(ক)
পুরাতন যা কিছু, যা কিছু অতীত তাকে নিয়ে কী মাথা ঘামাতে হয়? অথবা হয়না? অথবা শুধু স্মৃতি তর্পনেই সব শেষ?
(খ)
আপনাদের কাছে আজ একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা থেকে কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে একটি সম্মানপ্রদর্শনসূচক লেখা লিখছি। সেই জীবনাগত সেক্টর কমান্ডারের নাম কর্নেল(অব.) কাজী নূর-উজ্জামান। যাকে আমি সত্যিকারের মানুষ হিসেবে চিনি এবং জানি, যে মানুষটিকে ম্যান অব প্রিন্সিপাল হিসেবে সহজেই অভিধা দেয়া যায়। জীবন পর্যন্ত তিনি নিজের নীতিকে বিসর্জন দেননি। তিনি আজ মৃত। কিন্তু অতীতের সেই জীবন যদি আপনাকে আমাকে না ভাবায়, যদি আমরা সেই সত্যিকার মানুষদের স্মরণ না করি সময়ে এবং অসময়ে তাহলে কীভাবে ভবিষ্যতের সেই সত্যিকার মানুষকে আমরা পাবো? জীবন তো ধারাবাহিক এক পুনরাবর্তন! বর্তমান গর্ভ থেকে অতীত এবং ভবিষ্যত হয়ে যায় বর্তমান এবং তা রূপ নেয় অতীতে! অতীত তো ফল্গুধারার মত, যা বয়ে যায় অদৃশ্যে কিন্ত বাস্তবভাবে। ফল্গুধারাকে কি আমরা অস্বীকার করতে পারি? অতীতই তো সেই ফল্গুধারা।
(গ)
কর্নেল কাজী নূর উজ্জামান। জন্ম ২৪ মার্চ ১৯২৫। মুক্তিযুদ্ধে তিনি জুলাই মাসের দিকে ৭নং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যু ৫ মে ২০১১।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি তাঁর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আত্মজীবনী "একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা" বইটি লিখে প্রকাশ করেন। প্রকাশকঃ 'অবসর' প্রকাশনী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১২। দাম-১৬০ টাকা।
তাঁর এই বইটি আমি এখনো পড়িনি তবে পড়ার জন্য হাতে নিয়েছি। কিন্তু অন্য কেউও যদি আমার লেখা পড়ে এই বইটি পড়তে উৎসাহী হয় তবেই আমি বইটি পড়ে আনন্দ পাবো বলেই আমার বই পাঠপূর্ব এই লেখা।
(ঘ)
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা প্রসঙ্গে তিনি লিখছেন, " আজ স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে গিয়ে কাদের কথা লিখব? মুক্তিযুদ্ধের দাবি নিয়ে যারা রাজনৈতিকভাবে বা ব্যবসায়িক মহলে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত, তাদের অনেককেই আমি চিনি। তাদের কথা লিখতে গেলে মুক্তিযুদ্ধকে অসংলগ্ন করা হবে। যাঁদের কথা লিখতে চাই, তাঁরা কেবল হারিয়েই যাননি, দেশ ও মানুষের কাছে কোনো স্বীকৃতিই পাননি। এই দাবিও তাঁর কোনোদিন করেননি। তাঁরা ইতিহাস বা নিজেদের ঘটনাবলীও লিখছেন না, তাঁদের লিখবার ক্ষমতাও নেই, ইচ্ছাও নেই। এ কাজটি আমার করা উচিত ছিল। আমার ক্লান্তি, অলসতার জন্যই সেদিন তাঁদের কথা ডায়েরিতে লিখতে পারিনি। আমার এ অপরাধ ক্ষমাহীন। তাই ভাবছি আজ পর্যন্ত যেটুকু স্মৃতি আমি ধারণ করে চলেছি, সেটুকুই লেখা উচিত।"
(ঙ)
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী এক লেফটেন্যান্ট বিষয়ে তিনি লিখছেন,
" ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬-এ আমি মিলিটারী হাসপাতালে ছিলাম। এক ভদ্রলোক এসে তাঁর পরিচয় দিয়ে আমার কুশলাদি জানতে চাইলেন। ভদ্রলোককে আমি প্রথমে চিনতে পারিনি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি তাঁর পরিচয় দিয়েছিলেন। আমার অধীনে লড়াইয়ের কথা বললেন।" ... ... ... " তাঁর পরিচয় বুঝে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ঘটনা মনে পড়ে গেল যার কিছু বর্ণনা এখানে দিলাম। বললাম- 'তুমিই সেই লেফটেন্যান্ট? যে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।আর তোমার জায়গায় জাকির খান চৌধুরী আমার সাথে এগিয়ে এসেছিল।' এই কথা তোলার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এক মুহূর্ত দেরী না করে হাসপাতালে আমার আঠার নম্বর কক্ষ থেকে বিশেষ জরুরী কাজের অজুহাতে প্রস্থান করলেন। এই ভদ্রলোককে অমি দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে খুঁজছি। মুক্তিযু্দ্ধে এর মতো উর্দি পরিহিত কাপুরুষ আমি আর কাউকে দেখিনি।"
(চ)
তিনি মুক্তিযু্দ্ধের ইতিহাস লিখতে বসেননি। কিন্তু তাঁর লেখায় মুক্তিযু্দ্ধের পূর্বাপর যে কিছু তথ্য দেয়া রয়েছে তাতেই রয়েছে এই দেশের যাত্রাপথের রেখচিত্র অন্তত আবছাভাবে।
আজকাল ডিসেম্বর মাস আসলে অথবা এই "যদ্ধাপরাধ রাজনীতি"র আগমনের কারণে মুক্তিযুদ্ধকে কী আলোয় দেখা দরকার তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা বড়ই বেমানানভাবে সামনে এসে উপস্থিত হয়ে আছে।
পত্রিকা মারফতে জানতে পারলাম ৫ম ও ৮ম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক থেকে মওলানা ভাসানীর জীবনী বাদ দেয়া হয়েছে। ইতিহাসের এক দেদীপ্যমান দ্বীপশিখার নাম ভাসানী। তাকে অস্বীকার করা মানেই তো সেই দ্বীপশিখার আভাকে অস্বীকার করা। এভাবে "তাঁরা কেবল হারিয়েই যাননি, দেশ ও মানুষের কাছে কোনো স্বীকৃতিই পাননি" এই ধারাই কি জায়মান থাকবে?
তাই তো ইতিহাসকে কী আলোয়, কার চোখ দিয়ে আমরা দেখবো তা নিয়ে সোচ্চার হবার সময়ও বোধহয় সমাগত!
না হলে এই দেশের নাম বা তার ইতিহাসকে লেখা বা পড়ার সময় তকমা লাগাতে হবে এভাবে "বাংলাদেশ(আওয়ামীলীগ)" অথবা "বাংলাদেশ(বিএনপি)"। অথবা "বাংলাদেশের ইতিহাস(আওয়ামী)" "বাংলাদেশের ইতিহাস(বিএনপি)"।
ইতিহাসের "সত্য" তার সামনের দিকে অগ্রযাত্রার পথনির্দেশের সূচনা করে দেয়। কোন ইতিহাস পাঠ করে আমরা সেই "সামনের দিকে অগ্রযাত্রার পথ" কে বেছে নেবো?
(ছ)
কর্নেল (অব.) কাজী নূরউজ্জামানের বইটি পড়ার অনুরোধ থাকলো।
পুরাতন যা কিছু, যা কিছু অতীত তাকে নিয়ে কী মাথা ঘামাতে হয়? অথবা হয়না? অথবা শুধু স্মৃতি তর্পনেই সব শেষ?
(খ)
আপনাদের কাছে আজ একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা থেকে কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে একটি সম্মানপ্রদর্শনসূচক লেখা লিখছি। সেই জীবনাগত সেক্টর কমান্ডারের নাম কর্নেল(অব.) কাজী নূর-উজ্জামান। যাকে আমি সত্যিকারের মানুষ হিসেবে চিনি এবং জানি, যে মানুষটিকে ম্যান অব প্রিন্সিপাল হিসেবে সহজেই অভিধা দেয়া যায়। জীবন পর্যন্ত তিনি নিজের নীতিকে বিসর্জন দেননি। তিনি আজ মৃত। কিন্তু অতীতের সেই জীবন যদি আপনাকে আমাকে না ভাবায়, যদি আমরা সেই সত্যিকার মানুষদের স্মরণ না করি সময়ে এবং অসময়ে তাহলে কীভাবে ভবিষ্যতের সেই সত্যিকার মানুষকে আমরা পাবো? জীবন তো ধারাবাহিক এক পুনরাবর্তন! বর্তমান গর্ভ থেকে অতীত এবং ভবিষ্যত হয়ে যায় বর্তমান এবং তা রূপ নেয় অতীতে! অতীত তো ফল্গুধারার মত, যা বয়ে যায় অদৃশ্যে কিন্ত বাস্তবভাবে। ফল্গুধারাকে কি আমরা অস্বীকার করতে পারি? অতীতই তো সেই ফল্গুধারা।
(গ)
কর্নেল কাজী নূর উজ্জামান। জন্ম ২৪ মার্চ ১৯২৫। মুক্তিযুদ্ধে তিনি জুলাই মাসের দিকে ৭নং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যু ৫ মে ২০১১।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি তাঁর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আত্মজীবনী "একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা" বইটি লিখে প্রকাশ করেন। প্রকাশকঃ 'অবসর' প্রকাশনী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১২। দাম-১৬০ টাকা।
তাঁর এই বইটি আমি এখনো পড়িনি তবে পড়ার জন্য হাতে নিয়েছি। কিন্তু অন্য কেউও যদি আমার লেখা পড়ে এই বইটি পড়তে উৎসাহী হয় তবেই আমি বইটি পড়ে আনন্দ পাবো বলেই আমার বই পাঠপূর্ব এই লেখা।
(ঘ)
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা প্রসঙ্গে তিনি লিখছেন, " আজ স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে গিয়ে কাদের কথা লিখব? মুক্তিযুদ্ধের দাবি নিয়ে যারা রাজনৈতিকভাবে বা ব্যবসায়িক মহলে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত, তাদের অনেককেই আমি চিনি। তাদের কথা লিখতে গেলে মুক্তিযুদ্ধকে অসংলগ্ন করা হবে। যাঁদের কথা লিখতে চাই, তাঁরা কেবল হারিয়েই যাননি, দেশ ও মানুষের কাছে কোনো স্বীকৃতিই পাননি। এই দাবিও তাঁর কোনোদিন করেননি। তাঁরা ইতিহাস বা নিজেদের ঘটনাবলীও লিখছেন না, তাঁদের লিখবার ক্ষমতাও নেই, ইচ্ছাও নেই। এ কাজটি আমার করা উচিত ছিল। আমার ক্লান্তি, অলসতার জন্যই সেদিন তাঁদের কথা ডায়েরিতে লিখতে পারিনি। আমার এ অপরাধ ক্ষমাহীন। তাই ভাবছি আজ পর্যন্ত যেটুকু স্মৃতি আমি ধারণ করে চলেছি, সেটুকুই লেখা উচিত।"
(ঙ)
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী এক লেফটেন্যান্ট বিষয়ে তিনি লিখছেন,
" ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬-এ আমি মিলিটারী হাসপাতালে ছিলাম। এক ভদ্রলোক এসে তাঁর পরিচয় দিয়ে আমার কুশলাদি জানতে চাইলেন। ভদ্রলোককে আমি প্রথমে চিনতে পারিনি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি তাঁর পরিচয় দিয়েছিলেন। আমার অধীনে লড়াইয়ের কথা বললেন।" ... ... ... " তাঁর পরিচয় বুঝে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ঘটনা মনে পড়ে গেল যার কিছু বর্ণনা এখানে দিলাম। বললাম- 'তুমিই সেই লেফটেন্যান্ট? যে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।আর তোমার জায়গায় জাকির খান চৌধুরী আমার সাথে এগিয়ে এসেছিল।' এই কথা তোলার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এক মুহূর্ত দেরী না করে হাসপাতালে আমার আঠার নম্বর কক্ষ থেকে বিশেষ জরুরী কাজের অজুহাতে প্রস্থান করলেন। এই ভদ্রলোককে অমি দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে খুঁজছি। মুক্তিযু্দ্ধে এর মতো উর্দি পরিহিত কাপুরুষ আমি আর কাউকে দেখিনি।"
(চ)
তিনি মুক্তিযু্দ্ধের ইতিহাস লিখতে বসেননি। কিন্তু তাঁর লেখায় মুক্তিযু্দ্ধের পূর্বাপর যে কিছু তথ্য দেয়া রয়েছে তাতেই রয়েছে এই দেশের যাত্রাপথের রেখচিত্র অন্তত আবছাভাবে।
আজকাল ডিসেম্বর মাস আসলে অথবা এই "যদ্ধাপরাধ রাজনীতি"র আগমনের কারণে মুক্তিযুদ্ধকে কী আলোয় দেখা দরকার তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা বড়ই বেমানানভাবে সামনে এসে উপস্থিত হয়ে আছে।
পত্রিকা মারফতে জানতে পারলাম ৫ম ও ৮ম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক থেকে মওলানা ভাসানীর জীবনী বাদ দেয়া হয়েছে। ইতিহাসের এক দেদীপ্যমান দ্বীপশিখার নাম ভাসানী। তাকে অস্বীকার করা মানেই তো সেই দ্বীপশিখার আভাকে অস্বীকার করা। এভাবে "তাঁরা কেবল হারিয়েই যাননি, দেশ ও মানুষের কাছে কোনো স্বীকৃতিই পাননি" এই ধারাই কি জায়মান থাকবে?
তাই তো ইতিহাসকে কী আলোয়, কার চোখ দিয়ে আমরা দেখবো তা নিয়ে সোচ্চার হবার সময়ও বোধহয় সমাগত!
না হলে এই দেশের নাম বা তার ইতিহাসকে লেখা বা পড়ার সময় তকমা লাগাতে হবে এভাবে "বাংলাদেশ(আওয়ামীলীগ)" অথবা "বাংলাদেশ(বিএনপি)"। অথবা "বাংলাদেশের ইতিহাস(আওয়ামী)" "বাংলাদেশের ইতিহাস(বিএনপি)"।
ইতিহাসের "সত্য" তার সামনের দিকে অগ্রযাত্রার পথনির্দেশের সূচনা করে দেয়। কোন ইতিহাস পাঠ করে আমরা সেই "সামনের দিকে অগ্রযাত্রার পথ" কে বেছে নেবো?
(ছ)
কর্নেল (অব.) কাজী নূরউজ্জামানের বইটি পড়ার অনুরোধ থাকলো।
No comments:
Post a Comment