Saturday, March 21, 2015

সমাজের শক্তি কোথা থেকে আসবে?


ছবির একপাশে ঝুলতে থাকা ফেস্টুনে লেখা রয়েছে-
জাতীয় দুর্দিনে শিক্ষিত তরুণ সমাজ অপদার্থের মত হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না 
দীঘিনালায় ইউপিডিএফ ও গণসংগঠনসমূহের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী-সক্রিয় সমর্থকদের নিয়ে ২০১৫ সালের মার্চের প্রথম দিকে এক গেট টুগেদারের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে টাঙানো বিভিন্ন ফেস্টুনের মধ্যে একটি ফেস্টুনে এই লেখা শোভা পাচ্ছিল।
এই লেখার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষিত তরুণ সমাজকে জুম্ম জনগণের মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে আহ্বান জানানো হয়।
সমাজের শিক্ষিত তরুণ সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে এর আগে অনেকে বলেছেন। এ নিয়ে বিতর্কও হয়েছে।কিন্তু দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে বিতর্ক করা এবং দায়িত্বশীলতার সাথে দায়িত্ব পালন করার মধ্যে দ্রষ্টব্যজনকভাবে আকাশ আর পাতালের মতো পার্থক্য রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
এখানে তেমন কথা না বাড়িয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উদ্ধৃতি পাঠকদের সাথে শেয়ার করছি। তিনি তার এক প্রবন্ধে  বলেছেন-

আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষিতলোক যে গবর্মেন্টের চাকরিতে মাথা বিকাইয়া রাখিয়াছেন, ইহার শোচনীয়তা কি আমরা চিন্তা করিব না? কেবল চাকরির পথ আরো প্রশস্ত করিয়া দিবার জন্য প্রার্থনা করিব? চাকরির খাতিরে আমাদের দুর্বলতা কতদূর বাড়িতেছে তাহা কি আমরা জানি না? আমরা মনিবকে খুশি করিবার জন্য গুপ্তচরের কাজ করিতেছি, মাতৃভূমির বিরুদ্ধে হাত তুলিতেছি এবং যে মনিব আমাদের প্রতি অশ্রদ্ধা করে তাহাকে পৌরুষক্ষয়কর অপমানজনক আদেশও প্রফুল্লমুখে পালন করিতেছি—এই চাকরি আরো বিস্তার করিতে হইবে?


দেশের শিক্ষিতসম্প্রদায়ের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করিতে হইবে। আমরা যদি স্বদেশের কর্মভার নিজে গ্রহণ করিতাম তবে গবর্মেন্টের আপিস রাক্ষসের মতো আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকদিগকে কি এমন নিঃশেষে গ্রাস করিত? আবেদনের দ্বারা সরকারের চাকরি নহে, পৌরুষের দ্বারা স্বদেশের কর্মক্ষেত্র বিস্তার করিতে হইবে। যাহাতে আমাদের ডাক্তার, আমাদের শিক্ষক, আমাদের এঞ্জিনিয়ারগণ দেশের অধীন থাকিয়া দেশের কাজেই আপনার যোগ্যতার স্ফূর্তিসাধন করিতে পারেন আমাদিগকে তাহার ব্যবস্থা করিতেই হইবে। নতুবা আমাদের যে কী শক্তি আছে তাহার পরিচয়ই আমরা পাইব না।
তা ছাড়া, এ কথা আমাদিগকে মনে রাখিতে হইবে যে, সেবার অভ্যাসের দ্বারাই প্রীতির উপচয় হয়; যদি আমরা শিক্ষিতগণ এমন কোথাও কাজ করিতাম যেখানে দেশের কাজ করিতেছি এই ধারণা সর্বদা স্পষ্টরূপে জাগ্রত থাকিত, তবে দেশকে ভালোবাসো—এ কথা নীতিশাস্ত্রের সাহায্যে উপদেশ দিতে হইত না। তবে এক দিকে যোগ্যতার অভিমান করা, অন্য দিকে প্রত্যেক অভাবের জন্য পরের সাহায্যের প্রার্থী হওয়া, এমনতরো অদ্ভুত অশ্রদ্ধাকর আচরণে আমাদিগকে প্রবৃত্ত হইতে হইত না—দেশের শিক্ষা স্বাধীন হইত এবং শিক্ষিত সমাজের শক্তি বন্ধনমুক্ত হইত।

রবি ঠাকুরের উপরের এই উদ্ধৃতাংশ মনে মনে আত্মস্থ করতে পারলেই মনে হয় বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষিত জুম্ম তরুণ সমাজের দায়িত্ববোধ কী হওয়া উচিত তা পরিষ্কার হওয়া যাবে্।
আমাদের শিক্ষিত তরুণ সমাজকে দায়িত্ব কর্তব্য পালন বিষয়ে বিতর্ক-তর্ক বা ‘মু ফেনা ন গুরিনেই’দায়িত্বশীলতার সাথে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার মতো বাস্তব করণীয় কর্তব্য পালনই মুখ্য হওয়া প্রয়োজনীয় বিধেয় বলে বিবেচিত।
এভাবেই সমাজ ও সমাজ গঠনের লড়াই বা সমাজ বিনির্মানের লড়াই বা অধিকারের লড়াই সংগ্রাম শক্তিশালী দৃঢ়ভিত্তি সম্পন্ন হতে পারবে বা হবে। এর অন্য কোনো ব্যতিক্রম বিকল্প আছে বলে মনে হয় না।

No comments:

Post a Comment

সর্বাধিক পঠিত

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষাঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসংগ-১৯৪৭ সাল

ইতিহাসের ভ্রান্তি থেকে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০১৭ ইতিহাস একটি জাতি বা জাতিসত্তা তথা জাতিসমষ্টিকে নানাভাবে প্রভাবিত কর...