পরিচিত। ১৮৯৯ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত আমেরিকা কিউবায় রাজনৈতিক  ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে কিউবাকে নিয়ন্ত্রণ করতো। আমেরিকার ব্যবসায়ীরাই তখন কিউবার অর্থনীতির প্রায় সকলকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।  ১৯৩৪ সালে কিউবায় আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত ও সমর্থিত বাতিস্তা ক্ষমতায় আরোহণ করে। ১৯৫২ সালের ১ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। কিন্তু বাতিস্তা সেই নির্বাচনের আগেই ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সেনাবাহিনীকে নিজের করায়ত্তে নিয়ে ক্ষমতা সংহত করে। 
বাতিস্তার এই ক্যুদেতার বিরুদ্ধে ২৫ বছরের যুবক ক্যাস্ট্রো আদালতে গিয়ে বাতিস্তার বিরুদ্ধে কোড অব সোশ্যাল রুলস ভঙ্গে অভিযোগ তোলেন এবং জোর দিয়ে বলেন আইন ভঙ্গের জন্য বাতিস্তাকে ১০৮ বছর সাজা দেয়া দরকার। ক্যাস্ট্রো তখন মাত্র দুই বছর হলো হাভানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের উপর ডিগ্রি নিয়েছেন। সাধারণ এক যুবক ক্যাস্ট্রোর এই আইনী যুক্তি খাটলো না। আদালত নীরবতা পালন করলো। কিন্তু এদিকে ক্যাস্ট্রো এই উপলব্ধিতে এলো যে, বিপ্লব ছাড়া এই স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি একবছর ধরে ২০০ জন পুরুষ ও সাথে আরো দুইজন নারীকে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের নিয়ে সশস্ত্রভাবে লড়াই করার প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। এবং ১৯৫৩ সালের ২৬ জুলাই তিনি শান্তিয়াগোতে অবস্থিত এক হাজার সৈন্যের মোনকাডা ঘাঁটিতে হামলা চালালেন। ক্যাস্ট্রো ধরা পড়লেন এবং আর প্রায় সবাই নিহত হলেন। বাতিস্তা সরকার এই বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সমর্থকদের উপর নির্মম নিপীড়ন চালালো। ব্যর্থ হয়ে গেল প্রথমবারে এই সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। 
ক্যাস্ট্রোকে আদালতে প্রশ্ন করা হলো, বেসামরিকভাবে আন্দোলনের পথ তিনি কেন নেননি? জবাবে খুব সোজাভাবে তিনি বললেন যে, কিউবায় এটাই সত্য যে এখানে কোন ধরণের স্বাধীনতা নেই। গত ১০ মার্চ থেকে কেউই কোন কথা বলতে পারছে না। আমি বাতিস্তা সরকারকে আদালতে দাঁড় করিয়েছিলাম। কিন্তু আদালত তা আমলে নেয়নি। 
এরপর এই অভ্যুত্থানের বিচার চলাকালীন ক্যাস্ট্রোকে আদালতে আনা হয়নি। ক্যাস্ট্রো তার একজন সহযোগীকে দিয়ে আদালতের কাছে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে তিনি আদালতে তাকে উপস্থিত থাকার এবং নিজের কাজের পক্ষে কথা বলার সুযোগ করে দিতে বলেন। তিনি এই চিঠিতে লেখেন- আমি রাষ্ট্রের পৌরুষদীপ্ত ভূমিকা আশা করছি। এছাড়া তিনি বলেন, ’আমার দিক থেকে, আমার পুরো জীবনে যদি আমাকে আমার অধিকার ও মর্যাদার এক কণাও বিসর্জন দিতে হয়, তবে আমি শত হাজার বার তা বিসর্জন দিতে সচেষ্ট থাকব।’ তিনি এরপর জোর দিয়ে এই উদ্ধৃতি প্রদান করেন- ’অন্ধকার গভীর গুহায় আটকে পড়া যৌক্তিক ন্যায়নীতি একটি সৈন্যবাহিনীর চেয়েও বেশি কিছু করতে পারে।’
”For my part, if for my life I have to cede an iota of my right or of my honor, I prefer to lose it a thousand times: "A just principle from the depth of a cave can do more than an army."
পরে অক্টোবরের দিকে তাকে ্আরেকবার কোর্টে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি কথা বলার সুযোগ পান। তিনি একনাগাড়ে ৫ ঘন্টা আলোচনার সময় তিনি বিপ্লবের সপক্ষে কথা বলেন, কথা বলেন কিউবার জনগণের পক্ষে, তারা সশস্ত্রভাবে সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে যাবার পরে সেখানে তারা প্রথমে সৈন্যদের অত্যাচারী শাসকের পক্ষ ছেড়ে আসার জন্য আহ্বান জানান, কিউবার জনগণের অর্থনৈতিক বঞ্চনা-দৈন্যদশা ইত্যাদির কথা তিনি তুলে ধরেন। তিনি তার বক্তব্যে বিপ্লবের পক্ষে কথা বলেন। এই বক্তবের এক অংশে তিনি বলেন, ’শহীদ যারা হয়েছেন তাদের কবর হলো আমাদের সময়ের সবচেয়ে নৈবেদ্য দেয়ার সবচেয়ে সুন্দর বেদী। যখন আমাদের পিতৃভূমির কোলে কেউ মারা যায়, তখন মৃত্যুর সমাপ্তি ঘটে, কারাগারের দেয়াল শেষপর্যন্ত ভেঙে যায়, এবং মৃত্যুর শেষে জীবনের শুরু হয়।’ মৃত্যুর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে তাঁর এই দৃপ্ত ঘোষনায় বোঝা যায় তিনি কারাগারের প্রকোষ্ঠে বন্দী থেকেও স্বপ্ন দেখেছেন জীবনের, সংগ্রামের, একটি বিপ্লবের। 
”For the graves of the martyrs are the most beautiful altars of our day. When one dies In the arms of a grateful fatherland Death ends, prison walls breakFinally, with death, life begins.”
তিনি কিউবার সংবিধানের ৪০ ধারার উল্লেখ করে বলেন, প্রতিরোধ করার অধিকার সংবিধানে রয়েছে। সুতরাং আমাদের এই প্রতিরোধ সংগ্রাম সংবিধান সম্মত। তিনি আদালতকে বলেন, মহামান্য আদালত সুপ্রাচীন কাল থেকেই বিদ্রোহ করার অধিকারকে যেকোন মতবাদ, আদর্শ ও বিধানে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তিনি তার বক্তব্যে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষনা, ফ্রান্সের মানুষের অধিকার শীর্ষক ঘোষনাসহ বিভিন্ন দার্শনিকের উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। তিনি এ সকল উদ্ধৃতি দিয়ে বলতে চেয়েছেন যে, যখন কোন শাসক অত্যাচারী হয়, যখন শাসক জনগণকে ন্যায়ানুগভাবে শাসন করে না, তখন অত্যাচারী শাসককে সরিয়ে দেয়ার অধিকার সাধারণ জনগণের রয়েছে। 

আদালত ক্যাস্ট্রোকে ১৫ বছরের কারাদন্ড প্রদান করে। ক্যাস্ট্রোকেআটকের দুই বছর পরে বাতিস্তা সরকার জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য এবং নিজেকে জনগণের কল্যাণের সরকার প্রমাণের জন্য আটক রাজবন্দীদের মুক্তির ব্যবস্থা নেয়।
এ সময় ক্যাস্ট্রো ও তার সহযোদ্ধাদের মুক্তি দেয়া হবে এই কথা জানাজানি হয়ে যায়। ক্যাস্ট্রোও তা জেনে যান। এ নিয়ে তিনিতার এক আইনজীবি বন্ধুকে জেল থেকে লেখেন, আমরা আমাদের মুক্তির বিনিময়ে আমাদের এক কণাও মর্যাদা ভুলুন্ঠিত হতে দেব না। বিশ মাস জেলে থাকার পরেও আমরা এখনো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, এবং সেই প্রথম দিনের মতো এখনো আমরা অবিচল। আমরা কোন অমর্যাদার খাতিরে কোন ধরণের ক্ষমা ঘোষনা গ্রহণ করতে চাই না। 
”Thus, we shall not yield one atom of our honor in exchange for our freedom.... After twenty months we are as firm and unmoved as on the first day. We do not want an amnesty at the price of dishonor.” 
তবে তারপরেও ১৯৫৫ সালের ১৫ মে ক্যাস্ট্রো ও তার সহযোদ্ধাদের মুক্তি দেয়া হয়। এদিকে এই দুই বছরে মধ্যে ক্যাস্ট্রো ও তার সহযোদ্ধাদের ২৬ জুলাই আন্দোলনের ঘটনা সারা কিউবায় কিংবদন্তীতে পরিণত হয়। কিউবায় ক্যাস্ট্রো বিপুল জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। এদিকে সে বছরের জুলাই মাসে ফিডেল ক্যাস্ট্রো মেক্সিকো চলে গেলেন। সেখানে তিনি কর্ণেল আলবার্টো বাইয়ো নামে ৬৩ বছরের এক কিউবানকে পেলেন। তিনি গেরিলা যুদ্ধসহ আফ্রিকান মুরদের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের পক্ষে যুদ্ধ করেন, স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে তিনি ফ্রাংকোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ক্যাস্ট্রো যখন তার সাথে সাক্ষাত লাভ করেন তখন তিনি মেক্সিকোতে ফার্নিচারের দোকান খুলেছেন। কর্ণেল মেক্সিকোর জঙ্গলে ৮২ জনের একটি দলকে তিন মাসের কঠোর প্রশিক্ষণ প্রদান করলেন। 
কিন্তু এরই মধ্যে ক্যাস্ট্রো একবার অস্ত্রসহ মেক্সিকান পুলিশদের হাতে ধরা পড়লেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হলো। তাকে ২৩ দিন কারাগারে থাকতে হয়। 
কর্ণেল বাইয়ো তার শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ শেষে একথা বললেন যে, যুদ্ধের নিয়ম হলো শত্রুকে নিজের বিষয়ে গোপন রাখা, ধোকা দেয়া। কিন্তু তার বিপরীতে ক্যাস্ট্রো বললেন, তিনি চান কিউবার জনগণ জানুক যে তাদের এই সশস্ত্র দলটি কিউবার জনগণের জন্য লড়তে চায়। কারণ তখনো কিউবার ২৬ জুলাই আন্দোলন সারাদেমের জনগণের সমর্থন পেয়েছে। তিনি বললেন, আমি জানি সামরিকভাবে এটা ক্ষতিকর। কিন্তু এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধও। 
ক্যাস্ট্রো তার ৮২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে গ্রানমা নামক নৌকায় উঠলেন এবং রওনা দিলেন কিউবার পশ্চিমে সান্তিয়াগোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু পথে তিনি আক্রমণের সম্মুখীন হলেন। এবং শেষ পর্যন্ত মাত্র ১২ জন সহযোদ্ধা নিয়ে তিনি সিয়েরা মায়েস্ট্রা পাহাড় ঘেরা জঙ্গলে পৌঁছলেন। তাদের প্রত্যেকের হাতে একটি রাইফেল আর সাথে ১০টি গুলি মাত্র। সঙ্গে তাদের রয়েছে মাত্র কর্ণেল বায়োর তিনমাসের সামরিক প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা। আর যা রয়েছে তা হলো ক্যাস্ট্রোর মতো এক ক্ষ্যাপাটে বিপ্লবী। যিনি এই ১২ জন মাত্র বাহিনী দিয়ে লড়াইয়ে বিজয়ী হতে চান! এদিকে ক্যাস্ট্রোর বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করতে বাতিস্তার ৩০ হাজার সৈনিক তখন সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত। তাদের হাতে রয়েছে সুসজ্জিত মেশিনগান, ট্যাংক, বিমান ও অন্যান্য সামরিক রসদ। 
কিন্তু তারপরেও ক্যাস্ট্রোর বাহিনী আস্থাশীল বিজয়ের প্রতি একমাত্র এই কারণে যে তারা একা ছিল না। পুরো কিউবায় তাদের সমর্থন ছিল । কারণ, জনগণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে ছিল। 
ক্যাস্ট্রের দলটি সিয়েরা মায়েস্ট্রা পাহাড়ে সেখানকার জনগণকে লেখাপড়া শেখানোর স্কুল গড়ে তুললেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যে তারা সেখানে  বিপ্লবী বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ৩০টি স্কুল প্রতিষ্ঠিত করলেন। সেখানে তারা কৃষি সংস্কার কার্যক্রম চালালেন। তারা সেখান থেকে কিউবা লিব্রে নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করলেন ও তা বিপুলভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করলেন। ১৮৫৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সিয়েস্ট্রা মায়েস্ট্রা থেকে জধফরড় জবনবষফব বা বিপ্লবের রেডিও তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম চালালো। পত্রিকার প্রচারণ, রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচার ও নানামুখী জনসচেতনামূলক কাজের কারণে ক্যাস্ট্রোর দল জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত পেলো। জনগণ বাতিস্তার প্রচার প্রোপাগান্ডায় বিশ্বাস না রেখে ক্যাস্ট্রোর বাহিনীর প্রচার প্রোপাগান্ডার উপর নির্ভরশীল হতে লাগল। 
১৯৫৮ সালের ১২ মার্চ ক্যাস্ট্রোর বাহিনী২৬ জুলাই আন্দোলনের পক্ষ থেকে জনগণের উদ্দেশ্যে একটি ম্যানিফেস্টো প্রচার করলেন। এতে সুনির্দিষ্টভাবে কর্মসূচি ঘোষনা করলেন এবং বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে সবদিক থেকে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন। ম্যানিফেস্টোতে সরকারকে সে বছরের এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে ট্যাক্স না দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া বলা হয়, শীঘ্রই তারা সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেবেন। বাতিস্তার বাহিনীকে আগামী সে বছরের ৫ এপ্রিলের মধ্যে বাতিস্তার মত অত্যাচারীকে ত্যাগ করে তাদের বাহিনীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। আরো বলা হয়, রাউল ক্যাস্ট্রোর নেতৃত্বে উত্তরে ওরিয়েন্টে প্রদেশে এবং মেজর জুয়ান আলমাইডের নেতৃত্বে পূর্বের দিকে সিয়েরা মায়েস্ট্রা থেকে বিপ্লবী বাহিনী লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, ক্যাস্ট্রোর বাহিনী এবার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। 
এবং বাতিস্তাও এই বাহিনীকে দমনে অগ্রসর হলো। মাত্র ৩০০ জনের গেরিলা দলকে দমন করতে ১২ হাজার সেনা জড়ো করা হলো। ক্যাস্ট্রোর ’মনস্তাত্ত্বিক’ যুদ্ধ চললো। ক্যাস্ট্রো তার বাহিনীকে দিয়ে কারোর উপর নিপীড়ন যেন চালানো না হয় তার কড়া ব্যবস্থা নিলেন। এছাড়া শত্রুপক্ষের সৈন্যবাহিনীর সদস্য যারা তাদের কাছে বন্দী হতো তাদের বিপ্লবে দীক্ষা দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হতো। এতে বাতিস্তার বাহিনীর মধ্যে সৈন্যদের মনোবল ভেঙে যেতে লাগল। 
১৯৫৮ সালের ডিসেম্বরে ক্রিস্টমাসের সময় ক্যাস্ট্রোর গেরিলা বাহিনি ওরিয়েন্টের শহর দখল করে নিল। সান্তিয়াগো দখলের কাছাকাছি চলে আসরো। গুয়ান্তামো দখলে চলে আসল। ১৯৫৯ সালের ২ জানুয়ারি সকালের দিকে ক্যাস্ট্রোর বাহিনী মোনকাডা দুর্গ দখল করতে সক্ষম হল এবং এর মাধ্যমে বাতিস্তার পতন হলো। 
 শুরু হলো কিউবা ও তার জনগণকে রূপান্তরের বিপ্লবী পদযাত্রা। 
১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিপ্লবের জয়লাভের পরে ক্যাস্ট্রোর নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী সরকার বৃহৎ পুঁজি জাতীয়করণসহ সমাজতান্ত্রিক গঠনকাজে হাতে হাত দেয়। কিউবা এই নবযাত্রায় প্রতিবেশী সাম্রাজ্যবাদী দেশ আমেরিকার বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। আমেরিকা অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করে। ১৯৬২ সালে জন এফ কেনেডি প্রথম সরকারীভাবে এই অবরোধের ঘোষনা দেন। এবং আজ ৬০ বছর অতিক্রান্ত হবার সময়েও সেই অবরোধ এখনো তুলে নেয়নি আমেরিকা।

ফিডেল ক্যাস্ট্রোর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণ
১৯৬৩ সালে ৩৬ বছর বয়সে ফিডেল ক্যাস্ট্রো সোভিয়েত ইউনিয়নে যান। সে বছরের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে তিনি সোভিয়েতে পৌঁছেন। তার সোভিয়েত যাত্রা খুব গোপনে সংঘটিত হয়। তিনি সোভিয়েতের মুরমানস্ক নামক শহরের উত্তর প্রান্ত থেকে তার সোভিয়েত যাত্রা শুরু করেন। এই শহরের পাশে সেভেরোদভিনস্ক নামক এলাকায় ছিল সোভিয়েতের সাবমেরিন ঘাঁটি। সেখানে তিনিই ছিলেন প্রথম বিদেশী যাকে মিসাইল সিস্টেম দেখানো হয়। 
মস্কোতে তিনি নিকিতা ক্রুশ্চেভের সাথে সাক্ষাত করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে সেখানে ছিলেন। তবে একবার তিনি রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ও নিরাপত্তা ফাঁকি দিয়ে সারারাত একা একা মস্কো ঘুরে বেড়ান। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে চেয়েছিলেন। 
একবার তিনি সাইবেরিয়ায় ভ্রমণের সময় সে এলাকার একটি ট্রেন স্টেশনে করাতিদের সাথে সাক্ষাত করেন। তাদের সাথে তিনি হঠাৎ দেখা করেন। তীব্র শীতের মধ্যে তিনি ট্রেনের কামরা থেকে একটি পাতলা গেঞ্জি গায়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। করাতি শ্রমিকরা তখন তৎক্ষণাৎ তাকে গরম কাপড় পরিয়ে দেয়। ক্যাস্ট্রো তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তার ট্রাউজারের পকেটে থাকা তিনটি মাত্র সিগারেট তাদের দিতে সক্ষম হলেন। তিনটি সিগারেট পাওয়ার পরে শ্রমিকরা সিগারেটগুলো দিয়ে যা করলেন তা তাকে অবাক করে দিয়েছিল। শ্রমিকরা ক্যাস্ট্রোর কাছ থেকে সিগারেট তিনটি পাওয়ার পরে সেই সিগারেট কেউ একজন না নিয়ে তারা সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে প্রত্যেকে একবার মাত্র সিগারেটে টান দিয়ে সবাই যেন সিগারেটে একবার হলেও টান দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করলেন। ক্যাস্ট্রো সোভিয়েত শ্রমিকদের সমানভাবে এই ভাগ করে খাওয়া দেখে অভিভূত হন। পরে তিনি লেখেন- পশ্চিমে কেউই এমন আচরণ করেনি। যেই ব্যক্তি সিগারেট পেতো সে-ই তা পকেটস্থ করত। এখন আমি বুঝতে পারি রাশিয়ার জনগণের শক্তির উৎস কোথায় রয়েছে। 

“In the West, no one would have behaved that way. A person who got the cigars first would have pocketed them. Now I understand the strength behind the Russian people,” 
একবার লেনিনগ্রাদ(বর্তমান নাম সেন্ট পিটার্সবুর্গ) এ ক্যাস্ট্রো একটি মিটিঙে যোগ দেয়ার সময় একটি ছোট্ট মেয়ের কাছ থেকে ফুলের তোড়া পান। ক্যাস্ট্রো সেই ছোট্ট মেয়ের নামধাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করেন। এবং পরে তিনি সোভিয়েত কর্তৃপক্ষকে সেই মেয়েটির সাথে দেখা করিয়ে দিতে বলেন। প্রথমে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ ছোট্ট মেয়েটির সাথে দেখা করিয়ে দেয়নি। তবে পরে বার বার পীড়াপীড়ি করার কারণে তারা রাজি হয়। ছোট্ট মেয়েটি ছিল একটি অনাথ আশ্রমের ছাত্রী। কিন্তু সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ তাকে আরেকটি ভাল স্কুলে নিয়ে যায়। এবং ক্যাস্ট্রোকে সেখানে নিয়ে মেয়েটির সাথে দেখা করার সুযোগ করে দেয়। ক্যাস্ট্রো মেয়েটির সাথে কথা বলেন এবং কথাসূত্রে ছোট্ট মেয়েটিকে তার ’স্কুল’ ঘুরিয়ে দেখাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু জবাবে মেয়েটি তাকে বলে যে, সে নিজেও স্কুলের কোথায় কী আছে জানে না, কারণ সে মাত্র দুইদিন হল সেই স্কুলে এসেছে। তাকে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ সেখানে এনেছিল। 
এই ঘটনা ঘটার পরে ক্যাস্ট্রো ভীষণ বিরক্তবোধ করেন। তিনি কর্তৃপক্ষের ’চটকদারিতা’র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আপনারা আমাকে আকৃষ্ট করতে অনেক কিছু করতে পারেন। কিন্তু আমার তার প্রয়োজন নেই। 
সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক সিস্টেমে তখন আমলাতান্ত্রিকতা নিয়ন্ত্রণ এসে গেছে তা ক্যাস্ট্রোর এই অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারা যায়। এবং ক্যাস্ট্রো পরবর্তিতে নিশ্চয়ই সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকার সময় প্রাপ্ত এই অভিজ্ঞতাকে তার দেশের বিপ্লবী রূপান্তরের ক্ষেত্রে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়েছেন বলে ধরে নেয়া যায়। 

আমরা সৈন্য পাঠাই না, আমরা ডাক্তার পাঠাই
২০০৯ সালে হাইতিতে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। এতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। কিউবা তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে ডাক্তার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠায়। এ বিষয়ে ক্যাস্ট্রো লিখেন- আমাদের দেশ পূর্ণ মনোযোগে মানবিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে। যা আমাদের দ্বারা করা সম্ভব, আমরা আমাদের মানবিক ও বস্তুগত সহায়তা অব্যাহত রাখবো। আমাদের জনগণের ইচ্ছাশক্তি আরো দৃঢ়তা পাবে এবং তা আগামীতে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে কারণ আমাদের জনগণ তাদের ডাক্তার ও কর্মীদের নিয়ে গর্ববোধ করে, যারা তাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ দেখাতে কার্পণ্য করে না। 
তাঁর লেখার শেষে তিনি জোর দিয়ে বলেন- আমরা ডাক্তার পাঠাই, সৈন্য নয়। 
Our country is accomplishing a strictly humanitarian mission.  To the extent that it is possible, it will contribute the human and material resources at its disposal.  The will of our people, who take pride in their medical doctors and workers who cooperate to provide vital services, is strong and will rise to the occasion.
কিউবায় ১৯৬০ সালের জানুয়ারি মাসে ৭২৩ নাম্বার নামক একটি আইন জারি করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা গ্রামাঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এই আইনে কোন ডাক্তারকে অবশ্যই এক বছরের জন্য কোন গ্রামে ডাক্তারীর কাজ করার বাধ্যবাধকতা প্রদান করা হয়।প্রথম ধাপে ৩৫৭ জন ডাক্তার স্বেচ্ছায় এমন গ্রামাঞ্চলে চলে যান যেখানে আগে কোন ডাক্তারই যায়নি। এছাড়া ডাক্তারকে অবশ্যই হাসপাতালে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করার বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করা হয়।  
কিউবা সরকার এটা বুঝেছিল যে, শুধুমাত্র আইন জারি করে বিপ্লবী পরিবর্তন সম্ভব নয়। এজন্য দরকার নানা ধরণের কার্যক্রমের ও উৎসাহ প্রদানমূলক ক্যাম্পেইনের। 
তারা ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে ১৬ দফা লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা চালায়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল- শিশু মৃত্যু কমানো, বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন প্রদান, গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সংক্রামক এবং ছোঁয়াছে রোগের প্রতিকার, প্রতিরোধমূলক ঔষধ ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা। এই সকল লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করা হয় এবং ডাক্তারদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়। 
The consciousness of the 3,000 who stayed became the “material force” in the production of Cuban health care, as much a material force as the manufacture of pharmaceuticals or the construction of hospitals. 
বিগত ৬০ বছরে কিউবা বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬০ হাজার চিকিৎসক প্রেরণ করেছে। এসকল চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশের কোন না কোন জনগণ পেয়েছেন। 

কিউবার শিক্ষাব্যবস্থা
কিউবায় যখন বাতিস্তা সরকার ছিল তখন দেশের অধিকাংশ লোকজন ছিল নিরক্ষর। ক্যাস্ট্রো ক্ষমতা দখল করার পরেই হ্যাঁ, আমি পারি এই শ্লোগানকে ব্যবহার করে দেশব্যাপী স্বাক্ষরতা এবং একইসাথে শিক্ষিতের হার বাড়াতে উদ্যোগ নেন। লোকজনকে বিভিন্ন ব্রিগেডে সংগঠিত করে দেশব্যাপী এই শিক্ষাদান কার্যক্রম চলে। তারা হারিকেন হাতে এবং বই নিয়ে এই কার্যক্রম চালায়। ১৯৬১ সালের মধ্যে দেশে স্বাক্ষরতার হার ৯৮/৯৯ শতাংশে পৌঁছে যায়। কিউবায় শিক্ষা প্রদানের ধরণ ছিল একইসাথে পড়া, লেখা ও সুর করে কবিতার ঢঙে পাঠদানের ব্যবস্থা করা। 
স্কুলগুলো সকালে খোলে। ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যাবার পরে তাদের সেখানে নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তাদের পাঠদান পর্ব শুরু হয়। দুপুরে আবার তাদের দুপুরের খাবার দেয়া হয় এবং আরো কয়েকঘন্টা পাঠদান করা হয়। শিশুরা দুপুর থেকে বিকালে স্কুলে নিজেদের মনমত খেলাধুলা বা খেলনা দিয়ে খেলা খেলে সময় কাটায়। যেসকল শিশু স্কুলে যেতে পারে না তাদের জন্য ভ্রাম্যমাণ শিক্ষকেরও ব্যবস্থা করা হয়, যারা ঘরে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া শেখায়। প্রাইমারী শিক্ষার কারিকুলামে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য নাচ, তাদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলা, বাগান করা, কাঠে বা লোহায় খোদাই করা, বা সূচিকর্ম বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের শিক্ষা দেয়া ইত্যাদি। এছাড়া তাদের বিপ্লবী সংগ্রামের ইতিহাস পড়ানো হয়। 
কিউবায় শিক্ষকগণকে এমনভাবে নির্বাচন করা হয় যেন তারা তাদের পেশার প্রতি অনুগত ও দায়বদ্ধ থাকেন। এক্ষেত্রে তারা কঠোর মান বজায় রাখেন। 
বিপ্লবের প্রথমেই কিউবা উচ্চশিক্ষার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত কার উদ্যোগ নেয়। হাজার শিক্ষার্থীকে রাজধানী হাভানায় নিঃখরচায় বসবাসের সুযোগ করে দেয়া হয়। এজন্য বহুতলা বিল্ডিঙগুলো ব্যবহার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে ইউনিভার্সালাইজড করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়।(“Universalization of the University.”)


কিউবায় প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সরকারী খরচে পড়ানো হয়। তবে একটি শর্ত থাকে তা হল লেখাপড়া শেখার পরে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই তার নিজের জায়গায় গ্রামে যেতে হবে। 

বিকল্প মিডিয়া প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
বিশ্বের বৃহৎ তথ্যমাধ্যম মিডিয়ার শতাংশই আমেরিকা ও ইউরোপ নিয়ন্ত্রণ করে। বলতে গেলে এই সকল সাম্রাজ্যবাদপন্থী মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা কৌশল দ্বারা বিশ্বের সকলেই নিয়নিন্ত্রত হয়ে থাকে। মিডিয়া আমাদের মাথায় যা ঢুকাতে চায় বা তার আমাদেরকে যেভাবে আবেগাক্রান্ত করতে চায় বা যেভাবে তারা আমাদের মানসিকতাকে গড়ে তুলতে চায় সেই সকল আমেরিকা-ইউরোপ নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া আমাদেরকে সেভাবেই তথ্য দিয়ে থাকে। এবং আমরা অবচেতন এবং অসচেতনভাবেই এই বৃহৎ সাংস্কৃতিক আধিপত্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হই। ক্যাস্ট্রো কিউবায় সাংবাদিকদের সাথে এক বৈঠকে প্রথম লাতিন আমেরিকার প্রেক্ষিতে বিকল্প মিডিয়া তৈরী করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী লাতিন আমেরিকার সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর আর্থিক সহায়তায় ২০০৫ সালের ২৪ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় ২৪ ঘন্টার স্প্যানশ ভাষার নিউজ চ্যানেল দক্ষিণের টেলিভিশন বা টেলিভিসোরো দেল সুর সংক্ষেপে টেলিসুর। এই টেলিভিশন লাতিন আমেরিকায় প্রতিরোধের চ্যানেল হিসেবে পরিচিতি পায়। 
কিউবার রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম গ্রানমাতে এ বিষয়ে এক মন্তব্যে বলা হয়- আমরা এখন থেকে আমাদের কন্ঠস্বরে আমাদের কথা শুনতে চাই। 

বিপ্লবী পার্টির করণীয় বিষয়ে ক্যাস্ট্রো
একটি বিপ্লবী পার্টিকে অবশ্যই তার ক্যাডার বা কর্মীদের শিক্ষাদানে দক্ষতা দেখাতে হবে। পরিমিতিবোধের সাথে কঠোর শৃংখলা ছাড়া এর কোন সহজ সমাধান নেই। আসুন আমরা আমাদেরকে তাদের থেকে রক্ষা করি বিশেষ করে যারা জনগণের নীতিবোধ এবং তাদের স্বপ্নকে ময়লা পানির মত ড্রেনে ফেলে দেয়। 
The education of the cadres will be the most important task to be mastered by the revolutionary parties. There will never be easy solutions; strictness and exigency must prevail. Let’s guard ourselves especially from those that throw down the drain the people’s principles and dreams together with the dirty water.
এছাড়া তিনি বলেন, পার্টি সদস্যকে অবশ্যই জটিল সমস্যা সমাধানে দক্ষ হতে হবে। যারা পার্টিতে রাজনৈতিক শিক্ষা প্রদান করবেন তাদের অবশ্যই ইতিহাস ও অর্থনীতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আমাদের সমাজে সবার দক্ষতা উন্নীতকরণ খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। 
শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য শারীরিক পরিশ্রম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হোসে মার্তির আদর্শও ছিল কাজ করা ও শিক্ষা অর্জন করা। 
আত্মমর্যাদাবোধ ও মূল্যবোধ গঠন ছাড়া আমাদের বিরুদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না, এবং কিউবা সবসময় এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে তাদের নীতিপন্থার অন্তর্ভূক্ত করেছিল। আমাদের দেশ মিথ্যাচার ও অপবাদের দ্বারা হয়রানীর বিরুদ্ধে এই বৈশিষ্ট্য অর্জন করে লড়াই করেছিল। মূল্যবোধের পাশাপাশি উন্নত সংস্কৃতি ও আত্মসচেতনাবোধ বিগত ৫০ বছরের প্রতিরোধকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছিল। এবং এটি নেতা বা নেতাদের কোন বিশেষ বুদ্ধিবিবেচনামূলক গুণ ছিল না বরং, এটি ছিল মৌলিকভাবে দেশের জনগণের সবার।|
(This resistance would never have been possible without the dignity and ethics that have always characterized the policies of Cuba, a country harassed with revolting lies and slanders. Alongside ethics, a culture and conscience were built that made possible the feat of more than five decades of resistance. This was not a particular merit of its leaders but basically of its people. )
২০১২ সালে এক লেখায় তিনি বলেন, আমরা যা করেছি তার জন্য অমরা কখনোইা দুঃখপ্রকাশ করবো না। এটাই সত্য যে, পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে যাবার পরেও আমাদের মাথা এখনো আমরা উঁচুতে রাখতে পেরেছি। 
”We will never apologize to anyone for what we did. The fact is that half a century has gone by, and here we still are with our heads held high.”
ক্যাস্ট্রো কিউবার কম্যুনিস্ট পার্টির সপ্তম কংগ্রেসে বললেন, শীঘ্রই আমিও অন্য সবার মতো হতে যাচ্ছি। আমাদের সবার জন্যই সেই (জীবনাবসানের) সময় ঘনিয়ে আসবে, কিন্তু কিউবার কম্যুনিজমের ধারণা উতরে যাবে আজীবন! 
লাতিন আমেরিকার ভূমিহীন কৃষকদের আন্দোলনে সক্রিয় এক নেতা ফিডেল ক্যাস্ট্রোর মৃত্যুর পরে লিখিত এক স্মারক বক্তব্যে বলেছেন-
তিনি সার্বক্ষণিকভাবে এবং প্রতিটি ক্ষণে তার জনগণের সাথে, যেকোন প্রতিকূলতায়, যুদ্ধে, উৎপাদন ও জ্ঞান সম্পর্কিত সাংগঠনিক কাজেকর্মে পাশাপাশি থেকেছেন। তিনি চেষ্টার কোন ত্রুটিই রাখেননি এবং উৎসর্গীকৃত এক দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন। 
( He was always with his people, every moment, on the front line, in all difficult situations: in war, in the organization of production and knowledge.  He spared no efforts and set an example of the spirit of sacrifice.)
ক্যাস্ট্রো তার ৯০ বছরের পুরো জীবনের মধ্যে ৭০ বছর কাটিয়েছেন রাজনৈতিক কাজে জড়িত থেকে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি পৃথিবীর জনগণের সত্যিকারের মুক্তির সুমহান কাজের প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। একটু ক্ষণের জন্যও তিনি নিশ্চয়ই তা থেকে বিচ্যুত হননি। 
তিনি কিউবা ও তার জনগণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের চেতনাকে শানিত করেছেন। এবং একই সাথে তিনি ছিলেন বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বা নিপীড়িত মানুষের আদর্শিক এক নেতা। তাকে যখন আদালতে দাঁড় করানো হয় এবং নানা প্রশ্ন তাকে করা হয় তখন তিনি তার সহযোদ্ধা এক কমরেডকে স্মরণ করে বলেছিলেন যে, সেই ব্যক্তি মারা গেছে তাতে তেমন বিশেষ কিছু হয়নি! ব্যক্তি মারা যায় কিন্তু তার আদর্শ তো রয়ে যায়। 
 তাঁর মৃত্যুর পরে নিশ্চয়ই তিনি সেই আদর্শের বিপ্লবী পতাকা উঁচুতে তুলে ধরবেন! 

বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
“Hasta la Victoria Siempre!”


তথ্যসূত্রঃ 

12.   Cuba-Anatomy of A Revolution, Leo Huberman, Paul M. Sweezy, Monthly Review Press, New York 1960.
১৩. প্রতিরোধ প্রতিস্রোত লাতিন আমেরিকা, শান্তনু দে, ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড, জানুয়ারি, ২০০৯। 








Thursday, November 17, 2016

মিঠুন চাকমাকে গ্রেপ্তারের খবরে ’শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তকমা ব্যবহারের প্রতিবাদ


তারিখ: ১৮ নভেম্বর, ২০১৬
আমার গ্রেপ্তারের খবরের শিরোনামে ’শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তকমা ব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গত ১১ জুলাই, ২০১৬ ইং আমাকে গ্রেপ্তারের পরে আপনার ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া/ওয়েবসাইট/গণমাধ্যমে উক্ত খবরটি প্রকাশিত হয়। ্
প্রতিবাদ পত্র

আমি মিঠুন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)এর সাবেক সভাপতি, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)এর সংগঠক। গত ১১ জুলাই মধ্যরাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত নিজ বাড়ি থেকে আমাকে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার করার পরে আমাকে অন্যান্য রাজনৈতিক মামলার পাশাপাশি বহুলভাবে সমালোচিত তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ নং ধারার ২ নং উপধারা’র ভিত্তিতে আরেকটি মামলা প্রদান করা হয়। মূলত, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের জন্য ব্লগ ও সামাজিক গণমাধ্যমে সরব যুক্তিমূলক উপস্থিতির কারণে আমার বিরুদ্ধে উক্ত হয়রানীমূলক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা প্রদান করা হয়। দীর্ঘ ৯৮ দিন কারাগারে দিনযাপনের পরে বিজ্ঞ আদালত গত ১৮ অক্টোবর, ২০১৬ ইং আমাকে মুক্তি প্রদান করে। মুক্তির কিছুদিন পরে আমি ওয়েবসাইট-ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় আমার গ্রেপ্তারের খবরগুলো পড়ার সময় দেখতে পাই আমার গ্রেপ্তারের খবরের শিরোনামে ’শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তকমা ব্যবহার করে খবরসমূহ প্রচার করা হয়েছে। এই ধরণের মিথ্যাচারমূলক শিরোনামা ব্যবহার করার তীব্র প্রতিবাদ আমি জানাচ্ছি। এটা একজন ব্যক্তির পরিচিতিকে সচেতনভাবে ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে এবং রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে হেয়মূলক ও অবমাননকরভাবে উপস্থাপনেরই শামিল।
আমার নামের সাথে ’শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তকমা ব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদের সাথে সাথে আমি আপনার প্রতি অনুরোধ করছি আপনার তথ্যমাধ্যম/ওয়েবসাইট/ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া থেকে এই খবরটি ও তার শিরোনাম থেকে উক্ত শব্দবন্ধ যেন প্রত্যাহার করা হয়।
এখানে বলা প্রয়োজন যে, আমি ইউপিডিএফএর একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার নামে বেশ কয়েকবছর ধরে হয়রানীমূলক মামলা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া আমার নামে রাজনৈতিক কারণে ’মারামারি-ইটপাটকেল নিক্ষেপ-পুলিশের কাজে বাধাদান-প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ বয়কট’ ইত্যাদি ’অপরাধ সংঘটনের’ অভিযোগ মাত্র রয়েছে। প্রমাণাদি ব্যতীত শুধুমাত্র এই কতিপয় ’অপরাধ সংঘটনের’ ’অভিযোগ’, যা এখন আদালতে বিচারাধীন, তার ভিত্তিতে একজন রাজনৈতিক কর্মীর নামে ’শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তকমা ব্যবহার করার কোন যুক্তিই থাকতে পারে না। এই ধরণের তকমা ব্যবহার একদিকে যেমন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত নীতিহীন প্রচারণার শামিল অন্যদিকে তা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ভিত্তিতে মিথ্যা ও অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়। 
 আমি আশা করছি আমার এই প্রতিবাদলিপি আপনার গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। আন্তরিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ। 

মিঠুন চাকমা
সদস্য
ইউপিডিএফ

Monday, February 15, 2016

সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার ইউপিডিএফনামা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা

অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন দীর্ঘ সাত বছর পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেছেন এবং তিনি ভ্রমণের পরে যা দেখেছেন বা পার্বত্য সমস্যা নিয়ে তিনি যা মনে করেন তা নিয়ে তিনি স্বনামধন্য দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি ছোটো আকারের প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রবন্ধটি প্রথম আলো পত্রিকার ০৯ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় মতামত বিভাগ বা উপসম্পাদকীয় কলামে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রবন্ধটিতে তিনি তার ভ্রমণ বৃত্তান্ত বর্ণনা করেননি। তবে বলা যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা নিয়েই তিনি আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন এবং নিজস্ব একটি সিদ্ধান্ত বা সমস্যা সমাধানমূলক সারসংক্ষেপ টানতে চেষ্টা করেছেন। তিনি মূলত ১৯৯৭ সালের ০২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপটের সাথে বর্তমান প্রেক্ষাপটের কিছুটা তুলনা করে তার মতামত প্রদান করেছেন। তার লেখা থেকেই আমি কিছু উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
খাগড়াছড়ি জেলা থেকে রাঙামাটি হয়ে কাপ্তাই উপজেলার বাঙালহালিয়া ভেদ করে যে রাস্তা রাঙামাটিতে গিয়েছে তার বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করে তিনি লিখেছেন-
রাস্তাটির নির্মাণকাজ নব্বইয়ের দশকে শেষ হয়েছিল, কিন্তু তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সেটা খুব ব্যবহার করা হতো না। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে যায়। ফলে এখন এ রাস্তা কার্যকর বলে বিবেচিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার সর্বসাধারণের এখন চট্টগ্রাম ঘুরে নয়, সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে।
অর্থাৎ, পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের একটি আপাত শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং সে এলাকায় অর্থনৈতিক বা যেকোন প্রকারের উন্নয় বলি না কেন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি লিখেছেন-
১৯৯০-৯২-এ কর্তব্যরত ছিলাম বান্দরবান সেনা রিজিয়নে, কমান্ডার হিসেবে। ওই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান চলছিল। পার্বত্য চুক্তি অন্তত সে পরিস্থিতির ইতি টেনেছে।
তিনি লিখেছেন-
যোগাযোগ অবকাঠামোর সঙ্গে বাজারব্যবস্থার যেমন উন্নতি হয়েছে, তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রাম, বিশেষ করে দক্ষিণের জেলা বান্দরবানে পর্যটনের যে দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে, তা অচিন্তনীয় ছিল। নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে যে কয়েকটি জায়গা পর্যটনের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল, আজ সেসব জায়গায় প্রতিদিন শত শত লোকের পদচারণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এদের সমাগম। পর্যটনকে কেন্দ্র করে আশপাশের উপজাতীয় গ্রামগুলোতে হস্তশিল্প গড়ে উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র। এরই প্রেক্ষাপটে স্থানীয়ভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
আমাকে লেখকের বা প্রবন্ধকারের উদ্ধৃতি একটু বেশি করেই দিতে হচ্ছে তার কারণ এতে তার লেখায় তিনি যা বলেছেন বা বলতে চেয়েছেন তা বেশি মাত্রায় স্পষ্ট হবে। এছাড়া আসলে তিনি যা বলেছেন তা-ই যেহেতু আলোচনার মুখ্য বিষয় সেহেতু তার আলোচনার বিষয়বস্তু আগে পাঠকদের জানা দরকার বলেই প্রতীয়মান। সে বিষয় বাদে আমার যা বক্তব্য বা যা মত তা সাধারণভাবে বিষয়কে, মাথাটি মাটির দিকে বা মাধ্যাকর্ষনের উল্টো দিকে না রেখে তা আকাশের দিকে বা যেভাবে থাকা স্বাভাবিক সেদিকে স্থাপন করার প্রচেষ্টাটাই মূখ্যকাজ হিসেবে বিবেচিত করছি মাত্র।
যা-ই হোক, এরপর তিনি তার লেখায় পার্বত্য এলাকায় শিক্ষার উন্নয়নের একটি চিত্র উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। এই প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনার প্রাক্কালে তিনি তার প্রবন্ধের প্রধান বিষয়বস্তুকে সামনে আনার চেষ্টা করেছেন। তিনি লিখেছেন-
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নিয়ে জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের বিরোধিতা ছিল।
তবে কেন ও কী কারণে এই দুই রাজনৈতিক দল ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন নিয়ে ‘বিরোধিতা’ করেছিল তা নিয়ে তিনি আলোকপাত করেননি। সম্ভবত তাতে তার আলোচনার মোড় তিনি যেদিকে নিতে চাচ্ছেন তা ফিরে যাবে বা তার গতি অন্যদিকে যাবে বলে তিনি সে আলোচনায় যাননি!
এখানে বলা দরকার উপস্থানার মাধ্যমে তিনি দুই পার্বত্য রাজনৈতিক দলকে ‘শিক্ষার উন্নয়ন বিরোধী’ হিসেবে চিত্রিত করার সচেতন প্রয়াস না করলেও বক্তব্যের অন্তঃধ্বনি বা লুক্কায়িত থাকা বক্তব্যটি যে সেটিরই আভাস দেয় তা যারা পাঠক তারা সেভাবেই বুঝবেন বলেই বোধে আসে বলে প্রতীয়মান।
এখানে বলা দরকার যে, দুই রাজনৈতিক দল ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ নয় বরং মেডিক্যাল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করেছে। এবং এই বিরোধিতার অন্যতম কারণ হলো, পার্বত্য জুম্ম জনগণের ‘রাজনৈতিক অধিকার’কে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সরকারী যে ‘অপচেষ্টা’ তা তুলে ধরার  প্রচেষ্টা চালানো। সরকার, তা আওয়ামীলীগ বা বিএনপি বা মহাজোট বা ১৪ দলীয় জোট বা ২০ দলীয় জোট যারাই হোক না কেন, তারা যে সবসময় একই তালে পার্বত্য জুম্ম জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্রমাগত দুর্বলতর করারই চেষ্টা করে যাচ্ছে সেদিকটি নিয়ে সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে পার্বত্য জুম্ম জনগণকে ‘রাজা বাদশার হালে’ রাখলেও বা তাদের ‘সোনায় মুড়িয়ে দিলেও’ তারা যে পিঞ্জরাবদ্ধ ‘সোনার পাখি’ মাত্র তা তো বলা বাহুল্যমাত্র! সরকার একদিকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে অকার্যকর করে রেখেছে, কায়েম করেছে স্বার্থবাজ ধান্ধাবাজদের রাজত্ব। অন্যদিকে চুক্তি বাস্তবায়নের ’মেগা সিরিয়াল’ প্রদর্শন করে যাচ্ছে ক্রমাগত।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার বেহাল দশার পেছনে সরকারের জুম্ম ধ্বংসের নীতি যে কার্যকর রাখা হয়েছে তা নিয়ে আলাদাভাবে লেখা দরকার বলে মনেকরি।এখানে সে আলোচনা বাড়তি প্রসঙ্গ যোগ করবে মাত্র।
তবে এরপর ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন অন্য আলোচনার পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিকভাবে ‘ইউপিডিএফ’এর নামটি এনেছেন। এবং আমার মূল আলোচনা আমি সেখানেই নিবদ্ধ করার চেষ্টা করবো।
তিনি ইউপিডিএফ বা ইউনাটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট নিয়ে যা যা বলেছেন তা আমি তুলে ধরছি।
১. অতীতে যেমন ছিল, বর্তমানে সমগ্র দেশের তুলনায় সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। তবে ইউপিডিএফ নামে যে গোষ্ঠীটি পার্বত্য চুক্তির বিরোধী, তাদের তৎপরতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বলপূর্বক চাঁদা তোলার ঘটনা ঘটছে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনজীবন অতিষ্ঠ।
২. পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের তুলনায় যথেষ্ট স্থিতিশীল। তবে নতুন উপসর্গ ইউপিডিএফের নামে সংঘটিত সশস্ত্র তৎপরতাকে রাজনৈতিক ও স্থানীয়ভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে পরিস্থিতি অস্বস্তিকর হতে পারে।
ইউপিডিএফ সম্পর্কে তিনি এতকথা বলার পরে তার প্রবন্ধের সমাপ্তি রেখায় ‘আশার বাণী’ নিশ্চয়ই টেনেছেন! তিনি বলছেন- উসকানিমূলক বক্তব্য বা কর্মকাণ্ড নয়, সম্প্রীতি আর সৌহার্দ্যের মাধ্যমে অনেক জটিল বিষয়ের সুরাহা সম্ভব।
তবে তার এই ইউপিডিএফ নামা’র মাধ্যমে তিনি ‘সম্প্রীত ও সৌহার্দ্য’ কতটা দেখিয়েছেন এবং ‘উসকানিমূলক বক্তব্য বা কর্মকান্ড’ই বা কতটা না বলেছেন তা নিয়ে আমরা বিতর্কে যেতে পারি বটে!
ইউপিডিএফ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্য নিয়ে আলোচনার আগে আমি তার আগে করা উদ্ধৃতি বিষয়ে আগে দুয়েকটি কথা বলি। তবে বলা দরকার যে, আমার এই লেখা যেহেতু কোন প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ হবার সম্ভাবনা নেই এবং সাধারণভাবে এই ধরণের লেখা যেহেতু মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় না সেহেতু আমি সাধারণভাবে একটু রিল্যাক্স মুডে লেখা লিখে থাকি। রিল্যাক্স মুডে মানে হলো, লেখাটি এতটা ’স্ট্যান্ডার্ড’ বা মানসম্পন্ন না করলেও চলে!
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন তার লেখার প্রথমে পার্বত্য চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে গুণগান করেছেন। কিন্তু আদতেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে যদি পার্বত্য সমস্যার সমাধান হয়েছে এই সিদ্ধান্তে তিনি পৌঁছাতে চান বা তাঁর আগেও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান যেমন পার্বত্য সমস্যাকে অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তার সমাধানের উদ্যোগ নিয়েও সম্ভব করে উঠতে পারেননি, সেই একই কথার চর্বিতচর্বন করতে চান তবে তাতে আমার বা আমাদের বলার মতো তেমন থাকে না বলেই মনেহয়!
সুতরাং, এই পুরোনো কিন্তু ছাঁচে ঢালা বক্তব্যে পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের যে টিকিটিও নাগাল পাওয়া যাবে না তা তিনি জেনেশুনে যদি বলে থাকেন ভিন্ন কথা! কারণ, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি করে জেএসএসএর অস্ত্রসমর্পন করানোর শাসকশ্রেনীর মতলব বা উদ্দেশ্য ছিলই তো, জুম্ম জনতার রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের পাটাতনকে সরিয়ে নেয়া!
কিন্তু, সরকার প্রধান যখন বলেন মিলিটারির মাধ্যমে পার্বত্য সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়,  তখন পুরোনো সেই ’মিলিটারির মাধ্যমে’ দমনপীড়ন চালিয়ে এবং ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ করে বা ‘উন্নয়ন বোর্ড’ বানিয়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ’শান্তি’ স্থাপন করার দাওয়াই যখন কোনো অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা প্রদান করেন তখন আমাদের একটু অবাক বিস্মিত হতে হয় বৈকি!
এবার আসি ইউপিডিএফ প্রসঙ্গে। তিনি বলেছেন, ইউপিডিএফ বছরে ৫০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি করে থাকে। তবে কোন সূত্র থেকে তিনি একথা বলেছেন তা তিনি উল্লেখ করেননি। এবং একটি সক্রিয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন বিষয়ে একটি প্রগতিশীল দৈনিকে এধরণের সূত্র উল্লেখ বিহীন তথ্য বা ডাটা থাকলেও তাতে পত্রিকাটির ‘সম্পাদকীয় নীতিমালা’র লাভক্ষতি বা নীতির গতি পরিমাপরে ক্ষেত্রে কোনো হেরফের হয় না বা হবে না বলাই যায়! কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক চেতনাকে দমানোর নীতি যখন ‘প্রায়োরিটি’র বিষয় তখন তাতে ঘি ঢালাই তো মূলধারার গণমাধ্যমের কর্তব্য করণীয় হিসেবে নির্ধারিত!
যেকোনো প্রকারে হোক পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক চেতনাকে যখন রূদ্ধ করার বা দমন করার নীতি সামনে এসে হাজির হয় তখন কে কি করেছে বা করছে বা কোন সংগঠন কী করছে না করছে তা মুখ্য নয়, বরং, বাঘ ও হরিণের সেই গল্পটির ছড়ায় পানি পান করার মতো বাঘকে যে যুক্তিসম্পন্ন না হলেও বা ছলে না হলেও বলে বা শক্তি প্রদর্শন করে যে হরিণকে ’ভক্ষণ’ করতে হবে তা তো উদাহরণ হিসেবেই রয়েছে!
তবে আশার কথা(!) হলো, ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন ‘নতুন উপসর্গ ইউপিডিএফের নামে সংঘটিত সশস্ত্র ৎপরতাকে(বোল্ড মন্তব্য প্রদানকারী লেখকের) রাজনৈতিক ও স্থানীয়ভাবে মোকাবিলা’ করার কথা বলেছেন!
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের লেখাটি নিয়ে আলোচনা করতে হল এ কারণে যে, তিনি সাধারণভাবে একজন ’ক্লিন ইমেজের’ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে এবং একজন সজ্জ্বন ব্যক্তি হিসেবেও দেশে পরিচিত।সুতরাং তিনি যখন কোনো মন্তব্য বা মত প্রকাশ করেন তখন তার গুরুত্ব থাকা প্রয়োজন এবং দেয়া প্রয়োজন। সেনাবাহিনীতে কাজ করার কারণে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে যে চিন্তা ভাবনা করেন তা যে দেশের সেনাবাহিনীতে কর্মরত বর্তমান ও সাবেক ধিকাংশ জনের সাথে মিলে থাকবে তাও নিশ্চয় বিবেচনায় নিতে হয়। তার লেখা নিশ্চয়ই আরো অনেকে পড়েছেন এবং তাতে বর্তমান সমস্যা কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে ‘ক্লু’ যে অনেকে পাবেন তা বলা যায়। এছাড়া আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে, বর্তমান সরকার বা এর আগের ও কোনো সরকারই ‘জাতীয় নিরাপত্ত নীতি’ নিয়ে কোনো ধরণের ‘নীতিমালা’ নির্ধারণ করেনি। তাতে দেখা যায়, ব্যক্তিবিশেষের মতামত বা চিন্তাধারার প্রাধান্য সরকারের নীতিমালা ঠিক করতে অনেকসময় প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এবং এখনো পর্যন্ত ‘আধিপত্যবাদী’ ধ্যানধারণা বা দৃষ্টিকোণ থেকেই সরকারী শাসক পর্যায়ের নীতি নির্ধারক মহল পার্বত্য সমস্যা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলেই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়।
সেদিক থেকে আমরা শুধু এটাই আশা করবো যে, সরকার বা শাসকশ্রেনী এই ‘আধিপত্যবাদী ধ্যান ধারণা’ থেকে বেরিয়ে আসবে!
পাদটীকাঃ আমার লেখায় আমি ইউপিডিএফ নিয়ে আলোচনা করিনি।বরং পার্বত্য সমস্যা নিয়ে শাসক মহলের বা শাসকশ্রেনীর নানা অংশের ‘আধিপত্যবাদী’ দৃষ্টিভঙ্গি ও ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি যে রয়েছে তা নিয়ে  আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...