পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে দীঘিনালা ভুমিরক্ষা কমিটির ব্যানারে আজ লংমার্চ-এর ডাক দেয়া হয়েছে। দীঘিনালা উপজেলা মাঠ থেকে বাবুছড়া পর্যন্ত লংমার্চের গন্তব্যস্থল ছিলো।দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটারে মত। বিজিবি কর্তৃক ২১ জুম্ম পরিবারকে উচ্ছেদ করে ৫১ ব্যাটালিয়ন সদরদপ্তর স্থাপনের প্রতিবাদে এই লংমার্চের ডাক দেয়া হয়। লংমার্চ শান্তিপূর্ণভাবে করা হবে বলে ঘোষনা দেয়া হয়।
কিন্ত আজ ১৫ মার্চ সকাল থেকেই দীঘিনালায় বিরাজ করেছে অস্বস্তিকর পরিবেশ! সকাল থেকে শুনতে পাচ্ছি স্থানীয় টমটম বা ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালাতে দিচ্ছে না সেনা ও পুলিশ টহল দল। সকাল নয়টার দিকে যখন দীঘিনালা উপজেলা মাঠে বিভিন্ন জায়গা থেকে লংমার্চে অংশ নিতে জনগণ আসতে চেষ্টা করছিল তখন কবাখালী-মেরুং-মিইনী ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়া চৌকি বসিয়ে গাড়ি আসা যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। লোকজন তারপরেও পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে যেতে শুরু করে। পৌনে দশটার দিকে উপজেলা এলাকা থেকে লংমার্চ শুরু হলে পথের মাঝখানে লংমার্চের প্রধান অংশকে আটকে দেয়া হয়।
পরে লংমার্চের আরেকটি টিম শান্তিপুর-নারিকেল বাগান এলাকা থেকে বাবুছড়ার দিকে রওনা দেয়। হাজার জনতার লংমার্চের সারির উক্ত দলটি কয়েক কিলোমিটার হেঁটে কার্বারী মুড়ো বা কার্বারী টীলা এলাকা আসে।
এ সময় আমি পথের পাশে অবস্থান করছিলাম। শুনতে পেলাম দ্রুতবেগে দুটো আর্মি পিকআপ আর একটি পুলিশের পিকআপ উত্তর দিকে বাবুছড়া থেকে আসছে। তখন বোধহয় বাজে ১২.১৫/২০ টা। গাড়িগুলো সমাবেশস্থলে পৌঁছতে না পৌঁছতেই শুনতে পেলাম ফায়ার হচ্ছে। কয়েক রাউন্ড ফায়ার হবার পর দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি দূরে রিপরিপ করে ধান ক্ষেত দিয়ে অনেকেই পালিয়ে চলে যাচ্ছে। এদিকে এলাকায় যুবকদের মাঝে তখন হঠাৎ যেন রণ দামামা বেজে উঠল! তারা দেখি ‘জগার পাত্তে পাত্তে’ বা চিৎকার দিতে দিতে সামনে এগোতে চাচ্ছে।
কয়েক মিনিট পর শুনলাম আর্মি-পুলিশ কয়েকজন আহত হয়েছে। লংমার্চে অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে শুনলাম।
বিকালে জানতে পারলাম মূল সমাবেশ থেকে আগামীকাল ১৬ মার্চ দীঘিনালা-খাগড়াছড়িতে একদিনের অবরোধ ঘোষনা দেয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ লংমার্চে বাধা দেয়া, কার্বারীমুড়ো বা কার্বারী টীলায় সমাবেশের উপর ব্রাশফায়ার, বিজিবি কর্তৃক অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অনৈতিক ব্যবহার করে জুম্মভুমি জবরদখলের প্রতিবাদে, মিথ্যা মামলা-হুলিয়া প্রত্যাহারের দাবিতে এই অবরোধের ঘোষনা দেয়া হয়।
এদিকে কার্বারী টিলার হাজারো জনতার তখন যেন রোষ চেপেছে! তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার রাজপথ দখলে নিয়ে গুলি-হামলা উপেক্ষা করে উদাল বাগান স্কুলের মাঠে একত্র হলো। সেখানে সমাবেশ চললো। চারদিকে সেনা-বিজিবি-পুলিশের টহল তখন জোরদার করা হয়েছে।
শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ শেষ হলো।
সভা শেষ হলে জনতা গাড়িতে করে সভা ছেড়ে যেতে চাইলে প্রশাসন বললো ‘গাড়ির চাকা ঘুরবে না’।
বিকাল ৪.৫১টায় শুনলাম অংশগ্রহণকারীর মোট আটটি টমটমে থাকা ৪০ জনের মতো যুবককে প্রশাসন মিইনী ব্রিজে আটকিয়েছে।
দীঘিনালায় বিরাজ করছে থমথমে ভাব।
কিন্তু তারপরও দীঘিনালাবাসীর লড়াকু মনোভাব যেন জুম্ম জনগণকে জানিয়ে দিলো, লড়াই ছাড়া, লড়াই করে বাঁচা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পার্বত্য জুম্ম জনগণের হাতে আর অবশিষ্ট নেই।
প্রশাসনের অন্যায় খবরদারী, জবরদখলী জোর যার মুল্লুক তার নীতি যদি পরিবর্তিত না হয় তবে এই রোষ কোথায় যে গতি পায় তার দিশা আমার কাছেও নেই!
তবে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তির প্রতি অনুরোধ পার্বত্য জুম্ম জনগণের এই ফুঁসে ওঠা রোষ নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে। দিকে দিকে প্রশাসন-সরকারের অবমানিত-অনৈতিক আচার-বিচারবোধ নিয়ে পার্বত্য জুম্ম জনতা অতিষ্ঠ এখনো মনেমনে। তার প্রকাশ ঘটলে কী যে ঘটে তা বলা মুশকিল। এটি আবেগের কথা নয়, বরং একটি বার্তা প্রশাসনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহলের কাছে।
ধন্যবাদ
No comments:
Post a Comment