রাঙামাটির কাউখালি জনগণ ঘোষণা দিয়েছে তারা থুমাচিং মারমা ধর্ষণ ও খুনের সুষ্ঠু বিচার চায়
ক্যাটাগরী:
এ ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পাহাড়ের তিন গণাতিন্ত্রক সংগঠন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছে,
উল্লেখ্য, গত ২১ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪টার সময় বাড়ির পাশ্ববর্তী জমি থেকে থুমাচিং মারমা গরু আনতে গেলে সেখানে দুর্বৃত্তরা তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর জঙ্গলের ভেতর উলঙ্গ অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।
যেখানে থুমাচিং মারমা লাশ পাওয়া যায় সেখান থেকে আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে নাল্যাছড়ি উত্তর মাথা নামে একটি সেটলার গ্রাম। ১৯৮০’র দশকের শুরুর দিকে সরকার সেখান থেকে পাহাড়িদেরকে উৎখাত করে সেটলারদেরকে বসিয়ে দেয়। সেটলাররা বর্তমানে থুমাচিংদের গ্রাম বড়ডলুর অনেকখানি নিজেদের বলে দাবি করে এবং কয়েকদিন আগে ক্ষেতে আদা লাগাতে গেলে সেটলাররা মারমারদে বাধা দেয়। থুমাচিং মারমার মামার সাথেও সেটলারদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে বলে জানা যায়। এ ঘটনার রেশ ধরে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আর দশটা পাঁচট ধর্ষণ-খুনের মতো এই ঘটনা কাউকে সেদিন নাড়া দেয়নি। লেখালেখি ও প্রতিবাদও তেমন একটা হয়নি। তবে কিছুদিন ফেসবুক-টুইটারে প্রচার প্রচারণার কারনে তা নিয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন, তবে তার মেয়াদ তেমন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কিন্তু কাউখালী এলাকায় যে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে সেখানকার জনগণের কাছে এখনো এই ঘটনা নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। কারণ এই ঘটনা বহু চুপসে যাওয়া ঘটনার একটি মাত্র প্রকাশিত রূপ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো এলাকা মানেই সেখানে জাতিগত সংঘাত-বিদ্বেষের কোনো না কোনো উপাদান থাকবেই। এই সাদামাটা ধর্ষণ ও খুনের পেছনেও তার কোনো ব্যতিক্রম নেই। মূলতঃ জাতিগত বিষয়কে উপজীব্য করে সেখানকার পাহাড়ি জনগণের ভূমি দখলকে কেন্দ্র করেই সে অঞ্চলে নানা ধরণের সংঘাত-হামলা-প্রতিরোধ সংঘটিত হয়।
এখনো থুমাচিঙ মারমার ধর্ষনকারী ও খুনীরা ধরা পড়েনি। প্রশাসন তাদের ধরার জন্য উদ্যোগও খুব দায়সারাভাবে নিচ্ছে।
কাউখালীবাসী পাহাড়ি জনগণ ঘোষণা দিয়েছে তারা এই ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার চায়।
তারা এই ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে নিম্নের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে-
২৩ জানুয়ারি, ২০১৩- থুমাচিঙ মারমার ধর্ষন ও খুনের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সমাবেশ ও ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি পেশ
২৪ জানুয়ারি, ২০১৩- কাউখালী উপজেলায় ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস বর্জন।
সচেতন সকলের সহায়তায় পার্বত্য সমস্যা দেশেরই একটি সমস্যা হয়ে উঠুক- দেশেরই একটি সমস্যা হিসেবে তা সমাধানের জন্য সকলের ভূমিকা জোরদার হোক এই প্রত্যাশা।
থুমাচিঙ মারমা ধর্ষণ ও হত্যা বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন-
থুমাচিঙ ধর্ষণ ও খূন
সর্বমোট ৪১টি মন্তব্য করা হয়েছে
কিছু বলতে চান? লিখুন তবে ...
মিঠুন চাকমা বলেছেন:
জাতিগত বিদ্বেষের বিষ বাস্প ছড়িয়ে সবাই সেখানে ফায়দা লুটতে চায়। তাই পাহাড়ি দ্বারা পাহাড়িদের উপর সংগঠিত অত্যাচার, নির্যাতন , ধর্ষনের মত ঘটনাগুলোকেও বাংগালীদেরকে জড়িয়েই পরিবেশন করা হয় কারন তাতে ভাল দাম পাওয়া যায়।
শান্তি চুক্তি বিরোধিতাকারী ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতার নামে আপনার নাম। জানিনা আপনি ই সেই ব্যাক্তি কিনা। ভুল হলে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিচ্ছি আগে ভাগেই। আর যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে এই ব্লগ সহ অন্যান্য ব্লগে আপনাদের সরব উপস্থিতি’র কারণ্টা একেবারেই অজানা নয়।
আমি ইউপিডিএফ-এর একজন সদস্য মাত্র। আমি পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য নই।
আমার পরিচয়কে বড় করে দেখার কোনো কারণ দেখিনা। আর ইউপিডিএফ ‘শান্তি’ এবং ‘চুক্তিবিরোধী’ কোনো সংগঠনও নয়।
স্বাধীনতার বছল এতদিন তো এই ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ‘জাতিগত বিদ্বেষের বিষবাষ্প’ই তো আমরা দেখে আসছি!
আমার লেখায় আমি বলেছি,
পার্বত্য সমস্যাকে যতই ‘অন্য সমস্যা’ ভিন্ন সমস্যা’ বা ‘বিচ্ছিনতাবাদী’ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে ততই এই আপনার কথামত,
এই কথাটিরই প্রতিফলন ঘটতে দেখবো।
পার্বত্য যেকোনো সমস্যাকে নিজের বা দেশের একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে সবার কাছে এটাই প্রত্যাশা।
দেরীতে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত।
“কিন্তু সমস্যা হল, সন্দেহের তীরটা সব সময়ই সেটলারদের দিকে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সেটা উদ্দেশ্য প্রনোদিত।
জাতিগত বিদ্বেষের বিষ বাস্প ছড়িয়ে সবাই সেখানে ফায়দা লুটতে চায়।”
উদ্ধৃতির প্রত্যুত্তরে আমার লেখা বাক্যটি বাক্যটি হবে, “স্বাধীনতার পর থেকে এতদিন এই ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ‘জাতিগত বিদ্বেষের বিষবাষ্প’ই তো আমরা দেখে আসছি!
এ কর্মসূচি পালনের সময় সেখানে কাউখালীর বেতবুনিয়ায় পুলিশবাহিনী বিনা উস্কানীতে কয়েকজন পিকেটারকে আটক করে গাড়িতে তুলে বোর চেষ্টা করলে পিকেটারদের সাথে পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ-ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। এতে কয়েকজন পুলিশ এবং পিকেটারও আহত হন। এরফলে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে অনাকাঙ্খিত কোনো পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য কাউখালী এলাকার জনগণ তাদের নির্ধারিত কর্মসূচি কয়েকদিনের জন্য পিছিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে পরবর্তীতে কোনো কর্মসূচি দেওয়া হলে পাঠকদের জানানোর চেষ্টা করবো।
দেখুন, আপনার উত্তরের অনেক অংশ আমি খুশি মনে গ্রহন করতে পারছি না, কারন সেগুলি স্ববিরোধিতায় ভর্তি।
ধর্ষন , তা সেটা যেখানেই ঘটুক না কেন, আমাদের সবার ই উচিত সেটার প্রতিকার এবং প্রতিবাদ করা। আপনি এবং আপনার সংগঠনও সেটা চান বলে মনে হয়। কিন্তু কাউখালিতে যে কর্মসূচী আপনারা দিয়েছেন সেখানে শুধু পাহাড়ী জনগনের অংশগ্রহনের কথা বলেছেন। একজন মার্মা মেয়ে কি আমার মেয়ে, বোন বা মা হতে পারে না? তাহলে আমি কেন সেই কর্মসূচীতে অংশ গ্রহন করতে পারবো না?
কাউখালির পাহারী জনগন কেন? এটা তো আমার দাবী। আজ সমতলে যখন একটি বাংগালী মেয়ে ধর্ষিত হয় তখন কি আপনার বিবেক কষ্টে চৌচির হয় না? তাহলে কাউখালির ঘটনায় শুধু পাহাড়ী জনগনের কষ্ট কেন? নাকি আপনারা ধরেই নিয়েছেন সব সেটলারই ধর্ষক??? তাহলে এই কর্মসূচীতে বাংগালী নেই কেন? নেই কারন সেই একটাই। “জাতিগত বিদ্বেষের বিষ বাস্প ছড়িয়ে সবাই সেখানে ফায়দা লুটতে চায়”। কাউখালির বাংগালী শুধু নয়, সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামেই আপনারা সকল বাংগালীকে ব্রান্ডিং করে চলেছেন।
সত্যি কি সেটা মনে প্রানে বিশ্বাস করেন?
ধর্ষক সে যে হোক, আসুন সবাই একত্রে তার বিচার দাবী করি। চলুন সবাই মিলে এমন পদক্ষেপ নেই যাতে আর কোন মা, বোন বা শিশু এই বাংলার বুকে ধর্ষিত না হয়।
আপনি যা লিখেছেন তা নিচে উদ্ধৃতি আকারে উল্লেখ করছি
এই বক্তব্যের জবাবে বলছি, আমি এবং আমরা সবার প্রতিনিধিত্ব করতে তো পারছিনা! আপনার নাম হচ্ছে ‘এলডোরাডো’। আপনি অব্শ্য অপাহাড়ি বা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘বাঙালী’ জাতির অংশ কিনা আমার জানা নেই। আমি আমার লেখার শিরোনামে কী লিখেছি এবং ভেতরে ঠিক সেই লেখা কীভাবে লিখেছি তাও নিশ্চই খেয়াল করেছেন। একস্থানে আমি ‘পাহাড়ি’ শব্দটি উল্লেখ করেছি অন্য স্থানে অর্থাৎ শিরোনামে আমি ‘কাউখালী জনগণ’ উল্লেখ করেছি। কেন করেছি জানেন? এই যে আপনি যেভাবে একজন বৃহৎ জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত(যদি হয়ে থাকেন) হয়ে যেভাবে “
এই কথাটি বলে আমার আহ্বানের বা বক্তব্যকে শুধু ‘পাহাড়ি জনগণ’ এই শব্দদ্বয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ঘোষিত কর্মসূচিকে ‘আপনারা দিয়েছেন ‘ লিখে আমাদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন তাতে তো আমার শেষের আহ্বানকেই (যা আপনি উদ্ধৃতি চিহ্ন আকারে লেখায় উল্লেখ করেছন) আপনি আর গুরুত্ব না দিয়ে ” সত্যি কি সেটা মনে প্রানে বিশ্বাস করেন?” এই প্রশ্নটি রেখে আমার অব্স্থানের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
তাহলে আপনিই বলুন আমি কিভাবে ‘পাহাড়ি জনগণ’ ব্যতীত ‘অপাহাড়ি জনগণকে’ও লড়াইয়ের কাতারে যোগ করবো!?
যদি যোগ করতেই হয় তাহলে আপনাকেই সক্রিয় হয়ে যুক্ত হতে হবে। এবং সেই লড়াইয়ে আপনাকে স্বাগতম।
আপনার লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি,
উপরে ‘কাউখালীর পাহাড়ি জনগণ ‘ এবং ‘কাউখালী জনগণ’ বিষয়টি বাদে আমার লেখার মধ্যে কী স্ববিরোধিতা রয়েছে বলে আপনি কি আরেকটু উল্লেখ করবেন?
আমার লেখার মধ্যে যে স্ববিরোধিতার কথা আপিনি বলছেন ঠিক সেরকম স্ববিরোধিতাও আপনার লেখায়ও দৃশ্যমান রয়েছে বলে আমার মূল্যায়ন!
উল্লেখ করছি। নিচে আপনার দুটো উদ্ধৃতি খেয়াল করুন
প্রথম উদ্ধৃতি ,
দ্বিতীয় উদ্ধৃতি ,
আপনার উদ্ধৃতিতেই তো স্ববিরোধিতা!
একদিকে বলছেন, ‘কর্মসূচিতে বাংগালী নেই কেন?
অন্যদিকে সেই আপনিই বলছেন, আমাদের সবার ই উচিত সেটার প্রতিকার এবং প্রতিবাদ করা
আপনি একদিকে কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছেন আবার অন্য উদ্ধৃতিতে বলছেন ‘বাংগালী নেই কেন’।
তারপরও আপনাকে ধন্যবাদ আমার সাথে আলোচনা করার জন্য।
আপনার নিচের এই উদ্ধৃতিটি দিয়ে আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন সে সম্পর্কে আমি স্পষ্ট নই। আপনার উদ্ধৃতি,
প্রথমে নাম ব্যাতিত আমি আমার পরিচয়টুকু নিশ্চিত করে নিচ্ছি। আমি একজন বাংলাদেশী বাংগালী। আপনার ভাষায় এদেশের সংখ্যাগরিষ্ট বাংগালী জাতির অংশ। কিন্তু এটা নিয়ে আমার কোন অহংবোধ নেই। যদি নিজের অজান্তে এরুপ কিছু প্রকাশ পেয়ে থাকে তাহলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিবেন। আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি যে, স্বাধীন এই বাংলাদেশে সকল ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও জাতির মানুষ সমান সুযোগ এবং অধিকার পাওয়া উচিত।
আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ সময় কাজ করেছি। আপনি ইউপিডিএফ সম্মন্ধে যতটুকু জানেন (জানলেও অনেক কিছুই স্বীকার করবেন না এটা ধরে নিয়েই বলছি) তার চেয়ে আমি হয়তো অনেক কম জানি, কিন্তু একেবারেই অজ্ঞ নই। ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় প্রতিটি সদস্যের নাম আমার জানা আছে এবং তাদের অনেকের ব্যাপারেই আমার ব্যাক্তিগত আগ্রহ রয়েছে, যদিও তারা অত্যন্ত কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে জীবন যাপন করেন।
আপনার পোষ্টের প্রথমেই যে ছবিটি ব্যাবহার করেছেন, সেটা লক্ষ্য করুন। ব্যানারে লিখা আছে “ হিল উইমেন ফেডারেশন” এর নাম যা ইউপিডিএফ এর অংগ সংগঠন। এটা সহ অন্য তিনটি পাহাড়ি সংগঠন এর ব্যানারে যে কর্মসূচী ডাকা হয়েছে বলেছেন – কিন্তু আমি নিশ্চিত যে এগুলো ইউপিডিএফ এরই অংগ সংগঠন। অর্থাৎ প্রকাশ্যে যে বা যিনি ই থাকুন না কেন, পর্দার আড়ালে ইউপিডিএফ।
আপনি প্রথম মন্তব্যে বলেছেন ইউপিডিএফ “শান্তি” এবং “চুক্তি বিরোধী” সংগঠন নয়। একমত হতে পারলাম না। যেদিন খাগড়াছড়িতে অস্ত্র সমর্পন অনুষ্ঠান হয়েছিল তখন হিল উইমেন ফেডারেশনের ব্যানারে কি লিখা ছিল নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে? না থাকলে পার্টির অফিসে গিয়ে পুরনো ছবিগুলো একবার দেখে নিবেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ইউপিডিএফ কোনও দিনই শান্তি চুক্তি মেনে নেয়ার কথা বলেনি। ইউপিডিএফ এর ওয়েব সাইটে (বেশ কয়েক বছর যাবত এটা ব্যাবহার কিংবা আপডেট করা হয় না) পরিস্কার ভাষায় পার্টির মেনিফেষ্টো লেখা আছে – “পূর্ন স্বায়ত্ত্ব শাসন চাই” যা শান্তি চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক। সুতরাং ইউপিডিএফকে শান্তি চুক্তি’র পক্ষের শক্তি বলেও মনে হয় না।
আমার মন্তব্যে স্ববিরোধিতা কোথায় এটা আমি বুঝতে পারিনি। আমি আবারো বলছি, যে কোন নারী বা শিশু নির্যাতিত হলে আমি নির্যাতিতের পক্ষে, হোক সে পাহাড়ী, হোক সে বাংগালী। এখানে বাংগালী বা পাহাড়ী কোন ফ্যাক্টর হতে পারে না। হওয়া উচিত নয়। সুতরাং আমি মনে করি পাহাড়ি-বাংগালী এক হয়ে কাউখালিতে এই আন্দোলন চালিয়ে গেলে দোষীকে (সে যেই হোক) দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব। অথচ আপনি এবং তিনটি পাহাড়ী সংগঠন কাউখালিতে বসবাসরত কোন বাংগালীকে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেন নি।
লক্ষ্য করুন, যেখানে মারমা মেয়েটি খুন হয়েছে তার আধা কিলোমিটারের মধ্যে সেটলারদের গ্রামের অবস্থান কোন ক্রমেই এটা প্রমান করে না যে কোন সেটলার তাকে খুন করেছে। অথচ উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে এ কথাটাই ইউপিডিএফ এবং তার অংগসংগঠন গুলি প্রচার করে আসছে। তাই কাউখালিতে মার্মা মেয়েটি ধর্ষনের শিকার হলে প্রতিবাদের জন্য কোন বাংগালীকে সেখানে সম্পৃক্ত হতে দেয়া হয় না। কারন বাংগালী কেউ সেই আন্দোলনে থাকলে জাতিগত বিদ্বেষের বিষবাস্প ছড়িয়ে ইউপিডিএফ ফায়দা লুটতে পারবে না। শুধু কাউখালির ঘটনাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কোন সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা আইনি ঘটনা/ দুর্ঘটনা বা এ জাতীয় বিষয়কে জাতিগত বিদ্বেষের রং/চং মেখে দেশে-বিদেশে প্রচার করে বাংগালী সেটলার সহ পুরো বাংগালী জাতিকেই হেয় প্রতিপন্ন করে ফায়দা লুটে আসছে ইউপিডিএফ এবং জেএসএস। আমি বারবার জাতিগত বিদ্বেষের কথা বলছি । হয়তো শুনতে বা পড়তে এক ঘেয়েমি লাগছে। কিন্তু এর চেয়ে ভাল অন্য কোন প্রতিশব্দ আমার ডিকশনারীতে নেই।
ইউপিডিএফএর মধ্যে আপনার অবস্থান কোথায় সেটা আপনি যেভাবে বলেছেন, তাতেই আমার আশংকা সত্য হয়েচ্ছে। ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুব ফোরামের সাবেক সভাপতি’র কোন পদ নেই এটা আমার মত অনেকেই যারা ইউপিডিএফ এবং জে এস এস সম্মন্ধে খোজ খবর রাখেন তাদের জন্য বিশ্বাস করা দুরুহ।
আপনার সাথে একাডেমিক আলোচনা উপভোগ করছি। ভাল থাকবেন।
আপনার লেখার উপজীব্য বিষয় নিয়ে আপনার উদ্ধৃতিসহ উত্তর দেবার চেষ্টা করছি।
তার আগে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আলোচনায় আসার জন্য।
আপনার উদ্ধৃতি,
আমার বক্তব্য,
ক) ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় সদস্যদের নাম আপনার জানা আছে জেনে আমার এই বোধ জাগছে যে আপনি পার্বত্য রাজনীতি বিষয়ে ওয়াকিবহাল।
খ) কেন্দ্রীয় সদস্যদের বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত আগ্রহ রয়েছে জেনে এই বোধ আরও জোরালোই হলো।
গ) ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ‘কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে জীবন যাপন করেন’, আপনার এই ধারণার সাথে আমি অংশত একমত হতে পারি। কিন্তু কেন? তা যদি খোলাসা করতেন তবে বোধহয় আলোচনা জমতো। যেহেতু আপনি পার্বত্য রাজনীতি বিষয়ে ওয়াকিবহাল সেহেতু আপনি এই বিষয়টি নিয়েও নিশ্চয় ওয়াকিবহাল থাকবেন! আমার এই কেন প্রশ্নের উত্তর দেবেন আশা করি।
আপনার উদ্ধৃতি,
আমার বক্তব্য, ইউপিডিএফ পর্দার আড়ালে থাকলে বোধহয় কোনো অসুবিধা হবার কথা নয়! সুতরাং আপনি যে উদ্দেশ্যে এবং অন্তর্নিহিতভাবে আপনার বক্তব্যে আপনি যে মতামত প্রকাশ করতে চাচ্ছেন তা আরো খোলাসা করে বললেই বরং আমরা জানতে পারতাম ‘পর্দার আড়ালে ইউপিডিএফ’ যদি থেকে থাকে তবে তাতে কীসের সমস্যা হতে পারে। ধন্যবাদ
আপনার উদ্ধৃতি,
আমার বক্তব্য,
আপনি বোধহয় ‘শান্তি চুক্তি’ বলতে ‘পার্বত্য চুক্তি’কে বোঝাচ্ছেন। এখানে জানা থাকা প্রয়োজন যে, মূল পার্বত্য চুক্তির কোনো বাক্যে এই ‘শান্তি চুক্তি’ শব্দটি নেই।সুতরাং , আক্ষরিক অর্থে ধরলে ইউপিডিএফ ‘পার্বত্য চুক্তি’কেই প্রত্যাখ্যান করেছে, ‘শান্তি চুক্তি’কে নয়। আর দেশের মধ্যে যে কেউই যে কোনো চুক্তিকে নাও মানতে পারে।এবং তার ভুরি ভুরি উদাহরণ আপনি পাবেন। ইউপিডিএফ যুক্তি সংগত কারনেই ‘পার্বত্য চুক্তি’কে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই আলোচনায় এ বিষয়ে বলে আমি আলোচনাকে দির্ঘায়িত করতে চাইনা।আপনার বা যে কারোর জানার আগ্রহ থাকলে আমি এবং আমাদের সংগঠনের দলিলও আপনি পড়তে পারবেন।
আপনার উদ্ধৃতি ,
আমার বক্তব্য, আপনার ‘শান্তি চুক্তি’ বা ‘পার্বত্য চুক্তি’র সাথে ‘পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন’ এর ঘোষণা কোনোভাবেই অ’সাংঘর্ষিক’ হবেনা তাতো জানাই। কিন্তু এতে কী এমন ভুল হলো? আপনি বোধহয় ‘পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন’ শব্দের মধ্যে অন্য কিছুর ইঙ্গিত পাচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে। তবে তাও খোলাসা করে বললেই ভালো হয়।
ক্রমাগত …
আপনার উদ্ধৃতি,
আমার বক্তব্য, এই বক্তব্যকে আমি আসলে ‘সাম্প্রদায়িক চেতনাপুষ্ট’ বলে চিহ্নিত করতে বাধ্য হচ্ছি। এজন্য আপনার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমার এই ধারণা কেন জন্ম নিলো তা বলছি, ১। আমি আমার পূর্বে লেখায়ও বলেছি যে, আমি বা আমাদের সংগঠন সবার প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা রাখেনা।এবং এজন্যই এই লড়াইয়ে অংশ নেয়ার জন্য, সংহতি প্রদানের জন্য সবার প্রতি আহ্বান আমার লেখায় রয়েছে। তারপরও যদি আপনি ‘সাম্প্রদায়িকভাবে’ প্রসংগতি টেনে আনেন তবে আমার তো উত্তর বারবার দেবার মত আকাঙ্কা থাকেনা। আর কর্মসূচি তো এখনো শুরুই হয়নি! কর্মসূচিতে যে পাহাড়ি ভিন্ন অন্য বাঙালী জনগণও যে অংশ নেবেনা তা কিভাবে আপনি ওয়াকিবহাল হলেন? তবে সমস্যা হচ্ছে আপনার কথামত ““জাতিগত বিদ্বেষের বিষ বাস্প ছড়িয়ে সবাই সেখানে ফায়দা লুটতে চায়”। কাউখালির বাংগালী শুধু নয়, সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামেই আপনারা সকল বাংগালীকে ব্রান্ডিং করে চলেছেন। এই ভাবনাটি ভাবার এবং আপনারই কথামত জাতিগত বিদ্বেষের বিষ বাস্প ছড়িয়ে সবাই সেখানে ফায়দা লুটতে চাওয়ার মত লোকজন সেখানে অভাব নেই।এবং এই ফায়দা তোলার জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকেও যে ব্যবহার করা হয় তাতেই এই সমস্যা আরো বেশী জিইয়ে থাকে।
অপ্রাসঙ্গিকহলেও আমি এখানে এখন আশঙ্কা প্রকাশ করছি বোধকরি কাউখালীতে ‘ইউপিডিএফ বা তার অঙ্গ সংগঠন এখন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গেলেই এই ‘জাতিগত বিষবাষ্প’ বাষ্পায়িত হতে দেখবে। আমার আশঙ্কা অমূলক হোক এটা আমি মনেপ্রাণে চাই।
যাহোক, পাহাড়ি-অপাহাড়ি সবাই মিলে কাউখালীতে থুমাচিঙ মারমা ধর্ষন ও খূনের প্রতিবাদ জানাবে এটাই আশা।
আপনার উদ্ধৃতি
আমার বক্তব্য,
প্রথমে বলছি, খুন বা ধর্ষ যে-ই করুক তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
দ্বিতীয়ত, ধর্ষন ও খোনের সাথে কারা জড়িত তা নিশ্চয়ই আপনি সরেজমিন ঘুরে এসে এ্ই কথাটি বলেননি!? আপনার উদ্ধৃতি ”
ডিয়ার মি. এলডোরাডো,
আপনার উদ্ধৃতি
আমার বক্তব্য,
প্রথমে বলছি, খুন বা ধর্ষ যে-ই করুক তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
দ্বিতীয়ত, ধর্ষন ও খুনের সাথে কারা জড়িত তা নিশ্চয়ই আপনি সরেজমিন ঘুরে
ডিয়ার মি. এলডোরাডো,
আপনার উদ্ধৃতি
আমার বক্তব্য,
প্রথমে বলছি, খুন বা ধর্ষ যে-ই করুক তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
দ্বিতীয়ত, ধর্ষন ও খোনের সাথে কারা জড়িত তা নিশ্চয়ই আপনি সরেজমিন ঘুরেএসে বলেননি!? তিন সংগঠনের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে কেন আধকিলোমিটার দূরের চিহ্নিত কয়েকজনকে দায়ি করা হয়েছে। আমি সে এলাকায় সরেজমিন গিয়েছি। ভিক্টিমের আত্মীয়রা তিনজনের নামও বলেছেন। কিন্তু আমি এবং আমরা যারা গিয়েছি তারা এই নাম এখনো প্রকাশ করিনি বা বলতে চাইনি। কারণ পুলিশের বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও তো কিছু দায়িত্ব রয়েছে এই বিষয়ে! তারা কী করে আমরা তা অভজারভ্ করছি।ধন্যবাদ।
আপনার উদ্ধৃতি
আমার বক্তব্য,
প্রথমে বলছি, খুন বা ধর্ষ যে-ই করুক তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
দ্বিতীয়ত, ধর্ষন ও খুনের সাথে কারা জড়িত তা নিশ্চয়ই আপনি সরেজমিন ঘুরেএসে বলেননি!? তিন সংগঠনের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে কেন আধকিলোমিটার দূরের চিহ্নিত কয়েকজনকে দায়ি করা হয়েছে। আমি সে এলাকায় সরেজমিন গিয়েছি। ভিক্টিমের আত্মীয়রা দু’জনের নামও বলেছেন এবং তারা এখন পলাতক। কিন্তু আমি এবং আমরা যারা গিয়েছি তারা এই নাম এখনো প্রকাশ করিনি বা বলতে চাইনি। কারণ পুলিশের বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও তো কিছু দায়িত্ব রয়েছে এই বিষয়ে! তারা কী করে আমরা তা অভজারভ্ করছি।
তিন সংগঠন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো প্রচারণা করছেনা। তবে কাউখালীতে থুমাচিঙ মারমা ধর্ষন ও খুন সম্পর্কে আপনার কাছে কোনো নতুন তথ্য থেকে থাকলে আপনি শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।
আপনার উদ্ধৃতি,
আমার বক্তব্য, আপনার এই কথাটির সাথে আমি একমত নই। থুমাচিঙ ধর্ষন ও খুনের পর থুমাচিঙ যে স্কুলে লেখাপড়া করতো সে স্কুলের পাহাড়ি-অপাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীরা একযোগে এ্ই ধর্ষন ও খুনের প্রতিবাদ করেছে। তা্ই আপনার মনগড়া বক্তব্য মেনে নিতে পারছিনা।
আপনার উদ্ধৃতি ,
আমার ব্ক্তব্য,
আমার প্রথম বাক্য বিষয়ে আমার বক্তব্য আপনার এই বক্তব্য মনগড়া। তার বেশী আমি বলছিনা।
দ্বিতীয় বাক্যসমূহ বিষয়ে বলবো, জাতিগতভাবে বৃহৎ সংখ্যাগুরু জনসমষ্টি যদি অন্য ক্ষুদ্র জাতিসমূহের প্রতি আচরণে মার্জিত না হয় তবে কী করার আছে?
অবশেষে বলবো, সবকিছু সন্দেহ-বাতিকগ্রস্তভাবে না দেখল্ই বরং আমাদের সবার মঙ্গল হবে।
ধন্যবাদ
ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র গ্রুপ এর অস্তিত্ব, কর্ম পদ্ধতি এবং মাঝে মাঝে তাদের অবস্থান সম্মন্ধে বিস্তারিত অবগত কারো পক্ষে সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত ভাবে কিছু দেখার অবকাশ নেই। ভাল কথা “আনন্দ চাকমা’ কে চেনেন তো? নাকি তার নামই শুনেন নি?
যাইহোক আমাদের আলোচনাটা ইউপিডিএফ এর রাজনৈতিক দর্শন এবং আন্দোলনের গতি প্রকৃতির দিকে চলে যাচ্ছে। সেটা সযতনে এড়িয়ে গেলাম। একই ভাবে এড়িয়ে গেলাম ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কঠোর গোপনীয় জীবন যাপনের বিষয়টিও।
মূল প্রসংগ ছিল আমার এক ধর্ষিতা এবং খুন হয়ে যাওয়া বোনের ধর্ষন এবং খুনের প্রতিবাদ। আপাততঃ সেই প্রসংগেই থাকি। দয়া করে এই আন্দোলনকে পাহাড়ী-বাংগালী বিভেদের আন্দোলনের আরেকটি উপাদান করে ফেলবেন না। আমাকে এবং আমাদের সবাইকে এই আন্দোলনে শরীক করুন। এই বাংলায় যেখানেই কোন নারী বা শিশু নির্যাতিত হোক না কেন, আসুন সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।
কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলি।
ভাল থাকবেন।
আপনি সচেতনভাবেই এ বিষয়টির দিকে যাবেন এ আশঙ্কাই করছিলাম। আপনার উদ্ধৃতি দিচ্ছি,
আপনার এই বক্তব্যের জবাবে আমি শুধু এ কথাই বলবো যা আমি সবসময় বলে থাকি, ইউপিডিএফ কে তার আদর্শ দেখেই বিচার করতে হবে ।তার আপনার কথায় ‘সশস্ত্র গ্রুপ’ এর অস্তিত্ব দেখে আপনি যদি বিচার করেন তবে আপনাকে সেনাশাসনের অস্তিত্বও স্বীকার করতে হবে, সেটলারদের দ্বারা জায়গাজমি দখল করাটাও স্বীকার করতে হবে। প্রত্যেক ক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে ।
“আনন্দ প্রকাশ চাকমা’ কথা বলছেন।তাকে আমি চিনি । তিনি ইউপিডিএফএর একজন কেন্দ্রীয় নেতা। বোধহয় তাকে আপনি ইউপিডিএফএর ‘সশস্ত্র গ্রুপ’ এর প্রধান বলে পরিচিত করানো চেষ্টা করছেন। এই বক্তব্য আপনি দিতে থাকলে তিতাই বেড়োবে। দ্বন্দ্ব বাড়বে, এবং অনেকের জন্য এই দ্বন্দ্বই ‘স্বর্গীয়’!
আপনার এই বক্তব্যের জবাবে বলছি যতদিন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দমন-পীড়ন থাকবে ততদিন আপনি কঠোর গোপনীয় জীবন যাপনের দ্বারা পার্টি কর্মীদের জীবন যাপন করতে দেখবেন।
এতে আমি আশ্চর্য হবার কিছুই দেখিনা।
আপনাকে আমার জীবন দর্শন সম্পর্কে বলে রাখি আমি সত্যকে সত্য বলতেই ভালোবাসি তা যতই তেতো হোক! তবে ব্যক্তিগত একটি সত্যও বলে রাখি আমিও কিন্ত এই ‘রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন’কে ভয় করি! তবে এটাই সত্য মানি, আমি আমার কথা বলতে দ্বিধাবোধ করিনা যতক্ষণ আমাকে দমন-পীড়নের দ্বারা স্তব্ধ করে দেওয়া না হয়।
আপনাকে ধন্যবাদ
আপনাদের শান্ত, যুক্তির চাপান-উতোর, সৌজন্যমূলক এবং একাডেমিক আলোচনা আমাদের এই ব্লগের এক আদর্শ হিসেবে দেখছি। আপনাদের দুজনকেই আমি এজন্য অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা জানাই।
প্রধানতঃ, আপনাদের অভিনন্দন জানানোর জন্যই এই মন্তব্যের পাতা খোলা কয়েছে, কারন পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি বিশদ অবগত নই তাই আপনাদের চমৎকার আলোচনায় আমার কোন কিছু যোগ করার নেই। আমি শুধু আপনাদের এটুকু মনে করিয়ে দিতে চাই, এককেন্দ্রিক বাংলাদেশের সংবিধানুযায়ী কোন বিশেষ অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই। যদি ভারতের একাংশ এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে একটি রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার পিরকল্পনা থেকে থাকে, তবে তা হবে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ভুল। এধরনের পদক্ষেপকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র রাষ্ট্রবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবেই দেখবে।
এই সাথে, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙলাভাষী মানুষের স্মরন রাখা উচিৎ, সুদূর পঞ্চাশের দশক থেকে পাহাড়ী জাতিগত সংখ্যালঘু মানুষেরা বঞ্চনা, শোষন এবং রাষ্ট্রশক্তির আক্রমনের শিকার হয়েছেন। এজন্য আমাদের লজ্জিত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত। একই সাথে যে পদক্ষেপগুলো আজও পাহাড়ী ভাইবোনদের বঞ্চনা ও শোষনের কারন হয়ে আছে তা শান্তিপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়ে অপসারন করা উচিৎ।
আপনাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আপনাদের উভয়ের নিরাপদ ও সুখীজীবন একান্তভাবে কামনা করছি। আবারো ধন্যবাদ।
শুভকামনা।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
প্রথমে আমি বিডিনিউজ২৪.কম ব্লগের এডমিনকে এই ফাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই ব্লগে বিভিন্ন আলোচনার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।কিছূদিন আগে আমি একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকার স্বনামধন্য একটি ব্লগের সদস্য হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম রেজিস্ট্রি করেও এখনো আমি সদস্য হতে পারিনি। এরই মধ্যে বিডিনিউজ২৪.কম ব্লগের সদস্য হই। এবং নানা বিষয়ে নিয়মিত না হলেও অনিয়মিত পোস্ট করছি। কেন আমাকে সেই ব্লগের সদস্য করা হয়নি তা আমার জানা নেই। বিডিনিউজ২৪.কম ব্লগে আপনি পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ নানা বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করতে পেরে আমার ভালই লাগছে। অন্তত কয়েকজনকে তো জানানো সুযোগ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয় সহ নানা বিষয়ে মতামতগুলো। এর আগে তো কোন বিষয়ে ব্ক্তব্য দিতে চাইলেও দেয়া সম্ভব হয়ে উঠতো না!
এখন আপনার কিছূ ব্ক্তব্য নিয়ে আলোচনা করছি। আপনার ব্ক্তব্যের উদ্ধৃতি ,
আসলে আমি ভেবেছিলাম ভাল করে সময় নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে লিখবো। দুটি কারনে সেটা করতে পারি নি। প্রথম কারন – সময়। দ্বিতীয় কারন ভয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে লিখতে গেলে প্রিয়-অপ্রিয় অনেক সত্য কথা লিখতে হবে, অনেকের বিরাগ ভাজন হতে হবে, এমনকি আমার ব্যাক্তিগত ক্ষতিও হতে পারে। তাই লিখতে গিয়েও লিখি না। কিন্তু যখন দেখি অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মন্ধে কিছুই না জেনে অথবা আংশিক জেনে কিংবা উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে অথবা আবেগপ্রবন হয়ে বিভিন্ন সভা, সমিতি, পত্রিকা, ব্লগ ইত্যাদিতে মন্তব্য করেন, মতামত দেন, জনমত তৈরী করেন বা করার চেষ্টা করেন তখন খুব মন খারাপ হয়। কিছুদিন আগে এক সন্মানিত ব্লগার এই ব্লগেই আমাকে অনুরোধ করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে লিখার জন্য। আমি পূর্নাংগ ভাবে কিছু না লিখলেও অনেক সময় ছোট করে নিজের মন্তব্য দিয়েছি। তবে আজ আমি কিছুটা লিখবো।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক ইতিহাস যারা জানার চেষ্টা করেন তাদের প্রায় সকলেই জানবেন যে, সেখানে সেনা শাসনের ইতিহাস সাম্প্রতিক নয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাহাড়ি নেতা স্নেহ কুমার চাকমা এবং ঘনশ্যাম দেওয়ানের নেতৃত্বে একদল পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের অফিসে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেন যা ২০ আগস্ট পর্যন্ত উত্তোলিত ছিল। ২১ তারিখে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনী এসে সেই পতাকা নামিয়ে ফেলে। একই ঘটনা হয়েছিল বান্দরবানে। বোমাং সার্কেলের মার্মারা বার্মার সাথে সংযুক্ত হতে চেয়ে বান্দরবানে বার্মার পতাকা উত্তোলন করে এবং এখানেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী এসে বার্মার পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আসার পর বোমাং সার্কেলের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিরা বার্মায় পালিয়ে যান। অপরদিকে স্নেহ কুমার চাকমা পালিয়ে যান ভারতে (এবং পরে একসময় ত্রিপুরার প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন বলে জানা যায়)। পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনী তাদেরকে বিদ্রোহী, বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে গন্য করে পরোয়ানা জারি করে। এসব ঘটনাতে পাকিস্তানি শাসকদের নিকট উপজাতীয়দের (তখন উপজাতীয় বলা হত) আনুগত্য সন্দেহজনক হয়ে উঠে। যাইহোক ভিনদেশী পতাকা নামানো এবং পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলনের প্রয়োজনীয়তার সুত্র ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা অবস্থানের (মতান্তরে সেনা শাসনের) সূচনা হয়েছিল। আমাদের এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে ১৯৪৭ সালে স্নেহ কুমার চাকমা এবং তার অনুসারীদের দ্বারাই পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম পাহাড়ি-বাংগালী বিভেদের বীজ বপন এবং অংকুরোদগম হয়েছিল। ‘৪৭ এর দেশ বিভাগের ঠিক আগে পরে রাংগামাটিতে প্রথম বাঙ্গালী হত্যা যজ্ঞ শুরু হয়েছিল। ততকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্বপালনরত পাকিস্তান পুলিশের অধিকাংশই ছিল পাহাড়ি। তারা পতাকা উত্তোলন সহ বাঙ্গালী নিধনযজ্ঞে সরাসরি জড়িত ছিল। সেনাবাহিনী তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ না নিলে সেখানে রক্তের নদী বয়ে যেত। তার পরেও শতাধিক বাঙ্গালীর রক্তে সিক্ত হয়েছিল কর্নফুলি’র স্বচ্ছ নীল জল। অনেক নারী, বৃদ্ধ্ব আর শিশুর লাশ পুড়িয়ে এবং কেটে বিকৃত করা হয়েছিল। সংক্ষেপে এই হল পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন এবং পাহাড়ী-বাংগালী বিভাজন আর বিদ্বেষের ইতিহাসের সূচনা। পাঠক বলুন এখানে ঘটনা কোনটি এবং প্রতিক্রিয়াই বা কোনটি।
এরপর শুরু হল কাপ্তাই লেক এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান। প্রায় দশ হাজার পাহাড়ী পরিবার (প্রায় এক লক্ষ মানুষ) বাস্তুচ্যুত হল। তাদের জন্য ঘোষিত ক্ষতিপুরনের মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তের কাছে পৌছেছিল। বাকি টাকা সবাই মিলে লুটপাট। ‘৪৭ সালে পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ তাদের ব্যাক্তিগত উচ্চাশা বা লোভের কারনে রাংগামাটি ও বান্দরবানে ভারতীয় এবং বার্মার পতাকা উত্তোলন করে পাকিস্তানি প্রশাসনের মনে সন্দেহের যে বীজ বপন করেন, অনেকটা সেকারনেই কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মানের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারীকে মেকী বা অহেতুক জল ঘোলা করার পাহাড়ি নেতৃবৃন্দের অপপ্রয়াস বলে চালিয়ে দেয়ার সূযোগ পেয়ে যায় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী। চলতে থাকে বিশ্বাস অবিশ্বাসের খেলা। বাড়তে থাকে বঞ্চনা। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন, সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান জুড়েই অন্যায়, বঞ্চনা আর অত্যাচার চালিয়ে গেছে শাসক গোষ্ঠী। ১৯৭০ এর নির্বাচনে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপরই ঘটল সবচেয়ে মজার ঘটনা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ‘৪৭ থেকে ‘৭০ পর্যন্ত পাকিস্তানী শাসকদের বিরোধিতাকারী পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ পুর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতের বিপক্ষে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেলেন। ব্যাতিক্রম ছিলেন শুধু একজন, তিনি মং রাজা মং প্রু চাই চৌধুরী। তিনি নিজের ব্যাক্তিগত অস্ত্র, গোলাবারুদ, টাকা পয়সা এবং জনবল দিয়ে প্রত্যক্ষ ভাবে মুক্তিযোদ্বাদের সাহায্য করেন। আর চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় (বর্তমান রাজা দেবাশীষ রায়ের পিতা) নিজে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী’র সহায়তায় অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধ্বা এবং নিরীহ বাঙ্গালী হত্যা করেন। শুধু তাই নয়, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নাগা বিদ্রোহীদের সাথে আঁতাত করে তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় প্রদানের শর্তে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধ্বা নিধন কার্যে নিয়োজিত করেন পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ। এরই ধারাবাহিকতায়, স্বাধীনতার পরপর পার্বত্য চট্টগ্রামে পালিয়ে থাকা এদেশীয় রাজাকার (পাহাড়ী এবং বাঙ্গালী) এবং ভারতীয় নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে খুজে বের করে ধংস করতে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করেন। এখানে এসময় কিছু নৃশংস ঘটনা ঘটে বলে। ইতিহাস তার স্বাক্ষী।
এর পরের ইতিহাস আরো চমতকৃত করবে পাঠক বৃন্দকে। পুরো মুক্তিযুদ্ধ্বকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তাবেদারী করা পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ ১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশের প্রথম সংবিধান রচনার সময়কালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সাথে দেখা করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্ব শাসন দেয়ার জন্য অনুরোধ মতান্তরে চাপ প্রয়োগ করেন যার নেতৃত্ত্বে ছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা (মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা তখন মোটামূটি প্রধান রাজনৈতিক ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিতএবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সংক্ষেপে জেএসএস এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সন্তু লারমার বড় ভাই)। অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য যাই থাকুক না কেন, সমগ্র মুক্তিযুদ্ধ্বের সময়কালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী পাহাড়ী নেতৃবৃন্দের এহেন আবদার জাতির পিতা সহজভাবে নিতে পারেন নি। না নেয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। তার জায়গায় অন্য যে কেউ হলে এমনটাই ঘটতো। এরপর মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা জেএসএস এর সশস্ত্র গ্রুপ শান্তি বাহিনী গড়ে তোলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দেয়া অস্ত্র, দেশীয় রাজাকার এবং নাগা বিদ্রোহীদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র দিয়ে শান্তি বাহিনী অতি সহজেই নিজেদের অস্ত্র ভান্ডার গড়ে তোলে । ১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত জেএসএস তথা শান্তিবাহিনী বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধ্বাচরন করে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আবারো এক কৌশলগত রাজনৈতিক ভুল করে বসে জেএসএস। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা সদলবলে বাকশালে যোগদান করেন।
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫/৭৬ পর্যন্ত শান্তি বাহিনী প্রধানতঃ শক্তি সঞ্চয়েয় দিকে মনোনিবেশ করে। এ সময় (১৯৭৩ সালের দিকে) পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন জঙ্গলে তাদের প্রথম ব্যাচের অফিসারদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়। প্রথম ব্যাচের অফিসারগন সবাই পরে নিজ নিজ এলাকায় ছোট ছোট ব্যাচের প্রশিক্ষন দেন যারা মুলতঃ অস্ত্রধারী ক্যাডারের অফিসার বা সৈনিক হিসেবে শান্তি বাহিনীতে যোগ দেয়। বলাই বাহুল্য, প্রশিক্ষন নেয়া অনেককেই হত্যার ভয় দেখিয়ে শান্তি বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। শান্তি বাহিনীর দ্বিতীয় ব্যাচের অফিসারদের প্রশিক্ষনও বাংলাদেশে অভ্যন্তরে হয়েছিল। তবে তারপরের কয়েকটি ব্যাচের প্রশিক্ষন হয়েছিল পার্শ্ববর্তী একটি দেশে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনকের মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের পর ১৯৭৬ সালে পার্শ্ববর্তী সেই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে (ইচ্ছা করেই নাম উল্লেখ করলাম না) প্রচুর অস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষন, আশ্রয় এবং কৌশলগত দিক নির্দেশনা পেয়ে শান্তি বাহিনী হয়ে উঠে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুর্তিমান ত্রাস। তাদের প্রথম আক্রমনটি পরিচালিত হয়েছিল পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধ্বে। ১৯৭৬ সালের ১৮ জুলাই বিলাইছড়ি থানার তক্তানালার কাছে মালুমিয়া পাহাড়ে শান্তিবাহিনীর পাতা ঐ এম্বুশে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিল। এরপর আরো কয়েকটি আক্রমনে পুলিশ, ততকালীন বিডিআর এর বহু সদস্য এবং শত শত বাঙ্গালি নিহত হবার পর জিয়াউর রহমানের সরকার ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার” এক্টের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে পুর্নাংগ সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন যা আজ অবধি মোতায়েন আছে। পাহাড়ি-বাংগালী বিদ্বেষের বীজ কে কিভাবে রোপন করলো, পাঠক আশা করি সেটা বুঝতে পেরেছেন। ১৯৭৬/৭৭ সালে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর থেকে আজ অবধি পার্বত্য চট্টগ্রামে অসংখ্য সেনা, বিডিআর এবং পুলিশ সদস্য শান্তিবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। নিহত বাংগালীর সংখ্যা কয়েক হাজারের বেশী। সেনাবাহিনীর হাতে নিহত শান্তিবাহিনীর সংখ্যা প্রায় ২ শত। সেনাবাহিনী বা বাংগালীদের হাতে কতজন নিরীহ পাহাড়ি নিহত হয়েছেন সেটা সঠিক আমার জানা নেই। তবে এটা নিহত বাংগালীদের চেয়ে অনেক কম বলে আমি নিশ্চিত হয়েছি। শান্তি বাহিনীর হাতে নিহত বাংগালীদের কিছু ছবি আমার কাছে ছিল। এখন হারিয়ে ফেলেছি। যে কোন বিবেকবান মানূষের অন্তর স্তব্দ করে দিতে পারে এসব ছবি। এছাড়া শান্তি বাহিনীর হাতে শত শত ধর্ষনের ঘটনাও ঘটেছে। পাঠক জেনে অবাক হবেন, আইন শৃংখলা বাহিনীর যত সদস্য গোলাগুলিতে হতাহত হয়েছেন, তার চেয়ে কয়েকগুন বেশী মারা গেছেন ম্যালেরিয়ার আক্রমনে! !!
অনেক আশার আলো জালিয়ে ১৯৯৮ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হবার পর ভেবেছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্ত হবে। কিন্তু এরপর সেখানে জন্ম নিল জেএসএস তথা শান্তিবাহিনীর “বি টিম” অর্থাৎ ইউপিডিএফ। শুরু হল আরেক অধ্যায়। খাগড়াছড়ি ষ্টেডিয়ামে হিল উইমেন ফেডারেশনের ব্যানারে “পার্বত্য শান্তি চুক্তি মানি না, পূর্ন স্বায়ত্ব শাসন চাই” লেখার সুত্র ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্দেহের কারনেই বলুন আর দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনের কথাই বলুন, সেনাবাহিনীকে আর ব্যারাকে ফিরে যেতে দেয়া হল না। বরং বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সেনাবাহিনীকে ব্যরাকে যেতে দিলেন না পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ। এখানে কোনটা ঘটনা আর কোনটা প্রতিক্রিয়া সেটা সুস্থ বিবেকবান মানুষ মাত্রই বুঝবে। বলে রাখা ভাল, ২০০৬ সালে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র গ্রুপের এম্বুশে সর্বশেষ নিহত হন ক্যাপ্টেন গাজী নামক এক অফিসার। ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকে সেই আক্রমনে অংশ নিয়েছিলেন “জয় চাকমা” যাকে ট্রিপল মার্ডারের একটি ঘটনায় ফেরারী ঘোষনা করা হয়েছে। জয় চাকমা ইউপিডিএফ এর খাগড়াছড়ি অঞ্চলের একটি ছোট বাহিনীর কর্নধার। দুঃখের বিষয় এগুলো সংবাদ পত্রে আসে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী কোন সাংবাদিকের এত বড় বুকের পাটা নেই যে সে ইউপিডিএফ এর বিরুদ্ধে কলম ধরবে। ২০০৯ সালে খাগড়াছড়ির ইত্তেফাক সংবাদদাতা এরুপ একটি সংবাদ প্রচার করার পর তাকে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র কর্মীরা ধরে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন করে। শেষমেষ তিনি কয়েক লক্ষ টাকা মুক্তিপন এবং মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
পার্বত্য চট্টগ্রামে আইন শৃংখলা বাহিনী হত্যা কিংবা বাঙ্গালী সেটলারদের উপর অন্যায়, নিপিড়ন, হত্যা, ধর্ষনের ঘটনার সংখ্যা বিবেচনায় শান্তিবাহিনী অনেক অনেক এগিয়ে থাকলেও জেএসএস তথা শান্তিবাহিনী এবং বর্তমানে ইউপিডিএফ কখনোই তা স্বীকার করে না। বরং উভয়েই, শুরু থেকে কৌশলগত কারনে সেনাবাহিনীকে হেয় করা এবং প্রতিটি ঘটনায় যেভাবেই হোক সেনাবাহিনী এবং বাংগালীদেরকে জড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। একজন পাহাড়ি সন্ত্রাসী যদি কোন পাহাড়ি মেয়েকে ধর্ষন করে , সেটা অবলীলায় বাংগালীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হওয়। (বাংগালীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।) এটা পাহাড়ি নেতৃবৃন্দের তৈরী জাতিগত বিদ্বেষ বাচিয়ে তাদের আন্দোলনে একটা বাড়তি উদ্দীপনা বা খোরাক যোগায় বলেই আমার কাছে মনে হয়। আজ মিঠুন দা আমার হতভাগ্য মার্মা বোনটি’র ধর্ষনের ঘটনায় ক্ষুব্দ, বিক্ষুব্ধ। সংক্ষুব্দ আমিও। অথচ মাত্র ১-২ মাস আগেই পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে আমারই আরেক বাঙ্গালী বোন ধর্ষিতা হয়েছে। সেটা নিয়ে আমার প্রিয় মিঠুন দা’র কোন প্রতিক্রিয়া দেখলাম না। এছাড়া প্রায় প্রতি মাসেই চাদা চেয়ে চাঁদা না পেলে কিংবা চাহিদামত চাদা না পেলে ইউপিডিএফ আর জেএসএস কর্মীরা বাঙ্গালী ব্যবসায়ী, কৃষক এবং বাগান মালিককে মারধর, হত্যা, গুম করে দিচ্ছেন। সবচেয়ে অবাক লেগেছে একটা বিশেষ আচরনে। যদি কোন বাগান মালিক ঠিক মত চাঁদা না দেয় তাহলে রাতের আধারে এসে পুরো বাগানের অতি মুল্যবান সেগুন, মেহগনি বা ফলের গাছ গোড়া থেকে কেটে রেখে দেয় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা যাদের সবার সাথেই এলাকা ভেদে ইউপিডিএফ অথবা জেএসএস এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এগুলো সবই মুদ্রার এপিঠ। অপর পিঠে আছে পাহাড়ীদের উপর অত্যাচার আর নির্মমতার কাহিনী। সেগুলো আমি মিঠুন দা’র জন্য রেখে দিলাম।
এরপর সময় পেলে আমি শান্তি চুক্তির প্রেক্ষাপট নিয়ে লিখবো। লিখবো ইউপিডিএফ এর জন্ম ইতিহাস (আমি যতটুকু জানি) এবং তাদের কার্যপদ্ধতি। যেহেতু মিঠুন দা আনন্দ প্রকাশ চাকমা’র নাম এবং পরিচয় প্রকাশ করেছেন তাই আমি আর বিস্তারিত লিখলাম না। আনন্দ প্রকাশ চাকমার পরিচয়ই বলে দেয় কেন ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা কঠোর গোপনীয় জীবন যাপন করেন? তাই আমার যা বলার আমি পরের ফর্দে বলবো যদি মিঠুন দা অনুমতি দেন।
মিঠুন দা, আপনার ভাষায় “কেন আমি ইউপিডিএফ কে সন্দেহ” করি তার একটা কারন আমি ইতোপূর্বে আইরিন সুলতানার লেখা একটি ব্লগে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছিলাম। এখানেও মোটামুটি ইংগিত দিয়েছি। তবে সেই পুরনো মন্তব্যের বক্তব্য আজ আবারো একবার উল্লেখ না করে পারছি না। ইউপিডিএফ এর একজন কেন্দ্রীয় নেতা (পার্টির অভ্যন্তরে তার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নামটি আমি প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকলাম) আমাকে একদা বলেছিলেন স্বাধীকারের পথ ধরেই নাকি পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাধীনতা আসবে। আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম আসলে তিনি যা বলছেন সেটা তিনি Mean করছেন কিনা বা বিশ্বাস করেন কিনা? প্রতি উত্তরে তিনি যা বলেছিলেন তার মোটামুটি মানে এরকম যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সূচীত ১৯৬৬ সালের স্বাধীকার আন্দোলনই তো ১৯৭১ স্বাধীনতার আন্দোলনে রুপান্তরিত হয়েছিল এবং সেখান থেকেই তারা শিক্ষা নিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব কারন ছাড়াও ইউপিডিএফ এর পার্টি মেনিফেষ্টো সহ তাদের সামগ্রিক কর্মপদ্ধতি, সশস্ত্র গ্রুপের সংগঠনসহ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু এলাকায় ইউপিডিএফ কর্তৃক সমান্তরাল বিচার এবং প্রশাসন ব্যাবস্থা চালুর কথা বিস্তারিত জানি বলেই আমার এত ভয়। এবং আমার এই ভয় বা সন্দেহ অমুলক নয় কারন ১৯৭৪/৭৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত (এবং এখনও জেএসএস নিয়ন্ত্রিত কিছু কিছু এলাকায় এসব চালু আছে) জেএসএস যেভাবে কর্মী, অস্ত্র এবং অর্থ সংগ্রহ করতো, প্রশিক্ষন কর্মকান্ড চালাতো, যেভাবে কঠোর গোপনীয় জীবন যাপন করতো, এলাকা ব্যাপি আধিপত্য বিস্তার, সামরিক ষ্টাইলে অপারেশন চালাতো, ঠিক একই পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে ইউপিডিএফ।
যাইহোক, রাজনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের ভুমি নিয়েও অনেক সমস্যা আছে। আমার দৃষ্টিকোন থেকে সেটা নিয়ে আমার বক্তব্য আমি তুলে ধরবো কোন এক দিন। পাশাপাশি মিঠুন দা’কে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভুমি সমস্যা নিয়ে আপনার এবং আপনার পার্টি’র দৃষ্টিকোন থেকে গঠনমূলক আলোচনা শুরু করতে অনুরোধ করবো। আর এটা করা দরকার সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসানের জন্য। তাছাড়া প্রকৃত সত্যটাও সবার জানা উচিত।
সবশেষে যা বলতে চেয়েছিলাম সেটা “হৃদয়ে বাংলাদেশ” বলে দিয়েছেন। তার কথার মর্মার্থ আশা করি মিঠুন দা বুঝতে পেরেছেন।
প্রিয় মিঠুন দা, হৃদয়ে বাংলাদেশ যেভাবে বলেছেন আমি তার সাথে সুর মিলিয়ে আরেকটু যোগ করে বলতে চাই পাহাড়ি-বাংগালী আমরা তিক্ত অতীত ভুলে গিয়ে এবং অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সমগ্র বাংলাদেশের অপার যে সম্ভাবনা আছে, চলুন সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাই। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। পার্বত্য চট্টগ্রামে আর শ্রেনী শত্রু ক্ষতমের নামে, স্বায়ত্ত্বশাসন তথা বিচ্ছিন্নতাবাদের নামে হানাহানি, খুন, ধর্ষন আর চাদাবাজী চাই না। চাইনা কেউ পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সৃষ্ট ঘটনাকে বিকৃত করে দেশে বিদেশে প্রচার করে আমাদের দেশ, দেশের প্রতিটি নাগরিক, সরকার এবং আমাদের সেনাবাহিনীকে সকলের চোখে ঘৃন্য এবং হেয় করে তুলুক।
সমস্যা থাকতেই পারে এবং আমি স্বীকার করছি সমস্যা আছে। যুক্তি সংগত, সময়োপযুগী, বাস্তব এবং ন্যায়পরায়নতার আলোকে এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান আমাদের কাম্য হওয়া উচিৎ। আপনার ভাষায় সংবিধান অপরিবর্তনীয় নয় তবে এটা টিস্যু পেপারও নয় যে ইচ্ছে হল ছুড়ে ফেলে দিলাম।
জিনিয়া, হৃদয়ে বাংলাদেশ এবং প্রিয় মিঠুন দা সহ সবাই ভাল থাকবেন।
আপনি পার্বত্য চট্টগ্রামের যে ইতিহাস বর্ণনা করলেন তার সূত্র উল্লেখ করলে খুশি হবো।কারণ আমি এই ইতিহাস বলতে গেলে আজই পড়লাম!
ধন্যবাদ
আপনার জয় হোক।
আপনি মি। ব্লগার এলডোরাডো বর্ণিত পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস নিয়ে আপাতত কিছুই বলছি না। তাঁকে আমি প্রশ্ন রেখেছি তথ্যসূত্র উল্লেখ করার জন্য।
তবে আপনার ‘এম এন লারমা বিষয়ে প্রশ্নটির জবাব আমি লেখাটি থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
লেখাটির লিঙ্ক
এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান বা নিষ্ক্রিয়তা সমালোচনাযোগ্য বলে আমি মনেকরি। তবে হয়তো সেই সময়ের প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ না করে এই সমালোচনা করা একপাক্ষিক মনে হতে পারে। তারপরও ইতিহাসের গতিধারায় নেতুত্বে ভূমিকা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ন বলে আমি মনেকরি।
এ বিষয়ে আমি নানা সময়ে লিখে তাঁর ভুমিকাকে সমালোচনা করেছি।
আলোচনায় অংশ নেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
প্রিয় অগ্রজ হৃদয়ে বাংলাদেশকে বরাবরে মতোই ধন্যবাদ, এক বাক্যে সকল বিতর্কের অবসান করার মতো উক্তিটির জন্য। “এক কেন্দ্রিক বাংলাদেশের সংবিধানুযায়ী কোন বিশেষ অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই।”
প্রিয় এলডোরাডো, আপনার অত্যন্ত চমত্কার গবেষণধর্মী মন্তব্যটি আমি সংগ্রহ করে রাখলাম। আশাকরি আপনি অনুমতি দিবেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আলোচনা আসলেই এই ‘বিচ্ছিন্নতা’ শব্দটি কেন আনা হয় আমি বুঝিনা!
এটা বোধহয় সচেতনভাবেই আনা হয় যে এটা জনগণ বা পাঠককে বোঝানো যায় যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদের লড়াই’ করছে।
‘এই ধরণের “বায়বীয়” বক্তব্য দিয়ে আসলে পার্বত্য সমস্যাকে দেশের একটি সমস্যা হিসেবে না ভেবে লেখকগণ বা মন্তব্যকারীগণ বাংলাদেশ থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ একটি সমস্যা হিসেবেই বেশি ভাবতে পছন্দ করেন! এই চিন্তার ‘বিচ্ছিন্নতাবোধ’ নিয়ে আমার কলম এতক্ষণ পর্যন্ত চললো!
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আলোচনা আসলেই এই ‘বিচ্ছিন্নতা’ শব্দটি কেন আনা হয় আমি বুঝিনা!
এটা বোধহয় সচেতনভাবেই আনা হয় যে এটা জনগণ বা পাঠককে বোঝানো যায় যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদের লড়াই’ করছে।
‘এই ধরণের “বায়বীয়” বক্তব্য দিয়ে আসলে পার্বত্য সমস্যাকে দেশের একটি সমস্যা হিসেবে না ভেবে লেখকগণ বা মন্তব্যকারীগণ বাংলাদেশ থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ একটি সমস্যা হিসেবেই বেশি ভাবতে পছন্দ করেন! এই চিন্তার ‘বিচ্ছিন্নতাবোধ’ নিয়ে আমার কলম এতক্ষণ পর্যন্ত চললো!
আপনাকে ধন্যবাদ
দয়া করে বাস্তবের জমিতে নেমে আসুন। লক্ষ্য করে দেখুন, সমতলের অজস্র মানুষ পাহাড়ীদের ন্যায়সঙ্গত দাবীকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছেন। এর স্বীকৃতি দিন। ইতিহাস গতিশীল, স্থবির নয়। তাই ইতিহাসের গতিধারার সাথে এগিয়ে যেতে হবে, পেছানোর সুযোগ নেই। বিতর্ক হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে হলেও আমি বলছি, বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থবিরোধী কোন পরিবর্তন হলেই ফের ভারত স্বাধিকারের নামে পাহাড়ীদের একাংশ কে সমর্থন দেবে। আমরা ফের সেই রক্তাক্ত অধ্যায়ের পূনরাবৃত্তি চাইনা।
ভালো থাকুন। সমৃদ্ধ পাহাড় আর সমতলে মিশ্রিত একটি দেশ গড়ার জন্য এগিয়ে আসুন।
আপনার লেখার উদ্ধৃতি দিচ্ছি,
আমি আমার লেখায় কোথাও প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা সীমান্তকে ‘বায়বীয়’ বলে অভিহিত করিনি।
আপনার নিচের উদ্ধৃতি কেন দিলেন বুঝলামনা ।
আপনার উদ্ধৃতি
স্বীকৃতির বিষয়টি যদি আসে তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে দেশেরই একটি সমস্যা হিসেবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণেরস্বীকৃতির বিষয়টিই সামনে আসছে।
আজকে আমাকে ব্লগে লেখালেখি করতে হচ্ছে পার্বত্য সমস্যা নিয়ে। যার বিস্তৃতি এবং আওতা সামান্য। অথচ আমি যখন প্রতিষ্ঠিত মিডিয়ায় এ বিষয়ে আলোচনা করতে যাবো তখন এই সমস্যা হয়ে ওঠে ‘নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা’ একটি সমস্যা!
সুতরাং, পার্বত্য সমস্যাকে বিচ্ছিন্নবাদের সমস্যা মনে না করে এই সমস্যাকে দেশের একটি সমস্যা ভাবলেই অনেক সমস্যা সমাধান হয় বলে আমি মনেকরি।
ধন্যবাদ
দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশকে নিয়ে কনফেডারেশন গঠনের স্বপ্ন আমার ব্যক্তিগত মাত্র। এবং এটা একঅর্থে বলতে পারেন বায়বীয় আকাঙ্খা। কারণ এই ধরণের আকাঙ্খা নিয়ে কোনো সংগঠন বা কোনো ব্যক্তি এখনো কোনো বক্তব্য দেয়নি এবং কোনো প্রকার আন্দোলনেও যায়নি। এবং আমিও এই বক্তব্যের পক্ষে কোনো প্রচারণা চালাচ্ছিনা । এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত একটি চিন্তা বা ভাবনা মাত্র। এবং এই চিন্তার যৌক্তিক ভিত্তি তাত্ত্বিকভাবে নির্ধরণ করার মত যোগ্য অবশ্যই আমার নেই।সেই ধরণের স্পেসও আমার নেই।
এই বক্তব্যকে আপনি বায়বীয় বলে উড়িয়ে দিতে পারেন। পৃথিবীর ইতিহাসই বলে দেয় আপনার কথামত ইতিহাস গতিশীল, স্থবির নয়
আপানাকে ধন্যবাদ
আগেরবার, এম এন লারমা সম্পর্কে বিশদ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানাইনি। এইবার আপনাকে ডবল ধন্যবাদ। (এর পরে থেকে আমি এই পোস্টে পাঠক হয়েই থাকবো)।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের কোন অংশ টুকু আপনি আমার লেখা পড়ে প্রথম জানলেন সেটা জানালে ভালো হয় তাহলে আমি সুনির্দিষ্ট করে তথ্য সুত্র উল্লেখ করতে পারবো।
নিরাপত্তার খাতিরে তথ্য সুত্রে আমি ব্যাক্তি সুত্রের নাম গুলো বলবো না। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমার অনেক সুহৃদ, বন্ধু এবং শুভাকাংখী আছেন যাদের মধ্যে পাহাড়ী, বাংগালীসহ সব শ্রেনী, পেশা এবং জাতির লোক আছে। তাদের কাছ থেকে এখন ও নিয়মিত খোজ খবর পাই। ঈদ, পালা, পার্বনে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। ২০০৩ সালের জুনে আমি বর্তমান চাকমা রাজা দেবাশিষ রায়ের অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাতকার নিয়েছি। কিছুদিন পুর্বে প্রয়াত বোমাং রাজার সাক্ষাতকার নিয়েছি ২০০৪ সালে। তার ছেলে বর্তমান বোমাং রাজাও আমার অগ্রজ বন্ধু এবং সুহৃদ বলতে পারেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে মোটামুটি পড়াশোনা করেছি। এখন ও করি।
জেএসএস এবং ইউপিডিএফ এর অনেক কর্মী যে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুল ইতিহাস জানবে না এটা জানা কথা। সত্যিটা জানার পর অনেকেই গোপন, হিংসাত্বক আর অন্ধকার রাজনীতি ছেড়ে চলে যাবে। হয়তো একারনেই আপনার রাজনৈতিক গুরুরাও আপনাকে সঠিক ইতিহাস কোন দিন জানতে দেন নাই।
আমার বর্নিত ইতিহাসের কোন অংশ যদি আপনার কাছে অগ্রহনযোগ্য মনে হয় তাহলে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। আমি মোকাবেলায় প্রস্তুত।
মিঠুন দা, আরেকটি কথা না বলেই পারছি না। আমি অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে আপনাকে আমার দাদা সম্বোধন করে আসছি। কিন্তু আপনি একটা নির্দিষ্ট খোলসের বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছেন না। প্রথম থেকেই মিঃ এলডোরাডো, জনাব এলডোরাডো, ব্লগার এলডোরাডো বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।অন্য ব্লগারদের ক্ষেত্রেও আপনার একই মনোভাব। জানি আপনি নিজেও কঠোর গোপনীয় জীবন যাপন করেন। ইউপিডিএফ এর অত্যন্ত সক্রিয় অংগ সংগঠন যুব ফোরাম বা ডেমোক্রেটিক ইউথ ফোরাম সংক্ষেপে (DYF) এর সাবেক (?) সভাপতি হিসেবে সেটা আপনাকে করতেই হয়। কিন্তু এই ভার্চুয়াল জগতেও কি একটু “ভাই” বা “দাদা” সম্বোধন করে আমাদেরকে আপনার হৃদয়ের কাছাকাছি আনতে পারেন না? মনের দুরত্ব আর কিভাবে ঘোচাব আমরা?
হৃদয়ে বাংলাদেশ, জিনিয়া, কালের কন্ঠ এবং অন্যান্য যারা এই লেখাটি পড়ছেন তাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আপনাদের দেয়া উৎসাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে জানার আগ্রহের বার্তা না পেলে আমি এভাবে লিখতাম না। অবশ্য লিখেও ভয়ের মধ্যে আছি।
যাইহোক সবাই ভাল থাকবেন।
আন্তরিকতা বিষয়ে আপনার কথার সাথে একমত প্রকাশ করছি। তবে আসলে আপনি মানে এলডোরাডো বা কালের কন্ঠ বা হৃদয়ে বাংলাদেশ কেউই আসলে আসল নামে নিজেকে প্রকাশ করছেন না! তাই আপনাদের কী নামে অভিহিত বা সম্বোধন করবো তা নিয়ে আমি দ্বিধাগ্রস্ত!
আর আমি ‘কঠোর গোপনীয়তা”র মাঝে থাকি কিনা আমি নিজেই জানিনা! তবে আপনি যে কারনে ভার্চুয়াল জগতে স্বনামে আসেন না তেমনি আমাকেও মাঝে মাঝেই এই ‘গোপনীয়তা’কে অবলস্বন করতে হয়। কারন এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামকে তো অনেকেই ‘বিচ্ছিন্নতা’র কাপড়ে ঢেকে রাখতে অভ্যস্ত!
২০০৫ সালের ৬ আগস্টের কথা আমি স্মরণ করে এখনো আমি কুঁকরে উঠি! আমি খাগড়াছড়ি হবংপুজ্জে এলাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখছি। বক্তব্য শেষের এক পর্যায়ে কয়েকজন মেজর-কর্ণেল সৈন্য-সামন্তসহ সভায় আক্রমন করলো। আমি পালানোর চেষ্টা করলাম। পালাতে পারলাম না। তারা আমাদের কয়েকজনকে আটক করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেলো। সেখানে আমাদের চোখ বেঁধে, আমাদের হাত-পা পিছমোড়া করে বেধে তারা নির্যাতন চালালো। এভাবে আমাদের ২ জনকে ৬ আগস্ট রাত, তারপর ৭ তারিখ রাত পর্যন্ত আটক করে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিলো। বাকিরা হলো জেলখানায় অস্ত্র মামালার আসামী।
এসব নিয়ে তো আমাদের জীবন! তাই কিছুটা ভয়ের কারণে বা নিরাপত্তার কারণে আমি অবশ্যই তো কঠোর গোপনীয়তায় না হলেও মডারেটভাবে গোপনীয়তা নীতি পালন করি! তবে আমি সবসময় এক্টিভ থাকি স্বনামে।
ধন্যবাদ
পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসকে আপনি যেভাবে লিখেছেন তা আমি কোনো বইয়েই পাইনি। আমি ডানপন্থী থেকে শুরু করে মেইনস্ট্রিমের পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের লেখকদের লেখায় আপনার নিচের এই বক্তব্যটির স্বপক্ষে কোথাও কোনো তথ্য পাবার প্রমাণ পাইনি।
আপনার উদ্ধৃতি,
এছাড়া অন্য বিষয়েও আপনি যেভাবে বলছেন সে বিষয়গুলোতেও আমার অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
আপানাকে ধন্যবাদ
কিন্তু আপনাদের যু্ক্তি তর্ক আর উল্লেখ্য যোগ্য তথ্যাদি থেকে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে কিছু সময় ব্যয় করতে গিয়েই নিজেকে হারিয়ে বসেছি সময়ের স্রোতে। সত্যি অসাধারণ ……………….
১৯৬২ সালে এম এন লারমার গঠিত পাহাড়ি ছাত্র সমিতি পরবর্তী ১-২ বৎসরের মধ্যেই দুই ভাগ হয়ে যায়। মূল পাহাড়ি ছাত্র সমিতি এম এন লারমার অনুগত থাকে, খন্ডিত অপর অংশের (পাহাড়ি ছাত্র সংঘ) নেতা ছিলেন পঙ্কজ দেওয়ান। পঙ্কজ দেওয়ান নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলেন, এম এন লারমার প্রদর্শিত সশস্ত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন না। শান্তি বাহিনী গঠিত হবার পর চাপ এবং হুমকির মুখে ছাত্র সংঘের অস্তিত্ত্ব বিলুপ্তি হয়ে যায়।
১৯৭০ সালের ১৬ মে এম এন লারমা “রাঙ্গামাটি কমিউনিষ্ট পার্টি” গঠন করেন। ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ্বে এম এন লারমা নিস্ক্রিয় ছিলেন, তবে নিরপেক্ষ ছিলেন কিনা জানিনা কারন তার কমিউনিষ্ট পার্টি এসময় ব্যাপক আন্ডার গ্রাউন্ড কার্যকলাপ চালায়।
আমার বর্নিত পার্বত্য চট্টগ্রামের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে যেসব যায়গায় “নাগা বিদ্রোহী” শব্দটি উল্লেখ করেছি, সেখানে “মিজো বিদ্রোহী” হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য দুঃখিত।
আপাততঃ “ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি প্রক্রিয়া ও পরিবেশ – পরিস্থিতির মূল্যায়ন”, মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম, বীর প্রতীক, মাওলা ব্রাদার্স, ৩৯ বাংলা বাজার ঢাকা থেকে প্রকাশিত বইটি পড়ার অনুরোধ করছি। দিন কয়েকের জন্য বান্দরবান আছি। ঢাকায় ফিরে অনান্য সুত্রগুলি জানাব। ভাল থাকবেন।
আপনি যে বইটির কথা উল্লেখ করেছেন সে বইটি আমার আছে। তবে আমি আপনার কাছে যে ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন করেছি তার কিন্তু আপনি উত্তর দেননি।
সৈয়দ ইব্রাহিমের উক্ত বইয়ে আপনি যে ইতিহাসের কথা লিখেছেন তার চিহ্নই নেই।
অন্য বইয়ে যদি থেকে থাকে তবে তার সূত্র উল্লেখ করতে পারেন।
আর ইব্রাহিমের বইয়ে যদি আপনাকে উপরে প্রশ্ন করা ইতিহাসের এক ফোটাও আমাকে দেখাতে পারেন তবে আমাকে সূত্র উল্লেখ করে দেখান।
যদি তথ্যসূত্র দেখাতে না পারেন তবে দয়া করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস নিয়ে যা তা লিখবেন না। দয়া করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করবেননা ।
ধন্যবাদ