চট্টগ্রামে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জুম্ম জনগণের দিনযাপন
নভেম্বর, ২০১২
চট্টগ্রামে অক্টোবর মাসে এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি ধর্ষনের ঘটনা সংঘটিত হবার কথা জানা যায়। প্রথমটি সংঘটিত হয় ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের রাউজান এলাকার হলদিয়া রাবার বাগান এলাকায়। যুবলীগের ৪ জন সন্ত্রাসীরা মারমা জাতিসত্তার এক গর্ভবতী নারীকে তারা পালাক্রমে ধর্ষন করে।ধর্ষনের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করার কথা জানা যায়নি।
এরপর ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকায় একজন জুম্ম স্কুল ছাত্রী ধর্ষিত হন। জানা যায় রাতে স্কুল ছাত্রীটি তার এক বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে যায়। এ সময় তাকে ধর্ষন করা হয়। ৬ জন তাকে বাঙালী তাকে ধর্ষন করে বলে জানা যায়। পরে পত্রিকা মারফত জানা যায় এই ধর্ষন ঘটনায় একজন জুম্মও ছাত্রও সংশ্লিষ্ট রয়েছে। জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজের এক অংশ এই ধরণের অনৈতিক কাজে জড়িত হওয়ার ঘটনা দেখে আমরা আরো বেশী আতংকগ্রস্ত হচ্ছি।
এছাড়া অক্টোবর মাসের ১২ তারিখে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানাধীন দক্ষিণ মুসলিমাবাদ বারেক নগরের ধানক্ষেত থেকে এক অপরিচিত জুম্ম/পাহাড়ি নারীর লাশ পাওয়ার কথা দৈনিক পূর্বকোণের ১৩ অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রামের শহর এলাকায় জুম্ম নারীর উপর এ ধরণের সহিংসতা সাধারণ জুম্ম নর-নারীকে ভাবিয়ে তুলেছে। সবচেয়ে বেশী আতংকের বিষয় হচ্ছে এ সকল ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত দোষীদের এখনো আইনের আওতায় আনা হয়নি।
চট্টগ্রাম শহরে ৪০ হাজারের উপর জুম্ম বসবাস করছে যার অর্ধেক হচ্ছে নারী। রাস্তাঘাটেও জুম্ম নারীদের নানা ধরনের হয়রানীর শিকার হতে হয়, যা প্রকাশিত হয়না।
গত ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাঙামাটি শহরে সাম্প্রদায়িক হামলার জের ধরে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামে আসা কয়েকজন জুম্মকে অক্সিজেন এলাকায় নির্বিচারে মারপিট করা হয়। এছাড়া ২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী যখন খাগড়াছড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছিলো তখনও চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় জুম্মদের উপর হামলা করা হয়েছিল।
এক অর্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো বড়ধরণের হামলার ঘটনা সংঘটিত হলে চট্টগ্রাম এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী জুম্ম জনগণকে সবসময় তটস্থ হয়ে থাকতে হয়।
চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় যে সকল জুম্ম নানা পেশার কারনে বসবাস করছে তাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বাসায় অথবা পথেঘাটে সন্ত্রাসী-মাস্তান যুবকরা ইচ্ছে হলেই আমাদের জুম্ম যুবকদের উপর চড়াও হয়।নানা ধরনের উৎপাত শুরু করে দেয়। তাদের উপর কথা বলা বা এইসবের প্রতিবাদ করতে গেলেই সাম্প্রদায়িক চাপ সৃষ্টি করে তা থামিয়ে দেয়া হয়।
আমাদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্বের সুযোগও এসব মাস্তানরা নিয়ে থাকে। বিশেষত চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় কোন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করতে গেলে তাদেরকে অবশ্যই সে এলাকার স্থানীয় পেশীবান মাস্তান-সন্ত্রাসীদের হাত করতে হয়। অবস্থাটা এমন, এইসব মাস্তান-সন্ত্রাসীরা যার পক্ষ নেয় তারাই সে অঞ্চলে রাজত্ব করতে পারে। এভাবে পরমুখাপেক্ষী/অপরের শক্তির উপর নির্ভর করে আমরা রাজনীতির মাঠে দিনযাপন করছি অন্তত এই চট্টগ্রামে!
তারপরও আশা থাকে … …
তারপরও আশা থাকে কারন কেননা আমরা জানি যে কারনে এসব হচ্ছে তার বিধান/মীমাংসা করতে পারলেই আমরা এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবো।
সকল কিছু সমস্যার মূলে হচ্ছে, আমাদের সাংস্কৃতিক অধপতন, মতাদর্শিক দৈন্য, সামাজিক শৃঙ্খলার ঘাটতি, সমাজবিমুখ-রাজনৈতিক চেতনাবিহীন বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন।
আমরা আজ বিভক্ত দলীয় বৃত্তে, সমাজের অনেকেই বিচ্ছিন্ন সমাজ থেকে, নেই পারষ্পরিক সামাজিক-রাজনৈতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ, নেই জাতিগত সামাজিক চেতনা ও মূল্যবোধ। অহংবোধ কিন্তু রয়েছে সবার মাঝে নিজ নিজ তরফ থেকে।
এইসবকিছুর একটা বিহীত আমাদের করতেই হবে।
আপনারা আমরা সবাই আশায় থাকি … …
## বন্ধন সৃষ্টি হোক বৃহৎ সফলতার জন্য, সুমহান কর্মযজ্ঞের জন্য আমাদের মন-ভাবনা সম্মিলিত হোক এই প্রত্যাশা ##
সকলকে ধন্যবাদ
নভেম্বর, ২০১২
চট্টগ্রামে অক্টোবর মাসে এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি ধর্ষনের ঘটনা সংঘটিত হবার কথা জানা যায়। প্রথমটি সংঘটিত হয় ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের রাউজান এলাকার হলদিয়া রাবার বাগান এলাকায়। যুবলীগের ৪ জন সন্ত্রাসীরা মারমা জাতিসত্তার এক গর্ভবতী নারীকে তারা পালাক্রমে ধর্ষন করে।ধর্ষনের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করার কথা জানা যায়নি।
এরপর ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকায় একজন জুম্ম স্কুল ছাত্রী ধর্ষিত হন। জানা যায় রাতে স্কুল ছাত্রীটি তার এক বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে যায়। এ সময় তাকে ধর্ষন করা হয়। ৬ জন তাকে বাঙালী তাকে ধর্ষন করে বলে জানা যায়। পরে পত্রিকা মারফত জানা যায় এই ধর্ষন ঘটনায় একজন জুম্মও ছাত্রও সংশ্লিষ্ট রয়েছে। জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজের এক অংশ এই ধরণের অনৈতিক কাজে জড়িত হওয়ার ঘটনা দেখে আমরা আরো বেশী আতংকগ্রস্ত হচ্ছি।
এছাড়া অক্টোবর মাসের ১২ তারিখে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানাধীন দক্ষিণ মুসলিমাবাদ বারেক নগরের ধানক্ষেত থেকে এক অপরিচিত জুম্ম/পাহাড়ি নারীর লাশ পাওয়ার কথা দৈনিক পূর্বকোণের ১৩ অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রামের শহর এলাকায় জুম্ম নারীর উপর এ ধরণের সহিংসতা সাধারণ জুম্ম নর-নারীকে ভাবিয়ে তুলেছে। সবচেয়ে বেশী আতংকের বিষয় হচ্ছে এ সকল ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত দোষীদের এখনো আইনের আওতায় আনা হয়নি।
চট্টগ্রাম শহরে ৪০ হাজারের উপর জুম্ম বসবাস করছে যার অর্ধেক হচ্ছে নারী। রাস্তাঘাটেও জুম্ম নারীদের নানা ধরনের হয়রানীর শিকার হতে হয়, যা প্রকাশিত হয়না।
গত ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাঙামাটি শহরে সাম্প্রদায়িক হামলার জের ধরে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামে আসা কয়েকজন জুম্মকে অক্সিজেন এলাকায় নির্বিচারে মারপিট করা হয়। এছাড়া ২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী যখন খাগড়াছড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছিলো তখনও চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় জুম্মদের উপর হামলা করা হয়েছিল।
এক অর্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো বড়ধরণের হামলার ঘটনা সংঘটিত হলে চট্টগ্রাম এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী জুম্ম জনগণকে সবসময় তটস্থ হয়ে থাকতে হয়।
চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় যে সকল জুম্ম নানা পেশার কারনে বসবাস করছে তাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বাসায় অথবা পথেঘাটে সন্ত্রাসী-মাস্তান যুবকরা ইচ্ছে হলেই আমাদের জুম্ম যুবকদের উপর চড়াও হয়।নানা ধরনের উৎপাত শুরু করে দেয়। তাদের উপর কথা বলা বা এইসবের প্রতিবাদ করতে গেলেই সাম্প্রদায়িক চাপ সৃষ্টি করে তা থামিয়ে দেয়া হয়।
আমাদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্বের সুযোগও এসব মাস্তানরা নিয়ে থাকে। বিশেষত চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় কোন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করতে গেলে তাদেরকে অবশ্যই সে এলাকার স্থানীয় পেশীবান মাস্তান-সন্ত্রাসীদের হাত করতে হয়। অবস্থাটা এমন, এইসব মাস্তান-সন্ত্রাসীরা যার পক্ষ নেয় তারাই সে অঞ্চলে রাজত্ব করতে পারে। এভাবে পরমুখাপেক্ষী/অপরের শক্তির উপর নির্ভর করে আমরা রাজনীতির মাঠে দিনযাপন করছি অন্তত এই চট্টগ্রামে!
তারপরও আশা থাকে … …
তারপরও আশা থাকে কারন কেননা আমরা জানি যে কারনে এসব হচ্ছে তার বিধান/মীমাংসা করতে পারলেই আমরা এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবো।
সকল কিছু সমস্যার মূলে হচ্ছে, আমাদের সাংস্কৃতিক অধপতন, মতাদর্শিক দৈন্য, সামাজিক শৃঙ্খলার ঘাটতি, সমাজবিমুখ-রাজনৈতিক চেতনাবিহীন বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন।
আমরা আজ বিভক্ত দলীয় বৃত্তে, সমাজের অনেকেই বিচ্ছিন্ন সমাজ থেকে, নেই পারষ্পরিক সামাজিক-রাজনৈতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ, নেই জাতিগত সামাজিক চেতনা ও মূল্যবোধ। অহংবোধ কিন্তু রয়েছে সবার মাঝে নিজ নিজ তরফ থেকে।
এইসবকিছুর একটা বিহীত আমাদের করতেই হবে।
আপনারা আমরা সবাই আশায় থাকি … …
## বন্ধন সৃষ্টি হোক বৃহৎ সফলতার জন্য, সুমহান কর্মযজ্ঞের জন্য আমাদের মন-ভাবনা সম্মিলিত হোক এই প্রত্যাশা ##
সকলকে ধন্যবাদ
No comments:
Post a Comment