২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং আমার বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার ধারা হল ৩৪২/৩৮৫/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড। অভিযোগ হল চাাঁদাবাজির। এমনিতেই রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ধারাসহ মোট ১৩টি মামলা। এই মামলাগুলোর জন্য কোর্ট হাজিরা দিতে হচ্ছে মাসে ১০ থেকে ১২ দিন। অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার এই দুই ছুটির দিন বাদে প্রায় প্রত্যেকদিন আমাকে কোর্র বারান্দায় থাকতে হয়! ডিসেম্বর মাসে কোর্টে ছিলাম ৪, ৬, ৭, ৮, ১৩, ১৪, ১৯ ও ২১ ডিসেম্বর। মাসটি এখনো শেষ হয়নি। আরো কয়েকদিন কোর্ট হাজিরার ডেট রয়েছে। কিন্তু কী এক ‘শনির দশা’ বা ‘বদ নসিব’ পেয়ে বসেছে যে, আরো মামলায় জেরবার হতে হচ্ছে?? কারাগার বা জেলখানা যেন ডাকছে!!
কেন এই মামলা?
শেষ কোর্ট হাজিরা ছিল ২১ তারিখ। তার আগের দিন খাগড়াছড়িতে সাংবাদিকরা একটি মানববন্ধন করেছে। প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক নীরব চৌধূরীকে মারধর করার প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। এলাকার একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে এই ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছিল। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে মাঝে মাঝে একটি ব্যক্তিভিত্তিক নিউজ ওয়েবসাইটে লেখালেখির কারণে আমাকে কেউ কেউ ‘সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিতি দিতেও সহায়তা করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেকে ফ্রিল্যান্স সংবাদ প্রচারক হিসেবে পরিচয় দিতে রাজি থাকলেও থাকতে পারি!
সে যাই হোক, আন্তরিকতার দাবি রেখে এই প্রোগ্রামে প্রথমে দূর থেকে অংশ নিয়েছিলাম। পরে কিছুক্ষণের জন্য মানববন্ধনে দাঁড়িয়েও ছিলাম। দাঁড়িয়ে যা দেখেছি সে বিষয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে যা বলেছিলাম তা নিচে তুলে ধরছি-
আজ ২০ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির সাংবাদিকদের উদ্যোগে ফটো সাংবাদিক নীরব চৌধুরীর উপর হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা যে কর্মসূচি তাতে ছিলাম। এ বিষয়ে আমার এক বন্ধু বললো, দোস্ত, তোমাকেও সেই প্রোগ্রামে দেখলাম, ব্যাপার কী? আমি বললাম, ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে তাতে জোরজবরদস্তি ও অন্যায় রয়েছে, তাই সেখানে ছিলাম। সাংবাদিক নীরব চৌধুরী অন্যায্য কিছু করলে সে বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নেয়া যেত নিশ্চয়ই।
এছাড়া বললাম, পৌর মেয়র রফিক সাহেব যদি সাংবাদিক মেরে থাকেন তবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যা করেছেন তা তিনি সঠিক কাজ করেছেন বলে মনে হয় না। এভাবে যত্রতত্র অনাবশ্যক হ্স্তক্ষেপে তার ক্যারিয়েরই বরং ক্ষতি হবে। তিনি পৌর মেয়রের চেয়ে বড় কিছু হতে পারবেন না।
তবে প্রোগ্রামে সরাসরি থেকে যা অবাক করেছে তা হল, সাংবাদিকদদের বিপরীতে পাল্টা প্রোগ্রাম ডেকেছিল পৌর মেয়রের সমর্থকরা।
বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করার মত হলেও *রাজনৈতিক* রূপ দিয়ে মিছিল পাল্টা মিছিল একটু বেখাপ্পাই লাগে!!!
মাথায় *রাজনীতি* ঢুকলে যা হয় আরকি!!
সে যা হোক অনেকদিন পরে খাগড়াছড়ির *মাঠ* গরম দেখে এই শীত উপলভ্য বোধ হয়েছে!!!!
সাংবাদিকদের মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের একজন হিসেবে |
তারপরের দিন আরো মন্তব্য করেছিলাম -
যা বলা দরকার
সাংবাদিক নীরব চৌধুরীর উপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল ২০ ডিসেম্বর সাংবাদিকরা মানববন্ধ করেছে। উক্ত কর্মসূচিতে কেন আমি উপস্থিত ছিলাম তার কথা গতকালকে ফেবু স্ট্যাটাসে বলেছি। গতকালকের কর্মসূচি নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদন দেখার পরে আরো কিছু বলা দরকার মনে করছি।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘দিদার কসাই’এর নেতৃত্বে মেয়র রফিক গ্রুপের ৪০/৫০ জন মিছিল করেছে। উক্ত মিছিলে শ্লোগান দেয়া হয়েছে-
‘একটি-দুটি সাংবাদিক ধর, ধরে ধরে জবাই কর; সাংবাদিকদের আস্তানা-জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’।
তবে আমি বলতে চাই যে, প্রোগ্রামে সরাসরি থেকে আমি এই শ্লোগানগুলো শুনিনি। তারা যে শ্লোগানগুলো দিয়েছে তার মধ্যে আমি যেগেুলো শুনেছি সেগুলো হল-
চাঁদাবাজদের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে।
চাঁদাবাজদের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও
উন্নয়নে বাধা দিলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।
(এক সাংবাদিকের নাম ধরে শ্লোগান দেয়া হয়েছে) ... চোরের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে
এছাড়া তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল কিনা তাও খেয়াল করিনি। তবে ’কসাই’ দিদারের নেতৃত্বে যে মিছিল হয়েছে, তাদের যে অঙ্গভঙ্গি তা অবশ্যেই ‘উস্কানিমূলক’ ‘আক্রমণাত্মক’ ছিল তা বলা যেতে পারে।
প্রথম আলোর মতো একটি স্বনামধন্য/বস্তুনিষ্ঠতার দাবিদার পত্রিকায় যখন কোনকিছু লেখা হয়, তখন তা গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে নিশ্চয়ই। তাই প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনে বস্তুনিষ্ঠতা দেখাবে তার আশা, প্রথম আলোকে কেউ পছন্দ না করলেও, সকল পাঠক অন্তত কিছুটা করে থাকে।
প্রথম আলোর ভুমিকা যেন ‘অতিরঞ্জনাত্মক’ না হয় সে আশা রইল
তারপর ২৫ ডিসেম্বর আরেকটি স্ট্যাটাসে বলি-
আমার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে শোনার পর এক শুভাকাঙ্ক্ষী বললেন, মেয়র রফিকের *হাত* কতো লম্বা তুমি জানো না।
আমি শুনে স্তম্ভিত! আমার নামে মামলা হবার সাথে মেয়র রফিকের *হাত* কত লম্বা-এর সম্পর্ক কি তা বুঝলাম না!??
তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে এই *প্রেডিকশন* *মিথ্যা* হবে এমন নাও হতে পারে!!
এই কদিন খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকের সাংবাদিক *পিটানো* নিয়ে *সরব* থাকার কারনে *মামলা* যে দেয়া হয়নি তাও বা কী করে বলি!??
অথবা জেল থেকে মুক্তি পাবার পরে এখন খাগড়াছড়ি সদরে *মুক্ত মানুষের মত* ঘোরাফেরা করতে পারায় *কেউ না কেউ* *শংকিত* এই ধারণা মিথ্যা নাও হতে পারে!!
সে যাহোক,....!
২২ ডিসেম্বর যেদিনের ঘটনার জন্য চাঁদাবাজি মামলা দেয়া হয়েছে সেদিন পিসিপি খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার কাউন্সিলে আমন্ত্রিত একজন অতিথি হিসেবে আমি মিঠুন চাকমা বক্তব্য দিচ্ছি |
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিককে মারধর করার ঘটনা নিয়ে সোচ্চার থাকার জন্যই সম্ভবত আমার নামে মামলা দেয়া হয়েছে! মামলা যে দেয়া হয়েছে তা জানতে পারি ২৫ ডিসেম্বর। শুভাকাঙ্খীরা আমাকে বললো কিছুদিন বাইরে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা না করতে। কিন্তু খুব মনেকষ্টের সাথে বলতে হচ্ছে আমার এই প্রাণপ্রিয় খাগড়াছড়িতে কিছুক্ষণ আলো হাওয়া বাতাস গায়ে লাগিয়ে না আসলে কেমন যেন মন আনচান করে!
আসলে পাহাড়ের সাধারণ জীবনযাপন এবং রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক চিন্তা এতবেশি সংকীর্ণভাবে সবার মনে ‘বিরাজ করে’ যে এখানে একজন ইউপিডিএফ সদস্য যখন মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করে তখন কারো কারো যেন মাথ্যাব্যথা সৃষ্টির কারণ হয়ে থাকে!
ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে সেই বৃত্ত থেকে মুক্ত মনে করলেও যেন তা-ই আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে!!!
ইচ্ছে ছিল খাগড়াছড়ি শহরে সবার সাথে মিশে একটা নতুন কিছু করার উদ্যোগ নেব যেন এই ....
এই ফেসুবক নেটা একিটু খাপছাড়ভাবেই লিখছি!
যে মামলা দেয়া হয়েছে আইনজীবির সাথে পরামর্শ করে তা আইনীভাবেই মোকাবেলা করব। আদালত জেলে পাঠায় তাতেও রাজি!
যারা মামলা দিয়েছে তাদের তো অন্তত ‘সুখবোধ’ সৃষ্টি হবে!
আর নিশ্চয়ই নিজেকে ‘নিরপরাধ’ প্রমাণ করে আবার অনলাইন ফেসবুকে আসেতে পারব এই প্রত্যাশাই থাকল!
লেখালেখির জন্য ৫৭ ধারায় মামলা হবার পর ‘সন্তুষ্টি’ ‘আত্মতৃপ্তি’ ছিল, যাই হোক, অন্তত লেখালেখির জন্য তো মামলায় অভিযু্ক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলাম!
কিন্তু এখন ‘চাঁদাবাজি’ মামলার আসামী হিসেবে নিজেকে দেখতে পেয়ে নিজেকে বেমানানই লাগছে!
তবে তারপরেও এটা তো জানা যে, রাজনীতিতে ‘মামলায়’ জেরবার হওয়া স্বাভাবিক একটি প্রবণতা মাত্র!
No comments:
Post a Comment