Tuesday, December 29, 2015

খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনঃ একতা দেখাতে হেলে কিরণ মারমাকে ভোট দিন





একটু দেরিতে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা বলতে  হচ্ছে। আরও আগে এ বিষয়ে কথা বলতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
প্রথমে একটি সত্য উচ্চারণ করছি, তা হলো, তিন পার্বত্য জেলার মোট কয়টি পৌরসভায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা আমি এখনো জানি না। এটা আমার দুর্বলতা বলতে পারেন। এবং এটাই আমাদের সীমাবদ্ধতাও বলতে পারেন। জুম্ম জাতিসত্তার জনগণ হিসেবে এখন নিজেদের জায়গায়ও আমরা কতোটা কোণঠাসা তা জানা যাবে আমরা আমাদের এলাকা সমূহের খবরও আর রাখার প্রয়োজন বোধ করি না তা থেকে। আর জানার প্রয়োজনই বা কেন থাকবে!!?
সুতরাং, অন্য এলাকায় কেমন নির্বাচন হচ্ছে সে নিয়ে আর কথা বলবো না।
তবে নিজের এলাকা হিসেবে খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা না বললে বোধহয় ভুল হতে পারে।
খাগড়াছড়িতে এবারে মেয়র প্রার্থী রয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন, কিরণ মারমা(নারিকেল গাছ), রফিকুল আলম(মোবাইল), শানে আলম(নৌকা) ও এছাড়া আরেকজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন লাঙল মার্কায়।

এবার আসি, আমরা বা আমি কোন প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই তা নিয়ে।
কারো প্রতি বিদ্বেষ না করে আমাকে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে এবং প্রথম সংবিধান প্রণয়নের পর থেকেই এই দেশের সরকারসমূহ প্রতিনিয়তই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে শেখ মুজিবের নীতি অনযায়ী ‘দশলাখ, বিশলাখ’ দিয়ে পিষিয়ে সংখ্যালঘূকরণের চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনো করা হচ্ছে।
এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, জুম্ম জনগণের জন্য নিজেদের এলাকায় একটি শহর বা শহরাঞ্চল বা মফস্বল শহরও অবশিষ্ট রাখা হয়নি যেখানে জুম্মরা নিজেদের সংখ্যাধিক্য বজায় রাখতে পেরেছে। অথচ, একটি জাতি/জাতিসমূহ বা জাতিসত্তার জন্য পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার নিরিখে নগরসভ্যতার স্বাতন্ত্র্য স্বকীয়তাসম্পন্ন ঐক্যচেতনাবোধ সৃষ্টি হওয়া অতি অবশ্যই প্রয়োজনীয়। এদিক থেকে আমরা এতই বিস্রস্ত/অবিন্যস্ত যে, এ নিয়ে আমাদের ন্যূনতম চেতনা থাকলে গা শিউরে ওঠার কথা আমাদের সচেতনদের মধ্যে! কিন্তু খুবই বিড়ম্বের যে, আমরা গা শিউরে উঠতেও ভুলে গেছি!
বরং এখন যা দেখি তা হলো, যা আছে, বা যে একতা ঐক্য বা একতাবদ্ধতা অবশিষ্ট আছে তা ভাঙতেই যেন আমরা সোচ্চার থাকি সবসময়!

শুনলাম, এবারে খাগড়াছড়িতে পৌরসভা নির্বাচনে জেএসএস(সংস্কার) এর বন্ধুরা নাকি শানে আলমের নৌকাকে ভোট দিতে বলছেন। এ নিয়ে সম্ভবত, আমাদের আরো আগে বিতর্কে জড়ানো দরকার  ছিলো। কিন্তু খুবই লজ্জ্বা বিষয় ও ভীতসন্ত্রস্ত হবার মতো বিষয় হলো, আমাদের দল বা পার্টিসমূহ মনে করে তারাই সর্বেসর্বা বা তারা যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন তা-ই  ‘জাতির জন্য মঙ্গলজনক/কল্যাণকর!’এটা ইউপিডিএফ, জেএসএস ও জেএসএস(সংস্কার) এই তিন দলের ক্ষেত্রে অনেকসময় একই বলে প্রতীয়মান হয়।

তারা নিজেদের দোষ কোনোদিনই দেখেন না। তারা খোজেন অন্যের দোষ!
জানলাম খাগড়াছড়িতে জেএসএস(সংস্কার) দলটি শানে আলমকে ভোট দেবার জন্য নাকি বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণা চালাচ্ছে। এবং এজন্য তাদের যুক্তি হলো-

১. কিরণ মারমা শক্তিশালি প্রার্থী নয়। তার দুর্বলতা রয়েছে।

২. তাকে ভোট দিলে নাকি ‘ভোট’টি পানিতে বা জলে ফেলার মতো হবে। অর্থা তাকে ভোট দিলেও তিনি জয়যুক্ত হবেন না! এটা হলো, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার আগেই পরজায় স্বীকার করা!

৩. তারা আরো যুক্তি দেখিয়েছেন যে, কিরণ মারমাকে যখন প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে তখন নাকি তাদের সাথে মানে জেএসএস-সংস্কার দলের সাথে আলাপ করা হয়নি বা পরামর্শ করা হয়নি।

৪. তারা আরো বলেছেন ‘রফিকুল আলম’কে ঠেকাতে শানে আলমকে ভোট দিতে হবে!

৫. তারা নাকি যুক্তি দেখিয়েছেন যে, তারা চুক্তি করেছেন আওয়ামীলীগের সাথে। সুতরাং তাদের সাথে নাকি ঐক্য থাকা দরকার!
এছাড়া সম্ভবত অন্য যুক্তিও তারা দেখাতে পারেন।

এ বিষয়ে কিছু বলা দরকার বলে মনে করছি-

১. কিরণ মারমাকে যদি আমরা ব্যক্তি হিসেবে ধরি তবে তার নানা দুর্বলতা আমরা দেখাতেই পারবো! সম্ভবত আমরা এই পোড়ার ভুমিতে ‘অবিসংবাদিত’ কাউকেই পাবো না! একমাত্র এম এন লারমা মারা যাবার পরেই এই অভিধা্ পেয়েছিলেন। তিনি জীবিত থাকতে তা পাননি। এবং এখনো বলা হয়ে থাকে তিনি তার ভাইকে ভালবেসেছেন বেশি।তাই এ ক্ষেত্রে তিনি বিতর্কের উর্দ্ধে উঠতে পারেননি।
সুতরাং, কিরণ মারমাকেও অনেকেই পছ্ন্দ করবেন না বা তার নানা দুর্বলতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু তাই বলে, একতা বা ঐক্যবদ্ধতাকে আমরা যখন প্রদর্শন করবো বা করতে পারবো তখন এই সকল বক্তব্য এনে কিই বা হবে ক্ষতি ছাড়া!
২. বলা হচ্ছে সংস্কার দলের সাথে পরামর্শ করা হয়নি। হ্যাঁ, এটা ঠিক হতে পারে বা হবে বলেই তো মনেহয়। কিন্তু তাই বলে ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা’ কি ঠিক বলে মনেহয়?
নিজে একটি দলের কর্মী হয়েও এখন আমার তিনদলকে এদিক থেকে একই কাতারে মাপতে সাধ জাগে।
এই তিন দলের বিরাট এবং মারাত্মক দুর্বলতা হলো এটাই। আর এই দুর্বলতা যদি তারা কাটাতে চেষ্টা না করে চাঙমা কথা কড়া ভাষায় বলবো ‘অধিকার পেবাত্তেই আঃ গুরি বাচ্চেই থিও’(কথাটি একটু কড়া হলেও সত্য বলার স্বার্থে বলতে বাধ্য হলাম।এখানে বলা দরকার নিজের পার্টির অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি একমত নই বা বর্তমান কাজের ধরণ নিয়ে আমার সমালোচনা রয়েছে; কিন্তু তাই বলে তো আমরা ‘নিজঅ থেঙঅত হুরোল’ মারতে পারি না।

সবার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাবো এই নির্বোধ আহাম্মকী বা আত্মম্ভরিতা ঝেড়ে ফেলতে। তারা সন্তু লারমাকে বলেন তিনি নাকি হাঁটার সময় আঙুলে হোঁচট খেলে পুনরায় যেখানে হোঁচট খেয়েছেন সেখানে আবার লাথি মারেন। কিন্তু এদের স্বভাবও যে একই তা সম্ভবত তারা জানেন না! নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার পণ যেন!
এই যদি কিরণ মারমাকে ভোট না দেয়ার কারণ হয়ে থাকে তবে বলবো, অধিকার আদায়ের জন্য আপনারা এই সামান্য স্বার্থও যখন ছাড়তে পারছেন না তখন আপনাদের দ্বারা অধিকার আদায় অসম্ভব।
এখানে বলা দরকার, আমি নিজে পার্টির অনেক কিছু মানতে নাও পারি এবং এটাই সত্য যে মানি না। তাই বলে তা নিয়ে নিজের দলকে আমি ভুলে গিয়ে অন্য দলে যোগ দেবো, এটা চিন্তা করা মানে তো সংঘভেদের নামান্তর! নিজের বা নিজেদের প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে অন্য দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া তো সংঘভেদেরই নামান্তর! আর সংঘভেদের ফল? এখানে সংঘভেদ মানে পার্টিভেদ নয়, তা হলো জাতিভেদ।

৩. আমরা ভোট পাবো বিজয়ী এজন্যই লড়ছি। হ্যাঁ, যদি নাও পাই তবে আমরা যে ঐক্যবদ্ধ তা অন্তত আমরা দেখাতে পারবো। আর এটাকেই বলা হয় বিজয়। এই বিজয় নিয়ে যারা চিন্তিত নয় তারা কী জন্যে সংগঠন করে বা কী কারণে জাতির বা জাতিসত্তার জন্য কথা বলবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান। এ নিয়ে আমি আরো কড়া কথা বলতাম কিন্তু বললাম না।

৪. রফিকুল আলমকে ঠেকাতে?!!! রফিকুল কে? তার পেছনে সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র না থাকলে তিনি কে?

৫. আওয়ামীলীগের সাথে জোটবাঁধা? যে বাঙালি বানিয়েছে তার সাথে? যে চুক্তি করে আধাবগা বানিয়েছে তার সাথে?

আমি আর কথা বাড়াবো না।

খাগড়াছড়িতে নির্বাচনে কিরণ মারমার পক্ষে তেমন প্রচারণা চালাতে না পারলেও আমার পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকবে সকলের প্রতি-

## আমি জুনি থ্যাঙঅন্দি ঘাদা হেবার ন চেই আমি জুনি নিজঅর একতা দেঘেবার চেই তোইলে এক ওইনেই আমাত্তুন কিরন মারমারেই ভোট দিআ পুরিবঅ।

### আমি জুনি বেজা জেবার ন চেই তোইলে কিরণ মারমারেই ভোট দিআ পুরিবঅ।

#### আমি জুনি জাদঅরে কোচ পেই এবং সত্যিকারভাবে দলঅরে বা কোচ পেই তোইলে আমাত্তুন কিরণ মারমারেই ভোট দিআ পুরিবঅ।
##### আমাত্তুন জুনি এক্কেনাও্ লাজ থায় তোইলে আমাত্তুন কিরণ মারমাকে ভোট দিআ পুরিবঅ।

###### আমি আহামম্মকী বা উহজোধী ছাড়িবার চ্যালে বা নিজর ক্ষতি সামান্য ওইনেইও জাদঅর ডাঙর ভালেদি বিরাট গুরি দেঘি তোইলে আমাত্তুন কিরণ মারমাকে ভোট দিআ পুরিবঅ।

সবাইকে ধন্যবাদ

No comments:

Post a Comment

সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...