Sunday, July 27, 2014

চরিত্র নিয়ে কিছু কথা!

তারিখ: ২৭ জুলাই, ২০১৪

আজ চরিত্র নিয়ে কিছু কথা লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে যেখানে বলা হয়েছে- সম্পত্তি হারিয়ে গেলে কিছুই হারিয়ে যায় না, স্বাস্থ্যের হানি ঘটলে কিছুটা হারানো বোঝায়; কিন্তু যখন চরিত্র নষ্ট হয় বা হারিয়ে যায়, তখন সবকিছুই হারিয়ে গেল।

When wealth is lost, nothing is lost; when health is lost, something is lost; when character is lost, all is lost.

উদ্ধৃতিসূত্র: ব্রেইনিকুওটস ওরেয়বসাইট  
 এখন আসলে চরিত্র বলতে কী বোঝায়? 
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একসময়ের প্রেসিডেন্ট এর চরিত্র বিষয়ক একটি উদ্ধৃতি এখানে কপিপেস্ট করছি- 
"Character is like a tree and reputation like its shadow. The shadow is what we think of it; the tree is the real thing."

আব্রাহাম লিংকন চরিত্র বা ইংরেজি ভাষায় কারেক্টারকে একটি গাছের সাথে তুলনা করেছেন, একটি সাথে গাছের ছায়াকে তুলনা করেছেন চরিত্রের কারণে একজন ব্যক্তি জনমানুষের বা তার পাশের জনের কাছ থেকে যে সম্মান-অপমান-মর্যাদা বা মান অর্জন করেন তার সাথে।
অর্থাৎ, একজন ব্যক্তির চারিত্র্য-বৈশিষ্ট্য যত পরিমাণে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন-গুণসম্পন্ন-সুদৃঢ-মানবিকতাবোধ সম্পন্ন-অকপট হবে তার মান-মর্যাদা-সম্মান তত বাড়বে বা ডালপালা-পাতাময় সেই গাছের ছায়া ততো বিস্তৃত হবে। 

চরিত্র বলতে আসলে কী বোঝায় তা এই উদাহরণের মাধ্যমে কিছু বোঝা গেলেও এই সংজ্ঞা কিন্তু ব্যবহারিক দিক থেকেই বেশি বোধগম্য বা কিছুটা প্রতীকী সংজ্ঞা হিসেবে এই উদাহরণকে ধরা যেতে পারে।

সচ্চরিত্র ভার্সাস দুশ্চরিত্র
চরিত্র অর্থে বাংলা ভাষায় সাধারণত ‘সচ্চরিত্র’ বা ’সৎ চরিত্র’ ও ‘ অসচ্চরিত্র’ বা ‘অসৎ চরিত্র’ ’দুশ্চরিত্র’ এই শব্দবন্ধই বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সংজ্ঞাগতভাবে এই দুই বৈশিষ্ট্যকে পৃথক করা খুবই সহজ মনে হলেও কিন্তু বাস্তবে ’সচ্চরিত্র’ বা ’দুশ্চরিত্র’ এই দুই চারিত্র্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্বকে  পৃথক করা অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ বলেই বোধ হয়! 
 এবং অনেক ক্ষেত্রে তা নানা বাদানুবাদ ও বিতর্ককে উস্কে দেয়। 
কারোর কাছে একজন খুবই সচ্চরিত্রের ব্যক্তি আবার সেই ব্যক্তিই কিন্তু আরেকজনের কাছে তার বিপরীত চারিত্র্য বৈশিষ্ট্যে র অধিকারী হিসেবে ধরা দেয়াও বিচিত্র নয়! বিশেষ করে পুজির বা অর্থের বা ক্ষমতার আধিপত্যের এই যুগে এই বৈপরীত্য যেন সাধারন ব্যাপার!
কোনো সামাজিক ব্যক্তিত্ব সমাজের চোখে সুদৃঢ চরিত্র বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হিসেবে হয়তো পরিচিত! কিন্তু হয়তো তিনি তার  ব্যবসাসূত্রে চাকুরিসূত্রে হয়তো একাধারে ঘুষ বাণিজ্যের ধারক বাহক অথবা কারো অর্থকড়ি তছরুপ করার হোতা হিসেবে পরিচিতও হতে পারেন! এভাবে সমাজে ’চরিত্রের’ বৈপরীত্য  যেন স্বাভাবিক ব্যাপার! 
এমন ধরণের উদাহরণ সমাজে অনেক দেখা যায়! 
রবিনহুড। তিনি সমসাময়িক সামন্তীয় শাসকদের চোখে পরিচিত ছিলেন ‘ডাকাত’ হিসেবে। কিন্তু তৎকালীন সাধারণ জনতার কাছে তিনি উদ্ধারকর্তা বা ত্রাণকর্তা হিসেবেই তো পরিচিতি পেয়েছিলেন!

সুতরাং, ব্যক্তি বা মানুষের চরিত্রকে দুইভাগে ভাগ করে সাধারণীকরণ করা সহজ কিন্তু বাস্তবে তার নানা বৈপরীত্যই যেন স্বাভাবিক!

চরিত্রের মান নির্ধারণের নিয়ামক বিষয়
চরিত্রের মান নির্ধারণের নিয়ামক বিষয় হিসেবে আমাদের সমাজে সাধারণত ‘সৎভাবে চলা’কে বোঝায়! এর মানে বোঝায় তিনি চুরি করেন না, ঘুষ নেন না, তিনি কাউকে ঠকান না ইত্যাদি। অথবা, বিশেষভাবে ‘তার চরিত্র ঠিক নেই’ বলতে বোঝায় সেই ’পুুরুষ’ বা ‘নারী’অন্য বিপরীত লিংগের সাথে ‘অবৈধ’ মেলামেশা বা সম্পর্ক নেই ।
নীরদ চন্দ্র চৌধুরী তার ‘আত্মঘাতী বাঙালী’ বইয়ে চরিত্র নিয়ে লিখেছেন-
চরিত্র সম্বন্ধে লিখিতে গেলেও শব্দতত্ত্ব আনিতে হইবে।চরিত্র বলিতে ইংরেজী শিক্ষা পাইবার আগে যাহা বুঝিত তাহা আচরণ, যেমন ‘মানব চরিত্র’, ‘স্ত্রী চরিত্র’ ইত্যাদি, সহজ অর্থ ছিল স্বভাব, যে স্বভাব মরিলেও যাইত না। ইংরেজী পড়িবার পর চরিত্র বলিতে বাঙালী যাহা বুঝিতে আরম্ভ করিল তাহা ইংরেজী ‘ক্যারাকটা’র কথাটার বিশিষ্ট অর্থ, নানা অর্থের এক অর্থ।সোজা বাংলা জিতেন্দ্রিয় হইলে যে চরিত্র হয়, সেরূপ চরিত্র। (পৃ-১৫৯)
নীরদ চন্দ্র চৌধুরী তার সমসাময়িককালের এবং বলা যায় বর্তমান কালের ‘চরিত্র’ বিষয়ে যে ধারণা, ইন্দ্রীয় সুখবোধ দ্বারা পরিচালিত না হওয়া, অথবা বলা যায় চারিত্রিক শুদ্ধতা রাখাটাই সচ্চরিত্রের লক্ষণ হিসেবে বোঝানো হয়ে থাকে বলে মত প্রকাশ করেছেন। উপরে উদ্ধৃত পরিচ্ছদের বা প্যারাতে তিনি আরো লিখেছেন-
এই অর্থে ‘চরিত্রবান’ ও ‘চরিত্রহীন’ দুইটি বাক্য বাংলায় ব্যবহৃত হইতে আরম্ভ হইল। তাই ‘চরিত্রহীন’ শব্দের রূঢ় অর্থ হইল লম্পট।

কিন্তু এই নিয়ামক বা পয়েন্টের মাধ্যমেেই কি শুধু চরিত্র নির্ধারণ করা হয়ে থাকে?


চরিত্রের মান কী দিয়ে নির্ধারণ করা যায়?

উপরের নিয়ামক বিষয়সমূহ চরিত্রের মান নির্ধারণে নিয়ামক হিসেবে বলা হলেও ব্যক্তিগতভাবে আমার মতে‘চরিত্র’র মান হিসেবে তার দৃঢতাবোধ-একাগ্রতাবোধ-মানবিকতাবোধ-অকপটতা-কথায় কাজে মিল থাকা-দায়িত্ব কর্তব্যবোধ ইত্যাদি গুণাবলী বা মানকে বিবেচনায় নিয়ে পরিমাপ করা নিতান্ত প্রয়োজনীয়।
শুধুমাত্র ‘সততা’ অথবা বা এবং ‘অবৈধ মেলামেশা’ এই মানদন্ড নিয়ে ‘চরিত্র বিচার’ করলে বোধকরি আমরা গতানুগতিক একই পাকে বা পঙ্কে নিমজ্জিত থাকার সদিচ্ছাই প্রকাশ করবো!


No comments:

Post a Comment

সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...