৭ এপ্রিল, ২০১৫। ১৯৭৯ সালের এই দিনে আসামের শিবসাগরের রঙঘর নামে এক এলাকায় আসামের স্বাধীনতাপন্থী কয়েকজন যুবনেতা ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম বা উলফা গঠন করেন। ভীমকান্ত বোরগোহাইন, পরেশ বড়ুয়া/বোড়া, রাজীব রাজকোনওয়ার প্রকাশ অরবিন্দ রাজখোয়া. অনুপ চেটিয়া প্রকাশ গোলাপ বড়ুয়া/বোড়া, প্রদীপ গোগোই, প্রকাশ সমীরণ গোগোই, ভদ্রেশ্বর গোহাইন , মিথিঙ্গা দাইমারী, চিত্রবন হাজারিকা, শশধর চৌধুরী প্রমুখ এই সংগঠনের নেতৃত্ব পর্যায়ে রয়েছেন।
আসামের স্বাধীনতার ডাক দিয়ে এই সংগঠেনর জন্ম হয়েছিল। ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক আসাম গঠন ছিল তাদের মূলমন্ত্র।
উলফা তাদের সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলার প্রারম্ভে ঘোষনা করেছে-
১৯৮৪ সালে উলফা তাদের কার্যক্রম জোরদার করতে তৎপরতা চালায়। তারা প্রথমে ব্যাপকভাবে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। তারা নিজস্ব সশস্ত্র গ্রুপ গঠন করে । সংগঠনের কর্মীদের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ভারতের নাগাল্যান্ডের ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড বা এনএসসিএন এবং মায়ানমার বা বার্মার গেরিলা সংগঠন কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্টস আর্মি বা কে আই এ’র সহায়তা গ্রহণ করে বলে জানা যায়। উলফার প্রভাব আসামে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত সরকার ১৯৮৬ সালের ৭ নভেম্বর এই সংগঠনকে বেআইনী ঘোষনা করে।
এখানে বলা প্রয়োজন আসাম হলো ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের মধ্যে অন্যতম এবং বড় একটি রাজ্য।
ভারত উলফার কার্যক্রমকে দমন করার জন্য সেখানে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে। ১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসে অপারেশন বজরঙ, ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে অপারেশন রাইনো, ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে অপারেশন অল ক্লিয়ার এবং পরবর্তিতে অপারেশন রা্ইনো দুই নামে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে উলফাকে দমনের চেষ্টা চালায় ভারত।
এতে উলফার অনেক সদস্য আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। ১৯৯২ সালে উলফার উচ্চস্তরের কয়েকজন নেতা তাদের অনুসারীদের নিয়ে ভারত সরকারের কাছ থেকে আত্মসমর্পন করে।
উলফা এই সময় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পাশের দেশ বাংলাদেশ ও চীনে আশ্রয় নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালায় বলে জানা যায়। এবং এক পর্যায়ে তারা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং বাংলাদেশের ডিজিএফআই-এর সাথে তারা সম্পর্ক রেখে কাজ করতো বলে ভারত সরকার বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে।
উলফার কিছু অংশ ভুটানেও আশ্রয় গ্রহণ করে। তবে ২০০৩ সালে ভুটান সরকার উলফাসহ বেশ কয়েকটি গেরিলা সংগঠনকে তাদের দেশ থেকে বের করে দিতে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে এবং উলফাকে সেখান থেকে সরে যেতে হয়।
২০০৪ সালের দিকে উলফা ভারত সরকারের সাথে আলোচনায় বসার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার পিপলস কনসালটেটিভ গ্রুপ নামক মধ্যস্থতাকারী একটি দলের মাধ্যমে ভারত সরকার উলফার সাথে আলোচনায় বসে। ২০০৬ সালের দিকে আবার সংঘাত শুরু হয়। দুই পক্ষই আলোচনা থেকে সরে যায়।
২০০৯ সালের দিকে উলফার প্রধান অরবিন্দ রাজখোয়া বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হন। এরপর তাকে ভারতে ফেরত নেয়া হয়। সেখানে আবার নতুন করে ভারত সরকার উলফার সাথে আলোচনা শুরু করে। কিন্তু উলফার অন্যতম নেতা পরেশ বড়ুয়া ভারত সরকারের সাথে তাদের বন্দী নেতাদের মধ্যেকার আলোচনাকে মেনে নেননি। তিনি এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, তিনি আসামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কর্মী সংগ্রহ করে উলফার সামরিক শাখা শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে এরই মাঝে আসামের এই লড়াইয়ে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার জনের। এখন সংঘাত তেমন না থাকলেও পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন উলফার কার্যক্রম চলতে থাকায় এবং আসামের জনগণের মাঝে সংগঠনের কার্যক্রম জারি থাকায় ভবিষ্যতে আসামের লড়াইয়ের পরিণতি কী হবে তা একমাত্র ভবিষ্যতই বলে দেবে এই মাত্র ধারণায় নেয়া যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: