কোরিয়া শিশু দিবস পালন করা হয় প্রতি বছরের মে মাসের ৫ তারিখ। এই শিশুদিবস
পালনের ইতিহাসে রয়েছে শিশুপ্রিয় এক ব্যক্তির নাম। তার নাম বাঙ চোঙ-হোন
ইংরেজিতে Bang Jeong-hwan। কোরিয়ার এই শিশুদিবস পালনের পেছনে রয়েছে লড়াইয়ের
ইতিহাস, অধিকার পাবার জন্য হাঁসফাঁসের ইতিহাস।
কোরিয়া জাপানের কাছ থেকে পদানত হয় ১৯১০ সালে। তখন কোরিয়ায় দুর্যোগের কাল যাচ্ছে। কোরিয়ার স্বাধীনতাকামীরা চেষ্টা করছে কোরিয়াকে জাপানের নাগপাশ থেকে বেরিয়ে আনতে।
বাঙ চোঙ-হোনের বয়স তখন ১১ অথবা ১২ বছর। ১৮৯৯ সালে তিনি জন্মেছিলেন। তাদের পরিবার চার প্রজন্ম ধরে সুখে শান্তিতে একই স্থানে বসবাস করছিলো। তারা ছিলেন বনেদি ব্যবসায়ী। কিন্তু কোরিয়া জাপানের পদানত হবারপর থেকে তাদের পারিবারিক ব্যবসা লাটে উঠতে থাকে। একসময় তারা সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে বাঙ হোন-চোঙকে চাকুরি নিতে হয়।
বােঙ হোঙ জাপানী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯১৯ সালে “New Youth” নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। তিনি কোরিয়াের যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করতে ও তাদের সচেতন করতে বিভিন্ন লেখা লেখেন। এ সময় তিনি শিশুদের অধিকার নিয়েও কলম ধরেন। একই বছর তিনি আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে কারান্তরীণ হন।
বন্দীদশা থেকে মুক্ত হবার পরে তিনি নুতন করে লেখা লিখতে থাকেন। তিনি বুঝলেন, একটি জাতিকে স্বাধীন মুক্ত হয়ে বাাঁচতে হলে সেই জাতির শিশুদের মধ্যে আত্ম মর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। তখন কোরিয়ায় শিশুদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হতো, তাদের উপর মানসিক শারীরিক নির্যাতন ছিলো যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। কোরিয়ার ভাষায় শিশুদেরসাধারণভাবে “ahaenom” বলে ডাকা হতো। এই ডাকের মধ্যে শিশুদের তাচ্ছিল্য করা বা অবহেলা করার ভাবটিই ফুটে উঠতো। তিনি শিশুদের সম্মান করতে শেখার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করতে একটি আন্দোলন গড়ে তুললেন। শিশুদের অসম্মানজনকভাবে বা অবহেলার্থে “ahaenom” নামে অভিধা না দিয়ে তিনি তাদের “eorini” (어린이) নামে ডাকতে অনুরোধ জানালে। এই অভিধা পরিবর্তনের মাধ্যমে জনসাধারণর মাঝে শিশুদের প্রতি মমত্ববোধ সৃষ্টির চেষ্টা ছিলো। এবং তিনি “eorini”নামটি দিয়ে শিশুদের ম্যাগাজিন প্রকাশ করলেন। তাতে বিভিন্ন ভাষার রূপকথা গল্পগুলো কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করতে লাগলেন। তাতেই তিনি ক্ষান্ত হলেন না। তিনি সারা কোরিয়ায় ঘূরে ঘূরে শিশুদের নিয়ে জনগণকে সচেতন হবার জন্য কাজ করতে লাগলেন।
তিনি “সায়েকদঙ হোই “Saek Dong Hoi” নামে একটি সংগঠন তৈরী করে শিশুদের সম্মান করতে শেখার তাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন করতে লাগলেন।
তারা এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে ১৯২৩ সালের ১মে শিশুদিবস হিসেবে পালন করলেন। এছাড়া তারা শিশু অধিকার বিষয়ে একটি ঘোষনাও প্রকাশ করলেন। এরপর কয়েক বছর তারা শিশুদিবস পালন করলো।
তার এই আন্দোলনের সাথে আরো অনেকে যোগ দিলো। তাদের শ্লোগান ছিলো- শিশুদের অবহেলার চোখে দেখবেন না , তাদের মর্যাদার চোখে দেখুন । ”Don’t look down on children, look at them”.
মোটো হিসেবে তারা ঠিক করেছিলেন, সাহসী এবং সত্যিকারের শিশু হও এবং একে অন্যকে ভালোবাসো সাহায্য করো। “Be a brave and genuine child and love and help each other”
শিশু অধিকার নিয়ে ঘোষিত আট দফায় ছিলো- শিশুরা আমাদের আশা ও ভবিষ্যত, শিশুদের বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা উচিত, যারা আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে এবং তারা হবে পরিচালক শক্তি যা জাতি ও সমাজের জন্য অবদান রাখতে পারবে। ” Children are our hope and future, Children should grow up as cosmopolitans who will be the support and driving force of our nation and can contribute to human”.
শিশুদের মর্যাদা দিতে শেখার এই আন্দোলনকে জাপান শাসকচক্র বাাঁকা চোখে দেখতে লাগলো। শিশুদের নিয়ে তার প্রকাশিত ম্যাগািজিন সরকার বন্ধ করে দিলো। তারা খড়গহস্ত হলো তার উপরও। জাপান সরকার শিশুদিবস পালনে বাধা দিলো। ১৯৩০ সাল থেকে সেই বাধা দেয়া চলতে থাকলো। ১৯৩৯ সালে জাপানী আগ্রাসী শক্তি পুরোপুরি এই দিবস পালনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করলো। এরপর কয়েকবছর এই দিবস পালন করা হয়নি। পরে কোরিয়া স্বাধীনতা অর্জন করলে ১৯৪৬ সাল থেকে দিবসটি আবার পালিত হতে থাকে। কোরিয়া সরকার ১৯৬১ সালে মে মাসের ৫ তারিখকে শিশুদিবস নির্দিষ্ট করে প্রতিবছর দিবসটি পালন করতে থাকে।
ততদিনে ১৯৩১ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে বাঙ চোঙ-হোন অসুখে ভুগে মারা গেলেন। কিন্তু তারপরও শিশুদের নিয়ে তার স্বপ্ন সংগ্রাম থেমে থাকলো না।
বলা হয়ে থাকে, কোরিয়ার যে আজ এত উন্নতি তাতে শিশুদের নিয়ে বাঙ চোঙ-হোনের এই আন্দোলনেরও অবদান সবিশেষ অবদান রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
০১. ব্লগডটকোরিয়াডটনেট
০২. আরিরাঙডটকোডটকেআর
০৩. ডোডোল্যান্ড ওয়েবসাইট
কোরিয়া জাপানের কাছ থেকে পদানত হয় ১৯১০ সালে। তখন কোরিয়ায় দুর্যোগের কাল যাচ্ছে। কোরিয়ার স্বাধীনতাকামীরা চেষ্টা করছে কোরিয়াকে জাপানের নাগপাশ থেকে বেরিয়ে আনতে।
বাঙ চোঙ-হোনের বয়স তখন ১১ অথবা ১২ বছর। ১৮৯৯ সালে তিনি জন্মেছিলেন। তাদের পরিবার চার প্রজন্ম ধরে সুখে শান্তিতে একই স্থানে বসবাস করছিলো। তারা ছিলেন বনেদি ব্যবসায়ী। কিন্তু কোরিয়া জাপানের পদানত হবারপর থেকে তাদের পারিবারিক ব্যবসা লাটে উঠতে থাকে। একসময় তারা সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে বাঙ হোন-চোঙকে চাকুরি নিতে হয়।
বােঙ হোঙ জাপানী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯১৯ সালে “New Youth” নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। তিনি কোরিয়াের যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করতে ও তাদের সচেতন করতে বিভিন্ন লেখা লেখেন। এ সময় তিনি শিশুদের অধিকার নিয়েও কলম ধরেন। একই বছর তিনি আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে কারান্তরীণ হন।
বন্দীদশা থেকে মুক্ত হবার পরে তিনি নুতন করে লেখা লিখতে থাকেন। তিনি বুঝলেন, একটি জাতিকে স্বাধীন মুক্ত হয়ে বাাঁচতে হলে সেই জাতির শিশুদের মধ্যে আত্ম মর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। তখন কোরিয়ায় শিশুদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হতো, তাদের উপর মানসিক শারীরিক নির্যাতন ছিলো যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। কোরিয়ার ভাষায় শিশুদেরসাধারণভাবে “ahaenom” বলে ডাকা হতো। এই ডাকের মধ্যে শিশুদের তাচ্ছিল্য করা বা অবহেলা করার ভাবটিই ফুটে উঠতো। তিনি শিশুদের সম্মান করতে শেখার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করতে একটি আন্দোলন গড়ে তুললেন। শিশুদের অসম্মানজনকভাবে বা অবহেলার্থে “ahaenom” নামে অভিধা না দিয়ে তিনি তাদের “eorini” (어린이) নামে ডাকতে অনুরোধ জানালে। এই অভিধা পরিবর্তনের মাধ্যমে জনসাধারণর মাঝে শিশুদের প্রতি মমত্ববোধ সৃষ্টির চেষ্টা ছিলো। এবং তিনি “eorini”নামটি দিয়ে শিশুদের ম্যাগাজিন প্রকাশ করলেন। তাতে বিভিন্ন ভাষার রূপকথা গল্পগুলো কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করতে লাগলেন। তাতেই তিনি ক্ষান্ত হলেন না। তিনি সারা কোরিয়ায় ঘূরে ঘূরে শিশুদের নিয়ে জনগণকে সচেতন হবার জন্য কাজ করতে লাগলেন।
তিনি “সায়েকদঙ হোই “Saek Dong Hoi” নামে একটি সংগঠন তৈরী করে শিশুদের সম্মান করতে শেখার তাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন করতে লাগলেন।
তারা এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে ১৯২৩ সালের ১মে শিশুদিবস হিসেবে পালন করলেন। এছাড়া তারা শিশু অধিকার বিষয়ে একটি ঘোষনাও প্রকাশ করলেন। এরপর কয়েক বছর তারা শিশুদিবস পালন করলো।
তার এই আন্দোলনের সাথে আরো অনেকে যোগ দিলো। তাদের শ্লোগান ছিলো- শিশুদের অবহেলার চোখে দেখবেন না , তাদের মর্যাদার চোখে দেখুন । ”Don’t look down on children, look at them”.
মোটো হিসেবে তারা ঠিক করেছিলেন, সাহসী এবং সত্যিকারের শিশু হও এবং একে অন্যকে ভালোবাসো সাহায্য করো। “Be a brave and genuine child and love and help each other”
শিশু অধিকার নিয়ে ঘোষিত আট দফায় ছিলো- শিশুরা আমাদের আশা ও ভবিষ্যত, শিশুদের বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা উচিত, যারা আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে এবং তারা হবে পরিচালক শক্তি যা জাতি ও সমাজের জন্য অবদান রাখতে পারবে। ” Children are our hope and future, Children should grow up as cosmopolitans who will be the support and driving force of our nation and can contribute to human”.
শিশুদের মর্যাদা দিতে শেখার এই আন্দোলনকে জাপান শাসকচক্র বাাঁকা চোখে দেখতে লাগলো। শিশুদের নিয়ে তার প্রকাশিত ম্যাগািজিন সরকার বন্ধ করে দিলো। তারা খড়গহস্ত হলো তার উপরও। জাপান সরকার শিশুদিবস পালনে বাধা দিলো। ১৯৩০ সাল থেকে সেই বাধা দেয়া চলতে থাকলো। ১৯৩৯ সালে জাপানী আগ্রাসী শক্তি পুরোপুরি এই দিবস পালনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করলো। এরপর কয়েকবছর এই দিবস পালন করা হয়নি। পরে কোরিয়া স্বাধীনতা অর্জন করলে ১৯৪৬ সাল থেকে দিবসটি আবার পালিত হতে থাকে। কোরিয়া সরকার ১৯৬১ সালে মে মাসের ৫ তারিখকে শিশুদিবস নির্দিষ্ট করে প্রতিবছর দিবসটি পালন করতে থাকে।
ততদিনে ১৯৩১ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে বাঙ চোঙ-হোন অসুখে ভুগে মারা গেলেন। কিন্তু তারপরও শিশুদের নিয়ে তার স্বপ্ন সংগ্রাম থেমে থাকলো না।
বলা হয়ে থাকে, কোরিয়ার যে আজ এত উন্নতি তাতে শিশুদের নিয়ে বাঙ চোঙ-হোনের এই আন্দোলনেরও অবদান সবিশেষ অবদান রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
০১. ব্লগডটকোরিয়াডটনেট
০২. আরিরাঙডটকোডটকেআর
০৩. ডোডোল্যান্ড ওয়েবসাইট